আকাশে বিশাল চাঁদ উঠেছে।বারবার মেঘে ঢেকে যাচ্ছে যার ফলে পরিবেশটা হয়ে উঠছে ভয়ানক। খুব ভয় লাগছে। মাথার ভেতরটা শূন্য হয়ে উঠেছে।আশেপাশে কেউ নেই।বিশাল বনের মাঝে আমি একা দাঁড়িয়ে।কিভাবে এখানে এসেছি, কেন এসেছি মনে করার চেষ্টা করছি।এমন সময় কোনো একটা অপরিচিত প্রাণীর ভয়ানক গর্জন বুকের ভেতর কাঁপিয়ে তুললো।শব্দটা আসছে পেছনদিক থেকে।দ্রুত পেছনে তাকালাম। উফফফঃ কি ভয়ানক দেখতে প্রাণীটা।প্রাণপণে দৌঁড়াতে শুরু করলাম।
দৌঁড়াচ্ছি, যতোটা দ্রুত সম্ভব দৌঁড়াচ্ছি।যাতে অই প্রাণীটা আমাকে ধরতে না পারে।
প্রাণীটা দ্রুত কাছে চলে আসছে।যে করেই হোক বাঁচতে হবে। হঠাৎ কিছু একটা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। ঠোঁট ভিজে উঠেছে। জিভ দিয়ে স্পর্শ করলাম ঠোঁটকে।নোনতা স্বাদ।কেঁটে গেছে ঠোঁট।রক্ত ঝরছে।
এমন সময় ঝনঝন শব্দ করে উঠলো।
ধড়মড় করে উঠে বসলাম। চারিদিকে অন্ধকার। ফোনের লাইটটা জ্বেলে নিলাম।ঘড়িতে দেখলাম,সাড়ে এগারোটা বাজে। প্রতিদিন ১০-১১ টার মধ্যেই ঘুমাই। আজ এগারোটাই ঘুমিয়েছি। তারমানে মাত্র আধঘণ্টা হলো ঘুমানোর পরে। এই আধঘন্টার মধ্যে এমন ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ফেললাম। উফফফঃকিছুই বুঝতে পারছিনা।খুব তেষ্টা পেয়েছে।সাইট টেবিলে পানি রাখা ছিল।ঢকঢক করে পুরোটা খেয়ে ফেললাম।
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললাম। যাকঃ তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম, বাঁচা গেলো।কি ভয়ানকই না ছিলো প্রাণীটা। পাশে তাকালাম। সেকি! পাপড়ি কোথায় গেলো(?) আমার পাশেইতো ঘুমিয়ে ছিলো…..। ভাবলাম হয়তো বাথরুমে গিয়েছে।(পাপড়ি,আমার ছোটবোন)
হঠাৎ ড্রয়িংরুম থেকে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ হলো।
খাট থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজাটা সামান্য ফাঁকা করে দেখলাম। ড্রয়িংরুম এর লাইট অফ।হঠাৎ খেয়াল হলো ঘুমানোর আগে কোনো লাইট অফ করে ঘুমাইনি।(আমি আবার প্রচণ্ড ভীতু। তাই রাতে লাইফ অফ করিনা)
তাহলে লাইট অফ হল কিভাবে! হয়তো কারেন্ট চলে গেছে।কিন্তু কারেন্ট চলে গেলেতো জেনারেটর অন হওয়ার কথা।কিছুই মাথায় আসছেনা। ধীরেধীরে ড্রয়িংরুম এ গেলাম।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। পাশের বাসা থেকে জানালা দিয়ে এক চিলতে আলো এসে পরিবেশটাকে আরও ভয়ানক করে তুলেছে। কিছুই বুঝতে পারছিনা।ভয়ে থরথর করে কাঁপছি। কিছু একটার শব্দ হলো।ভয়ে দুচোখ বন্ধ করে ফেললাম।(যদিও এমনিতেই চারিদিকে অন্ধকার)
হঠাৎ লাইট অন হয়ে গেলো।চারিদিক থেকে কিছু মানুষের চিৎকার, ” শুভ জন্মদিন রিয়া”। চোখ মেলে তাকালাম। দেখলাম সামনে আব্বু- আম্মু, পাপড়ি আর বাসার সবাই উপস্থিত। ভাড়াটিয়া আংকেল আন্টিও। বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম সামনে একটা কেক। আর সবার হাতেই গিফট। (বুঝতে পারলাম কি হয়েছে। আজ আমার জন্মদিন। তাই সবাই আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলো। এটাই….)পাপড়ি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।শুভ জন্মদিন আপু। তোমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দেয়ার প্ল্যানটা কিন্তু আমারই।
খুব রাগ হচ্ছে আমার।সারপ্রাইজ দিবি তো দে। এভাবে ভয় দেখিয়ে সারপ্রাইজ দেয়ার কি ছিল।দিলাম ওকে এক গাট্টা মেরে।এরপর একে একে সবাই উইশ করে গিফট করলো।তারপর কেক কাটলাম। যারযার মতো সবাই ঘুমাতে চলে গেলো। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই।ভাবছি,” ওরা কতোইনা ভালবাসে আমাকে। এই ভালবাসার ঋণ কি কখনো শোধ করতে পারবো। সত্যিই ভালবাসার ঋণ ভালবাসা ছাড়া আর কোনোকিছু দিয়েই শোধ করা যায়না।”
প্রকৃত ভালবাসা হলো পরিবারের ভালবাসা। বিশেষত আব্বু আম্মুর আর ভাইবোনের ভালবাসা হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালবাসা।