– ওই? তুমি ওই মেয়ের দিকেও এভাবে তাকাইলা কেন?
– আমার চোখই ট্যারা।
– চোখ ট্যারা মানে? ফাজলামো করো আমার সাথে?
– নাহ! মস্করা!
– মস্করা মানে? তুমি সকাল থেকে কয়টা মেয়ের দিকে তাকাইছো?
– তুমি তো এই নিয়ে মিনিমাম পনেরটা মেয়ের কথা বললা।
– ফাজিল। তুমি আমাদের এনগেজমেন্টের দিন ইরাকে কি বলছো?
– কী বলছি?
-যখন তোমার সাথে সেলফি উঠতে আসছিলো তখন কিছুই বলো নাই তুমি?
– বলছি, মুড়ি খাইলে ঠোঙ্গা ফ্রি।
– এই কথার মানে কী?
-মানে তোমাকে বিয়ে করলে আবার তোমার ফ্রেন্ডের সাথেও সেলফি তোলা যায়। ওই আর কী!
– রাগে আমার গা জ্বলছে।
-তবে মিনারেল ওয়াটার কিনে আনি? ঠাণ্ডা দেখে?
– কেন? কী করবা পানি দিয়ে?
– তোমার গায়ে ঢালবো।
– অসহ্য। তোমাকে নিয়ে শপিং এ আসাই ভুল হইছে আমার।
– হুঁ। আমারও টাকা বাচতো।
– মানে কী? কেনাকাটা তো সব আমার টাকা দিয়েই করলাম।
– আমি যে আসার সময় পঁচিশ টাকা রিকশা ভাড়া দিলাম? তারপর আবার দুইজনে দশ টাকা দিয়ে দুইটা আমড়াও কিনে খাইছি। তুমি এক পিচ বেশি খাইছো।
– ওই,তুমি তো এমন ছিলা না? তোমাকে আবার এত কিপটামি শিখাইলো কে?
– তোমার আম্মা।
– কী! আম্মা?
– হুঁ।
-কেমনে?
-ওই যে আমাদের এনগেজমেন্টের পরে সন্ধ্যায় বললেন না? বাবা এখন থেকে আর বেশি খরচ করা যাবে না। হিসেব করে চলবা। সঞ্চয় করতে হবে।
– ওহ খোদা! আমার কপালে কী শেষমেশ এই ছিল তবে?
– যা ছিলো তাই-ই তো আছে।
– কী ছিল? আর কী আছে? হু?
-কালো টিপ।
– তাই? না?
– হুঁ।
– আমার কপালে আল্লাহ বাঁদর জুটাইছে একটা।
– এহ! আমি কি গাছে উঠতে পারি নাকি?
– ওই? তুমি ভালো হবা না? এত মানুষের সামনে মার খেতে চাও আমার কাছে?
– উঁহু। চুমু।
-বেশরম! অসভ্য কোথাকার!
– তবুও তো তোমার।
রূপা মুচকি মুচকি হাসে।
রূপা হাসলে আমার এত ভালো লাগে!
কিছুক্ষণ পর রূপা বললো,
– শোনো?
– বলো।
-আম্মা তো ঠিকই বলছে। আমাদের বিয়েতে একটা খরচ আছে না? টাকা তো জমাতে হবে।
– ওই টাকা তো আমার পকেটেই আছে।
– একটা বিয়ের টাকা তোমার পকেটেই আছে?
– হুঁ
– শুনি? কত টাকা আছে?
– ৫৬০ টাকা।
– ৫৬০ টাকায় আমাদের বিয়ে হয়ে যাবে?
– হ্যাঁ। বিয়ে পড়ানো হলে দুই কেজি খেজুর আর এক কেজি বাতাসা কিনে দিয়ে দিব সবার হাতে হাতে। এটাই সুন্নত।
– তোমাকে কে দিছে এই বুদ্ধি?
– ওই তো, কছিম মামা।
-ওহ! খোদা! উঠাইয়া নাও আমারে!
– আরেহ এখন না। পার্লার থেকে কত সাজগোজ করে আসছো। ঘুম থেকে উঠলে সকালে যেন নেয়।
রূপা কিছু না বলে চোখ গরম করে তাকালো আমার দিকে। আমি কিছুটা নরম সুরে বললাম,
– নাবিলাকে তো পার্লারে সাজলেও যেমন লাগে না সাজলেও তেমনই লাগে।
– তুই যা তোর নাবিলার কাছে। আমার কাছে কী?
– মধু।
– অসভ্য, ফাজিল। আমার আশেপাশে যেন তোকে আর না দেখি।
– আচ্ছা।
শপিং মল থেকে বেরিয়ে রূপা হাঁটে, আমি হাঁটি রূপার পাশে গা ঘেঁষে ঘেঁষে।
রূপা রেগে গিয়ে বললো তোকে না আমার সাথে আসতে মানা করছি?
– এই রাস্তা তো তোমার বাপে আমাকে যৌতুক হিসেবে দিয়েছে। এখন তোমার বাপের নাই আর।
-ঠিক আছে কোনদিকে যাবি তুই বল? আমি উল্টো যাব।
-আমি কাওরান বাজার যাবো।
– কাওরান বাজেরে কী?
– বিয়ের পর তোমাকে রাখবো কোথায়? আমার ছোট খাট।
– সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু কাওরান বাজারে কী?
– ওখানে ৫০০ টাকাতেই নাকি বড় বড় চৌকি পাওয়া যায়! আমড়া কাঠের!
– তোকে কে বলছে তোকে এই কথা?
– আবার কে? কছিম মামাই তো।
রূপা একটা রিকশা থামিয়ে উঠে বসলো আমার জন্য কিছুটা জায়গা রেখে। রূপার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এ যেন কালবৈশাখের রুদ্রমূর্তি। এখন ওর পাশে গিয়ে বসার অর্থ আমার অজানা নয়।তবুও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বসলাম ওর পাশে।
রিকশা চলছে।
কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও রূপা কিছু বলছে না দেখে রূপার মুখের দিকে তাকালাম। রূপার সেই রুদ্রমূর্তি আর নেই, বরং মুখখানা গম্ভীরই বলা চলে। মেঘ জমে আকাশ যেমন কালো হয়ে থাকে, এও ঠিক এমনি।
আষাঢ়ের আকাশ থেকে যেভাবে বৃষ্টি নামে রূপাও তেমনি করে কান্না শুরু করে দিলো। বললাম কাঁদছো কেন?
– তুমি সব সময় পচাও আমাকে, সব সময় ফাজলামো তোমার!
ঢাকা টু দিল্লী হয়ে শ্রীনগরের দুটো বিমানের টিকিট প্যান্টের পকেট থেকে বের করে ধরিয়ে দিলাম রূপার হাতে। রূপা জিজ্ঞেস করলো,-এগুলি কী?
– বিয়ের পর আমাদের কী যেন কথা ছিলো?
-কাশ্মীর যাব আমরা।
– হ্যাঁ, ওটাই। মাস খানেক আগে কনফার্ম করলে কিছুটা সাশ্রয়ে পাওয়া যায়।
আমি রূপার দিকে তাকালাম। রূপা হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না কিছুই। আমি ঠিক জানি না, একেই আনন্দ অশ্রু বলে কিনা!