সেবার শরঙ্কালে একদিন গোয়েন্দাপ্রবর কর্নেল নীলাদ্রি সরকার একথা-ওকথার পর হঠাৎ বললেন, ডার্লিং! তোমার কি ছিপে মাছধরার নেশা আছে?
শুনে একটু মনমরা হয়ে বললুম, হু, ছিল। ভীষণ ছিল। কিন্তু দৈনিক সত্যসেবকে ঢোকার পর সারাক্ষণ খবরের পেছনে দৌড়ুব, নাকি ছিপ ফেলে জলের ধারে বসে থাকব?
থাকবে—যদি ছিপ ফেলে জলের ধারে বসে থেকেও তোমার কাগজের জন্য তোফা কোনও খবর জোটে। বলে ধুরন্ধর বৃদ্ধ মুচকি হেসে সাদা দাড়িতে আঙুলের চিরুনি টানতে থাকলেন।
অবাক হয়ে বললুম, ব্যাপারটা কী বলুন তো?
কর্নেল বললেন, মুর্শিদাবাদে রোশনিবাগ নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে একটা প্রকাণ্ড ঝিলে নাকি পুরনো আমলের বিশাল সব মাছের আড়া। কিন্তু সম্প্রতি ওই ঝিলে নাকি পিশাচের উপদ্রব হয়েছে। যে ছিপ ফেলতে একলা যায়, সে আর বাড়ি ফেরে না।
বলেন কী?
একটা ব্যাপার বোঝা যায়! ছিপ ফেলে মাছ ধরতে বড় একাগ্রতার দরকার। ফাতনার দিকে চোখ রেখে বসে থাকতে হয়। আর সেই সুযোগে পিশাচ পেছন থেকে পা টিপেটিপে এসে তাকে ধরে।
আপনি বিশ্বাস করেন এ-কথা? হাসতে হাসতে বললুম, পিশাচ বলে সত্যি কিছু আছে নাকি?
কর্নেল গম্ভীর হয়ে বললেন, জানি না। তবে ওখানকার লোকে নাকি পিশাচটাকে দেখেছে।
কেমন চেহারা তার?
কুকুরের মতো। কালো একটা কুকুরের বেশে সে আসে। তারপর আচমকা পেছন থেকে কাঁপিয়ে পড়ে গলা কামড়ে ধরে! টানতে টানতে নিয়ে যায়।
জেদ চড়ে গেল মাথায়। বললুম, ঠিক আছে। তাহলে কালই আমাকে নিয়ে চলুন সেখানে। যতসব আজগুবি গল্প!
পরদিন ভোরে জিপে রওনা হয়ে দুপুরের মধ্যে আমরা রোশনিবাগ পৌঁছে গেলুম। নবাবি আমলের সমৃদ্ধ আধাশহুরে গ্রাম। আমরা উঠলুম সেচ দফতরের বাংলোয়। ঝিলটা বাংলো থেকে দু-কিলোমিটার দূরে জঙ্গুলে পরিবেশে রয়েছে। আসলে এটা গঙ্গারই পুরনো একটা খাত। ঝটপট খাওয়া সেরে ছিপ নিয়ে বেরিয়ে পড়লুম। আসার সময় চৌকিদার পইপই করে বারণ করল, যেন দুজনে সবসময় কাছাকাছি থাকি। নইলে পিশাচের পাল্লায় পড়ব।
কিন্তু একলা না হলে পিশাচটা আসবে না। তাই হাসতে হাসতে কর্নেলকে বললুম, আপনি বরং পাখি-প্রজাপতির খোঁজে ঘুরতে থাকুন। আমি পিশাচটার প্রতীক্ষা করি।
কর্নেলও হেসে বললেন, তুমি না বললেও আমি জলের ধারে বসে থাকতে রাজি হতুম না জয়ন্ত!তারপর বাইনোকুলারটা চোখে রেখে গাছপালায় পাখি খুঁজতে থাকলেন। যখন চার এবং ছিপ ফেলে জলের ধারে বসেছি, তখন উনি জঙ্গলের ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেছেন। এবার কিন্তু একটু গা-ছমছম করতে থাকল। বারবার পিছনে ঘুরে দেখে নিচ্ছি। বুদ্ধি করে সঙ্গে একটা লোহার রড এনেছিলুম। সেটা পাশে রেখে ফাতনার দিকে চোখ রেখে বসে আছি। বুজকুড়ি উঠতে শুরু করেছে। চারে মাছ আসার লক্ষণ এটা। ফাতনা নড়লেই খ্যাচ মারব। কিন্তু তারপরই পেছনে গরগর গর্জন শুনে চমকে উঠলুম। ঝটপট ঘুরে দেখি, সত্যি একটা কালো কুকুর-বীভৎস হাঁ করে চাপা গর্জন করছে সে। তার লাল মুখের দাঁতগুলো ঝকমক করছে হিংস্রতায়। ক্রুর কুতকুতে চোখে হিংসা ঠিকরে পড়ছে। লকলকে জিভ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় কি রক্ত ঝরছে? একলাফে রডটা বাগিয়ে ছুটে গেলুম মরিয়া হয়ে।
কুকুরটা পিছিয়ে গেল। তারপর পালাতে থাকল। কিন্তু রাগে আমার তখন মাথার ঠিক নেই। ওর মাথাটা রডের বাড়ি মেরে দু ফাঁক না করে ফিরছি না—যা থাকে বরাতে। উঁচু-নিচু গাছপালা, কাটাঝোপ, তারপর চষা খেত, ঘাসে ঢাকা খোলামেলা পোড়ো জমি পেরিয়ে প্রাণীটা ছুটে চলেছে। আমিও ছুটে যাচ্ছি। মাঝে-মাঝে সে পেছনে ঘুরে যেন আমাকে দেখে নিচ্ছে ক্রুর এবং মুখভঙ্গি করে গর্জাচ্ছে। কাঁটায় আমার প্যান্টশার্ট ততক্ষণে ফর্দাফাঁই অবস্থা। জুতোয় জলকাদা লেগেছে প্রচুর। একখানে শুকনো লতাপাতায় জড়িয়ে আছাড়ও খেলুম। তারপর মনে হল, কে আমার নাম ধরে ডাকছে, জয়ন্ত! জয়ন্ত! সম্ভবত কর্নেল ব্যাপারটা দেখতে পেয়েছেন। আমি কান করলুম না। কালো কুকুরটা মিটার-পঁচিশেক দূরত্বে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। তেমনি রক্তমাখা মুখ। কুতকুতে জ্বলন্ত চোখ। জিভ থেকে ফোঁটা-ফোটা যেন রক্ত ঝরছে। আবার হুংকার দিয়ে দৌড়লুম। পিশাচ হোক, আর যাই হোক, আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।
গাছপালার ফাঁক দিয়ে রেললাইন দেখা যাচ্ছিল। সামনে ভাঙাচোরা একটা বাড়িও দেখতে পেলুম। তাহলে বোধ করি রোশনিবাগ স্টেশন-বাজারের পেছনদিকটায় এসে পড়েছি।
কালো কুকুরটা বাড়িটার কাছে গিয়ে অদৃশ্য হল। বাড়িটার কাছে যেই এসেছি, এক অদ্ভুত কাণ্ড শুরু হল। আচমকা চারদিক থেকে কারা আমাকে খুদে হাতে যাচ্ছেতাই চিমটি কাটতে থাকল। চোখ বুজে কুঁজো হয়েছিলুম, তারপর রডটা তুলে বাঁইবাই করে ঘোরাতে-ঘোরাতে চোখ খুলে দেখি, একঝাঁক চামচিকের পাল্লায় পড়েছি। চামচিকে যে এমন চিমটি কাটতে জানে, কে জানত! দ্বিগুণ জোরে রডটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চামচিকেগুলো ভাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলুম। কিন্তু খুদে জীবগুলো সমানে হামলা চালিয়ে যেতে থাকল। তখন হার মেনে দৌড়ে গিয়ে সামনের ভাঙা ঘরটার ভেতর ঢুকে পড়লুম।
চামচিকের ঝাঁকটা সেখানেও ঢুকে হামলা করল। বাড়িটার কোনও ঘরে দরজা-জানলা বলতে কিছু নেই। সব কারা হয়তো খুলে নিয়ে গেছে। এঘর থেকে ওঘর, তারপর আরেকটা ঘর—কোনও ঘরের ভেতর জঙ্গল গজিয়েছে এবং ছাদ ভাঙা, কড়িকাঠ ঝুলে রয়েছে। শেষে যে ঘরটার সামনে গেলুম, তার দরজা আস্ত আছে। দরজাটা খোলা। ভেতরে আসবাবপত্র দেখা যাচ্ছিল। হাঁফাতে হাঁফাতে সে-ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলুম।
তারপর ঘুরে দেখি, ঢ্যাঙা-শুটকো চেহারার এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন খাটের পাশে এবং আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে আছেন, ঠোঁটের কোনায় হাসিটাও যেন অস্বস্তিকর। ভদ্রলোকের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি, হাতের আঙুলে কয়েকটা পলাবসানো আংটি। একমাথা সাদা চুল।
কিন্তু তার চেয়ে অস্বস্তিকর, ওঁর হাতে একটা চকচকে ছুরি।
আমি কিছু বলার আগেই উনি ঘড়ঘড়ে গলায় বললেন রডটা দেখি। তারপর আমার কাছে এসে হাত থেকে রডটা প্রায় ছিনিয়ে নিলেন। পাগল নয় তো? আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলুম। উনি রডটা জানলা গলিয়ে ছুড়ে ফেললেন। কিন্তু ঠোঁটের কোনায় সেই হাসিটা লেগে আছে। চেহারায় কেমন ঠাণ্ডা হিংসার ছাপ। ভয়ে-ভয়ে এবং অপ্রস্তুত মুখে বললুম, আপনার ঘরে ঢুকে পড়ার জন্য ক্ষমা করবেন। চামচিকের পাল্লায় পড়ে…
কথা কেড়ে ভদ্রলোক খিকখিক করে হেসে বললেন, খুব জ্বালিয়েছে বুঝি? তা ওদের পাল্লায় পড়লেন কীভাবে?
একটা কালো কুকুর তাড়া করে আনছিলুম। ঝিলে ছিপ ফেলে বসে ছিলুম। কোখেকে ওই কুকুরটা গিয়ে ঝামেলা করছিল।
ভদ্রলোক ওপাশে ঘুরে বললেন, দেখুন তো এই কুকুরটা নাকি।
দেখেই চমকে উঠলুম। এতক্ষণে চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার হয়েছে। ঘরটা বেশ বড়। কোনার দিকে একটা বেদির-মতো উঁচু জায়গায় সেই সাংঘাতিক চেহারার কালো কুকুরটা দাঁড়িয়ে আছে চারপায়ে। সেই হিংস্র মুখভঙ্গি। রক্তলাল হাঁ-করা মুখ। ধারালো দাঁত আর লকলকে জিভ।
কিন্তু আশ্চর্য, কুকুরটা মমির মতো স্থির। শুধু তার হিংসুটে চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। যেন এখনই ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার ওপর।
ভদ্রলোক হাসলেন আবার। চোখ নাচিয়ে বললেন, কী মনে হচ্ছে? সেই কুকুরটা না! গলা শুকিয়ে গেছে আতঙ্কে। বললুম, কিন্তু ওটা তো মনে হচ্ছে স্টাফ-করা একটা কুকুর!
হ্যাঁ। আমার প্রিয় কুকুর জনি। মৃত্যুর পর ওর চামড়া ছাড়িয়ে নিয়েছিলুম। তারপর কাঠের গুঁড়ো, তুলল, স্পঞ্জ এসব জিনিস স্টাফ করে ওর চেহারাটা ফিরিয়ে এনেছি। দারুণ জ্যান্ত দেখাচ্ছে, না?
সায় দিয়ে বললুম, দেখাচ্ছে। কিন্তু…
কিন্তু কিসের এতে? ভদ্রলোক এগিয়ে গিয়ে কুকুরটার পিঠে হাত রাখলেন। আমি ট্যাক্সিডার্মি অর্থৎ চামড়াবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেছি। এ তার যৎকিঞ্চিৎ নমুনা। আপনি চামচিকের কথা বলছিলেন। দেখুন তো, ওই চামচিকেগুলো নাকি?
দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আবার আমায় চমক জাগল। সাদা দেয়ালের গায়ে একঝাক চামচিকে সেঁটে রয়েছে। জ্বলজ্বলে নীল চোখ তাদের। দেখতে দেতে শরীর হিম হয়ে গেল।
ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে একটা চামচিকে তুলে হাতের তালুতে রেখে বললেন, ভীষণ জ্যান্ত : দেখাচ্ছে, তাই না? যদি ছুরি দিয়ে কাটি, রক্ত বেরুতেও পারে, বলা যায় না।
বললুম, ট্যাক্সিডার্মিতে সত্যি আপনার অসাধারণ দক্ষতা। কিন্তু ওরা তো মৃত?
হ্যাঁ—আপাতদৃষ্টে মৃত। বৃদ্ধ আবার মুচকি হেসে চোখ নাচিয়ে বললেন, কিন্তু ওরা জীবিত হতে পারে। সেটাই আমার ট্যাক্সিডার্মির নতুন দিক। আশা করি, তার পরিচয় চমৎকারভাবে পেয়েছেন। এবার আসুন, আপনাকে আরেকটা জিনিস দেখাই।
কালো কুকুরটার পাশ দিয়ে ভয়ে-ভয়ে এগিয়ে ওঁকে অনুসরণ করলুম। পাশের ঘরে ঢুকলে উনি দরজাটা এঁটে দিলেন। অস্বস্তিটা বেড়ে গেল। বৃদ্ধ এ-ঘরের জানালা দুটো খুলে দিয়ে বললেন, এবার একে দেখুন।
যা দেখলুম, আতঙ্কে আমার মাথা ঘুরে উঠল। তেমনি বেদির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক—পরনে প্যান্ট-শার্ট, পায়ে জাঙ্গলবুট আমারই মতো, হাতে একটা মাছধরা ছিপ এবং কাঁধে কিটব্যাগ। একেবারে জ্যান্ত দেখাচ্ছে তাকে। নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে, ঠোঁটে একটু হাসি।
আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, সর্বনাশ!
সর্বনাশ কিসের? বৃদ্ধ চোখ কটমট করে বললেন। মানুষ মরণশীল। তার শরীর একদিন গলে পচে নষ্ট হয়ে যায় প্রাকৃতিক নিয়মে। হিন্দুরা অবশ্য চিতার আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এই লোকটার শরীরও ধ্বংস হয়ে যেত। অথচ ওকে আমি অমরত্ব দিয়েছি। কখনও-সখনও ওর ছিপ ফেলা নেশার কথা বিবেচনা করে ওকে ঝিলে ছিপ ফেলতে যেতেও অনুমতি দিই। যাই ভাবো। আমাকে, আমি কিন্তু এসব ব্যাপারে খুব উদার।
ভয়ে-ভয়ে সায় দিলুম। আজ্ঞে হ্যাঁ। তা তো বটেই।
বৃদ্ধ হঠাৎ হাত বাড়িয়ে খপ করে আমার হাত ধরে চাপা গলায় বললেন, তুমি অমরত্ব চাও না?
আঁতকে উঠে হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে বললুম, না, না! হাত ছাড়ুন আপনি।
বৃদ্ধের গায়ে প্রচণ্ড জোর। আর হাতটাও কী ভীষণ ঠাণ্ডাহিম! রক্ত জমে যাচ্ছিল। খিকখিক করে হাসতে হাসতে বললেন, তেমন কিছু যন্ত্রণা হবে না। জাস্ট একটু মাথা ঘুরবে। গয়ে মলম মাখিয়ে দিয়ে চামড়াটা ছাড়িয়ে নেব। তারপর তোমার চামড়ার ভেতরে কাঠের গুঁড়ো, তুলো, স্পঞ্জ ঠেসে দেব। ব্যস! অমর হয়ে যাবে।
বলে কী! আমার জ্যান্ত শরীরের চামড়া ছাড়িয়ে নেবে আর তেমন কিছু যন্ত্রণা হবে না! প্রচণ্ড আপত্তি জানিয়ে বললুম, আমি অমর হতে চাইনে। হাত ছেড়ে দিন।
বৃদ্ধের চোখ দুটো জ্বলে উঠল। দেখো বাপু, তোমার এমন সুন্দর চামড়ায় খুঁত হবে বলে ছুরির খোঁচা মারছিনে। এর আগে এমনি করে গোটাতিনেক চামড়া নষ্ট করেছি। বরবাদ হয়ে গেছে। এক্সপেরিমেন্ট। জনার্দন বক্সির এক কথা। নড়লেই খোঁচা খাবে। যাও, টেবিলে শুয়ে পড়ো লক্ষ্মী ছেলের মতো।
তাহলে এই পাগলা ট্যাক্সিডার্মিস্টের নাম জনার্দন বক্সি? কাকুতি-মিনতি করে বললুম, প্লিজ জনার্দনবাবু! আমাকে ছেড়ে দিন। আপনার এক্সপেরিমেন্ট তত সফল হয়েছে। আর কেন?
জনার্দন বক্সি খিকখিক করে হেসে বললেন, আহা ভয় নেই। ভয় নেই। টেরই পাবে না। তারপর সম্ভবত মলমের বোতল আনতে যেই ঘুরেছেন এবং হাতটা একটু আলগাও হয়েছে, এক ধাক্কায় ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা খুলে একলাফে পাশের ঘরে গিয়ে পড়লুম। তারপর একেবারে বাইরে।
ভূতুড়ে চামচিকেগুলো হামলা করল আবার। পেছনে সেই কালো কুকুরটাও গর্জে তেড়ে এল কোখেকে। আমি চোখ বুজে নাক-বরাবর দৌড় দিলুম। কিছুটা এগিয়ে একটা গাছের শেকড়ে ঠোক্কর খেয়ে পড়তেই কুকুরটা আমাকে বাগে পেল। বিকট গর্জন করে ঝাপ দিল সে। সেই সঙ্গে যেন আকাশ ফাটানো একটা শব্দও কানে এল।
ভয়ের চোটে অজ্ঞান হয়ে গেলুম সেই মুহূর্তে!…
যখন জ্ঞান হল, তাকিয়ে দেখি বাংলোয় শুয়ে আছি। আলো জ্বলছে। বিছানার পাশে বসে আছেন আমার বৃদ্ধ বন্ধু। একটু হেসে বললেন, আশা করি সুস্থ হয়েছ ডার্লিং! না—না, অমন করে চারপাশে তাকিয়ে দেখার কিছু নেই। জনার্দন বক্সির কালো অ্যালসেশিয়ানটাকে বাধ্য হয়ে গুলি করে মেরেছি।
অবাক হয়ে বললুম, কিন্তু ওটা তো সত্যিসত্যি ভূত অথবা পিশাচ! কারণ বক্সিবাবু ওর মরা দেহটা স্টাফ করে রেখেছেন দেখেছি।
বক্সির দুটো কুকুর ছিল। দেখতে একই রকম। কোনও কারণে একটা কুকুর মারা পড়লে তাকে সে স্টাফ করে রেখেছিল। আর দ্বিতীয় কুকুরটাকে সে মানুষের মাংস খাওয়ানো শিখিয়েছিল। চামড়া ছাড়িয়ে মাংসগুলো খেতে দিত।
কিন্তু চামচিকেগুলো?
কর্নেল হাসতে হাসতে বললেন, কিছু চামচিকে মেরে বক্সিবাবু স্টাফ করে রেখেছিল বটে। তবে তোমার ওপর হামলা করেছিল যারা, তার ভূত নয়। জ্যান্ত চামচিকে। তাদেরও সে মানুষের মাংস খাওয়ানো শেখাত। যাই হোক, তোমার মাংস খুবলে নিতে পারেনি ওরা। খুব লাফালাফি করেছিলে কি না।
ওই পাগলা খুনিটাকে ধরিয়ে দিন এবার পুলিশের হাতে!
দিয়েছি। এতক্ষণ সে থানার লক-আপে। বলে কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন। টেবিল থেকে এক গ্লাস গরম দুধ এনে বললেন, খেয়ে নাও ডার্লিং! গায়ে জোর পাবে। কাল সকালে আবার গিয়ে ঝিলে ছিপ ফেলতে আশা করি আর ভয় পাবে না। আমার ধারণা, ঝিলের মাছগুলো বেশ বড়োই।