স্কুলের পথে বাবাই

স্কুলের পথে বাবাই

বাবাই গ্রামের ছেলে। পড়ালেখায় মন বসে না তার। স্কুলে যেতে চায় না সে। মাঝে মাঝে স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে বসে থাকে। গাছের নিচে। সেদিন সে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে। হঠাৎ তার মনে হলো, ক্লাসে আজ মজিদ স্যারের ইংরেজি পড়া মুখস্থ হয়নি। ক্লাসে পড়া না পারলে বকা তো খাবই, স্যারের হাতে মারও জুটতে পারে। তার চেয়ে আজ স্কুলেই যাব না।

বটগাছের নিচে দাঁড়াল বাবাই। বই-খাতা বটগাছের শেকড়ের ওপর রাখল। মাঠে গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে। সে দেখতে লাগল। একটু পর হাতে একটা পাটকাঠি নিল। পাটকাঠি দিয়ে মাটিতে আঁকতে লাগল।

ঘর আঁকে। বাঘ-ছাগলের খেলার ঘর। এমন সময় একটা লোক পাশে এসে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর বাবাইকে বলল, ‘এই ছেলে, তুমি বাঘ-ছাগলের ঘর আঁকছো কেন? খেলবে কার সাথে?’
বাবাই লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি একাই খেলব।’
লোকটি বললেন, ‘একা একা কি বাঘ-ছাগল খেলা যায়?’

‘হ্যাঁ, যায় তো।’
‘কেমন করে?’
বাবাই তার দুই হাত দেখিয়ে বলল, ‘আমার এই যে দুই হাত আছে। দুই হাত দিয়ে খেলব। এক হাত বাঘের গুটি টানবে, আর অন্য হাত ছাগলের গুটি।’
লোকটি বাবাইয়ের কথা শুনে হেসে ফেলল। তারপর বলল, ‘তোমার তো বেশ বুদ্ধি। একা একা খেলে কি মজা পাবে?’
‘আপনি খেলবেন? যদি খেলেন, তাহলে আমার দুজন মিলে খেলি।’
লোকটি বাবাইয়ের বই-খাতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘খেলতে পারি। কিন্তু আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তোমাকে। তুমি কি উত্তর দেবে?’
‘কী ধরনের প্রশ্ন করবেন। আমি কি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারব।’
‘সহজ প্রশ্ন। উত্তর দিতে পারবে।’
‘কী প্রশ্ন? বলেন তো।’

‘তাহলে শোনো, তোমার বাবার নাম যদি জিজ্ঞেস করি, তুমি কিন্তু হাজারো ভয়ের মাঝে উত্তর দিতে পারবে। পারবে না? অবশ্যই পারবে। কারণ বাবার নাম কেউ ভুলতে পারে না। তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।’

বাবাই লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা, আপনি প্রশ্ন করুন।’
‘তুমি স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে এখানে বসে আছো কেন?’
বাবাই মন খারাপ করে ছক করা ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্কুলে যেতে ভালো লাগে না আমার। ক্লাসে
মজিদ স্যারের পড়া মুখস্থ হয়নি। তাই আজ স্কুলে যাব না।’

লোকটি অবাক হয়ে বলল, ‘বলো কী তুমি! স্কুলে বাদ দিয়ে বাঘ-ছাগলের খেলা খেলবে! এটা তোমার জন্য বড় ক্ষতিকর। এবার বলো ক্লাসের পড়া হয়নি কেন? বাড়িতে পড়ালেখা করো না। তোমার বাবা-মা পড়াতে বাসান না।’

মাঠের গরুগুলোর দিকে তাকিয়ে বাবাই বলল, ‘আমার বাবা-মা তো পড়ালেখা জানে না। বাবা-মা চায় না আমি পড়ালেখা করি। তারা চায়, পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজ করি।’
লোকটি বাবাইয়ের কথা শুনে আবারও অবাক হয়ে বললেন, ‘কী বলো তুমি!’
‘সত্যি বলছি।’
‘তুমি কি বড় হতে চাও না?’
‘কীভাবে বড় হওয়া যায়। আমি তো কিছুই জানি না।’
‘তোমাকে যদি আমি বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাই, তাহলে কি তুমি সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করবে?’
‘অবশ্যই করব। আপনি বলেন।’
‘প্রথমে বলি, তুমি কি পড়ালেখায় মনোযোগ দাও না। দিতে পারো না। সে কৌশল তো তোমার জানা নেই। এখন থেকে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে হবে তোমাকে।’
বাবাই মন খারাপ করে বলল, ‘মনোযোগ আমার বসে না পড়ালেখায়। কীভাবে মনোযোগ বসাতে হয়, তা আমার জানা নেই।’

‘পড়ালেখার কিছু কৌশল আছে। তোমাকে বলছি, শোনো, মনোযোগ দিতে হলে প্রথমে তোমাকে অক্ষর, শব্দ, বাক্যকে আপন ভাবতে হবে। যেমন, সব সন্তান তার বাবা-মাকে আপন ভাবে। অক্ষরকে তুমি তোমার প্রিয় মানুষের নামে খুঁজেবে। তাহলে মনে থাকবে। সহজে ভুলবে না। তারপর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য ভাবতে হবে তোমার আপনজন। তখন বুঝতে পারবে, অতি সহজে পড়ালেখায় মন বসবে তোমার। মুখস্থ হবে সব তাড়াতাড়ি।’
শেকড়ের ওপর রাখা বইগুলোর দিকে তাকিয়ে বাবাই বলল, ‘আচ্ছা, আজ থেকে তা-ই করব।’
‘ঠিক আছে। তাহলে খেলা বাদ দিয়ে স্কুলে যাও।’

বাবাই শেকড়ের ওপরে রাখা বই-খাতাগুলো হাতে নিল। তারপর বলল, ‘চলেন।’
লোকটি বলল, ‘চলো, আমিও তোমার স্কুলের সামনে দিয়ে বাজারে যাব।’

গল্প করতে করতে রওনা হলো দু’জন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত