ভকম

ভকম

স্কুল থেকে ফিরে সান্টু দেখল উঠোনের এককোনে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে একটা লাল রঙের গরু বাঁধা আছে। বই খাতা রেখেই দৌড় লাগালো গরুটির কাছে। সামনে, পিছনে, দুপাশে বারবার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। ঠিক এখনো গরু হয়ে ওঠেনি প্রাণিটি। বাছুর থেকে সবে দুধ ছাড়ান দিয়ে খানিকটা বেড়ে উঠেছে।

গরুটা দেখতে মোটামুটি শান্ত প্রকৃতিরই বলা চলে। তবে মাঝে মাঝে চোখ মোটা করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাম্বা রবে বাতাস কাঁপানো ডাক ছাড়ছে। তখন বেশ উত্তেজিত দেখাচ্ছে। চেনা পরিবেশ ছেড়ে অচেনা পরিবেশে আসার জন্যই এমনটা করছে সে। তাছাড়া সদ্য মাকে ছেড়ে এসেছে। উত্তেজিত হওয়ার সেটাও আরেকটা কারণ।

গরুটিকে ঘিরে কৌতুহলের শেষ নেই সান্টুর। বারবার দেখতে দেখতে তার মনে হলো এরকম একটা গরু তাদের থাকলে ভালই হতো। সে ঘাস কেটে আনবে গরুর জন্য। নদীর ধারে অনেক লম্বা লম্বা ঘাস। কচা গাছের পাতা দিয়ে ঝেঁঝি ধরার জন্য নদীর পাড়ের ওই যায়গাটা একেবারে আদর্শ। লম্বা লম্বা ঘাসের ডগায় লাল, হলুদ, নীল-সবুজের বাহারি ঝেঁঝি ওড়িউড়ি করে। দুয়েকটাতো রীতিমতো হেলিকপ্টারের মতো দেখতে। ফড়ররর ফড়ররর করে উড়ে বেড়ায়। ওগুলো ধরা খু্বই কঠিন। দাদী বলেন এদের নাম গঙ্গা ফড়িং। তবে পাড়ার সবাই ঝেঁঝি বলেই ডাকে। ওরও সেটা বলতেই ভালো লাগে।

গরুর ব্যাপারে ওর কৌতুহল দেখে দাদী এগিয়ে আসেন। কাদের গরু জিজ্ঞেস করতেই দাদী একগাল হেসে বলেন, ‘আমাদের।ওর একটা নাম ঠিক কর ফুলবাবু।’ বেজায় খুশি হয় সান্টু। অনেক গবেষণার পর গরুটির নাম ঠিক হলো ‘লালি’।

লালির মা দেশি জাতের। তবে লালি নাকি জার্সি জাতের। ও শংকর জাতের হয়েছে। এ জাতের গরু নাকি অনেক দুধ দেয়। বিক্রেতা বলে গেছেন। লোকটা নাকি লালিকে ছেড়ে যাওয়ার সময় খুব কেঁদেছিল। খুব আদরের গরু কি না। এ কথা শুনে সান্টু ঠিক করে সেও লালিকে খুব যত্ন করবে। দাদী বলেন, ‘এটা বড় হলে যে দুধ দেবে, সেই দুধ খেয়ে তোর অনেক শক্তি হবে, বুদ্ধি হবে। তুই অনেক লেখাপড়া করতে পারবি।’ শুনে সান্টুর খুব ভালো লাগে। সে আর দাঁড়ায় না, দৌড়ে চলে যায় নদীর পাড়ে ঘাস তুলতে। পেছন থেকে দাদী সস্নেহে হাসেন।

লালির দেখভালের জন্য একজনকে ঠিক করা হলো। স্টেশনের পাশে একটা ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে সে তার মা আর এক ছোটো ভাই মিলে থাকে। তার নাম গাফফার। চেহারা দেখে বয়স আন্দাজ করা মুশকিল। তবে ১৭/১৮ হবে বলেই মনে হয়। পরদিন সকালে হাতে একটা চটের ব্যাগ ঝুলিয়ে হালকা খোঁড়াতে খোঁড়াতে গাফফার সান্টুদের বাড়িতে হাজির। চটের ব্যাগের মধ্যে তার কাপড় চোপড়। এখন থেকে সে সান্টুদের বাড়িতেই থাকবে।

গাফফার এসেই লালির কাছে গিয়ে পিঠে সজোরে একটা চাপড় বসিয়ে দিল। চাপড়ের চোটে লালির পিঠ দেবে গেল একহাত। উচ্চস্বরে হাম্বা রবে একটা ডাক ছাড়ল লালি। ফোঁস ফোঁস করে দূরে সরে গিয়ে বড় বড় চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে লাগল। বাড়ির সবাই বারান্দায় বসে তার কাণ্ডখানা দেখে তো অবাক। হাতের ব্যাগটা দোলাতে দোলাতে এবার বারান্দার কাছে এসে সে বলে, ‘একে দেখাশুনা করা লাগবে?’ কণ্ঠে তাচ্ছিল্যের সুর স্পষ্ট।

তাকে একটা ঘর ঠিক করে দেওয়া হলো। ঘরে গিয়ে চটের ব্যগটা রেখে ফরমায়েশ দিল- ঘাস কাটার জন্য তার একটা কাঁচি দরকার। ধারালো হতে হবে। খড় কাটার জন্য প্রয়োজন বটি। তা ছাড়া লালিকে খাওয়ানোর জন্য দুটো নান্দা বা চাড়ি। বড় একটা ঝুড়ি। খোল-ভূসি রাখার পাত্র ইত্যাদি। সান্টুর মাকে অবলিলায় ‘মামি’ ডেকে জিনিসপত্রগুলো কেনার জন্য টাকা নিয়ে চলে গেল বাজারের দিকে। তার হাবভাব দেখে মনে হলো সে অনেক দিন থেকেই সবাইকে চেনে।

কয়েকদিনের মধ্যে সবাই গাফফারের কাজকর্ম দেখে অবাক হয়ে গেল। প্রচুর খাটতে পারে সে। লালিকে দুদিনেই একে বারে ঘসে মেজে চকচকে করে তুলেছে। যত্ন পেয়ে লালি প্রথমদিনের পরিচয়ের কথা একেবারেই ভুলে গেছে। এখন গাফফারকে কাছে যেতে দেখলে গলা বাড়িয়ে উঁচু করে রাখে। গাফফার গিয়ে গলা চুলকে দিলে সেও কর্কশ জিভ বের করে ইতি উঁতি চেটে দেয়। ভালই জমেছে তাদের।

প্রথম দিন থেকেই সান্টু কেমন যেনো পছন্দ করতে পারেনি গাফফারকে। তার আচরণই মূলত সেজন্য দায়ী। তবে একেবারে যে এড়িয়ে চলে সেরকম না। কথাবার্তা সবই চলে। গাফফার দেখেতে উঁচু-লম্বায় তেমন আহামরি কিছু নয়। গায়ের রং ছাতার কালো কাপড়ের চেয়ে একটু উজ্জ্বল। হনু দুটো উঁচু, গাল বসা। খুলির সাথে কামড়ে থাকা রুক্ষ চুল। কানপাকার সমস্যা আছে। একটা বোটকা গন্ধ সারাক্ষণ তার আশপাশের বাতাস সুরভিত করে রাখে। হাঁটারসময় ডান পায়ে একটু বেশি ভর দিয়ে হাঁটে। এজন্য মনে হয় খুঁড়িয়ে হাটছে। সামান্য নাকি সুরে কথা বলে। হঠাৎ করে তার কথা বোঝা মুশকিল। হাসলে চোখদুটো একেবারেই প্রায় বুজে যায়। মুলো সাইজের হলদেটে দাঁত বেরিয়ে পড়ে।

সান্টু তার যে অভ্যাসটা একেবারেই পছন্দ করতে পারেনি সেটা হলো খাওয়ার সময়ের কর্মকাণ্ড। প্রথম দিনেই তার খাওয়ার পরিমাণ দেখে সবার চোখ চড়ক গাছে ওঠার জোগাড়। বাড়ির সবার সম পরিমাণ খাবার সে প্রতিবেলাতে একাই সাবাড় করে। সেটা কোনো বিষয় না। একজন মানুষ পরিশ্রম করলে এরকম খেতেই পারে। তবে খাওয়ার সময়ে তার কর্মকাণ্ড দেখার মতো বিষয় হয়ে ওঠে। গামলা ভর্তি ভাত সে পুরোটা মেখে ফেলে। তিন চার পদের তরকারি এক সঙ্গে মেখে তাতে আবার কয়েকটা কাঁচা মরিচ ডলে নেয়। সাথে থাকে কাঁচা পেয়াজ। মুঠো ভর্তি করে খাবার নিয়ে মুখে ঢোকানোর সে কি আপ্রাণ চেষ্টা! যেটুকু ঢোকে তার চেয়ে বেশি আবার গামলাতেই ফিরে আসে। এরপর বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঠেসে ঠেসে আরো কিছুটা ভাত ঢুকিয়ে তারপর আয়েশ করে চিবানো শুরু করে। মুখের দুপাশ ফুলে ওঠে পুরির মতো। হঠাৎ দেখলে মনে হবে মুখের দুপাশে দুটো টেনিস বল ঢুকিয়ে চিবাচ্ছে সে।

এই অবস্থাতে চলে অবিরাম কথা বলার চেষ্টা। তার জীবনের কোথায় কোন বাড়িতে মাইন্দার ছিল সে। কোথায় খেতে দিত না। আর কোথায় জামাই আদর করত এইসব ফিরিস্তি। সে সময় দুএকটি ভাত মুখ থেকে খসে আবার গামলায় ফিরে আসে। আবার কিছু বুলেটের গতি নিয়ে আশপাশে থাকা মানুষের দিকে ছুটে যায়। ওর এই অবস্থা দেখে এখন সবাই ওকে নিয়ে আর এক সঙ্গে খেতে বসে না। হয় আগে না হয় সবার পরে খায় সে। দাদী তাকে প্রথমদিন খুব করে বুঝিয়েছেন। তাতে কাজ হয়নি দেখে ধমক ধামক দিয়ে আরেকদিন বুঝিয়েছেন। তারপর হাল ছেড়ে দিয়েছেন। জন্মকালীন অভ্যাসে ছাড়বে কি করে? সেটা বুঝেই কেউ আর কিছু বলেনি তাকে।

সব ঠিকঠাকই চলছিল। বিপত্তিটা বাধল যখন জাহাঙ্গীর কাকা তার পেছনে লাগল। ওর নানা কর্মকাণ্ড আর আচরণ দেখে কাকা তার নামকরণ করে বসল ‘ভকম’। প্রথম দিন থেকেই ‘ভকম’ নামটা সে একেবারেই সহ্য করতে পারেনি। এ কারণেই জাহাঙ্গীর কাকা তার জীবনের শত্রু হয়ে দাঁড়াল। গালিগালাজ থেকে কান্নকাটি পর্যন্ত করেছে সে। নানা রকম নালিশও জানিয়েছে সান্টুর বাবার কাছে। কাজ হয়নি। জাহাঙ্গীর কাকা একেবারেই অপ্রতিরোধ্য। কারো কথা সে শুনলেতো? তার নাগাল পাওয়াও মুশকিল। এজন্যই জাহাঙ্গীর কাকাকে সান্টুর এতো ভালো লাগে। তার কাজকর্মই অন্যরকম। সেও এখন থেকে গাফফারকে ভকম বলে ডাকবে বলে মনস্থির করে। তার মুখে ‘ভকম ভাই’ শুনতে একটু অন্যরকম লাগলো। সেজন্যই বুঝি গাফফার তাকে তেমন কিছু বলেনি। ধীরে ধীরে পৈত্রিক নাম গাফফার হারিয়ে গিয়ে সারা গ্রামের মানুষের কাছে সে হয়ে উঠল ভকম। একই সঙ্গে জাহাঙ্গীরও তার প্রাণের শত্রু হয়ে উঠল। ছোটবড় সবাই মিলে এখন তাকে এই নামেই ডাকে। সেও মেনে নিয়েছে, এখন আর আগের মতো খেপে না। তবে জাহাঙ্গীর যদি তাকে ভকম মামু বলে ডেকেছে তাহলে আর রক্ষে নেই। চিৎকার করে, গালি দিয়ে পাড়া মাথায় তোলার জোগাড়।

একদিন হঠাৎ করেই জাহাঙ্গীর কাকা ছবুরকে সঙ্গে নিয়ে সান্টুদের বাড়ি এসে হাজির। ছবুরের গায়ের রং আলকাতরা গোলা। দাঁত ভয়াবহ উঁচু। মাড়ি দেখা যায়। মা ছবুরকে ভালই চেনেন। ছোটোখাটো চুরি চামারি করে বেড়ানো লোক। ছিঁচকে চোর সে। পাশের গ্রামে বাড়ি। জাহাঙ্গীর কাকা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসায় মা কিছুটা রাগই করেন। তবে জাহাঙ্গীর কাকা যখন বলেন, ‘ছবুর চুরি ছেড়ে দিয়ে এখন ঘটকালি করছে’- মা তখন হেসে ফেলেন। ভকমের বিয়ের ব্যাপারে ছবুর ঘটকালি করবে। ভকমের বিয়ে শুনে সান্টু হৈ হৈ করে ওঠে। ছুটে চলে যায় ভকমের ঘরে। এই প্রথম ভকমের ঘরে যাওয়া তার। উল্লেখযোগ্য রকমের নোংরা করে রাখে বলে সে ঢোকে না ওই ঘরে। গিয়ে দেখে ভকম এতক্ষণ চুপি চুপি কথা শুনছিল। তাকে দেখে লজ্জায় কালো চেহারাটা আরো কালো হয়ে ওঠে। জিজ্ঞেস করে, ‘জাহাঙ্গীর মামু কি বলছিল রে সান্টু’? এই প্রথম জাহাঙ্গীরকে সে মামু বলে ডাকল।

বেশ কয়েকদিন ধরে মেয়ে দেখা চলছে ভকমের। মাঝেসাঝে এসে নানা গ্রামের মেয়েদের ব্যাপারে গল্প টল্প করে যায়। ভকমের জন্য যোগ্য মেয়ে পাওয়া খুব মুশকিল বলে একটু দেরি হচ্ছ॥ তবে খুব তাড়াতাড়ি যে মেয়ে পাওয়া যাবে সে ব্যাপারেও সান্তনা দিয়ে যায়। এদিকে ভকমতো বিয়ের কথা শোনা অব্দি জাহাঙ্গীরের পিছু ছাড়ে না। মামু মামু করে মুখে ফেনা তুলে ফেলার জোগাড়। শত্রুতা ভুলে জাহাঙ্গীরের লেজুড় হয়ে উঠেছে সে। লালির দিকেও তেমন খেয়াল রাখতে পারছে না বেচারা। জাহাঙ্গীর কাকাও সুযোগ বুঝে ভকমের কাছ থেকে ভালই খসাচ্ছে। বিড়ির বদলে এখন সে সিগারেট ধরেছে। বিড়ি খেলে নাকি তার কাশি হয়। এজন্য দিব্যি ভকমের পয়সায় সিগারেট চালিয়ে যাচ্ছে সে। তবে গাঁটিতে ঠিকই সেই আগের মতো বিড়িই গোজা থাকে।

অনেক খুঁজে অবশেষে ভকমের জন্য যোগ্য মেয়ে পাওয়া গেছে। মেয়ের একটা ছবি নিয়ে এসেছে আহাঙ্গীর কাকা। মেয়েটির নাকি বাবা মা কেউ নেই। মামার বাড়িতে মানুষ হয়েছে। খুব গরিব। মামি নাকি সবসময় তাকে মারধর আর বকাঝকা করে। খুব শান্ত আর লক্ষী মেয়ে। দেখতে নাকি পরির মতো। ভকমের জন্য একেবারে উপযুক্ত। এক প্যাকেট সিগারেট খরচ করে জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ছবিটি বাগিয়ে নিয়েছে ভকম। সারাদিন সঙ্গেই রাখছে। কাউকে দেখতে দিচ্ছে না। এমনকি সান্টুর মাকেও দেখতে দেয়নি। সান্টু খুব করে লেগে থেকেছে সারাদিন। দেখতে দেয়নি। অবশেষে রাতে ভকমকে খুব তেল মালিশ করে দেখার সুযোগ পেয়েছে সান্টু। দেখে তো চোখ একেবারে আমড়া হয়ে গেছে সান্টুর। এতো সুন্দর মেয়ের সঙ্গে ভকমের বিয়ে হবে! ভাবতেই পারছে না সে। সত্যিই পরির মতো। ছবির নিচের ছোট ছোট লেখাটা অতি কষ্টে বানান করে পড়ল সান্টু। সেখানে লেখা রয়েছে ‘ভিউ কার্ড, শ্রীদেবী’। মা জিজ্ঞেস করেন, ‘ভকম মেয়ে পছন্দ হয়েছে তোর’? সে উজ্জ্বল হাসি দিয়ে জানিয়ে দেয় খু-উ-ব পছন্দ হয়েছে।

আজ ভকমের বিয়ে। সান্টুর বাবা টাকা দিয়েছেন সমস্ত বাজার সদাই করার জন্য। বিয়ে সান্টুদের বাড়িতেই হবে, তেমন আয়োজন হবে না। রাতে মেয়ের বাড়ির কয়েকজন লোক মেয়েকে নিয়ে সান্টুদের বাড়িতে চলে আসবে। এখানেই বিয়ে পড়ানো হবে। মেয়ের মামার বাড়িতে নাকি বিয়ে পড়ানোর অবস্থা নেই। এখানেই তারা খাওয়া দাওয়া করবেন। জনা দশেক লোকের আয়োজন। বিয়েতে ভকমের বাড়ির কাউকে ডাকা হয়নি। জাহাঙ্গীর কাকা ভকমকে বলেছেন, বউ নিয়ে বাড়ি গিয়ে ভকমের মাকে চমকে দিতে। কথাটা ভকমের মনে ধরেছে। রাতে ধুমধাম করে খাওয়া দাওয়া হলো। এতো ধুম ধামের মধ্যে কোথাও ঘটক ছবুরকে দেখা গেলা না। এরকম ভোজ সে মিস করার লোক নয়।

ঝলমলে একটা শাড়ি পরে লম্বা ঘোমটা টেনে বউ চুপচাপ বসে আছে। কাউকে তার চেহারা দেখতে দিচ্ছে না। সান্টুর মাকে, দাদীকেও পাত্তা দিল না। কাছে গেলেই উঁউঁউঁউঁ শব্দের নাকি কান্না শুরু হয়ে যাচ্ছে। আর ভীষণ জোরে নাক টেনে সর্দি ভেতরে টেনে নিচ্ছে। খাওয়ার সময়ও কেউ তার চেহারা দেখতে পেল না। সবার দিকে পেছন ফিরে খেল সে। বড় প্লেটের সব খাবার একাই সাবাড় করে ফেলল। সবাই ভাবল- আহা, ভালো খাবার জোটেনি বলে হয়ত এরকম করে খেল। আর লজ্জা লাগবে বলেই বোধ হয় পিছন ফিরে খেয়েছে। এরই মধ্যে ভকমের বিয়ে হয়ে গেল এক ফাঁকে। বউকে ভকমের ঘরে নিয়ে গেল জাহাঙ্গীর কাকা। ভকমের ঘর এখন আর চেনার উপায় নেই। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে সে নিজে। বিয়ের পর একে একে বউয়ের মামার বাড়ির লোকজন কোন ফাঁকে চলে গেল কেউ টেরও পেল না। কারো কাছ থেকে বিদায়ও নেয়নি। সান্টুদের বাড়ির সবাই খুব অবাক হলো ব্যাপার স্যাপার দেখে। এরকম ঘটনা কেউ আগে দেখেনি। বিয়ের কনেকে রেখে সবাই যেনো একপ্রকার ভেগেই গেছে।

বিয়ের ঝক্কি ঝামেলা তখনো শেষ হয়ে পারেনি। হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে ভকমের চিৎকার শুনে সবাই ছুটে গেলো সেদিকে। আলু থালু শাড়ি পরা অবস্থায় ভকমের বৌ দরজা খুলে দৌড় লাগালো। এতো জোরে দৌড় দিতে পারে নববধূ তা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। দরজা খুলে হাতে একটা পরচুলা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভকম। সমানে চেচাচ্ছে সে। জাহাঙ্গীরের নামে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগলো। কি হয়েছে কেউ হাজারো জিজ্ঞেস করেও উত্তর পায় না। গালির তুফান ছোটাচ্ছে সে।

ওদিকে নতুন বউয়ের পিছনে অনেকেই দৌড় লাগিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে কয়েকজন মিলে কাকে যেন ধরে নিয়ে এলো। পরনে লুঙ্গি আর একটা লাল ব্লাউজ। হলুদ বাতির আলোয় দেখা গেল ছবুর দাঁত বের করে আছে। কাঁদছে না হাসছে বলা মুশকিল। তার পেছনে একজন নতুন বউয়ের শাড়িটি দলাপাকিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তবে আশপাশে জাহাঙ্গীরকে কোথাও দেখা গেল না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত