শেষ হাসি

শেষ হাসি

উদভ্রান্তের মত বসে আছি নিজের অফিসে।চোখে কেমন যেন অন্ধকার দেখছি।এটা অবশ্য অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।গত কয়েকদিন ধরে একটু বেশিই ড্রিঙ্ক করা হয়ে যাচ্ছে।ড্রিঙ্ক করার পর সাময়িক একটা মানসিক স্থিরতা লাভ হয়।ওটার লোভেই পেগেরপর পেগ মদ গিলছি ইদানীং।মানসিক শান্তি এখন আমার খুব বেশি প্রয়োজন।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে কাবার্ড থেকে একটা হুইস্কির বোতল বের করলাম।বিদেশী জিনিষ।মাঝে মধ্যেই বিদেশী ক্লায়েন্টরা আসে।তাদের আপ্যায়ন করতে প্রয়োজন হয়।আমি সাধারনত এখান থেকে খাইনা,তবে অফিসে আর কোনো বোতল না থাকায় এখানে হাত দিতে হল।

বোতলটা নিয়ে আমার চেয়ারে চলে এলাম।গ্লাসে ঢালতে ইচ্ছে করছেনা।ছিপি খুলে সরাসরিই গলায় ঢাললাম তরল আগুন।পুড়তে পুড়তে পাকস্থলিতে নেমে গেল তরল বস্তুটা।অস্থির ভাব কিছুটা কমল।

ঘোলাটে চোখে আমার সেল ফোনটার দিকে তাকালাম।ওটাকে আমার কাছে জলজ্যান্ত একটা আপদ মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে।উপায় থাকলে চারতলা অফিস থেকে নীচে ফেলে দিতাম।গত কয়েকদিন ধরে আমাকে একের পর এক খারাপ সংবাদই শুধু দিয়ে যাচ্ছে হতচ্ছাড়া ফোনটা।

এই তো একটু আগেই খবর পেলাম তিনকোটি টাকার যে অর্ডারটা প্রায়আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছিল সেটা আমাদের চির প্রতিদ্বন্দী রয়েল গ্রুপ হাতিয়ে নিয়েছে।

আমি আর আমার প্রিয় বন্ধু নাসের মিলে আমাদের এই বিশাল গারমেন্টসের ব্যবসাটা প্রায় চার বছরের পরিশ্রমে দাঁড় করিয়েছি।শুরু থেকেই আমাদের প্রতিদ্বন্দী রয়েল গ্রুপ।ওদের অনেক রকম ব্যবসা থাকলেও গারমেন্টসই হল মূল ব্যবসা।রয়েল গ্রুপের কর্ণধার কামাল শেখ খুবই ধূর্ত প্রকৃতির হলেও গারমেন্টস সেক্টরে আমাদের সাথে কখনোই কুলিয়ে উঠতে পারেনি।কিন্তু গত একবছর ধরে একের পর এক অর্ডার আমাদেরহাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে ওরা।আমরাযে ডিলই শুরু করতে যাইনা কেন কিভাবে যেন আগে ভাগেই সেটার খবর পেয়ে যায় কামাল শেখ।এরপর ওরা পার্টিকে আমাদের চাইতে কম খরচে একই প্রোডাক্ট দেয়ার অফার দেয়।বলাই বাহুল্য অর্ডারটা পেয়ে যায় রয়েল গ্রুপ।

আমরা যত কম অফার করি ওরা তার চাইতে কম অফার করে।প্রচুর অর্ডারথাকায় লাভও হয় ওদের।
আর আমাদের?গত একবছর ধরে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে যাচ্ছে আমাদের কোম্পানী।এভাবে কিছুদিন চললে ব্যবসাপাতি লাটে উঠবে।শেষ ভরসা ছিল নরওয়ের তিনকোটি টাকার এই ডিলটা।এটা পেলে আমরা আবার ঘুরে দাড়াতে পারতাম।কিন্তু কী থেকে কীহয়ে গেল,এটাও আমাদের হাতছাড়া।

পর পর তিন পেগ হুইস্কি গলায় ঢাললাম।মাথা কিছুটা কাজ করছে।খুব ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখলাম উত্তেজিত হয়ে কিছু করা যাবেনা।যা করার ভেবে চিন্তে করতেহবে।যদিও এই মুহূর্তে আমার মাথায়কোনো আইডিয়া নেই এরপরও সিদ্ধান্তটা নেবার পর কিছুটা স্বস্তি পেলাম।

আমার বন্ধু এবং পার্টনার নাসের তিনদিন আগে চিটাগং গিয়েছে ব্যবসায়িক একটা কাজে।কাল চলে আসবে।ও এলে ওর সাথে একটা পরামর্শ করে সামনে এগোতে হবে।দেখা যাক দু বন্ধু মিলে চেষ্টা করে আবার ঘুরে দাড়াতে পারি কিনা।

আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।বিশাল জানালাটার সামনেদাঁড়িয়ে বাইরে দেখছি।রাত গভীর হয়েছে।পুরো চারতলা বিল্ডিংটাতে শুধু আমার রুমেই আলো জ্বলছে।গারমেন্টসে কাজ প্রায় নেই বললেই চলে।সেজন্য ওভারটাইমেরও বালাই নেই।সবাই চলে গেছে সন্ধ্যা হতে না হতেই।শুধু রয়ে গেছি আমি একা।বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছেনা।অবশ্য আকর্ষণ করার মত কোনো কিছু আমার বাসায় নেইও।এখনো বিয়ে করিনি আমি।নাসেরও না।প্ল্যান করেছিলামএ বছরই দুবন্ধুতে একসাথে বিয়ে করব।কিন্তু ব্যবসার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছেনা সহসা বিয়ে আমার ভাগ্যে আছে।

হঠাত রিংটোনের শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গল।ফোনটা বাজছে।আমি এগিয়ে গিয়ে ফোন তুলে নিলাম।অপরিচিত নাম্বার।আবার কোন দুঃসংবাদ কে জানে!ফোনটা রিসিভ করলাম।আমাকে অবাক করে দিয়ে ওপাশ থেকে নাসের বলল,‘দোস্ত তুই এখন কোথায়?’ওর গলায়বেশ উত্তেজনা টের পাচ্ছি।কারনটা অবশ্য জানা নেই।

‘অফিসে।কেন,তুই কোথায়?এটা কার নাম্বার?’

‘নাম্বার বাদ দে।আমি সন্ধ্যার সময় ঢাকা এসেছি।আসার কিছুক্ষণ পরই শুনতে পেলাম দুঃসংবাদটা।’
‘তোর না কাল আসার কথা?’

‘কাজ শেষ হয়ে গেল।শোন,একটা সু খবর আছে।তুই কোথাও যাসনা।আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।আমার সাথে কামাল শেখও আসবে।’

আমি যারপরনাই বিষ্মিত হলাম।এত রাতে নাসের অফিসে আসছে আমাদের চির শত্রু কামাল শেখকে সাথে নিয়ে?‘তোর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।এখন বাজে রাত সাড়ে বারটা।এত রাতে কামালকে নিয়ে এখানে কি রাজ্য উদ্ধার করতে আসবি?’

‘ঠিকই বলেছিস,রাজ্য উদ্ধার করতেই আসছি।কামালকে আমি রাজি করিয়েছি আসার জন্য।ও অলরেডি রওনা হয়েও গেছে ওর অফিস থেকে।ওর সাথে আমাদের একটা চুক্তি হবে আজ।’

‘কী ধরনের চুক্তি?’আমি জানতে চাইলাম।

‘আচ্ছা সংক্ষেপে বলছি।দেখ,আমরা যে ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করি সেটা আমাদের দেশে হাতে গোনা কয়েকটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে।সেগুলোও তেমন মান সম্মত না।সুতরাং ধরতে গেলে আমরা এবং রয়েল গ্রুপই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দী।এখন আমরা যদি একটা সমঝোতায় আসি যে আমরা নিজেদের মধ্যে লড়াই না করে সমস্ত অর্ডার ভাগাভাগি করে নেব,তাহলেই কিন্তু আমরা এখন যেমন একজন আরেকজনকে টেক্কা দিতে গিয়ে কম মুনাফা পাচ্ছি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারব।তখন চাইলেই বেশি দাম হাকতে পারব আমাদের ক্লায়েনটদের কাছে।অনেকটা সিন্ডিকেটের মত?’

‘বুদ্ধিটা তো খুবই ভাল,কিন্তু কামাল রাজি হবে?’

‘সে জন্যই তো ওকে আসতে বলেছি।আমরাদুজন মিলে রাজি করাব ওকে।আর রাজি না হবার তো কোনও কারণ নেই।চুক্তি হলে এখন যে মুনাফা পাচ্ছে সে একই মুনাফা এর চাইতে কম প্রোডাক্টে পাবে ওরা।’

মানতেই হচ্ছে নাসের খুব ভাল একটা বুদ্ধি করেছে।আমি মনে মনে অত্যন্ত খুশি হয়ে উঠলাম।বললাম,‘ওকে,তাহলে কামালকে নিয়ে চলে আয়,আমি আছি।’

‘আচ্ছা শোন,আমরা অফিসে আসছি এটা যেন কেউ না জানে।তুই নাইট গার্ডকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আধঘন্টার জন্য কোথাও পাঠিয়ে দে।’

‘কেন?জানলে কী সমস্যা?’

‘আরে বুদ্ধু,চুক্তির ব্যাপার গোপণ রাখতে হবে।আমরা আর রয়েল গ্রুপ সেই “চিরপ্রতিদ্বন্দী”র ভূমিকাই পালন করে যাব।নয়ত চুক্তির ব্যাপার জানাজানি হলে আমরা বেশি দাম চাইতে পারবনা।এই সুযোগে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।’

আমি নাসেরের বুদ্ধিতে সত্যিই অভিভুত হয়ে গেলাম।বুঝতে পেরেছি।তুই চিন্তা করিসনা আমি গার্ডকে কিছুক্ষনের জন্য সরিয়ে দিচ্ছি গেট থেকে।তোর কাছে চাবি তো আছেই গেট খুলে চলে আসিস।

নাসের সম্মতি জানাতে আমি ফোন রেখে দিলাম।এরপর গার্ডকে ফোন করেবলে দিলাম ও যেন ঘন্টা খানেকের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আসে।গার্ডটা কোনো রকম উচ্চবাচ্য না করেই সায় জানাল।

প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হতেই শরীর জুড়ে কেমন একটা স্বস্তির ধারা বয়ে গেল।কামালের সাথে চুক্তিটা হয়ে গেলে আমাদের ব্যবসাটা আবার চাঙ্গা হয়ে যাবে।আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম।

দশ মিনিট যেতে না যেতেই অফিসের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।চারতলা পুরোটা জুড়েই আমাদের কর্পোরেট অফিস।নাসেরের রুম আমার পাশেই।

দরজা খোলার শব্দ পেয়ে আমি আমার কামরা থেকে বেরিয়ে এলাম।করিডর ধরে নাসের আর কামালকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।নাসেরের বয়স আমার মতই ত্রিশ বত্রিশ হবে।কামাল শেখ খানিকটা বয়স্ক।চল্লিশ থেকে পয়তাল্লিশের মত।ঝানু ব্যাবসায়ী।রয়েল গ্রুপ পুরোটা বলতে গেলে সে একাই চালায়।কামাল শেখ না থাকলে রয়েল গ্রুপের পুরো সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়বে অল্পদিনেই।

ওরা এসে আমার সামনে দাড়াতে আমি কামাল শেখের সাথে কুশল বিনিময় করে আমার রুমে নিয়ে গেলাম ওদের।
হুইস্কির বোতল এখনো অর্ধেকটা ভরা।তিনটে গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে দুটো বাড়িয়ে দিলাম কামাল আর নাসেরের দিকে।ওরা দুজন বসেছে আমার টেবিলের সামনের দুটো চেয়ারে।কামাল হাতে একটা গ্লাস তুলে নিল।নাসেরও বাকি গ্লাসটা তুলে উঠে দাড়াল।আমি ওর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতে ও বলল,‘তোরা আলোচনা শুরু কর আমি এখানেই আছি।’

নাসের গ্লাসটা নিয়ে আমার পেছনে চলে এল।জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে।আমি দেরী না করে কাজের কথা পাড়লাম,‘তা মি.কামাল,নাসের বোধহয় আপনাকে সব বলেছে?

আমার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই কামাল শেখের মাথা প্রচন্ডভাবে ঝাকি খেল।তবে সেটা আমার কথার সম্মতিতে নয়,বুকে গুলি খেয়ে!

আমি ভয়ানকভাবে চমকে উঠলাম।চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কামাল শেখের ধবধবে সাদা শার্টটা গাঢ় লাল বর্ণ ধারণ করছে আস্তে আস্তে।ক্ষত দিয়েচুইয়ে চুইয়ে রক্ত ঝরছে।

আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি নাসের একটা পিস্তল বাড়িয়ে ধরেছে।ব্যারেল থেকে এখনো হালকা হালকা ধোঁয়া উড়ছে।তবে পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো থাকায় প্রায় নিঃশব্দে গুলি বের হয়েছে।

আমি ঝট করে উঠে দাড়ালাম।নাসেরেরমুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললাম,‘তুই এটা কী করলি?মাথা ঠিক আছে তোর?’আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু কথা খুঁজে পেলামনা।

নাসের হুইস্কির গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে নির্বিকার স্বরে বলল,‘মাথা ঠান্ডা করে বোস,বলছি সব

প্রচন্ড উত্তেজিত হলেও সেটাকে সামলে নিয়ে চেয়ার ঘুরিয়ে নাসেরেরমুখোমুখি বসলাম।অজান্তেই একবার কামাল শেখের দিকে চোখ চলে গেল।বেচারা সরাসরি হৃৎপিণ্ডে গুলি খেয়েছে।সাথে সাথে মৃত্যু হয়েছে।

নাসের সেই আগের মত নির্লিপ্ত গলায় বলতে লাগল,‘দোস্ত,পুরো ব্যাপারটাই একটা প্ল্যান।আমিই আমাদের সমস্ত ডিলের খবর পরিচয় গোপণ রেখে কামাল শেখকে জানিয়ে দিতাম।ফলে রয়েল গ্রুপ আমাদের চাইতে লোভনীয় অফার দিয়ে ডিলটা হাতিয়ে নিত বরাবর।’

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।পাগলটা বলেকী!‘নিজের পায়ে কুড়াল মেরে তোর কী লাভ হল?’

‘লাভ তো অবশ্যই হয়েছে।লাভ ছাড়া কেউ কিছু করে নাকি?লাভটা হল এখন সবাই জানে আমরা আর রয়েল গ্রুপ পরস্পরের শত্রু।’

আমার মাথায় কিছু ঢুকছেনা।চুপ করেথাকলাম।দেখি উন্মাদটা আর কী কী বলে।

নাসের বলতে লাগল,‘কামাল শেখ মারা যাওয়াতে রয়েল গ্রুপ শীঘ্রই পটল তুলবে।আর এর ফায়দা উঠাবো আমি।

‘রয়েল গ্রুপ পটল তুলবে আর আমরা খুব বাঁচা বেঁচে যাব তাইনা?’
‘উহু,আমরা না,শুধু আমি।তুইও কিছুক্ষনের মধ্যে পটল তুলতে যাচ্ছিস।’অবলীলায় ভয়ঙ্কর কথাটা বলেই উন্মাদের মত হেসে উঠল নাসের।‘কাল পুলিশ এসে দেখবে এই রুমে দুটো লাশ পড়ে আছে।দুজনের হাতেই দুটো পিস্তল।তার উপর এরা হল পরস্পরের জাতশত্রু।দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে নিশ্চয়ই দেরী করবেনা পুলিশ?ওরা ধরে নেবে ব্যবসায়িক দ্বন্দের কারণে একজন আরেকজনকে খুন করেছে।

আমার হঠাত করেই প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়ে গেল।স্পষ্ট বুঝতে পারছি নাসের যা বলছে ও তা করবেই।মরিয়া হয়ে বললাম,‘তুই বেঁচে যাবি সেটা ভাবছিস কেন?পুলিশ আমার পার্টনার হিসেবে তোকে সন্দেহ করবেনা?’

কেন করবে বন্ধু?সবাই জানে আমি এখনো চিটাগং।আমার ঢাকা আসার কথা কেউ জানেনা।তোকে আর কামালকে যে নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়েছি ওটাও আমার না।আমি আজ রাতেই আবার চিটাগং ফিরে যাব।এরপর কাল আমার প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে হা পিত্যেশ করতে করতে ছুটে আসব,হাহাহা!আবার সেই উন্মাদের হাসি হাসল নাসের।
কোনোও ফাঁকই রাখেনি উন্মাদটা।মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে একটা।বললাম,‘এসব কেন করলি তুই?’

এখনো বুঝতে পারিসনি?আমাদের ব্যবসার শুরুতে কী চুক্তি হয়েছিলমনে আছে?একজন মারা গেলে অপরজন সমস্ত ব্যবসার মালিক হয়ে যাবে।এখন তোর অবর্তমানে পুরো ব্যবসাটার মালিক হব আমি।এদিকে রয়েল গ্রুপ আমার পথে বাগড়া না দেয়ায় খুব শীঘ্রই দেশের অন্যতম বিজনেস টাইকুনের নাম হতে যাচ্ছে নাসের আহমেদ।’হাতের হুইস্কির গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রেখে বলল নাসের।

পুরো ব্যাপারটা আমি এখনো বিশ্বাসকরতে পারছিনা।আমার প্রিয় বন্ধু স্রেফ টাকার লোভে এতটা নীচে নামতে পারে বলে আমার ধারণাও ছিলনা।আমি নাসেরের পিস্তলের মুখে বিমুঢ়ের মত বসে রইলাম।

‘দোস্ত তোকে তো আর সময় দেয়া যাচ্ছেনা,’বলেই পকেট থেকে আরেকটা পিস্তল বের করল।আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকে প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম।আঘাতের প্রচন্ডতায়চেয়ার উলটে পড়ার দশা হল।দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।এরই মাঝে দেখতে পাচ্ছি নাসের কামালের হাতে একটা পিস্তল গুজে দিচ্ছে।আরেকটা আমার হাতে তুলে দিলেই ওর কাজ শেষ।আমার সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করে শেষ হাসি হাসবে ও।

বুঝতে পারছি আমি আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা যাচ্ছি।নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চমকের মত কথাটা মনে পড়ে গেল।

আমি আগেই ধারণা করতে পেরেছিলাম আমাদের ভেতরের কেউই রয়েল গ্রুপেরকাছে তথ্য পাচার করছে।সেজন্য মাত্র গতকালই আমাদের কর্পোরেট অফিসের প্রতিটা কামরায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি!নাসের চিটাগং থাকায় ওকে জানানো হয়নি ক্যামেরার কথা।

নাহ,শেষ হাসি তাহলে আমিই হাসলাম !

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত