স্টেশন তখনও অন্তত আধকিলোমিটার দূরে, ট্যাক্সিটা বিগড়ে গেল। ট্রেনের সময় হয়ে এসেছে। ট্যাক্সির সামনে ও পিছনে গাদাগাদি করে প্রায় এক ডজন যাত্রী ঠাসা ছিল। এ-মুলুকে নাকি এটাই রেওয়াজ। তবে শীতের দাপটে অবস্থাটা খুব একটা অসহনীয় মনে হচ্ছিল না। তো ট্যাক্সিওয়ালা দশ কিলোমিটার পথ আসতে ইতিমধ্যে তিনবার ভাড়া বাড়িয়েছে। এবার এই কলকজা বিগড়ে যাওয়ার ব্যাপারটাকে চতুর্থ দফা ভাড়া বাড়ানোর ফন্দি ভেবেই আমরা যাত্রীরা ঝটপট নেমে এলুম। এবং যাঁদের ঠ্যাংগুলো লম্বা তাঁরা সবার আগে দেখতে-দেখতে উধাও হয়ে গেলেন।
একটু পরে দেখি, আমি আর ট্যাক্সিওয়ালা ছাড়া আর জনপ্রাণীটি নেই। ট্যাক্সিওয়ালার মুখের দিকে তাকিয়ে কোনও ফন্দিফিকির বা ধূর্তামির চিহ্ন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। লোকটা করুণ মুখে এঞ্জিনের কলকজার দিকে তাকিয়ে আছে। বললুম, কী দাদা, কী বুঝছেন?
লোকটা হতাশভাবে মাথা নেড়ে বল, নেহি সাব। আপ পায়দল চলা যাইয়ে।
হুঁ, ভেবেছে আমি ওর হাড়জিরজিরে গাড়িটার মূৰ্ছাভাঙার অপেক্ষায় আছি। আসলে এতক্ষণ ঠাসাঠাসিতে আমার শরীর আগাগোড়া ঝিম মেরে গেছে। পা দুটোতে কোনও সাড় নেই। তাই সেই ঝিমুনি কাটিয়ে নিচ্ছি। এবং সেটা ওকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যেই রাস্তার উপরে পা দুটো ঘোড়ার মতো ঠুকতে-ঠুকতে কয়েক পা এগিয়ে গেলুম। কাছেই একটা ব্রিজ রয়েছে। নদীটা বেশ চওড়া। তবে আদ্ধেকের বেশি বালিতে ভরা, বাকিটায় কালো জল। স্রোত বইছে বলে মনে হচ্ছিল না।
বিকেল হয়ে গেছে। শীতের দিন ঝটপট ফুরিয়ে যায়। হিসেব করে দেখলুম, ট্রেনের এখনও মিনিট কুড়ি দেরি। স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে গেলেও ট্রেন ধরা যাবে। সঙ্গে একটা কিটব্যাগ ছাড়া কোনও বোঝা নেই। তাছাড়া জায়গাটা কেন যেন খুব ভাল লাগছিল। একধারে ছোটবড় পাহাড়। তার উপত্যকা শীতের শস্যে সবুজ হয়ে আছে। অন্যধারেও পাহাড় আছে। আর আছে ঝোপঝাড় আর মাঝে-মাঝে ঘন জঙ্গল। সামনে ওই স্টেশনের কাছে যা একটা বসতি—তাছাড়া কাছাকাছি কোনও বসতির চিহ্ন চোখে পড়ছিল না। মনে হল, জায়গাটা ভ্রমণবিলাসীদের পক্ষে মোটামুটি পছন্দসই।
হঠাৎ আমার চোখ গেল ডাইনে নদীর পাড়ে জঙ্গলের দিকটায়। ঝোপের মধ্যে কী একটা বসে আছে যেন। বাঘ-ভালুক নাকি? বলা যায় না, এই জঙ্গলে জনহীন জায়গায় বিশেষ করে শীতকালে জন্তু-জানোয়ার বেরিয়ে পড়তেও পারে।
ধূসর রঙের প্রাণীটি আমার দিকে পিঠ রেখে ওত পেতে আছে। একবার ভাবছি, ট্যাক্সিওয়ালাকে ডেকে সাবধান করে দিই। আবার ভাবছি, আমার ডাকাডাকি শুনে যদি দাঁত-নখ বাগিয়ে তেড়ে আসে! অবশ্য রাস্তাটা যথেষ্ট উঁচু এবং আন্দাজ দেড়শো মিটার দূরত্বে রয়েছে ওটা।
কিন্তু আমাকে হকচকিয়ে দিয়ে ওটা উঠে দাঁড়াল এবং তক্ষুনি বুঝলুম, চোখের ভুল হয়েছে। ওটা ধূসর রঙের কোট-প্যান্ট পরা একজন মানুষই বটে। হাতে কী একটা রয়েছে। গা ছমছম করে উঠল এবার অন্যরকম ভয়ে। হাতে কি ওটা পিস্তল? কাউকে খুন করার জন্যে ওত পেতে আছে। লোকটা? কিন্তু কোটপ্যান্ট এবং দস্তুরমতো সায়েবি টুপিপরা কোনও লোক কাউকে খুন করার জন্যে ওভাবে ওত পেতেছে, এটা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত মনে হল না।
অথচ ওর গতিবিধি সন্দেহজনক। সন্দেহ আরও বাড়ল, যখন দেখলুম, লোকটা হাতের কালোরঙের জিনিসটা তুলে গুলি ছোড়ার ভঙ্গিতে একটু কুঁজো হল এবং ওইভাবে পা টিপে টিপে ঝোপঝাড় ভেঙে এগুতে থাকল।
তারপর দেখি, সে দৌড়তে শুরু করেছে। গুরুতর দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আমার বুক ঢিপঢিপ করছে এবার। প্রতি মুহূর্তে আশঙ্কা করছি, গুলির শব্দ আর মানুষের আর্তনাদ শুনব। ওর হাতের জিনিসটা যদি বন্দুক হত, তাহলে তো শিকারিই ভাবতুম। পিস্তল দিয়ে কি কেউ পাখি বা জন্তুজানোয়ার শিকার করে?
দৌড়ে সে যেখানে ঢুকলে, সেখানে কিছু উঁচু-উঁচু গাছ রয়েছে। ছায়ায় অস্পষ্টভাবে তাকে দেখতে পাচ্ছি। তারপর সে অন্তত একমিনিটের জন্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। ট্যাক্সিওয়ালা ব্যাপারটা দেখেছে নাকি জানার জন্যে ওদিকে ঘুরলুম। না, ও এখনও এঞ্জিনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।
আবার যখন সেই লোকটাকে দেখতে পেলুম, তখন সে নদীর পাড়ে হাঁটু দুমড়ে বসেছে এবং পিস্তল তাক করে রেখেছে। আর চুপ করে থাকতে পারলুম না। দৌড়ে গিয়ে ট্যাক্সিওয়ালাকে ব্যাপারটা দ্রুত জানিয়ে দিলুম। দু-দুজন মানুষ এখানে থাকতে একটা খুনখারাপি হবে। যে ট্যাক্সিওয়ালা তিন-তিনবার যাত্রীদের চাপ দিয়ে ভাড়া বাড়িয়েছে, তার বিবেকও এবার নড়ে উঠল। এইসা? বলে সে তার ট্যাক্সি থেকে একটা লোহার রড বের করল। তারপর চোখ কটমট করে আমাকে ডাক দিল। আমারও একটা কিছু হাতে নেওয়া দরকার। অগত্যা ওর এঞ্জিনের মধ্যে রাখা একটা রেঞ্জ তুলে নিয়েই রওনা দিলুম। উত্তেজনায় মাথার ঠিক নেই।
ট্যাক্সিওয়ালা উঁচু রাস্তা থেকে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ল। তারপর দুর্বোধ্য ভাষায় চাপা স্বরে কী বলতে বলতে ঝোপঝাড় ভেঙে এগুতে থাকল। আমি ওর পিছু-পিছু চলেছি। দুজনেই সতর্ক। আচমকা ধরে ফেলব ওকে।
আমাদের দিকে পিঠ রেখে লোকটা এখনও তেমনি বসে আছে। টুপিপরা মাথাটা সামনে ঝুঁকেছে, হাতের পিস্তল একেবারে নাকের ওপর তুলে তাক করে রেখেছে। সম্ভবত হতভাগ্য মানুষটি অর্থাৎ যাকে খুন করবে, সে নিচে নদীতে নিশ্চিন্তে কিছু করছে-টরছে। কিছু টের পাচ্ছে না। খুনে লোকটির হাতে পিস্তল আছে বলেই আমরা এ সাবধানী হয়েছি। পা টিপে এগিয়ে কয়েক মিটার দূর থেকে ট্যাক্সিওয়ালা রড তুলল এবং আমিও রেঞ্জটা বাগিয়ে চেঁচিয়ে উঠলুম, খুন করলে! খুন করলে! পাকড়ো পাকড়ো! ভুলেই গেলুম যে, ওর হাতে পিস্তল আছে।
কিন্তু সঙ্গে-সঙ্গে গুপ্তঘাতক ঘুরে ব্যাপারটা দেখেই হুড়মুড় করে নদীতে ঝাঁপ দিল। ট্যাক্সিওয়ালা রড নাচিয়ে পাড় থেকে শাসাতে শুরু করল। পিস্তল ফেক দো! নেহি তো ডাণ্ডা মারেগা হাম!
আমি তখন হতভম্ব দাঁড়িয়ে গেছি। কী বলব, ভেবে পাচ্ছি না। নাকি এখনও লিটনগঞ্জের সেই সরকারি অতিথিশালায় শুয়ে একটা বিদঘুটে স্বপ্ন দেখছি।
কালো এবং প্রচণ্ড ঠাণ্ডা জলে বুক-অব্দি ড়ুবিয়ে হতভাগ্য গুপ্তঘাতক এখন ফ্যালফ্যাল করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। তার টুপিটাও খুলে পড়ে কাগজের নৌকোর মতো ভেসে যাচ্ছে অল্প অল্প স্রোতে, এবং তার ফলে মাথাজোড়া যে টাকটি এই গোলাপি রোদুরে চিকমিক করছে, সেটি অতি প্রসিদ্ধ এবং আমার সুপরিচিত। তার সান্টা ক্লজ-সদৃশ সাদা অনবদ্য গোঁফ- দাড়িতে এখন বিস্তর জলকাদা লেগেছে।
এবং তার হাতের সেই পিস্তলটা পরিণত হয়েছে বাইনোকুলারে। হয়েছে বলেই আমাদের বোকামির শাস্তি পাইনি। কিন্তু ততক্ষণে আমার পেটে হাসি ঘুলিয়ে উঠছে। হায় বুড়ো ঘুঘু। এ কী দশা তোমার! ট্যাক্সিওয়ালা লোহার রডটা ফের তুলতেই করুণ আওয়াজ এল, জয়ন্ত! ওকে একটু বুঝিয়ে বলো যে, এটা পিস্তল-টিস্তল নয়, সামান্য একটা দূরবীন।
এতক্ষণে আমি হাসতে পারলুম। হো-হো করে হেসে উঠলুম। ট্যাক্সিওয়ালা অবাক হয়ে বলল, ক্যা জি? কোই জান-পহচান্ আদমি? কৌন হ্যায় উও?
বললুম, থোড়া গলতি হুয়া দাদা! মাফ কিজিয়ে। উও দেখিয়ে আপকা ট্যাক্সিমে বাচ্চালোগ ক্যা গড়বড় কর রহা।
সত্যি-সত্যি কাচ্চাবাচ্চারা ওই জনহীন রাস্তায় ওর ট্যাক্সিতে হামলা করেনি, কিন্তু উপায় নেই। ওই নিমজ্জিত বৃদ্ধ ভদ্রলোককে উদ্ধার করতে হবে। শীতের বিকেলে নদীর জল ওঁর পক্ষে নিশ্চয় আরামদায়ক হচ্ছে না। যাইহোক, আমার মিথ্যে কথায় কাজ হলো। ট্যাক্সিওয়ালা ঘুরে দাঁড়াল। তারপর ওর হাতে সেই ছোট্ট রেঞ্জটা গুঁজে দিতেই সে জঙ্গল ভেঙে রাস্তায় ট্যাক্সির দিকে দৌড় দিল!
নিমজ্জিত বৃদ্ধের দিকে ঘুরে সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে বললাম, জলটা কি খুবই ঠাণ্ডা?
উনি করুণ হেসে ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন, ধন্যবাদ! আমি এবার উঠতে পারব। তবে দয়া করে তুমি আমার টুপিটা উদ্ধার করো।
হাসতে-হাসতে একটা গাছের ডাল ভেঙে ধীরে ধীরে ভাসমান টুপিটা উদ্ধার করে দেখি, উনি পাড়ে উঠেছেন এবং কী আশ্চর্য আবার চোখে বাইনোকুলার রেখে পা টিপে টিপে এগোচ্ছেন! ভিজে পোশাক থেকে জল ঝরছে সমানে। কিন্তু এতক্ষণে সব রহস্য আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়ে ওঁর প্রচলিত নাম বা বদনাম ধরে ডেকে ফেললুম, হাই ওল্ড ঘুঘু! নিমুনি হবে যে!
উনি কানই দিনেল না। দৌড়ে গিয়ে ওঁর কাঁধ খামচে ধরলুম। তখন হতাশ ভঙ্গিতে ঘুরে দাঁড়ালেন। মাই ডিয়ার ইয়ংম্যান! তুমি জানো না, কী সাংঘাতিক ক্ষতি করেছ আমার! অনেক কষ্টের পর বিরল প্রজাতির একটা উড-ডাকের দেখা পেয়েছিলুম! আর কি তাকে খুঁজে পাব?
ওঁর কথায় এবার অনুতাপ জাগল। বললুম, এই দুর্ঘটনার জন্যে আমি যথেষ্ট লজ্জিত এবং দুঃখিত। ক্ষমা করুন এবং চলুন, যেখানে উঠেছেন, সেখানে গিয়ে পোশাক বদলাবেন।
এক মিনিট, জয়ন্ত! আমি প্রজাপতিধরা জালটা নিয়ে আসি।
বলে উনি সামনের দিকে পা বাড়ালেন। সেদিকে তাকিয়ে দেখি, গাছপালার ফাঁকে একটা কাঠের বেড়া দেখা যাচ্ছে। বুড়ো দেখতে দেখতে কী কৌশলে সেই বেড়ার ফাঁক গলিয়ে অদৃশ্য হলেন। তখন ব্যাপারটা ভাল করে দেখার জন্য বেড়ার দিকে এগিয়ে গেলুম।
একটা কৃষিফার্ম বলে মনে হল। নদীর ধারে চারপাশে পাহাড় আর জঙ্গলের মধ্যে কেউ চাষবাস করছে। অঢেল শীতের ফসল ফলে রয়েছে। তরিতরকারিও লাগানো আছে। বুড়ো এখন হামাগুড়ি দিয়ে কুমড়োখেতের দিকে এগোচ্ছেন। দুর্লভ প্রজাতির কতকগুলো প্রজাপতি ওঁর জালে ধরা পড়েছে জানি না, তবে আমার চোখ পড়ল কুমড়োগুলোর দিকে। কিন্তু ওগুলো কি সত্যি কুমড়ো, না পাথর? চতুর্দিকে অজস্র ছোটবড় পাথর পড়ে আছে। অনেকরকম গড়ন, নানান রঙের। কিন্তু কুমড়োখেতের ওগুলোর মসৃণ নিটোল গড়ন আর সোনালি রং দেখেই বুঝতে পারলুম, পাথর নয়। অতএব কুমড়ো ছাড়া আর কী?
আমার বৃদ্ধ বন্ধু ওখানে হাঁটু মুড়ে সাবধানে জাল গুটোচ্ছিলেন। হঠাৎ কোখেকে বাজখাঁহ গলায় কে চেঁচিয়ে উঠল, অ্যাই! অ্যাই! অ্যাই! তারপর দেখি, গমবুটপরা, বেঁটে, নাদুনুদুস চেহারার এক ভদ্রলোক হাতে খুরপি নিয়ে দৌড়ে আসছেন! এই রে! এবার আর বুড়োকে বাঁচানো যাবে না। আমি বেড়ার ফাঁক গলিয়ে ঢোকার জন্যে সাধ্যসাধনা করছি। তার মধ্যে শুনি, উভয়পক্ষই হা-হা- হো-হো করে হেসে উঠলেন।
জয়ন্ত! চলে এসো। আলাপ করিয়ে দিই।
ডাক শুনে বেড়া গলিয়ে ঢুকে পড়লুম। খামারের মালিক অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন। বেড়ার ফাঁকটা বেড়ে গেছে। সম্ভবত সেদিকেই ওঁর নজর।…
খামারের মালিকের পরিচয় পেয়ে আমি অবাক। ভদ্রলোক আসলে একজন কৃষিবিজ্ঞানী। নাম ডঃ রঘুনাথ গিতিওয়ালা। সংক্ষেপে ডঃ গিন্তি। অনেককাল পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন। ভাল বাংলা বলেন। এই খামার তার ল্যাবরেটরি। গাছগাছড়া নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাছাড়া এক ঋতুর ফসল কীভাবে অন্য ঋতুতে ফলানো যায়, তা নিয়েও মাথা ঘামান। আমার কৌতূহল ওঁর ফলানো কুমড়ো সম্পর্কে। প্রশ্ন শুনে হাসতে-হাসতে বলনে, আপনার বাঙালিরা কুমড়োর ছক্কা খেতে খুব ভালবাসেন। ওদিকে লিটনগঞ্জের কলকারখানা এলাকায় অজস্র বাঙালি আছেন। বলতে পারেন, তাদের মুখ চেয়েই আমি এই উৎকৃষ্ট জাতের কুমড়ো ফলিয়েছি। ওখানকার অফিস ক্যান্টিনগুলোতে তরিতরকারি জোগায় একটা এজেন্সি। তারা আমার খেতের কুমড়ো ট্রাকবোঝাই করে কিনে নিয়ে যায়। আপনার বন্ধু কর্নেলসাহেবকেই জিজ্ঞেস করুন, সত্যি না মিথ্যে।
কর্নেলসায়েব অথাৎ বুড়ো ঘুঘু বলে পরিচত কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। এই খামারবাড়ির পাশের ঘর থেকে ভিজে পোশাক ছেড়ে ডঃ গিন্তি বেঁটে পাজামা-পানজাবি এবং একখানা আস্ত কম্বল জড়িয়ে এতক্ষণ এলেন। ফায়ারপ্লেসের সামনে আরাম করে বসে বললেন, জয়ন্ত, ডঃ গিন্তির ওই কুমড়োগুলো কিন্তু অকাল-কুম্মাণ্ড!
ডঃ গিন্তি হো-হো করে হেসে উঠলেন। কী বললেন? অকাল-কুম্মাণ্ড?
কর্নেল বলেন, তাছাড়া আর কী বলব? সচরাচর কুমড়ো পরিণত আকার পেতে এবং পাকাপোক্ত হতে অনেক দিন লেগে যায়। আপনার এই কুমড়ো মাত্র তিনমাসেই প্রকাণ্ড হয়ে ওঠে। ভেতরটা লাল টুকটুকে।
ডঃ গিন্তি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন যেন। বললেন, না, না। লাল বলা ঠিক নয়, হলদে। আপনি তো ভেতরটা দেখার সুযোগ পাননি এখনও। বরং কাল সকালে আপনার ফরেস্টবাংলোয় খানিকটা পাঠিয়ে দেব। তখন…
বাধা দিয়ে কর্নেল বললেন, সরি! ভেতরটা তো এখনও দেখিইনি। তবে যেন মনে হচ্ছে, ভেতরটা লাল হওয়াই উচিত।
কেন বলুন তো?
বুঝলেন ডঃ গিন্তি, আমার ইদানীং উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দিকেও ঝোঁক চেপেছে। সেদিন একটা পত্রিকায় দেখছিলুম, অবিকল এই জাতের কুমড়ো পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে ফলে। প্রশান্ত মহাসাগরের ওই সব দ্বীপে দুশো বছর আগে কুমড়ো কী তা কেউ জানই না। ১৭৩৯ সালে বিখ্যাত অভিযাত্রী টমাস কুক প্রথম তাহিতি দ্বীপে বিলিতি কুমড়োর কিছু বীজ পুঁতে এসেছিলেন। তার প্রায় একশো বছর পরে বিবর্তনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইন গিয়ে দেখেন, মাটির গুণে বিশাল আকারের কুমড়ো ফলেছে। তো তখনও দ্বীপের লোকেরা ভয়ে কুমড়ো ছোঁয় না। ওখানকার একটা দ্বীপের নাম ইস্টার দ্বীপ। সেখানে লোকেরা যে পক্ষিদেবতার পুজো করে এ বুঝি তারই ডিম। বুঝুন
অবস্থা!
আমি ও ডঃ গিন্তি হেসে উঠলুম। এই সময় কফি এল। আমরা আরাম করে কফিতে চুমুক দিলুম। কর্নেলবুড়ো কোনও ব্যাপারে একবার মুখ খুললে তো থামতে চান না। আবার পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে ফিরেছেন। গতিক দেখে ডঃ গিন্তি আমার দিকে চোখ ইশারা করে বললেন, ইয়ে, এবার জয়ন্তবাবুর ব্যাপারটা শোনা যাক। বলুন জয়ন্তবাবু, কী দেখে এলেন লিটনগঞ্জে?
কর্নেল চিমটেয় অগ্নিকুণ্ড থেকে এক টুকরো অঙ্গার তুলে চুরুট ধরাতে ব্যস্ত হলেন। আমি বললুম, ব্যাপার সত্যি সাংঘাতিক। হেভি ওয়াটার প্ল্যান্টের প্রায় অর্ধেকটা বিস্ফোরণে গুঁড়ো হয়ে গেছে। সরকারি গোয়েন্দারা এখনও তদন্ত করছেন। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু আঁচ করা যাচ্ছে না যে, অত কড়াকড়ি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও কীভাবে অন্তর্ঘাত ঘটল!
ডঃ গিন্তি শিউরে উঠলেন। বলেন কী! অন্তর্ঘাত? তাহলে ফিরে গিয়ে আপনাদের পত্রিকায় কড়া করে লিখবেন জয়ন্তবাবু।
কর্নেল আমার দিকে ঘুরে দুষ্টু হেসে বললেন, রিপোর্টার হিসেবে জয়ন্তের খুব সুনাম আছে। ডঃ গিন্তি। ওর কলমের জোরে সরকারি অফিসের চেয়ারগুলো কেঁপে ওঠে শুনেছি।
পালটা খোঁচা মেরে বললুম, আর আপনার? আপনারও তো বুড়ো ঘুঘু বলে যথেষ্ট নাম আছে।
কর্নেল আচমকা কাশতে শুরু করলেন। সর্বনাশ! জলে নাকানিচোবানি খাওয়ার ফলাফল। ডঃ গিন্তি আমাকে কী প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলেন, উদ্বিগ্ন হয়ে থেমে গেলেন। কিন্তু না, কর্নেল সামলে নিয়েছেন। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখানোর ক্ষমতা আছে ওঁর। রুমালে নাক মুছে বললে, এবার ওঠা যাক। বাংলোয় ফিরতে রাত হয়ে যাবে।
ডঃ গিন্তি বললেন, সঙ্গে লোক দেব। আলো দেব। কিছু ভাববেন না। তা জয়ন্তবাবু, ওই হেভিওয়াটার প্ল্যান্ট ব্যাপারটা আদতে কী বলুন তো? বুঝতেই পারছেন, আমি নিছক কৃষিবিদ্যার চর্চা করি।
কর্নেল হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন। এবার উঠি ডঃ গিন্তি। আপনার আতিথ্য এবং সাহায্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কাল সকালে আপনার এই কাপড়-চোপড় আর কম্বল ফেরত পাঠাব! এসো জয়ন্ত।
বলে উনি সটান বেরিয়ে গেলেন। বাইরে এতক্ষণে চাঁদ উঠেছে। কিন্ত কুয়াশাও ঘন হয়ে জমেছে, আর কনকনে ঠাণ্ডার কথা না তোলাই ভাল। মনে হচ্ছিল, কর্নেলবুড়োর পাল্লায় পড়াটা ঠিক হয়নি। সোজা ভারুণ্ডি স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরলে ভাল করতুম।
এই জঙ্গলের পথে হাড়কাঁপানো শীতে ফরেস্ট বাংলোর দিকে হাঁটতে হাঁটতে এবার বাঘভালুকের ভয় হচ্ছিল। শুনলুম বারুণ্ড জঙ্গলে বুনো হাতিরও উৎপাত আছে। তবে ডঃ গিন্তির লোকটির হাতে আলো আছে।
ফরেস্ট বাংলোয় আরাম করে বসে কর্নেল বললেন, জয়ন্ত, সবার সামনে আমাকে বুড়ো ঘুঘু বলাটা তোমার বদ অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। না—আমি রাগ করিনি। কিন্তু কথাটা তোমার তলিয়ে। দেখা উচিত। তুমি কি এলিয়ট রোডে আমার ফ্ল্যাটের নতুন নেমপ্লেটটা লক্ষ্য করোনি?
একটু হেসে বললুম, করেছি। লেখা আছে : কর্নেল নীলাদ্রি সরকার, প্রকৃতিবিদ। বুড়ো-ঘুঘুর বাসা বলে পরিচিত ফ্ল্যাটের মধ্যে এখন কাচের জার-ভর্তি। তাতে প্রজাপতি-পোকামাকড়েরা ডিম পাড়ছে। হরেক পাখপাখালির মমি সাজানো রয়েছে। দুর্লভ এবং বিরল প্রজাতির নমুনা। কিন্ত হে বৃদ্ধ, চেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তাছাড়া অভ্যাস যায় না মলে। দশ কিলোমিটার দূরে লিটনগঞ্জে হেভিওয়াটার প্ল্যান্টের রহস্যময় দুর্ঘটনা আর ভারুণ্ডি ফরেস্ট বাংলোয় এক প্রাক্তন গোয়েন্দার অবস্থিতি কি নেহাত কাকতালীয় ব্যাপার? দুয়ের মধ্যে কোনও যোগাযোগ নেই? আমি মোটেও বিশ্বাস করি না।
কর্নেল জোরে মাথা দুলিয়ে বললেন, একেবারে কাকতালীয়। আমাকে সরকার ওসব ব্যাপারে কোনও অনুরোধ করেনি। আমি এসেছি, উড-ডাকের খবর পেয়ে। খবরের কাগজের লোক হলেও ওসব খবরে তোমার মাথাব্যথা থাকে না। নইলে সম্প্রতি ভারুণ্ডির জঙ্গলে উড-ডাকের আবির্ভাবের খবর তোমার চোখে পড়ত। যাক গে, এবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। তোমার নিশ্চয় খুব খিদে পেছেছে। আমি চৌকিদারকে দেখি। ততক্ষণ তুমি ফায়ারপ্লেসের অগ্নিকুণ্ডটার দায়িত্ব নাও। কাঠ গুঁজে দিতে ভুলো না।
উনি বেরিয়ে গেলেন। তারপর আমি বসে আছি তো আছি। আর ওঁর পাত্তা নেই। বাংলো গোরস্থানের মতো স্তব্ধ। একা বসে থাকতে গা ছমছম করছে। প্রায় দুঘন্টা পরে কর্নেল ফিরলেন। বললুম, এত দেরি যে?
কর্নেল বললেন, রাতের কাজটুকুও সেরে এলুম। আশা করি, আমার সে অত্যদ্ভুত ক্যামেরার কথা তুমি ভোলোনি।
হ্যাঁ, অত্যদ্ভুত ক্যামেরাই বটে। প্রতাপগড় জঙ্গলে ওটা পেতে রাখতে দেখেছিলুম সেবার। জন্তুদের জল খেতে যাওয়ার পথে গাছের ডালে বেঁধে রেখেছিলেন। একটা তার নিচে মাটিতে পোঁতা ছিল। ক্যামেরার লেন্সের সামনে দিয়ে পঞ্চাশ গজ অব্দি মাটিতে কেউ হেঁটে গেলেই অতিসূক্ষ্ম ইলেকট্রনিক সিস্টেমে সেই স্পন্দন ধরা পড়বে এবং আপনাআপনি শাটারটা ক্লিক করবে। ফ্লাশ বাল্ব জ্বলবে এবং ছবি উঠে যাবে। কর্নেলের মতে, জন্তুদের স্বাভাবিক চেহারার ছবি এভাবেই তোলা সহজ।
বললুম, কোথায় ক্যামেরা পেতে এলেন।
চাপা হেসে কর্নেল বললেন, ডঃ গিন্তির কুমড়োখেতে। কারণ, তখন ওখানে কয়েকটি অদ্ভুত পায়ের ছাপ দেখছিলুম। ওটা কী প্রাণী দেখা দরকার।
বুড়োর বাতিকের কোনও তুলনা নেই। ও নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। এখন একমাত্র ভাবনা, সকাল হলেই আমাকে কেটে পড়তে হবে। লিটনগঞ্জ হেভিওয়াটার প্লান্টের রিপোর্ট কীভাবে লিখব, তাই ভাবতে থাকলুম। কর্নেলও অবশ্য আর মুখ খুললেন না। কেমন গম্ভীর হয়ে চুরুট টানতে থাকলেন।
খেয়েদেয়ে শুতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেল। ক্লান্তির ফলে কখন ঘুমিয়ে গেছি! সেই ঘুম ভাঙল কর্নেলের ডাকে। দেখি, সকাল হয়ে গেছে। কর্নেল অভ্যাসমতো কখন এই প্রচণ্ড শীতের ভোরে বাইরে ঘুরে এসেছেন। গায়ে ওভারকোট, মাথায় হনুমান টুপি, হাঁতে ছড়ি। বললেন, গুড মর্নিং! আশা করি সুনিদ্রা হয়েছে। এখন উঠে পড়ো এবং দ্রুত চোখমুখ ধুয়ে এসো।
বললুম, দ্রুত কেন? কোথাও বেরুবেন বুঝি?
বেরুব। অবশ্য তাতে তোমার লাভই হবে। কথা দিচ্ছি।
লাভের দরকার নেই। আমি সোজা গিয়ে ট্রেন ধরব। বলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলুম।
কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এসে দেখি কর্নেল বিছানায় গুচ্ছের ফোটোর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছেন। আমাকে দেখে বললেন, জয়ন্ত, আমার রাতের ফসল! দেখে যাও, তোমার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যাবে।
একটা ফোটো তুলে নিয়ে সত্যি সত্যি চক্ষু চড়কগাছ আমার। এ কী দৃশ্য! কুমড়োখেতে একটা বিশাল কুমড়োর ওপর ঝুঁকে ডঃ গিন্তি কী যেন করছেন, এক হাতে ক্ষুদে টর্চ রয়েছে। বললুম, কী ব্যাপার?
কর্নেল হাসলেন। ডঃ গিন্তি নিশ্চয় রাতদুপুরে নিজের কুমড়ো নিজে চুরি করছেন না।
তাহলে কী করছেন? নিশ্চয় কোনও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-টরীক্ষা করছেন।
ঠিক তাই। অসাধারণ ওঁর গবেষণা কর্নেল তারিফ করে বললেন। খুব অধ্যবসায়ী লোক ও বলব, জয়ন্ত। যাগগে। সেই অদ্ভুত পায়ের ছাপের রহস্যই থেকে গেল। সম্ভবত জন্তুটা ওঁকে দেখে আর ওখানে পা বাড়ায়নি।
চৌকিদার কফি দিয়ে গেল। কফি খাওয়ার পর কর্নেল ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। জয়ন্ত, দেরি হয়ে যাচ্ছে। বলে আমাকে আপত্তির সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টানতে-টানতে বেরুলেন। কুয়াশার ফাঁকে হাল্কা রোদ ফুটেছে। কিন্তু ঠাণ্ডার কথা না বলাই ভাল। বাংলো থেকে উতরাই রাস্তায় আমরা নেমে গেলুম কিছুদূর। তারপর সমতলে আরও কিছুটা এগিয়ে চমকে উঠলুম! গাছপালার আড়ালে একটা জিপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিপে কারা বসে আছে। কর্নেল তাদের দিকে হাত ইশারা করে আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে ঝোপে ঢুকলেন। তারপর ফিসফিস করে বললেন, এবার হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে হবে জয়ন্ত। একটু কষ্ট করো।
কিন্তু ব্যাপারটা কী?
স্বচক্ষে দেখবে। চলো।
পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে, উপায় কী! ঝোপঝাড় পাথরের আড়ালে এগোচ্ছি। ঠাণ্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে। গাড়ির এঞ্জিনের শব্দ শুনছি। কতক্ষণ পরে কর্নেল একটু উঁচু হয়ে চোখে বাইনোকুলার রেখে বললেন, এসে গেছে! দেখবে নাকি জয়ন্ত? দেখই না।
বাইনোকুলারে চোখ রাখতেই ডঃ গিন্তির খামারবাড়ির গেট নজরে পড়ল। একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাকের গায়ে যা লেখা আছে, স্পষ্ট পড়তে পাছি। উম্মর সিং ক্যাটারিং কোম্পানি। ট্রাকে তরিতরকারি বোঝাই হচ্ছে। ডঃ গিন্তি এবং তার লোকেরা তদারক করছেন। আমি মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারলুম না। এই স্বাভাবিক ব্যাপারে এত লুকোচুরি বা ওত পেতে বেড়ানোর কারণ কী?
হঠাৎ কর্নেল বলে উঠলেন, চলে এসো জয়ন্ত। পাখি ফাঁদে পড়েছে।
তারপর আমার প্রায় বাঘের লেজে-বাঁধা শেয়ালের অবস্থা হল। খামারবাড়ির গেটে পৌঁছে ফের চমকে উঠলুম। ট্রাক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বন্দুকধারী একদল পুলিশ। ডঃ গিন্তি দুহাত তুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছেন। কর্নেলকে দেখে কাঁদোকাঁদো গলায় বললেন, দেখছেন, দেখছেন কর্নেল, কী জঘন্য অত্যাচার।
কর্নেল গম্ভীর মুখে কোনও কথা না বলে ট্রাকের কাছে গেলেন এবং কাঠবেড়ালির মতো উঠে পড়লেন। তারপর হেঁট হয়ে একটা বিশাল কুমড়ো তুলে বললেন, আসুন মিঃ শর্মা। খুব সাবধানে ধরবেন কিন্তু। এর মধ্যে সাংঘাতিক এক্সপ্লোসিভ আছে। বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
একজন পুলিস অফিসার হাত বাড়িয়ে কুমড়োটা নিলেন। সাবধানে ধরে রইলেন। কর্নেল নেমে এসে তার হাত থেকে কুমড়োটা নিলেন। তারপর মাটিতে রেখে বোঁটার কাছে চাপ দিলেন। একটা লম্বা-চওড়া ফালি উঠে এল। উঁকি মেরে দেখি, ভেতরে একটা ধূসর রঙের মস্ত গোল জিনিস ভরা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার বুদ্ধিশুদ্ধি খুলে গেল। থরথর করে কাঁপতে থাকলুম।
কর্নেল বললেন, তাহলে বুঝতে পারছ জয়ন্ত, তোমার কাজের জন্যে কেমন একখানা স্টোরি পেয়ে গেলে। আশাকরি, এবার এও বুঝেছ যে, লিটনগঞ্জের হেভিওয়াটার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় টাওয়ারকেও ধ্বংস করার ব্যবস্থা হচ্ছিল। ক্যান্টিনে এই বিশেষ চিহ্নিত কুমড়োটি যেত এবং সেখান থেকে পাচার হত টাওয়ারের মধ্যে। যাকগে, আমার কাজ শেষ। বাকি যা কিছু, মিঃ শর্মার হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভাল। এসো জয়ন্ত। আমরা বাংলোয় ফিরি। তোমার ট্রেন সেই এগারোটায়। ততক্ষণ তুমি এই অকালকুষ্মণ্ডের রহস্যময় কাহিনীর একটা খসড়া করে নিতে পারবে। তবে মনে রেখো, কুমড়োরহস্য আমি দৈবাৎ টের পেয়েছিলুম, প্রজাপতি ধরা জাল পাততে গিয়েই।
আসতে আসতে শুনলুম, পেছনে ডঃ গিন্তি গর্জে বলছেন, নেমকহারাম! আমার পাজামা-পাঞ্জাবি-কম্বলটা পর্যন্ত এখনও ফেরত দিল না।