-আম্মু আমার ল্যাপটপ লাগবে।
-একটা তো আছেই, আরেকটা দিয়ে কী করবি।
-ওটা পুরোনো হয়ে গেছে। আমার অ্যাপল ল্যাপটপ লাগবে।
-যেটা আছে সেটা নিয়েই খুশি থাক। এখন কোনো আপেল টাপেল পাবি না। অন্তত এই বছরে না।
-প্লিজ আম্মু দেও না, দেখো আলিশার অ্যাপল ল্যাপটপ, আর আমার এই স্যামসাং, তাও পুরোনো। আমার মানসম্মানে লাগে না?
-আগে আলিশার মতো ভালো রেজাল্ট কর, তারপরে তোকে অ্যাপল ল্যাপটপ কিনে দেবো এর আগে না।
-আরে আম্মু বুঝোনা কেন, সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয়না। যেমন আমাকে দিয়ে আলিশার মতো ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব না, তেমনি আলিশার ও আমার মতো ভালো ক্রিকেট খেলা সম্ভব না।
-ওই শোন মাথা গরম করিস না আমার । তোর বকবকানি শোনার মতো সময় নেই । কাজ আছে আমার, আমি গেলাম।
-সত্যি তাহলে দিবানা?
-নাহ।
-আচ্ছা ঠিকাছে দেওয়া লাগবেনা । আমি নিজেই কিনবো । তাও নিজের টাকায়।
-ওরে আমার পাহলোয়ান রে, নিজের টাকায় উনি অ্যাপল ল্যাপটপ কিনবে। আচ্ছা কিনিস যা। আমি এখন গেলাম। কাজ আছে আমার।
কথাগুলো বলেই হনহন করে আম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমার আ্যপল ল্যাপটপের স্বাদ মিটে গেলো। এ বছর আর পাচ্ছি না। সামনের বছরেও হয়তো দিবে না, বলবে ভালো রেজাল্ট করিস নি, আগে ভালো রেজাল্ট কর তারপর দিবো। কিন্তু আম্মু বোঝে না কেন, সবাইকে দিয়ে সব কাজ হয়না, তেমনি আমাকে দিয়েও ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব না।
যাইহোক, ল্যাপটপ আমি কিনবোই, এবং সেটা অ্যাপল ল্যাপটপ-ই। দরকার পড়লে চুরি করবো ডাকাতি করবো তাও ল্যাপটপ আমি কিনেই ছাড়বো।
রুমে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিলো না। ছাদে গেলাম ছাদে গিয়ে দেখি পাশের বাসার ছাদে বসে আলিশা ল্যাপটপ টিপছে। অ্যাপল ল্যাপটপ আপেলটা আমার দিকে ফেরানো। অর্ধেক খাওয়া আপেলটা যেনো আমাকে ব্যাঙ্গ করছে। আমাকে দেখে হাত নাড়লো আলিশা। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে গেলো। যদিও আলিশা যথেষ্ট সুন্দরী। তারপরেও কেন জানি এই মেয়েটাকে আমি দেখতে পারিনা। তার মূল কারণ হয়তো, ওর ভালো রেজাল্ট করাটা। আম্মু সবসময় ওর তুলনা দিয়ে আমাকে পঁচায়।
এমন সময় হঠাৎ মাইকের শব্দ কানে ভেসে আসলো। “লটারি! লটারি! লটারি! মাত্র দশ টাকার টিকিটে আপনি পাচ্ছেন নগদ এক লক্ষ্য টাকা। তাহলে আর দেরি কেন, এখনই চলে আসুন আমাদের প্রচার মাইক লক্ষ্য করে আর সংগ্রহ করুন আমাদের টিকিট। মাত্র দশ টাকায় নগদ এক লক্ষ্য টাকা।”
এই কথাগুলো শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক লক্ষ্য টাকার বান্ডিল। খিচ্ছে দৌড় দিলাম। সিড়ি দিয়ে নামতে যেয়ে পা পিছলে পড়ে গেলাম । হাটুতে ব্যথা পেলাম। কিন্তু সেটা কেয়ারই করলাম না। দৌড়ে যেয়ে মাইকের সামনে উপস্থিত হলাম। আম্মুর ব্যাগ থেকে সদ্য চুরি করা কড়কড়ে একশ টাকার নোটটা দিয়ে দশটা টিকিট কিনলাম।
ঠিক এই সময় পাশের বাসার কাজের ছেলে আবুইল্লার আবির্ভাব হলো।
-ভাই আমাকে দশটা টাকা দেন তো।
-কী করবি?
-লটারীর টিকিট কিনবো।
-ধুর বলদ, একটা টিকিট কিনে কী করবি? কিচ্ছু পাবিনা তুই, এই দেখ আমি দশটা টিকিট কিনছি, ওই এক লক্ষ্য টাকা তো আমিই পাবো।
-দেন না ভাই, কথা দিচ্ছি ওই এক লক্ষ্য টাকা পেলে সেখান থেকে আপনাকে এক হাজার টাকা দিবো।
ওর কথা শুনে হাসলাম আমি। তারপর বললাম,
-আচ্ছা নে । পুরুষ্কার তো পাবিই না, শুধু শুধু দশটা টাকা নষ্ট করলি।
বলেই পকেট থেকে দশ টাকার একটা নোট বের করে দিলাম আবুইল্লাকে। তারপর টিকিট বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ড্র কখন অনুষ্ঠিত হবে? বিক্রেতা আমাকে জানালো রাত ন’টায় ড্র অনুষ্ঠিত হবে। আমি যদি লটারি জিতি, তাহলে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তারপর আমি খুশিমনে লাফাতে লাফাতে রুমে চলে আসলাম।
খুশিতে গান ধরলাম, “আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। এবার এক লক্ষ্য টাকা দিয়ে আমি ল্যাপটপ কিনবো রে।
ধুর মেলে না। মিললো না বলে গানটা আর গাইলাম না। মোবাইলটা দিয়ে নেটে ঢুকলাম। এক লক্ষ্য টাকার মধ্যে ল্যাপটপগুলো দেখতে লাগলাম। এমন সময় মাগরিবের আজান দিলো। নামাজ পড়তে গেলাম মসজিদে। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া করলাম। এশার নামাজও পড়লাম মসজিদে গিয়ে। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে আম্মুর রুম থেকে জায়নামাজের পাটি নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে মোনাজাত ধরলাম। পাশেই মোবাইলটা রাখা ছিলো। মোনাজাতের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলের দিকে তাকাতে লাগলাম। ইতিমধ্যে সাড়ে আট-টা বেজে গেছে। আর মাত্র তিরিশ মিনিট । সময় যেনো থমকে গেছে। একেকটা মিনিট যেনো একেক ঘন্টার মতো লাগছে এখন। একটা একটা করে সেকেন্ড পার হয়ে ন’টা বেজে গেলো। ফোনের দিকে তাকিয়েই আছি আমি। এই ফোন আসে এই ফোন আসে করে করে সাড়ে ন’টা বেজে গেলো। কিন্তু ফোন আর এলো না। দশটা বাজে তখন। হাল ছেড়ে দিয়েছি তখন আমি । এমন সময় টুংটাং করে ফোনটা বেজে উঠলো। একলাফে গেলাম ফোনের কাছে। আননোন নাম্বার। হার্টবিট বেড়ে গেছে আমার। হাত কাপছে। কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো একটা মেয়েলী কন্ঠ। আলিশা ওটা। রাগে ফোনটা খাটের ওপরে ছুড়ে ফেললাম আমি। ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে দরজা নক করার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখি ওপাশে হলুদ দাত গুলো বের করে আবুইল্লা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে মিষ্টির প্যাকেট।
-কিরে, তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে নাকি?
-না ভাই।
-তাহলে এই সকাল সকাল মিষ্টি নিয়ে আসছিস কেন?
-লটারি জিতেছি আমি। এক লক্ষ্য টাকা পেয়েছি।
হাসতে হাসতে কথাগুলো বলল আবুইল্লা । ওর কথা শুনে আমার মাথার ভেতরে একটা চক্কর দিলো। পড়ে যেতে গেলাম আমি। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
-সত্যিই তুই লটারি জিতেছিস?
-হ ভাই। সত্যিই জিতছি আমি। এই নেন আপনার এক হাজার টাকা।
“বলেই পকেট থেকে এক হাজার টাকার একখান কড়কড়ে নোট বের করে দিলো আবুইল্লা।
ওর দিকে বিমূঢ়ের মতো তাকিয়ে থাকলাম আমি।
-এই নেন ভাই, মিষ্টি খান।
“আবুইল্লার উপর কেন জানি প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো আমার হয়তো হিংসায়। আমি রেগে গিয়ে বললাম,
-দূর হ এখান থেকে। তুই জানিস না আমি মিষ্টি খায়না। আর তুই সকাল সকাল আমাকে মিষ্টি খাওয়াতে এসেছিস।
-আচ্ছা ভাই, তাহলে আমি গেলাম।
-ওই কোথায় যাচ্ছিস?
-কেন, আপনিই তো চলে যেতে বললেন?
-তুই যাবি যাহ, কিন্তু আমার টাকা দিয়ে যা।
“তারপর আবুইল্লা এক হাজার টাকার নোটটা আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো।
টাকাটা নিয়ে আমি বেডের উপর যেয়ে শুয়ে পড়লাম। আর বলতে লাগলাম, “লটারির টাকাটা আমি পায়নি ভালোই হয়েছে। লটারির টাকা হারাম। ও টাকা না পাওয়ায় ভালো। আল্লাহ আমাকে ভালোবাসে বলেই লটারি জিতিনি আমি।
“আঙুর ফল টক আরকি।
দরজার পাশ থেকে কেউ একজন কথাটি বলে উঠলো। সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম আলিশা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে অ্যাপল ল্যাপটপ। দুষ্টামির হাসি লেগে রয়েছে ওর মুখে।
এই অবস্থায় যে কোন ছেলে ওর উপর ক্রাশ খাবে, কিন্তু আমি খেলাম না। বরঞ্চ রাগে পিত্তি জ্বলে গেলো আমার। বেডের ওপর বসে রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
রুমে প্রবেশ করলো ও। সোজা আমার টেবিলের কাছে গেলো। টেবিলের উপর রাখা আমার ল্যাপটপটা নিয়ে সেখানে নিজের ল্যাপটপটা রাখলো। ওর কান্ডকারখানা দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি। টেবিলের কাছ থেকে এসে আমার পাশে বসলো ও। আমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলল, “নে! এবার আপেল খা।