সাংঘাতিক বড়ভাই

সাংঘাতিক বড়ভাই

চায়ের মধ্যে বিস্কিট ডুবিয়ে ডুবিয়ে খাচ্ছি। ভালোই লাগছে খেতে। বিস্কিট শেষ হতেই লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সামনের মেয়েটাকে বললাম ..

–আর দুইটা বিস্কিট নিয়ে আসতো। খেতে ভালোই লাগছিলো। এতগুলো চায়ের সাথে এত কম বিস্কিট দিলে চলে!
মেয়েটা শুধু শুনলো। ফিক করে একটা হাসি দিতে গিয়ে চেপে গেলো। উঠে গেলো বিস্কিট আনতে।আমি চায়ের কাপে হালকা চুমুক দিলাম।মেয়েটার নাম নিশা। আমার ছাত্রী।এই মাসেই টিউশনি টা কপালে জুটলো। তাও জুটতো না। একটা বন্ধুর হাতে পায়ে ধরে জুটালাম।তিনটা সাবজেক্ট পড়াই মাস গেলে ভালো বেতন দিয়ে খুশি করবে বলেছেন এই বাড়ির কর্তা। উনার আবার ফাকিবাজি কাজ সহ্য হয়না।দারোগা বলে কথা।এর আগের জন নাকি উনার মেয়ের সাথে ইটিশ পিটিশ করতো। বেটাকে ঘার ধরে তাড়িয়েছে। না জানি আমার কপালে কি আছে। তবে খুশি করতে পারলে ভালো কিছুই আছে। কিন্ত এই ছাত্রীতো একেবারে কাচা।পড়াশোনার নাম শুনলেই মুখ কালো করে বসে থাকে। আর পড়াশোনা না থাকলেই মুখ সাদা করা মানে মেকআপ করা শুরু করে।পরেছি এক মহা মুসিবতে। তবুও হাল ছাড়িনি।
–এইযে নিন ভাইয়া আপনার বিস্কিট

নিশা সামনে দুইটা বিস্কিট ধরে আছে। দুইটা আনতে বললাম জন্য দুইটাই আনতে হলো! একটু বেশি আনলে কি হতো! যাইহোক বিস্কিট নিয়ে আবার ভিজিয়ে ভিজিয়ে খেতে লাগলাম।চা টা শেষ করে ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললাম

 

–তাড়াতাড়ি বই বের করো। ইদানীং তুমি খুব ফাঁকিবাজ হয়ে গেছো।
ছাত্রীর কানে কথা গেছে কিনা কে জানে। তিনিতো কপালের টিপ ঠিক করতে ব্যস্ত। আমার দিকে তাকিয়ে বললো…

–ভাইয়া দেখুনতো টিপটা কপালের মাঝ বরাবর আছে কিনা..
আমার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। বললাম ..

–না নাই।

যদিও মাঝখানেই ছিলো ..আমার কথা শুনে সে টিপটা একটু সরালো। আমি বল্লাম..

–আরেকটু বামে সরাও

একেবারে সরিয়ে ভ্রুর গোড়ায় লাগিয়ে দিলো টিপটা।তারপর জিজ্ঞেস করলো

–এখন ঠিক আছে ভাইয়া?
–হ্যাঁ হ্যাঁ পারফেক্ট।

বাহ মেয়েটার সাথে ফাইজলামো করতে তো ভালোই মজা।উচিৎ হইছে। এইরকম মেয়েদের সাথে এমনই করা উচিৎ।

–এখন বই বের করো।
ছাত্রী যেন আমার উপরেই রেগে গেলো।
–ভাইয়া আপনার এত কম ধৈর্য কেন?
–আমার ধৈর্য কম নাকি তুমি ফাঁকিবাজ?
–আচ্ছা কি বই বের করবো?
–এমম… রসায়ন বের করো।

–ওইটা কোনো সাবজেক্ট হলো। রসকস কিচ্ছু নাই। এর চেয়ে চলেন আজ আমরা রসিয়ে রসিয়ে গল্প করি। প্রতিদিনই তো পড়াশোনা করি। একদিন গল্প করলে দেখবেন অনেক ভালো লাগবে।

–ঠিক আছে ..একদিন বিরিয়ানি রান্না করে দাওআত দিও সেদিন এসে রসিয়ে গল্প করবো।
–সত্যি ভাইয়া!!!
–হ্যাঁ ..তবে আজ শুধু পড়াশোনা। পড়া ছাড়া যেনো অন্য কোনো টপিক না আসে।

ছাত্রী বই বের করতে লাগলো।বইয়ের একেকটা পাতা উল্টাতে যেনো এক যুগ পার করতে পারলে বেচেঁ যায় সে। আমি ধমক দিয়ে বললাম ..

–বই বের করতে এত সময় লাগে?
–উফ ভাইয়া ..কি যে বলি .. আজকের পড়াটা যেনো কি ছিলো আমি ভুলে গেছি।
–বাহ বাহ..পড়াটা কি ছিলো সেটাই যখন মনে নেই তখন পড়াটা নিশ্চয়ই হয়নি। এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে

হবে কোনো ছাড় পাবেনা তুমি। তুমার বাবার কাছে নালিশ যাবে।

বাবার কথা বলতেই ছাত্রী আমার ওয়া ওয়া করে কান্না শুরু করে দিলো। আমি নিশ্চিত এই কান্না সে বাংলা ন্যাকামি সিরিয়ালগুলো থেকে শিখেছে।মেয়ের কান্না শুনে তার মা ছুটে এলো।

–একি নিশা মামনি কি হয়েছে তোমার।
..ওমা এ যে দেখি আমি বিপদে পড়ে যাচ্ছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে বললাম।
–কিচ্ছুনা আন্টি .. ও একটু কান্নার এক্টিং করে দেখাচ্ছিলো আমাকে।মানতে হবে প্রতিভা আছে আপনার মেয়ের।
–থাকবে না আবার! আমার মেয়ে বলে কথা।
..হ ..থাকবে না আবার… কুমড়ো গাছে তো কুমড়োই ধরে।
–কিছু বললে বাবা?
–না। তো আন্টি আপনি কেমন আছেন?
–এইতো ভালো। তুমি ভালো আছো বাবা?
–হ্যাঁ।
–আমার মেয়ের পড়াশোনা কেমন চলছে?

–সে দুরন্ত বাইসাইকেল এর মতো।
তবে চেইন পড়লে আর উঠেনা।

–ঠিক বুঝলাম না।
–বুঝতে হবেনা। কিন্ত আপনি এত সাজগোজ করে আছেন যে? নিশ্চয়ই কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন আজ?
–কি যে বলো বাবা! এমনিতেই নতুন শাড়িটা পড়ে দেখছিলাম।পাশের ফ্ল্যাটের মতিনের মা বলেছে এই শাড়ি পড়লে নাকি আমার বয়স দশ বছর কমে যাবে।

–ঠিক বলছে। শাড়িটা আর খুইলেন না। তাইলে দশ বছর বেড়ে যাবে।

আন্টি আমার দিকে মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। আমার কথা মনেহয় পছন্দ হয়নাই। এহ, প্রশংসা করলে যেনো গলে গলে পড়তে চায়। করুমনা প্রশংসা। কয়দিন ভালো ভালো নাস্তা খাওয়াইলো আর ইদানিং খালি চা খাওয়াচ্ছে। মেজাজ টা কি আর এমনি খারাপ হয়। হঠাৎ আন্টি নিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ..

–একি নিশা তুমি টিপ এভাবে পড়েছো কেন? মাঝখানে পড়তে হয়তো মামনি।
নিশা তখন চারশো চল্লিশ ভোল্ট খেয়ে আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো।
আমি কিছু বললাম না। তাকায়া থাকলাম। মেয়ের মা তার আদরের মেয়ের কপালের টিপ ঠিক করে দিয়ে বললো..

–ঠিক আছে তোমরা পড়াশোনা করতে থাকো। আমার আবার রান্নাঘরে কাজ আছে।কাজের মেয়েটাও আসেনি আজ।

আন্টি চলে গেলো।এদিকে আমার ছাত্রী মেজাজ খারাপ করে বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলো। বই যেনো ছিড়ে ফেলবে এবার। আমি আবারও ধমক দিয়ে বললাম ..

–বই ছিড়বে নাকি?
–ছিড়লে ছিড়ুক তাতে আপনার কি?

–বই বের করো আর পড়া শুরু করো। কতক্ষণ হলাম এসেছি অথচ তোমাকে এখনো একটা শব্দও পড়তে দেখলাম না।

–পড়বো না তাতে আপনার কি?
–আমি কিন্ত তোমার বাবার কাছে ..

না বলতেই আবার ওয়া ওয়া করে কান্না করতে লাগলো..

–আচ্ছা বলবো না তোমার বাবাকে। তবুও এই নকল ন্যাকামি মার্কা কান্নাটা বন্ধ করো।
–কি যে বলেন ভাইয়া। আপনি জানেন এই কান্না কত ফেমাস? সিরিয়ালের সুন্দরি সুন্দরি নায়িকারা এভাবেই কাদে।
–আমার কি কাজ নেই যে সিরিয়ালের কান্না দেখবো?
–এইজন্যই তো আপনি খুব ব্যাকডেটেড
–কিহহহহ?

–না মানে! আপনিই সব দিকেই পারফেক্ট কিন্ত মেয়েদের ব্যপারে আপনার কোনো সেন্সই নাই।সিরিয়াল দেখেন না তো তাই কিছুই জানেন না

–এইসব আমাকে শেখাতে হবেনা।তোর পায়ে পড়ি এইসব বাদ দিয়ে বই পড় এবার। নইলে তোর বাপ আমারে ..
–উফ ভাইয়া আপনি ভালোভাবে কাদতেও শিখেননি। আমি আপনাকে শেখাচ্ছি…

–আর শেখাতে হবেনা ..ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো। আমি শেষ হয়ে যাবো তোমার জালায়। টিউশনি একটা পাইলাম তো এমনটাই পাইতে হইলো! ইয়া মালিক রহম করো দয়া করো।

ছাত্রী আমার প্রলাপ শুনতে শুনতে ফিক করে হেসে দিয়ে পানি আনতে গেলো। প্রতিদিন এভাবেই কথার বেড়াজাল গেথে পড়াশোনায় ফাকি দেয় সে।আমিও হাল ছাড়িনা। চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি।

দুইঘন্টা কোনো রকম পড়ালাম। পড়ালাম আর কই নিজেই পড়লাম। গাধিটার মাথায় কিছু ঢুকেছে কিনা আল্লাহই ভালো জানেন।পড়ানোর সময় খালি আমার দিকে তাকায় আর হাসে। এইভাবে কি পড়াশোনা হয়!

টিউশনি থেকে বের হতেই মনে হলো যেনো নরকের সাজা থেকে একটু বিরতি পেলাম।নিশাদের বাসা থেকে বের হয়ে সোজা হাটতে লাগলাম মিলন মামার চায়ের দোকানের দিকে।সন্ধ্যার আগে ওখানেই একটু আড্ডা দিয়ে মেসে চলে যাবো। আর কয়েকটা ডিমও কিনতে হবে। দুইদিন ধরে বুয়া আসেনা। মিলন মামার দোকানে না পৌছাতেই পথ আটকে দাড়ালো এক লোক।একি! এ বেটারে তো আগে কখনো দেখিনাই এখানে।
–কিরে! তুই নাকি ইদানীং আমাগো এলাকায় টিউশনি করাইতাছোস? তা ভ্যাট পাইনা ক্যারে?
–আপনে কেডায় ভাই?
–আমি ভ্যাটম্যান।এই এলাকার সব ব্যাবসায় ভ্যাট বসানোই আমার কাজ।
–কিন্ত আন্নেরে তো আগে কখনও দেহিনাই?

–দেখবি ক্যামনে? এর আগে কি ব্যবসা করছোস? আচ্ছা যাইহোক আয় করলে তো আয় কর দিতেই হবে। তুইও দিবি।কথা কম নইলে কিন্ত ডাবল কর আরোপ করমু। আর তুই এতদিন আয়কর ফাঁকি দিছোস তোরে তো খাইছি। গত মাসে এক বেটারে পাঠাইছিলাম সে আইসা তোর কাছে চান্দা নেয়ার বদলে উল্টা দিয়া গেছে। । আমার এলাকায় ব্যবসা কইরা আমার সাথে বাটপারি।

–আরে ভাই আপনি ভুল ভাবছেন।নুরুরে পাঠাইছিলেন তাইনা! ওইতো আমার ছোটভাই আছিলো কলেজের।
–রাখ তোর ছোটভাই! আয়কর দেসনাই ক্যারে?
–আয় কর দিতে হয় নাকি?
–কেন তুই জানিস না। শিক্ষিত পুলা অথচ এইটুক জানিস না?
–জানি! কিন্ত আমিতো ভাবছিলাম আয়কর মানে হইলো আয় তুই কর ..মানে আমাকে আয় করতে বলা হয়েছে।
–হারামজাদা আয় তুই বেশি বেশি কর। তয় চান্দা যেনো মিস নাহয়।
–মানিনা মানবো না। আয়কর যদি থাকে তাহলে ব্যয়কর ও থাকা উচিৎ। আমি যে এত পরিমাণে ব্যয় করি সেই ব্যয়ের কর কে দিবে আমাকে?
–কথা প্যাচাইবি না। তোর নাটক বন্ধ কর। আমি হইলাম এই এলাকার ডন। আমারে চান্দা দিবি তোর প্রটেকশন আমি দেবো। কেউ তোর সাথে এই এলাকায় ঝামেলা করতে পারবে না।

ঝামেলা তো তুই রে ভাই। ইচ্ছা করছে তোরে দুই গালে কয়টা দেই। এলাকার সব ব্যাচেলর দের টিউশনির টাকায় ভাগ বসাস। স্থানীয় ছেলে বলে কেউ কিছু বলেনা। তোরে যে শিক্ষা দিতে ইচ্ছা করতেছে। কিন্ত কিছুই করবার পারছি না।

–কি রে চুপ মাইরা গেলি ক্যান?
–কিছুনা ভাই। কিন্ত ভাই কত পার্সেন্ট ভ্যাট দেয়া লাগে আপনাকে?
–তুই নতুন ব্যবসা শুরু করছোস তাই তোর জন্য কম। দশ পার্সেন্ট দিবি।
এহ মামার বাড়ির আবদার। এক টাকাও দিমুনা। দেখি তুই কি করিস।
–কিরে আবার চুপ মাইরা গেলি যে?
–জি ভাই ..পেয়ে যাবেন।
–হুম। গুড বয়।

হারামজাদায় অন্যের টাকায় ভাগ বসাইতে খুব মজা না? তোরে যে কি করতে মনে চাইতেছে। যাইহোক আমার তো কিছু করারও নাই। ওইদিকে টিউশনিটা থাকবে কিনা তারই গেরান্টি নাই আবার এই বদমাশ আসছে ভ্যাট নিতে।

বেটায় আমার দিক তাকায়া কইলো ..
–তা তুই টিউশনি করাস কয়ডা রে?
–জি ভাই মাত্র একটা।
–মাত্র একটা? বেতন কতো?
–এখনো ঠিক হয়নাই।
–ছাত্র নাকি ছাত্রী?
–জি .. ছাত্রী।
–কস কি রে ..তাইলে তো ভ্যাট আরো বাড়ানো উচিৎ।
–ভাই গরিবের পেটে আর লাথি মাইরেন না।
–আরে টেনশন নিসনা। ছাত্রী কিসে পড়ে রে?
–ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
–মাসাল্লাহ ..ছাত্রীর নাম কি?
–নিশা।
–কস কি! পড়াস নাকি ইটিশ পিটিশ করিস? দারোগার মেয়ে নিশা না?
–হ ভাই। মাথামোটা মেয়ে। পড়তে চায়না।
–তুই আমার একটা কাজ করে দিতে পারবি? করে দিতে পারলে তোর ভ্যাট বাতিল করমু।
–হ্যাঁ এই অফারটা পছন্দ হইছে। কিন্ত করমুটা কি? আমি কিন্ত বেশি রিস্ক নিতে পারমু না।
–নিশার সাথে আমার লাইনটা ক্লিয়ার কইরা দিবি জাস্ট।
আগেই বুচ্ছিলাম এইটাই কইবো। যাক এই বেটার একটা দুর্বল পয়েন্ট পাইছি। এইবার দেখ কি করি।
–কি যে বলেন ভাই? ওর বাপে দারোগা। যদি আমি ধরা খাই তাইলে আমার নামে মামলা দিবে আমার বাকি জীবনটা জেলের ভাত খায়া কাটাইতে হবে ভাই। আমারে ছাইড়া দেন ভাই। পায়ে পড়ি ভাই।
–আরে ধুর তোকে খুব বেশি কিছু করতে হবেনা। তুই খালি আমার পিয়ন হিসেবে কাজ করবি।আমি কাল একটা চিঠি লিখে দেবো তোকে তুই সেটা ওর বইয়ের ভেতরে ঢুকায়া দিবি।

যাক বাবা কঠিন কিছু কয়নাই। কিন্ত ওই মেয়েকি জীবনে বই খুলে দেখবে নাকি! বইও খুলবে না চিঠিও পড়বে না। ধুর তাতে আমার কি! আমার কাজ আমি করে দিবো। তাহলে আমার অনেক টাকা বেচেঁ যাবে।

–ভাই এইটা তো অনেক রিস্ক। আমি পারমু না ভাই। ভয় লাগতাছে দেখেন। এই দেখেন আমার পা কেমনে কাপতেছে।

–ধুর বেডা ..পুরুষ মাইনষের কিসের ভয়। চল তোরে বিরিয়ানি খাওয়াই দেখবি ভয় পালায়া যাবে।
এইতো লাইনে আইছোস ভাই।এটাইতো চাই। শুধু দেখলে হবে খরচাও আছে।
–শুধু একদিন বিরিয়ানি খাওয়ালে কি আর ভয় যাবে ভাই? সাহসের জন্য তো ভালো খাওয়া দাওয়া জরুরী।
–হ্যাঁ ..তুই শুধু লাইনটা ক্লিয়ার কর তাহলে অনেক খাওয়াবো।
এহ কত দেখলাম। গার্লফ্রেন্ড পাইলে সবাই ভুইলা যায়। তার আগেই তোরে ভাঙ্গায় খামু।
–চলেন ভাই বিরিয়ানি খামু ।

বিরিয়ানি খাওয়ার পর পেট মোটা হইয়া গেলো। বিশ টাকা রিক্সা ভাড়া চেয়ে নিলাম। আর বললাম কাল একটা চিঠি লিখতে। যেনো সেটা টিউশনিতে যাওয়ার আগে দেয়।রাতের খাওয়াটা হয়ে গেলো। যাক, বুয়া না আসার দুঃখ টা ঘুচে গেলো। রোজ রোজ যদি এমন কয়টা চান্দু জুটতো।

পরেরদিন টিউশনিতে যাওয়ার আগে বেটায় এসে একটা চিঠি ধরায়া দিলো। বেটায় আবার মুচকি মুচকি হাসে। এহ বেটা দিলমে লাড্ডু ফুটা .. এখনো মেয়েটা চিঠি দেখলোই না তাতেই এই বেটার এই অবস্থা ..নিজের চেহারাখানা আয়নায় দেখেছে কিনা কে জানে ..বান্দরও এর চেয়ে সুন্দর আছে। ধুর, তাতে আমার কি? আমার কাজ আমি করি।

টিউশনিতে গিয়ে আবার প্রতিদিনের মতো দেখলাম ছাত্রী আমার মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত ..

–আচ্ছা নিশা পড়ার সময় মেক আপ করার কি দরকার? আমরা কি লং ড্রাইভে যাচ্ছি নাকি পড়াশোনা করতে বসবো।

–উফ ভাইয়া আপনি যে কি খ্যাত! সাজগোজ না করলে কি পড়াশোনায় ফিলিংস আসে?
–আহা..পড়াশোনা করে উদ্ধার করে দিয়েছো। এখনো তো বইয়ের নামই বানান করতে পারোনা।
–আপনার সাথে কথা বলতেই ভালো লাগেনা আপনি খালি আমাকে রাগিয়ে দেন।

–আমার মুখের কথা কাইড়া নিলা? ভালো.. বই বের করো। আজ পড়া না পারলে নারিকেলের শলা দিয়ে ট্রস ট্রস করে মারবো।

–কিন্ত আপনি তা পারবেন না হাহাহা..আমাদের বাড়িতে কোনো নারিকেলের শলা নাই।

অগত্যা চুপ মেরে রাগে গজগজ করছি। নিশাকে বললাম এক কাপ চা নিয়ে আসতে। নিশা চা আনতে যেতেই আমি ওর বইয়ের ফাকে চিঠিটা ঢুকিয়ে দিলাম।

যাক বাবা আমার কাজ ওকে।

নিশা চা নিয়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আমি চা নিয়ে বললাম ..
–এত মুচকি মুচকি হাসার কি আছে!
–কেন হাসছি তা এখনই টের পাবেন।

আমাকে অবাক করে দিয়ে নিশা বইয়ের ফাক থেকে আমার রাখা চিঠিটা বের করে চোখের সামনে ধরলো। আমি চারশো চল্লিশের একটা শক খেয়ে গেলাম। বোকার মত একটা হাসি দিয়ে বললাম …

–বাহ বাহ..আজকাল কলেজের ছেলেরা তোমাকে লাভ লেটারও দেয় বুঝি! তারা তো আর জানেনা সবই মেকাপের ইন্দ্রজাল।

–চুপ করেন ..এইটা আপনিই রেখেছেন..আমি চা আনার সময় উকি মেরে দেখেছি আপনি এটা বইয়ের ফাকে রেখে দিচ্ছেন। হাহাহা..ধরা পড়ে গেছেন। এইবারে বুঝবেন কত ধানে কত চাল।
–এ্যাঁ ..তাই নাকি! কিন্ত এটাতো আমার চিঠি নয়।
–সেটাতো খুললেই বুঝতে পারবো।

চিঠিটা খুলতে লাগলো নিশা। এদিকে তো আমার পা দুইটা থর থর করে কাঁপছে। দারোগা বাবু জানতে পারলে জেলের ভাত নিশ্চিত।চোখের সামনে জেলখানার ছবি ভাসছে।এই মেয়েকে এত বকেছি এইকদিনে মেয়েটা তো প্রতিশোধ নেবেই। নিশা চিঠি খুলেই বললো..

–একি! আপনার হাতের লেখা এত খারাপ!!
–তাই নাকি! দেখি ..

দেখলাম এটা একটা ডাক্তারের লেখা পেস্ক্রিপশন। আমি হো হো করে একটা হাসি দিয়ে বললাম।

–তোমাকে চিঠি দেবো আমি তুমি এটা ভাবলে কি করে!!

মেয়ে রাগে গজগজ করে উঠলো। কিন্ত আমি ভাবলাম এই পেস্ক্রিপশনের কারণ কি। বলদটা চিঠি না লিখে এইটা দিলো কেন!

নিশাকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে বের হলাম। কলিজা এখনো ধুক ধুক করছে।কি যে হতো। ভাগ্যিস প্রেম পত্র ছিলোনা। টিউশনি থেকে বের হয়েই দেখলাম বড়ভাই আমার অপেক্ষা করছে। তিনি কাছে এসে বললেন ..

–কি রে চিঠিটা ঠিক ঠাক রেখেছিস তো?
–হ।
–নিশা খুলে দেখেনি?
–দেখেছে।
–পড়েনি?
–ওইটা নিশা পড়বে ক্যামনে ওইটা তো ফার্মেসী র লোকের পড়ার কথা।
–কেন কি হইছে?
–এইযে এইটা দেখেন।
বেটায় পেস্ক্রিপশন হাতে নিয়া জিভের মধ্যে একটা কামড় দিয়া কইলো ..
–ওরে মোর খোদা.. এইটা তো মোর বাপের ঔষধের কাগজ। চিঠিটা তাইলে মোর বাড়িতেই রাইখা আসছি।
–আমি ভাই আর এই কাজ করতে পারমু না। এইটা রাখতে গিয়াই ধরা খাইছি। আর রিস্ক নিতে পারমু না।

–আচ্ছা আচ্ছা বাদ দে অন্য একটা উপায় বের কর। আরো সহজ উপায়। যেইটা করলে আমি নিশার সামনা সামনি যাইয়া মনের কথা কইতে পারবো।

–উপায় বের করা কি এত সহজ। ভালো মন্দ না খাইলে কি মাথায় বুদ্ধি আসে?
–হ বুজছি তোর বুদ্ধির ঔষধ মানে বিরিয়ানি লাগবো। চল ..

পেটপুরে বিরিয়ানি খাইয়া দাত খোঁচাখুঁচি করতেছি।বড়ভাই আমার দিকে হা কইরা তাকায়া আছে।আহারে ..বেচারার জন্য কষ্ট হচ্ছে। প্রেমিক হতে গেলে কতকিছুই না সেক্রিফাইস করতে হয়। যাইহোক আমার ভেবে কাজ নেই। আমাকে বিরিয়ানি খাওয়ালেই চলবে।

–ভাই আপনার জন্য একখান সেইরাম আইডিয়া বাহির করছি।
–জলদি ক।
–আমার বদলে আপনি কয়দিন নিশার টিউশনি করান।
–কসকি! কিন্ত আমিতো পড়াইতে পারিনা। আমি তো নিজেই পরীক্ষায় গোল্লা পাইতাম আমি আবার পড়াবো অন্যকে।

–আরে ধুর ওই মেয়েকে এমনিতেও পড়াইতে হবে না। আপনারে পাইলে তো দুইয়ে দুইয়ে চার। আপনি হয়ে যাবেন তার মনের মতো মাস্টার।

–কসকি! মেয়ে পড়ানো এত্ত সোজা! তাইলে কাল থাইকাই লাইগা পড়ি কি কস?
–ওই থামেন ..এইজন্য শর্ত আছে একটা।
–তোর আবার কিসের শর্ত?

–যতদিন টিউশনি করাবেন ততদিন আমারে বিরিয়ানি খাওয়াইতে হবে।আপনার জন্য কত বড় একটা সেক্রিফাইস করতেছি আমি।

–তাইতো ..তুই আমার জন্য নিজের টিউশনি টাও দিয়ে দিলি। আজ যদি আমার নিজের একটা ভাই থাকতো সেও হয়তো এতটা করতো না। তুই মহান রে ভাই।তোকে সবকিছু খাওয়াবো ভাই।

…বলদটা দেখছি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে। তারপর চোখ মুছতে মুছতে চলে যাবে আমি আটকিয়ে বললাম ..

–রিক্সা ভাড়াটা কে দিবে?

বড়ভাই বিশ টাকার একটা নোট ধরায়া দিয়া চলে গেলো। যাক বাবা এতদিনে একটু শান্তি। নিশা পাগলির সাথে ঘ্যানর ঘ্যানর থেকেও মুক্তি আবার প্রতিদিন কাচ্চি বিরিয়ানি তো আছেই। আহ শান্তি শান্তি।

পরের দিন প্লান মতো বড়ভাইকে নিশাদের বাড়িতে নিয়ে গেলাম। আর নিশা আর ওর মাকে বললাম আমার বন্ধু কদিন নিশাকে পড়াবে আর আমি একটু গ্রামের বাড়িতে যাবো।অনেকদিন বাড়ি যাইনা। যাইহোক কাজ হলো। আমি আবার বেকার হয়ে গেলাম সেদিনের পর।কিন্ত বেকার হওয়া সত্ত্বেও পেটে বিরিয়ানি চালান দিচ্ছি। পুরাই যেন জমিদার।ওদিকে ডন বাবাজি সুবিধা করতে পারছে না। না পারে পড়াতে না পারে প্রেমের কথা বলতে। পাড়ার ছোকরা দের সাথে তো ভালোই মাস্তানি দেখায় আর এখন মেয়ের সামনে হাঁটু কাপে।

দুইদিনের মাথায় বিরিয়ানি খাইতে যাইয়া দেখি ডন বাবাজির খুব মন খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম ..

–কি হইছে ভাই? এখনো নিশাকে কিছু বলেন নাই?

–আর কি বলবো? আমিতো সাইন্সের সাবজেক্ট এমনিতেই পারিনা। ওরেও কিছু পড়াইতে পারিনা। মেয়েতো আমার দিকে চায়া চায়া খালি হাসে আর ওর মায়ে তো আরো ড্যাঞ্জারাস ..বার বার খালি উকি মাইরা দেইখা যায় পড়াইতেছি কিনা। মনেহয় ধরা পইরা যামু।

–ধুর ভাই ডরাইলে চলে! লেগে থাকতে হবেতো।
–হ্যাঁ। তুই আছিস বলেই একটু সাহস পাচ্ছি।
…হ ভাই তুই লেগে থাক। তুই লেগে থাকলেই কয়টা দিন ভালো মন্দ খাইতে পারমু ..
–কিছু বললি?
–নাহ নাহ .. লেগে থাকুন।
–আচ্ছা দোরাগার বউটা এত কিপ্টা কেন রে?
–ক্যান ভাই কি হইছে?
–চা ছাড়া কিচ্ছু খাওয়ায় না।

–ওহ ..হাহাহা ..এই ব্যপার! আপনাকে একটা আইডিয়া দিবো। সেইটা কাজে লাগাইতে পারলে প্রতিদিন আপনার কপালে ভালোমন্দ নাস্তা জুটবে।

–তাই নাকি! তাহলে জলদি বল ..
–কিন্ত তার জন্য আমি কি পাবো ..আমার ভাগের নাস্তা আপনি খেয়ে নিবেন অথচ আমি কিছু পাবোনা?
–তুই কি চাস?
–আমাকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর পাশাপাশি পিৎজা খাওয়াইতে হবে।
–আচ্ছা তাই হবে।
….হেহেহে..বাবাজি আমার কাছ থেকে ভ্যাট নিতে চাইছিলা..এখন দেখো আমি তোমার কত জায়গায় ভ্যাট বসাই। …
–কিছু বললি?

–নাহ..পিৎজা খামু চলেন ..আর সেখানেই আইডিয়াটা কমু।
পিৎজা খাইতে খাইতে বললাম …

–আপনাকে যে আইডিয়াটা দিমু সেইটা হইলো কৈ এর তেলে কৈ ভাজার আইডিয়া।
–বাহ বাহ ..

–হুম..আপনি টিউশনিতে যাওয়ার সময় আম আর লিচু পেয়ারা এইসব কিনে নিয়ে যাবেন।এতে আপনার একটু খরচা করতে হবে। আর তাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বলবেন গ্রাম থেকে আপনার মা পাঠিয়েছে। আর আপনি সেগুলো তাদের জন্য আনলেন। তারপর আন্টিকে একটু প্রশংসা করবেন। দেখবেন মা মেয়ে দুজনেই আপনাকে মাথায় নিয়ে নাচবে। একেবারে জামাই আদর করা শুরু করবে।খরচ করবেন একদিন আদর পাইবেন প্রতিদিন।

–কস কি মমিন..তোর মাথায় এত আইডিয়া আসে ক্যামনে রে ভাই?
–ওইসব বাদ দেন ..আগে বিশ টাকার নোট দেন একটা ..হাইটা বাসায় যাইতে পারমু না।

বড়ভাই বিশ টাকার নোট দিলো। আমি বাসায় চলে গেলাম। এভাবেই পাঁচ দিনের মতো কেটে গেলো।আমি নিশাদের বাড়ির আশেপাশে যাইনা। গেলেই তো ধরা পড়ে যাবো।ওদিকে ডন বাবাজি ভালোই জামাই আদর খাচ্ছে।খাক তাতে আমার কি..আমি রোজ বিরিয়ানি আর পিৎজা পাইলে হইলো ..

ছয়দিনের মাথায় বড়ভাই বিরিয়ানি খাওয়ানোর সময় দেখলাম তার মন খুবই খারাপ।জিজ্ঞাসা করলাম ..

–কি হইছে ভাই? মন খারাপ ক্যা?

–আর কইস না ভাই..জামাই আদর খাইতে গিয়াই সব শেষ .. এখন তো শাশুড়ি আইসা সামনে বইসা থাকে .. আর গল্প করে ..প্রেমের কথা নিশারে কই ক্যামনে .. এখন তো শাশুড়ি কাবাব মে হাড্ডি হইয়া গেলো।
–হুম..এটাতো আরেক প্রবলেম।
–এই প্রবলেমের সল্যুশন ও পাইয়া গেছি।
–তাই নাকি! কি?

–এইকদিনে বুঝে গেছি নিশা তো নিশ্চিত আমাকে পছন্দ করে। তাই আজ রাতে আমরা দেয়াল টপকিয়ে তার সাথে দেখা করে মনের কথা বলবো..

–আমরা মানে? ভাই মাফ করেন ..দারোগার বাড়ির দেয়াল তাও আবার রাতে!!! ভাই আমি বাড়ি যাই..আজ পিৎজা খামুনা …

–হারামজাদা তুই খাবিনা মানে..খাওয়ার বেলায় আছোস আর কামের বেলায় নাই! তুই যদি না আসিস তোরে ডাবল ভ্যাট দিতে হইবো..

পড়লাম আরেক মুসিবতে। কি আর করার ..শেষ পর্যন্ত রাজি হইলাম। ভ্যাট ও মাফ হবে পিৎজা বিরিয়ানি ও জুটবে। তাই একটু রিস্ক নেয়াই যায়।

রাত দশটা।
ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমি আর ডন বাবাজি দারোগার বাড়ির পেছনে দাড়িয়ে। দেয়াল টপকিয়ে বাগান বাড়িতে ঢুকবো। তারপর নিশার রুমের পেছনের জানালা দিয়ে নিশাকে ডাক দিবো। ডন বাবাজি একখান চিঠিও নিয়া আসছে নিশাকে দেবে বলে।আহা .. প্রেমিক হতে গেলে কতইনা রিস্ক নিতে হয়। বড়ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো..
–কিরে টপকাস না ক্যান?
–ছি ভাই .. কি বলেন? হিরো আপনি আর জোকার হয়ে আমি কিনা আগে দেয়াল টপকাবো! এইটা কিছু হইলো!
বড়ভাই কথা শুইনা দেখি বুকখানা শাস নিয়া ছাপ্পান্ন ইঞ্চি কইরা ফেললো। এহ ..ইচ্ছা করে লাথি মাইরা হিরোগিরি ছুটাই দেই। রাত বিরাইতে আইছে ইফটিজিং করতে। আমি কাইটা পড়তে পারলে বাচি। বড়ভাই আমার দিকে তাকায়া কইলো..

–শুন তাহলে, আমি প্রথমে পার হমু ..তারপর তোকে সিগন্যাল দিমু। তখন তুই পার হবি। আর যদি সিগন্যাল দেওয়ার পরও লেট করিস তাহলে এতদিন যতগুলো বিরিয়ানি খাইছোস সবগুলা তোর পেটে ঘুষি মাইরা বাহির করমু।

কি আর করার। তুইও মরবি আমারেও মারবি। বিরিয়ানি তো খুব শান্তি কইরা খাইছি তোর সাথে না মইরা উপাইও নাই। বড় ভাই বিসমিল্লাহ বইলা আমার দিক তাকাইয়া দেয়ালে ঝুলা শুরু করলো। আমি বুড়া আঙ্গুল দেখাইয়া কইলাম বেস্ট অব লাক। ওইপাশে যাইয়া সিগন্যাল দিয়েন। তারপর বড়ভাই ওইপাশে লাফ দিলো। ধুপ করে একটা আওয়াজ হলো। তারমানে বড় ভাই ওইপারে গেছে। এখন আমার পালা নরকে ঝাপ দেয়ার। রেডি হই। কিন্ত হঠাৎ শুনলাম ঘেউঘেউ শব্দ। কুকুরের চিল্লানি শুনে মনে হলো সেটা দেয়ালের ওইপাশে।

তখনই মনে হলো..নিশাদের বাড়ির সেই হিংস্র কুকুরটার কথা।বেটার নামও টাইগার রাগও টাইগার এর মতো।একবার এক চোরের আঙ্গুল কামড়ে ছিড়ে নিছিলো। ডন বাবাজির কপালে আজ দুঃখ আছে। হঠাৎ শুনলাম ডন বাবাজি চিৎকার করে উঠলো।
–বাবা বাঁচাও মা বাঁচাও ..

যাক আমি এই ফাকে কেটে পড়ি। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আমি আস্তে আস্তে কেটে পড়লাম। ডন বাবাজি নিশ্চয়ই নিজের বুদ্ধি দিয়ে পালাতে পারবে ..কিউকি, ডন কো পাকার মুশকিলি নেহি নামুমকিন হে ..
কষ্ট শুধু একটাই কাল থেকে হয়তো আর বিরিয়ানি পিৎজা জুটবে না।

 

পরেরদিন নিশার সামনে পড়ে গেলাম।
–ভাইয়া, আপনি বাসা থেকে কবে ফিরলেন?
–এইতো একটু আগে।
–ওহ … আপনি জানেন কাল রাতে আমাদের বাসায় চোর এসেছিলো!
–হ্যাঁ জানি!
–জানেন!
–আরে না না .. আমি কি করে জানবো? তারপর কি হলো? চোরকে ধরতে পারলে?
–কি যে বলেন .. আমরা সবাই টাইগারের চিৎকার শুনে জেগে উঠি ..পড়ে দেখি টাইগার চোরটাকে তারা করছে। অন্ধকারে চোরটার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্ত সে জানের ভয়ে কি যে দৌড় দিলো। দেয়াল টপকানোর সময় টাইগার তার এক পাটি সেন্ডেল খুলে নিয়েছে হাহাহা।

–তাই নাকি! বাহ .. ভাগ্যিস বেচারা পালাতে পেরেছে।
–আপনি চোরটার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। আমিতো বেটাকে সামনে পেলে ছিড়ে ফেলতাম। আমাদের বাড়িতে চুরি! আচ্ছা যাইহোক ..আজ থেকে পড়াতে আসবেন ত?

–হ্যাঁ কি আর করার। চোরটা যখন বিদায় হলো আসতে তো হবেই।
–মানে!
–ইয়ে মানে না মানে ওই আমার বন্ধুটা তো আর আসতে পারবে না তাই আমাকেই তো আসতে হবে।
–হ্যা বিকালে দেখা হবে তা হলে!

হ আজ থেকে তো আবার প্যারা শুরু।

যাইহোক সেদিন বিকালে আমি অনেক ফলমূল কিনে নিয়ে গেলাম নিশাদের বাসায়।একটু কৈ এর তেলে কৈ ভাজবো আরকি। বিরিয়ানি পিৎজার কষ্ট ভুলে যাওয়ার জন্য এছাড়া আর উপায় নাই। মিস হয়ে যাওয়া বিরিয়ানি পিৎজা গুলো উসুল করে নিতে হবেতো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত