জীবনে ভুলেও ঈশ্বরকে ডাকিনি। এখন মনে হল ঈশ্বরকে ডেকে দেখলে হয়। নইলে আমার মৃত্যুটা ঠেকানোর কোনও উপায় দেখছি না। অবস্থাটাও বড় বেকায়দা যে! ব্যাটারা নাইলনের দড়িতে আমাকে এমন করে বেঁধেছে, একটুও নড়াচড়া করা যাচ্ছে না, এদিকে শয়তান ক্যারিববা বাঁকা চকচকে ছুরিটা বাগিয়ে আমার বুকে তার থ্যাবড়া জুতোসুদ্ধু পা চাপিয়ে কুতকুতে চোখে তাকিয়ে আছে আর শাসাচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে কী ভদ্র আর অমায়িক চেহারা দেখেছিলুম লোকটার! এখন মনে হচ্ছে, বাস্তবিক যদি শয়তান বলে কেউ থাকে, তাহলে এই ব্যাটাই সে। এদিকে পিওবেদেনে ওরফে অ্যানথুপা পি পাশে দাঁড়িয়ে শিগগির আমার শ্বাসনালী কেটে ফেলার প্ররোচনা দিচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে আশঙ্কা করছি, এখনই বুঝি ক্যারিবো আমার গলায় ছুরি চালিয়ে দেবে।
মাথা ঠিক রাখার চেষ্টা করে বললুম, দেখুন মিঃ ক্যারিববা, আপনারা ভুল করছেন। আমি সত্যি সরকারি গুপ্তচর নই। আমার বুক পকেটে একটা কার্ড আছে। ওটা দেখলেই আমার পরিচয় পেয়ে যাবেন।
ক্যারিবো নূর হেসে বলল, পিওবের্দেনে যখন বলেছে, তখন তার কথাই ঠিক। তুমি সরকারি ঘুঘু।
না মিঃ ক্যারিবো আমি একজন সাংবাদিক মাত্র। আপনি ওর কথায় ভুল করবেন না।
পিওবের্দেনে বলল, তাহলে প্রফেসর বিকর্ণ আর ওই দাড়িওয়ালা বুড়ো কর্নেলের সঙ্গে কিসের সম্পর্ক তোমার?
কোনও সম্পর্ক নেই। আমি কিওটা দ্বীপে ওঁদের ভিযানের খবর নিতে এসেছি। সেই খবর কলকাতায় আমার কাগজে পাঠাতে হবে। বিশ্বাস না হলে আমা বুকপকেটের কার্ডটা আপনারা দেখুন।
পিওবেদেনে আমার বুকপকেট থেকে আইডেনটিটি কার্ডটা বের করে নেড়েচেড়ে দেখল তারপর ক্যারিববাকে কার্ডটা দিল সে। ক্যারিবো পড়ে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল এটা যে জাল নয় তার প্রমাণ? আমি জানি, সরকারি ঘুঘুদের জাল পরিচয়পত্র থাকে।
পিওবের্দেনে বলল, আর দেরি কোরো না ক্যারিববা আমাদের রওনা দেওয়ার সময় হয়ে এল।
ক্যারিবো কার্ডটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে রেখে বলল, পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে সরকারি ঘুঘু জাহান্নামে যাক। তবে পিওবেদেনে, আমার মনে হয় কাজটা মাঝদরিয়ায় সেরে ফেলাই ভাল। কারণ জল পুলিশ নজর রেখেছে। রক্তমাখা মড়া সমস্যা বাধাবে।
পিওবের্দেনে ভেবেচিন্তে বলল, ঠিক বলেছ। মাঝদরিয়ায় পৌঁছে ওর শ্বাসনালী কেটে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেব। আর কেউ খুঁজে পাবে না।
ক্যারিববা পা তুলে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল, তারপর ওর সদগতির কোনও অসুবিধে হবে না। হাঙরেরা খিদেয় ছটফট করে বেড়াচ্ছে।
ওরা বেরিয়ে যাচ্ছিল। ডেকে বললুম, মিঃ ক্যারিববা, মেরেই যখন ফেলবেন, তখন দয়া করে দড়ির ফাঁসগুলো একটু আলগা করে দিন না। বড় ব্যথা করছে যে!
পিওবেদেনে! মুখ ভেংচে বলল, ব্যথা করছে! করবেই তো! ঘুঘু দেখেছ বাছাধন, ফাঁদ তো দেখোনি!
মিঃ পিওবেদেনে! রোমিলার বাবার জাদুঘর থেকে যে দেবী মূর্তিটা নিয়ে এসেছেন, ওর ভেতর কিন্তু কিওটা দ্বীপের সন্ধান পাবেন না—যদিও ওটা কিওটা দ্বীপের কাঠ দিয়ে তৈরি।
আমার এই চালে কাজ কাজ হল। ওদের দুজনের মুখেই চমক জাগল। ক্যারিববা বলল, , তুমি তাহলে দেখছি অনেক খবর রাখো?
রাখি বৈকি! আমি সাংবাদিক যে!
পিওবেদেনে আমার পাশে এসে হাঁটু মুড়ে বসে বলল, যদি সত্যি তুমি কিওটা দ্বীপের সন্ধান জানো, তাহলে তোমার শ্বাসনালী কাটা যাবে না।
ক্যারিবো বলল, চালাকিতে ভুলো না পিওবেদেনে! গুপ্তচররা বড় ধূর্ত।
বললুম, রাজাকো কিন্তু তার চেয়েও ধূর্ত ছিলেন। তাই কিওটা দ্বীপে যাওয়ার ম্যাপখানা কাত্তির গায়ে এঁকে রেখে গেছেন।
দুজনে আবার চমকে উঠল। এক গলায় বলল, কাত্তি! কাত্তি!
হ্যাঁ, কাত্তি।
ক্যারিবো ব্যস্তভাবে বলল, কোথায় আছে সেই কাত্তি?
মিঃ কিয়াং তা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজাকোকে খুন করে।
এই কথাটা বলার সময় আমি আদৌ জানতুম না এরা কিয়াং নামে সেই ধনী মৎস্যব্যবসায়ী ও রাজাকোর প্রতিদ্বন্দ্বীর অনুচর কি না। আন্দাজে ঢিলটা লেগে গেল। ক্যারিববা লাফিয়ে উঠে দাঁত কিনমিড় করে বলল, কিয়াং হাতিয়েছে তাহলে? সর্বনাশ!
পিওবের্দেনে মুখ চুন করে বলল, দেখলে তো ক্যারিববা? আমি তোমাকে বলেছিলুম রাজাকোকে খুন করেছে কিয়াংসায়েবের লোক। তুমি বিশ্বাস করোনি! তাছাড়া এও বলেছিলুম, রাজাকোর কাছে একটা কাত্তি আছে আমি জানি।
বললুম, হ্যাঁ, টুপির মধ্যে লুকোনো ছিল শুনেছি।
ক্যরিবো কী বলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ দুমদুম শব্দে কাঠের সিঁড়ি কাঁপিয়ে একটা বেঁটে লোক এসে দরজায় উঁকি মেরে বলল, গতিক সুবিধের নয় কর্তা! হাঙরের ঝাক এসে পড়েছে।
ওরা ব্যস্ত হয়ে উঠল। ক্যারিববা বলল, পিওবের্দেনে, ওর কাছে থাকো! ৭০৩ নম্বরের দিকে রওনা দিচ্ছি।
সবাই ওপরের ডেকে চলে গেল। পিওবেদেনে দরজা বন্ধ করে পোর্টহোলে চোখ রেখে কিছু দেখতে লাগল। তারপর নোঙর তোলার ঘড় ঘড় শব্দ শুনতে পেলুম। তারপর স্কুনার দুলতে শুরু করল। যান্ত্রিক গর্জন কানে এল। বুঝলুম স্টার্ট দিয়েছে। আবছা জলের শব্দ, স্কুনারের প্রচণ্ড দুলুনি আর গর্জন মিলে একটা আলোড়ন শুরু হয়ে গেল।
কেবিনের ভেতর ততক্ষণে আলো কমে গেছে। একটু পরে আলো জ্বলে উঠল। পিওবের্দেনে পোর্টহোল থেকে হঠাৎ ছিটকে সরে এল। তারপর দুমদাম্ ফট্ ফট্টা এরকম অদ্ভুত সব শব্দ হতে থাকল। বললুম, ব্যাপার কী মিঃ পিওবেদেনে?
সে দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল, চুপ ব্যাটা কলকাত্তাই ভূত!
গ্রাহ্য না করে বললুম, কারও সঙ্গে লড়াই বাধল বুঝি? পিওবেদেনে আমার কথার জবাব না দিয়ে কোনার দিকে কাঠের দেয়ালের একটা হুকে হ্যাঁচকা টান মারল। দেখি, ওটা একটা প্রকাণ্ড দেরাজ। দেরাজ থেকে সে যা বের করল, তা একটা স্টেনগান আর একটা কার্তুজের বেল্ট। সে পোর্টহোলের কাচটা সরিয়ে স্টেনগানের নল ঢুকিয়ে দিল। তারপর গুলি ছুড়তে শুরু করল।
বুঝলুম কাদের সঙ্গে জোর লড়াই বেধেছে। ছোট্ট জাহাজটা বেজায় দুলছে। মাঝে মাঝে ভীষণভাবে কাত হয়ে যাচ্ছে। আর আমি কাঠের মেঝেয় অসহায়ভাবে একবার এদিক একবার ওদিকে গড়িয়ে যাচ্ছি।
কিন্তু তাতে একটা লাভ হল। বাঁধনগুলো অনেকটা ঢিলে হয়ে গেল। একটু পরে পোর্টহোলের কাচটা ঝনঝন শব্দে ভেঙে গেল। পিওবের্দেনে মুখ বিকৃত করে লাফ দিয়ে সরে এল। তারপর সুইচ টিপে আলো নিভিয়ে দিল। কেবিনে ঘরঘুট্টি অন্ধকার এবার। সেই সুযোগে বাঁধন খুলতে থাকলুম। পিওবের্দেনে পোর্টহোলের কাছে আছে তা বুঝতে পারছি। ভোলা পোর্টহোল গুলিগোলার আওয়াজ ক্রমশ কমে আসছে। কিন্তু সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাচ্ছি। এদিকে কেবিনে জল ঢুকে মেঝে জলময় হয়ে যাচ্ছে। বাঁধন খুলে সাবধানে উঠে বসলুম যখন, তখন কেবিনের ভেতর কয়েক ইঞ্চি জল। যখনই স্কুনার কাত হচ্ছে, তখনই বেশি করে জল ঢুকছে। আমার ভয় হল, এই লোনা জলে শেষ পর্যন্ত ড়ুবে মরব না তো?
তার আগেই একটা কিছু করা দরকার। পিওবেদেনের চেহারা আবছা দেখা যাচ্ছিল। সে পোর্টহোলে কী একটা চাপা দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছি, সেইসময় দরজায় ধাক্কা পড়ল। জলের শব্দের মধ্যে কে চেঁচিয়ে ডেকে বলল, পিওবের্দেনে! বেরিয়ে এস! স্কুনারে জল ঢুকছে।
পিওবেদনে ঝটপট দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। ভাগ্যিস আলো জ্বালাল না। বিপদের মুখে তার এটাই স্বাভাবিক। খোলা দরজা দিয়ে এবার জলের প্রবল ছাঁট এসে ঢুকতে লাগল। মেঝেয় এখন প্রায় হাঁটু জল জমে উঠেছে। বুঝতে পারলুম স্কুনার ড়ুবতে চলেছে। প্রতিপক্ষের গুলিগোলায় নিশ্চয় ঝাঁঝরা হয়ে গেছে স্কুনারটার শরীর।
এতক্ষণে আমার সত্যিকার মৃত্যুভয় জেগে উঠল। ক্যারিবোর ছুরির মুখে তত বেশি ভয় পাই নি, কারণ জীবনে এমন অবস্থায় অনেকবার পড়েছি। কিন্তু এবার সাক্ষাৎ যম স্বয়ং সমুদ্র।
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঁকি দিলুম। মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। অন্ধকার সমুদ্র ভয়ঙ্কর গর্জন করছে। স্কুনারে কোথাও আলো নেই। কোনও সাড়া শব্দ নেই। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে আছে। স্কুনারটা অসহায়ভাবে মোচার মতো প্রচণ্ড দুলছে। প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছে ছিটকে সমুদ্রে গিয়ে পড়ব। তার ওপর মুহুর্মুহু জলের ঝাঁপটানি। ভিজে নাকাল হয়ে গেছি। কাঁপুনি শুরু হয়েছে ঠাণ্ডায়।
তাহলে কি এই সমুদ্রসমাধিই বরাতে ছিল আমার? অতিকষ্টে ওপরের ডেকে হাঁটু দুমড়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে এগিয়ে গেলুম। সমুদ্রের গর্জনে কান পাতা দায়। বৃষ্টি ঝাঁকে ঝাঁকে সূচ বেঁধাচ্ছে শরীরে। ওপরের কেবিনের কাছে যেতেই বিদ্যুৎ ঝিলিক দিল। সেই আলোয় দেখলুম, একটা ছায়ামূর্তি কী একটা টানাটানি করছে।
আবার বিদ্যুৎ ঝিলিক দিল। লোকটাকে চিনতে পারলুম। পিওবেদেনে।
আসন্ন মৃত্যুর মুখে মানুষের মাথার ঠিক থাকে না।
ঝাঁপিয়ে পড়লুম তার ওপর। তবে রে হতচ্ছাড়া বদমাস। এবার তোর কী হয়?
পিওবেদেনে বেকায়দায় পড়ে মাতৃভাষায় কী সব আওড়াতে থাকল। তাকে জাপটে ধরে ভিজে ডেকের ওপর ফেলে হাঁকতে হাঁকতে বললুম, কীরে ব্যাটা? আমার শ্বাসনলী কাটবি বলেছিলি যে বড়? এবার দ্যাখ, কে কার শ্বাসনালী কাটে!
পিওবেদেনে গোঙাতে গোঙাতে বলল, কিন্তু তুমিও কি রক্ষা পাবে ভাবছ? সমুদ্র তোমাকে। গিলে খাবে। বরং তার চেয়ে আমাকে সাহায্য করো। তাহলে দুজনেই প্রাণে বাঁচব।
কেবিনের কার্নিশে একটা রবারের নৌকো আটকানো আছে। ওটা টেনে বের করতে পারছি না।
তোর বন্ধুরা কোথায় গেল?
ওরা আমাকে ফেলে বোটে চেপে কেটে পড়েছে। ওরা আমার বন্ধু নয়, শত্রু! বলে সে কেঁদে ফেলল। উঃ! ক্যারিবো এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনি!
ওর কান্না দেখে মনটা নরম হল। সমুদ্রের গ্রাস থেকে বাঁচতে হলে এখন ওর সহযোগিতাও দরকার। বললুম, তোমার স্টেনগানটা কোথায়, আগে দাও। তারপর কথা হবে।
বিশ্বাস করো, ওরা কেড়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু আর দেরি করা উচিত নয়, যদি প্রাণে বাঁচতে হয়। স্কুনারটা আর মিনিট কুড়ি-পঁচিশের মধ্যেই ড়ুবে যাবে হয়তো। চলো, আমরা রবারের নৌকোটা বের করি।
ওকে ছেড়ে সতর্কভাবে উঠে দাঁড়ালুম। এতক্ষণে মনে পড়ল আমার পকেটে রিভলভার আছে। জলে ভিজে গেলেও ওটার সাহায্যে পিওবেদেনেকে শায়েস্তা করতে অসুবিধে হবে না।
রিভলভারটা ওর বুকে ঠেকিয়ে বললাম, চলো! কোথায় নৌকো আছে দেখি।
পিওবের্দেনে কাকুতি-মিনতি করে বলল, বিশ্বাস করো! আমি ক্যারিববার মতো দুষ্টু লোক নই। ওর প্ররোচনায় পড়ে রোমিলার সঙ্গে নেমকহারামি করেছি। জানতুম না, নচ্ছার ঠগ আসলে মূর্তিটা হাতানোর জন্য আমার সঙ্গে ভাব জমাবে।
ঠিক আছে। চুলো, নৌকো কোথায় আছে দেখি।
স্কুনার একপাশে কাত হয়ে গেছে। বৃষ্টিটা ধরে এল। কিন্তু ঝোড়ো বাতাস থামল না। টলতে টলতে অনেক কষ্টে রবারের নৌকোটা টেনে বের করলুম দুজনে। তারপর পালাক্রমে ফুঁ দিয়ে ওটাকে ফোলাতে শুরু করলুম। ততক্ষণে স্কুনার আরও কাত হয়েছে। দুজনেরই দম ফুরিয়ে মারা পড়ার দাখিল। নৌকাটা আসলে গোল মোটরের টায়ারের মতো প্রকাণ্ড একটা চাকা এবং মধ্যিখানে আন্দাজ এক বর্গমিটার একটা রবারের বালিশ আটকানো। সেটাও দম দিয়ে ফোলানো হল। তারপর পিওবেদেনে বলল, তুমি আগে উঠে বোসো। আমি ঠেলে ভাসিয়ে দিয়ে তারপর উঠব।
স্কুনারের যেদিকটা কাত হয়ে সমুদ্রের ঢেউ ঢুকছে, সেদিকে ঠেলে দিল পিওবেদেনে। তারপর নিজে এক লাফে উঠে বসল। সে যেন নাগরদোলায় চড়া। স্কুনারের রেলিং হাত বাড়িয়ে ধরে সে রবারের এই অদ্ভুত ভেলাটাকে শেষ প্রান্তে নিয়ে গেল। লোকটার বুদ্ধি আছে বটে! শেষ দিকটায় নিয়ে গেলে ঢেউয়ের ঝাঁপটায় ভেলাসমেত আমরা আবার ডেকে গিয়ে পড়তুম।
সমুদ্র এবার আমাদের লুফে নিল। প্রতিমুহূর্তে আশঙ্কা হচ্ছিল তলিয়ে যাব, কিন্তু এই আশ্চর্য ভেলা দিব্যি ভেসে রইল ঢেউয়ের মাথায় একপার ওপরে একবার নিচে নাগরদোলার মতো।
ঢেউয়ের মাথায় পৌঁছুলে দিগন্তে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আলোর ঝক দেখতে পাচ্ছিলুম। আবার হারিয়ে যাচ্ছিল কালো জলের দেয়ালের পেছনে।
চেঁচিয়ে জিগ্যেস করলুম, পিওবেদেনে! ওটা কোন্ দ্বীপ?
জলের গর্জনের ভেতর পিওবেদেনে কী বলল, শুনতে পেলুম না। যদিও সে আমার মাত্র একহাত দূরে ফুলন্ত টায়ারের মতো ভেলার কিনারা আঁকড়ে বসে আছে।
মাথার ওপর এতক্ষণে নক্ষত্র ঝিকমিক করতে দেখা গেল। বাতাসটাও কমে এল ক্রমশ। কিছুক্ষণ আগে যে লোকটি ছিল আমার জঘন্য শত্ৰু, সে এখন বন্ধু হয়ে গেছে। কারণ প্রাণের দায় বড় দায়। রবারের ভেলায় দুজনেই ঠান্ডাহিম শরীরে ভেসে চললুম। কোথায় পৌঁছুব কে জানে!