সবুজ বনের ভয়ংকর- শত্ৰুদলের কবলে

সবুজ বনের ভয়ংকর- শত্ৰুদলের কবলে

ঘরের ভেতর ঢুকে অবাক হয়ে গেলুম। একটা ছোট্ট মেরিন মিউজিয়াম! রোমিলা সুইচ টিপে বাতি জ্বেলে দিলে মনে হল এই জাদুঘর বহুকাল খোলা হয়নি। ঘরে কেমন একটা ঝাঁঝালো গন্ধ। একটা মোটা জানালা আছে। সেটা জাহাজের পোর্টহোলের মতো গোলাকার। কিন্তু আকারে বড়। মোটাসোটা লোহার গারদ আছে। সমুদ্রের মানুষের জীবনের অনেক স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে চারপাশে। জংধরা নোঙর, কাছির বান্ডিল, নাবিকদের কুঠার, হালের টুকরো, এইরকম সব জিনিস। দেয়ালে পুরনো আমলের জলদস্যুদের ব্যবহৃত বন্দুক পিস্তল তলোয়ার ছুরি আর তিমিশিকারের হারপুন হুকে আটকানো রয়েছে। আর আছে সমুদ্রপ্রাণীদের অসংখ্য স্টাফকরা নমুনা। কতরকমের শঙ্খ, ঝিনুক, কাছিম, হাঙর, বারাকুদা মাছ, তিমির দাঁত এবং আরও কত প্রাণী। সমুদ্র অঞ্চলের কিছু পাখিও স্টাফ করা হয়েছে। দেখে মনে হয় ওরা জীবিত।

কর্নেল বললেন, মিঃ রাজাকো দেখছি ট্যাক্সিডার্মি অর্থাৎ চামড়াবিদ্যায় খুব দক্ষ ছিলেন।

ডঃ বিকর্ণ বললেন, এই অ্যালবাট্রস পাখিটাকে দেখুন। যেন ডানা মেলে এখুনি উড়ে যাবে।

রোমিলার কুকুর পাঞ্চো দেখতে কতকটা বেড়ালের মতো। গায়ে ঘন সাদা লোম। এমন ক্ষুদে কুকুর কস্মিন্‌কালে দেখিনি। সে হঠাৎ রোমিলার কোল থেকে নেমে হাঙরটার কাছে দৌড়ে গেল। এবার দেখলুম, হাঙরটার মুখে একটুকরো ব্যুমেরাং আকৃতির কাঠ আটকানো আছে। পাঞ্চো গিয়েই সেই বাঁকা ছোট্ট কাঠটা কামড়ে ধরে বের করল। রোমিলা বলল, আঃ! কী হচ্ছে পাঞ্চো? দুষ্টুমি করে না এখন।

তারপর ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। ব্যুমেরাং কাঠটা পাঞ্চোর মুখ থেকে প্রকাণ্ড পোকার মতো নড়াচড়া করতে করতে ছিটকে চলে গেল। পাঞ্চো ভয় পেয়ে রোমিলার পায়ের কাছে গুটিসুটি বসে পড়ল। কর্নেল এগিয়ে গিয়ে কাঠটা তুলেছেন, আবার ওটা কিলবিল করে নড়ে ছিটকে পড়ল। তারপর লাফাতে লাফাতে হাঙরটার মুখের ভেতর ঢুকে পড়ল। আমরা হাঁ করে দেখছিলুম ব্যাপারটা।

ডঃ বিকর্ণ বললেন, সর্বনাশ! এ আবার কী প্রাণী?

কর্নেল একটু হেসে বললেন, এ যে দেখছি কেঠো পোকা। দেখতে কাঠ, আসলে পোকা।

ব্যুগেনভিলি কী যেন ভাবছিলেন। এতক্ষণে ব্যস্তভাবে বললেন, কী আশ্চর্য! কিওটা দ্বীপে ঠিক এই আজব পোকাই দেখেছিলুম। ঘাসের মধ্যে পড়েছিল। দেখে মনে হয়েছিল ব্যুমেরাং। কিন্তু যেই কুড়িয়ে নিয়েছি, অমনি হাত থেকে ছিটকে চলে গেল। কর্নেল, ডঃ বিকর্ণ, আমার দৃঢ় বিশ্বাস মিঃ রাজাকো কিওটা দ্বীপের সন্ধান জানতেন।

কর্নেল কোনও জবাব দিলেন না। র্যাক থেকে একটা বাঁধানো মোটা খাতা নামিয়ে পাতা ওল্টালেন। তারপর বললেন, জাহাজের লগবুক দেখছি। 1912 সালের লগবুক। সান্টা মারিয়া জাহাজ! ক্যাপ্টেনের নাম জিয়োভিল্লো সার্ভেন্টিস! পর্তুগিজ মনে হচ্ছে। রোমিলা, তুমি কি কখনও এ ঘরে ঢুকেছ?

রোমিলা বলল, না কর্নেল, বাবা বেঁচে থাকতে কাউকে এঘরে ঢুকতে দিতেন না।

র‍্যাকের একটা জায়গা দেখিয়ে কর্নেল বললেন, এখানে ধুলোময়লা নেই—এই চারকোনা অংশটাতে। অথচ র্যাকের সবখানে ধুলোময়লা প্রচুর। তার মানে এখানে চৌকো কোনও জিনিস—সম্ভবত আর একটি লগবুক ছিল। চোর সেটাই নিয়ে গেছে।

রোমিলা ক্ষুব্ধভাবে বলল, কে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে একটা লগবুক নিয়ে গেল, বুঝতে পারছি না। আমার লোকেরা তো সবাই বিশ্বাসী!

ডঃ বিকর্ণ বললেন, তবু ওদের জিগ্যেস করা দরকার।

কর্নেল বললেন, রোমিলা এই লগবুকটা আমি নিয়ে যেতে চাই। দেখা শেষ হলে ফেরত দেব।

রোমিলা বলল, কোনও আপত্তি নেই কর্নেল। ব্যপারটা আমারও জানা দরকার। কেন বাবাকে খুন করা হল, এ ঘরের তালা ভেঙে কেন চোর ঢুকল—সব রহস্য না জানলে শান্তি পাব না।

ড্রয়িংরুমে ফিরে গেলুম আমরা। রোমিলা তার পরিচারিকাকে ডেকে জাদুঘরের দিকে লক্ষ্য রাখতে বলল। বুঝলুম, কর্মচারীদের ওপর তার অগাধ বিশ্বাস।

একজন কর্মচারীর নাম বেনিয়া। সে রোমিলার প্রাইভেট সেক্রেটারি। অন্যজনের নাম পিওবেদেনে। সম্ভবত প্রিয়বর্ধন। বেনিয়া বলল, সে অনেকগুলি চিঠি টাইপ করতে ব্যস্ত ছিল। কিছু লক্ষ্য করেনি। পিওবেদেনে বা প্রিয়বর্ধন বলল, সে কিচেনে খাবার তৈরি করছিল। সেও কিছু লক্ষ্য করেনি।

লক্ষ্য করার কথাও নয়। ঘরটা পেছনের দিকে। ওপাশে ফুলবাগান ঝোপঝাড়, গাছপালা। কর্মচারীরা চলে গেলে ডঃ বিকর্ণ বললেন, তোমার পরিচারিকাকে ডাকো এবার।

পরিচারিকাটি রোমিলার বয়সী। সে ছেলেবেলা থেকে রোমিলার সঙ্গিনী। নাম মিত্ৰামা। দেখতে চিনাদের মতো। সে বলল কিচেনে প্রিয়বর্ধনের সঙ্গে কাজ করছিল। তবে পাঞ্চো একবার বসে তার পায়ে মুখ ঘষেছিল। এটা পাঞ্চোর ভয় পাওয়ার লক্ষণ। মিত্রামা ভেবেছিল, আজও বুঝি সাপটাপ দেখে ভয়ে পেয়েছে পাঞ্চো। এই টিলায় খুব সাপের উৎপাত আছে। মাঝে মাঝে বাগানে চলে আসে, মারাও পড়ে। মিঃ রাজাকো ছিলেন খেয়ালি মানুষ। না হলে এমন জংলা পাহাড়ে কেউ বাড়ি বানাতে চায়?

কর্নেল লগবুক নিয়ে মগ্ন ছিলেন। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, রোমিলা আমি আরেকবার জাদুঘরে যেতে চাই।

রোমিলা বলল, আসুন।

কর্নেল হন্তদন্ত হয়ে তার সঙ্গে চলে গেলেন। ডঃ বিকর্ণ মুচকি হেসে বললেন, ওঁর যাওয়া দেখে মনে হল যেন শিকারের গন্ধ পেয়েছেন।

আমার প্রাজ্ঞ বন্ধুর প্রশংসার সূত্র পেলেই আমার মুখ খুলে যায়। বললুম, ওঁর পক্ষে কিছু অসম্ভব নয়, ডঃ বিকর্ণ। হয়তো দেখবেন, এখনই এসে বলবেন কিওটা দ্বীপের সন্ধান পেয়ে গেছেন।

ব্যুগেনভিলি বললেন, এবং মিঃ রাজাকোর হত্যারহস্যেরও।

ডঃ বিকর্ণ গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে বললেন, রাজাকোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কিওটা দ্বীপের যোগসূত্র আছে বলে মনে হয় না। অবশ্য ওই কাত্তির ব্যপারটা একটা গোল বাধাচ্ছে। তা হলেও বলব কাপ্টেন ব্যুগেনভিলি, রাজাকোর অনেক শত্রু ছিল। যেমন ধরুন ওঁর মাছের ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বী কিয়াং। একসময় দুজনে একই সঙ্গে কারবার করেছেন। দক্ষিণ সমুদ্রে তিমিশিকারেও গেছেন দুজনে। পরে কী নিয়ে বিবাদ হয়েছিল যেন। তারপর থেকে বিছপে প্রায়ই দুজনের সাঙ্গপাঙ্গরা খুনোখুনি করত পরস্পর। পুলিশ হিমশিম খেত দাঙ্গা থামাতে।

ক্যাপ্টেন ব্যুগেনভিলি বললেন, কিয়াং এখন কী করেন?

কিয়াং তো এ তল্লাটের সেরা ড়ুবুরি। ওর একটা স্কুনার (ছোট জাহাজ) আছে! মুক্তো খুঁজে বেড়ায় সমুদ্রের তলায়। সে এখন কোটিপতি লোক। থাকে পাশের দ্বীপে কারো আইল্যান্ডে।

এইসব কথাবার্তা বলতে বলতে কর্নেল এসে গেলেন রোমিলার সঙ্গে। খুব প্রত্যাশা নিয়ে ধুরন্ধর বৃদ্ধের মুখের দিকে তাকালুম। এই বুঝি বলে ইউরেকা!

কিন্তু কোথায় কী! আরও তুম্বো মুখে চুপচাপ বসে বড়লেন। রোমিলা বলল, আরেকপ্রস্থ কফি বলে আসি।

সে চলে গেলে কর্নেল বললেন, কিওটার রহস্যময় স্পিকিং উডদের একটুকরো সেরা নমুনা ছিল ও ঘরে। ক্যাপ্টেন সার্ভেন্টিসের এই লগবুকে তার উল্লেখ আছে। ডঃ বিকর্ণ যে জিনিসটা ওঘর থেকে চোর নিয়ে গেছে, সেটা আরেকটা লগবুক নয়। কাঠের তৈরি একটা চমৎকার ভাস্কর্য। আর সে কাঠ কিওটা দ্বীপের গাছের। এই দেখুন, লগবুকে ক্যাপ্টেন সার্ভেন্টিস সেটা এঁকেও রেখেছেন।

আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়লুম। পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন ভদ্রলোক অপূর্ব ছবি আঁকতে পারতেন বটে! তবে ভাস্কর্যটি অসাধারণ! সুন্দর এক দেবীমূর্তি। হাতে বীণা কতকটা আমাদের দেবী সরস্বতীর মতো দেখতে। শুধু বাহন হিসেবে কোনও হাঁস নেই, এই যা তফাত। মূর্তিটা চৌকো একটা বেদিতে। বসানো ছিল।

কল্পনা করলুম, জনহীন কিওটা দ্বীপে জ্যোৎস্নার ওই রাতে দেবী আপন মনে বীণা বাজাচ্ছেন। তার পায়ের নিচে সমুদ্র সব উচ্ছ্বাস থামিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে শুনছে।

এই সময় ক্যাপ্টেন ব্যুগেনভিলি বলে উঠলেন, আশ্চর্য! আমার যেন মনে পড়ছে! অচ্ছন্নতার ঘোরে কিওটার বেলাভূমিতে শুয়ে মধুর বাজনা শুনেছিলুম। তা হলে কি স্বপ্ন নয়?

সঙ্গীতকারী বৃক্ষ! ডঃ বিকর্ণ বললেন, এ এলাকায় লোকেরা বংশপরম্পরায় বিশ্বাস করে আসছে সঙ্গীতকারী বৃক্ষের কথা। কিন্তু কোথায় সেই রহস্যময় দ্বীপ?..

রোমিলার কাছ থেকে এক সময় বিদায় নিয়ে আমরা হোটেলে ফিরলুম। ডঃ বিকর্ণ আমাদের পৌঁছে দিয়ে চলে গেলেন।

লাঞ্চের পর কর্নেল ব্যালকনিতে গিয়ে সেই লগবুক খুলে বসলেন। আমার বরাবর ভেতো বাঙালি-স্বভাবে খাওয়ার পর ঝিমুনি কেটে গেল ফোনের আওয়াজে। অপারেটর বলল, কথা বলুন!

রোমিলার উত্তেজিত কণ্ঠস্বর কানে এল। কর্নেল? আমি রোমিলা। শুনুন কর্নেল…

না, আমি জয়ন্ত বলছি। ডেকে দেব কর্নেলকে?

দিন না প্লিজ!

কর্নেলের কানে গিয়েছিল। এসে ফোন ধরলেন। একটু পরে ফোন রেখে হাসলেন। ডার্লিং! রোমিলার পরিচারক-কাম-বাবুর্চি সেই প্রিয়বর্ধন বা পিওবেদেনে হঠাৎ নিপাত্তা হয়ে গেছে।

নিশ্চয় সে-ব্যাটাই চোর!

তা আর বলতে? বলে কর্নেল ব্যালকনিতে ফিরে গেলেন।

আমার ফের ঝিমুনি চাপল। অভ্যাস যাবে কোথায়? কখন ঘুমিয়ে গেছি—অথচ কর্নেল পই পই করে দিনে ঘুমোতে নিষেধ করেন। সামুদ্রিক নোনা আবহাওয়ায় দিনে ঘুমুলে নাকি শরীর ফুলে ঢোল হয়ে যায়।

একটা বিকট দুঃস্বপ্ন দেখছিলুম। যেন অথৈ সমুদ্রে পড়ে গেছি আর হাঙর হাঁ করে গিলতে অসছে। ভাগ্যিস ঘুমটা ভেঙে গেল। বহাল তবিয়তে আছি দেখে আশ্বস্ত হলুম।

কর্নেল বেরিয়েছেন কোথায়। একটু রাগ হল। এক সঙ্গে এসেছি। অথচ এমন করে কোথায় কোথায় চলে যাচ্ছেন, আমি একা মনমরা হয়ে ফুলো মুখে বসে থাকছি। কোনও মানে হয়?

নিচের রেস্তোরাঁয় চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লুম।

আজ বন্দর এলাকা দেখতে ইচ্ছে করছিল। বাজার ছাড়িয়ে একটু পুবে এগিয়ে গেলে ডক। অসংখ্য জেটি। তেমনি ছোট বড় জাহাজ। কোনও-কোনও জেটিতে সার সার মোটরবোট, লঞ্চ, স্টিমারও রয়েছে। লোকজন সে-তুলনায় কমই।

আজ বিকেলে আকাশ পরিষ্কার। সমুদ্রের জল রাঙা। নীল টুপিপরা নাবিকরা হল্লা করছে। একটা জেটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলুম। সেখানে একটা ছোট্ট জাহাজ—যাকে স্কুনার বলা হয়, ভিড়ে রয়েছে। সংকীর্ণ ডেকে চেয়ার পেতে বসে বেশ লম্বা চওড়া একটা লোক বই পড়ছিল। সে হঠাৎ ঘুরে আমাকে দেখতে পেল। একটু হেলে মাথাটা সম্ভাষণ সূচকভঙ্গিতে দোলাল। তখন ভদ্রতা করে আমি বললুম, গুড আফটারনুন মিস্টার! লোকটা রাজাকোর মতোই দেখছি গায়ে পড়া। সম্ভাষণের প্রত্যুত্তর দিয়ে সে রেলিংয়ে ভর করে দাঁড়াল। বলল, মশাই স্থানীয় লোক নন নিশ্চয়?

না। আমি ভারতীয়।

নিশ্চয় ব্যবসায়ী?

না। পর্যটক।

আমার নাম ক্যারিবো। মশায়ের নাম?

ছোট্ট ডেকে বসে চা খেতে খেতে তার সঙ্গে গল্প করছি, পেছনের কেবিন থেকে কেউ বেরিয়েই আমাকে দেখে থমকে দাঁড়াল। প্রচণ্ড চমকে উঠলুম। আরে! এ তো সেই রোমিলার কর্মচারী প্রিয়বর্ধন!

সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললুম, আপনি প্রিয়বর্ধন না? রোমিলার বাড়িতে আপনাকে দেখেছি।

প্রিয়বর্ধন খিকখিক করে হাসল। কে প্রিয়বর্ধন? আমার নাম অ্যানথুপা পিদ্রু।

ক্যারিবো ভুরু কুঁচকে আমার মুখের দিকে তাকিয়েছিল। বললুম, আশ্চর্য তো?

ক্যারিবো একটু হাসল! চেহারার এমন মিল হতেই পারে। একবার চিনে গিয়ে সব চীনাকে আমার একই নোক মনে হত।

কিন্তু এ ভুল আমার হতেই পারে না। জেদ করে বললুম, না মিঃ ক্যারিববা! ইনি তিনিই বটে। কারণ মিঃ রাজাকোর বাড়িতে আজ সকালে এঁকে দেখেছি। একটু আগে শুনলুম, উনি নিপাত্তা হয়েছেন…

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই প্রিয়বর্ধন আমার ওপর আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি এর জন্য তৈরি ছিলুম না! শক্ত ডেকের ওপর বেকায়দায় পড়ে গেলুম। প্রিয়বর্ধন আমার বুকে বসে চেঁচিয়ে উঠল, ক্যারিববা! এ ব্যাটা সরকারি গুপ্তচর। এর মুখ বন্ধ করতে হবে। শিগগির!

ক্যারিবো চাপা গলায় কাদের ডাকল। আমি যথাসাধ্য লড়ে যাচ্ছি, কিন্তু আরও দুজন বেঁটে হিংস্র চেহারার লোক কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। ক্যারিবো বিকৃত মুখে বলল, একে বেঁধে নিচে নিয়ে এস।

নাইলনের মজবুত দড়িতে আমাকে ওরা আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল। তারপর ধরাধরি করে সিঁড়ি বেয়ে জাহাজের খোলে নিয়ে গেল। নিচের কেবিনে পাটাতনের ওপর আমাকে ফেলে ক্যারিবো আমার পেটে জুতোসুদ্ধ একটা পা চাপিয়ে নিষ্ঠুর হেসে বলল, তা হলে তুমি সরকারি ঘুঘু? বোসো, দেখাচ্ছি মজা।

তারপর সে পকেট থেকে কী একটা বের করল। দেখেই আতঙ্কে কাঠ হয়ে গেলুম। ক্যারিবোর হাতে একটা চকচকে বাঁকা ছুরি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত