আপনার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে, ঘুরতেও ইচ্ছে করে, কিন্তু…
—কিন্তু কী?
—আপনি ভীষণ পাজি!
—কী রকম?
—আপনার হাত চলে।
—কী?
—সেদিন যা করলেন, পেছনের সিটে-—আপুর বান্ধবীরা বলব, নাকি আপনার—-যাহোক, ওরা বসে আছে, কিছু বলতেও পারি না, অসহ্য!
—কই? আমি তো গাড়িই চালাচ্ছিলাম, এক হাতে তোমার হাতটা শুধু ধরে ছিলাম। এর বাইরে…
—আপনি আমার হাত ধরেননি, আমিই আপনার হাত চেপে ধরেছিলাম।
—তবেই বলো, দোষটা কার?
—ইস্, ধরে না থাকলে হাত কোন দিকে যেত, কিছু ঠিক আছে? অসভ্য!
—তোমার হাতের দিকেই যেত। আমি তোমার হাতটাই শুধু ধরে থাকতে চেয়েছিলাম।
—কেন, আপনি আমার হাত ধরবেন কেন?
—ওই হাত, না ধরে কি পারা যায়?
—ইস্, কী আছে হাতে?
—তাহলে কোথায় আছে?
—অসভ্য, পাজি, বদমাশ! আমি ফোন রাখলাম।
—না না, প্লিজ, কথা শোনো, আর কক্ষনো এ ধরনের কথা বলব না।
—না, আপনি বলবেন ঠিকই এবং সুযোগ পেলে আবারও হাত ধরার চেষ্টা করবেন।
—বললাম তো, করব না।
—যদি করেন?
—তো গু খাই।
—হি হি হি! তাহলে সেদিন অমন করলেন কেন?
—আসলে তোমাকে সেদিন খুব ভালো লাগছিল, সেটা বোঝাতেই…, ওদের সামনে তো মুখে কিছু বলা যাচ্ছিল না, তাই…, তা ছাড়া তুমিই বলো, তোমার মতো একজন কেউ পাশে থাকলেও যে নির্বিকার থাকে, তাকে তুমি কোনো ভাবে সেনসিবল বলতে পারবে?
—হাইপার সেনসিটিভিটি ভালো নয়, পণ্ডিত!
—ঠিক আছে, এবার এলে দুই হাতে স্টিয়ারিং ধরে সোজা সামনের দিকে চেয়ে গাড়ি চালাব, প্রমিজ!
—সত্যি?
—একেবারে তিন সত্যি।
—কিন্তু, আপনার প্রমিজে কি আস্থা রাখা যায়? যা মিথ্যা কথা বলেন!
—বিশ্বাস করো, এই যে, সিনেমার মতো, গলা ধরে প্রমিজ করছি।
—আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।
—সত্যি আমি করছি।
—ঠিক তো?
—একদম!
—উম্…, ঠিক আছে, লাস্ট চান্স। কাল বিকেল চারটায়।
—সন্ধ্যার দিকে হতে পারে না? একটু কাজ ছিল যে, সাতটায় আসি?
—অন্ধকার হলে খুব সুবিধে হয়, না? মতলববাজ! আপনাকে আসতে হবে না, আমি কোত্থাও যাচ্ছি না।
—আচ্ছা, আচ্ছা, চারটাই ঠিক আছে। তার আগেই আমি সব কাজ সেরে নেব।
—আমি, যাব না!
—প্লিজ, প্লিজ, বলেছো না লাস্ট চান্স? চারটায়ই আসো, প্লিজ।
—একদম লক্ষ্মী ছেলে হয়ে থাকা হবে তো?
—অবশ্যই।
—ঠিক?
—এক্কেবারে ঠিক।
—আচ্ছা, দেখা যাবে। রাখলাম। আল্লা হাফেজ।
২.
—প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এই আসছি, এসে পড়েছি, পাক্কা ১০ মিনিট আগে বলেছো দুই মিনিট লাগবে!
—সবুরে মেওয়া ফলে।
—ওকে, সবুর করেছি অনেক, এবার মেওয়া ফলা চাই।
—এখনো গাড়িতে উঠিনি কিন্তু, প্রমিজ মনে আছে তো?
—আচ্ছা বাবা, ওঠো।
—ওদিকে কোথায়?
—আশুলিয়া। অসুবিধে আছে?
—না। তবে আমার কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে।
—ঠিক আছে।
—আস্তে চালান। দেখেছেন, নাকফুল পরেছি?
—না, এভাবে আমি দেখব না।
—দেখলেন তো একঝলক।
—ওভাবে হবে না।
—তো কীভাবে হবে?
—পরিবেশ লাগবে। কোনো একটা নিরিবিলি জায়গায়… দুই হাতে তোমার মুখটা ধরে…
—উঁহ্, শখ কত!
—আরও অনেক শখ আছে। তোমাকে বলব, সব বলব, আড়ালে।
—আড়ালে মানে?
—আরে ওটা একটা কবিতার লাইন, ‘দুপুরের রোদে ফুলগুলো তার কমনীয়তাটুকু হারালে, তোমাকে বকবো, ভীষণ বকবো, আড়ালে।’
—ওরে বাবা, আপনি আবার কবিতাও লেখেন নাকি?
—হ্যাঁ, তবে বিভিন্ন নামে। ওটার ছিল খুব সম্ভব শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
—হাহ্, তুললে আর নামতে ইচ্ছে করে না, না?
—তোমার কথার বাইরে যাই না তো আমি, তুমি কিছু বললে ‘না’ করতে পারি না।
—মিথ্যুক! জানেন, আমার একটা পোষা কাঠবেড়ালি আছে, যা কিউট!
—বেড়ালি না বেড়াল?
—মানে কি, কাঠবেড়াল আবার হয় নাকি?
—কোন দুঃখে যে দুখু মিয়া কাঠবেড়ালিকে পেয়ারা খাওয়াতে চেয়েছিল, তারপর থেকে ওই প্রজাতির পুরুষ জাতটাই হারিয়ে গেল। ব্যাটা আসলেই বড্ড নারীঘেঁষা।
—মোটেও না, যান্!
—আমাকে ‘জান’ বলে ডাকলে?
—আ আ-হা!
—আবার বলো। তোমার ওই ছোট ছোট শব্দ দারুণ লাগে। তোমাকে ভালো লাগার এটাও একটা কারণ।
—হুঁ। আচ্ছা অতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন কেন, চলে গেলেই পারতেন?
—তুমি আমাকে পরীক্ষা করছিলে? ধৈর্য, নাকি প্রেমের গভীরতা?
—কচু!
—হাসছো কেন?
—মোটেও হাসছি না। সামনে তাকান।
—চোখ সামনেই আছে, হাসি দেখে ফেলেছি অন্য চোখ দিয়ে।
—বললেন যে, আমাকে ভালো লাগে আপনার, কেন? কী দেখে ভালো লাগে?
—ম্ম, দুই নম্বর কারণটা হচ্ছে তোমার চোখ দুটো। এত মায়া, ওই রকম মায়াভরা চোখ আমি আর দেখিনি। আর তোমার কথা বলার ভঙ্গিটাও।
—দুই নম্বর মানে? এক নম্বর কোনটা?
—ওটা খুব শকিং। বাঙালি মেয়েরা ওই ধরনের কথা পছন্দ করে না।
—তার মানে আমার ফিগার?
—তার মানে তুমি সচেতন।
—আমি এমন কিছু সুন্দরী নই।
—কিন্তু আমি সাংঘাতিক রকম…ইয়ে…আকর্ষণ বোধ করি। তোমার কথা মনে হলেই আমার কী যেন হয়ে যায়।
—আপনি আসলে সত্যিই একটা বাজে লোক। ছিঃ!
—কেন?
—প্রথম থেকেই আপনার মাথায় সেক্স কাজ করছে। ক্লিয়ার বোঝা যায়।
—হ্যাঁ—ইয়ে! অবশ্যই। ওটাকে অস্বীকার করা মানে মিথ্যা কথা বলা।
—আশ্-চো-র্যো! আবার স্বীকারও করে, বেহায়া! সেক্স ছাড়া কোনো মানুষের প্রতি আর কোনো আকর্ষণ থাকতে পারে না?
—অবশ্যই পারে। কিন্তু সেটা আসে পরে। ভণ্ড লোকেরা ওগুলোই শুধু বলে, এবং প্রতারণা করে।
—পিওরলি ফিজিক্যাল অ্যাট্রাকশন একটা রিলেশনকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে?
—অনেক দূর। আমাদের নানি-দাদিদের কথাই ধরো, ওদের রিলেশন শুরুই হয়েছিল সেক্স দিয়ে। সম্পূর্ণ অপরিচিত দুজন নর-নারীকে একটা ঘরে ঠেলে দিয়েছিল যৌন সঙ্গমের সবরকম আয়োজন করে। ভান-ভনিতা কিংবা ছলনা করার কোনো সুযোগই তারা পায়নি। অথচ দেখো, তারা এখনকার চেয়ে অনেক সুখী জীবন কাটিয়ে গেছে।
—হুঁ!
—হাসছো কেন?
—আপনার কথা শুনলে একটা মিথ্যেকেও সত্যি বলে মনে হয়।
—তার মানে আমার কথা তোমার ভালো লেগেছে?
—ইস্, আপনার ওসব চাপাবাজি আমি একটুও বিশ্বাস করি না।
—নাক ফুটো করলে কবে? আগে ছিল না তো!
—ফুটো করে না, ফোঁড়ায়। এটা ফোঁড়াতে হয় না, এই যে, এভাবে টিপে দিতে হয়।
—দাঁড়াও, একটু পরে। ভালো করে দেখতে হবে।
—ইস্, খালি ঢং!
—নাকফুল পরলে কি হয় জানো?
—কী হয়?
—বিয়ে হয়।
—কচু!
—আজই তোমার বিয়ে হবে।
—আহারে, আহ্লাদ! আমি বিয়ে করলে তো! কার ফোন বাজে?
—তোমারই।
—হ্যাঁ, একটু ধরি। হ্যালো…হ্যাঁ, আন্টি বলো। না, আমি বাইরে, কেন?…তুমি না বললে সামনের সপ্তায় যাবে, বুবনের পরীক্ষা শেষ হলে…, ও, আচ্ছা ঠিক আছে, আসছি।
—কী হলো?
-খালার বাসায় যেতে বলছে, এক্ষুনি। কী যেন দেখাবে বলছে। চলুন না, আপনি একটু দূরে দাঁড়াবেন, আমি ১০ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসব।
—কোথায় বাসা?
—খিলগাঁও।
—যে জ্যাম, যেতেই তো দিন কাবার।
—হ্যাঁ, একটু দেরি হয়ে যাবে, রামপুরা রোড দিয়ে যান।
—সে ক্ষেত্রে, আমাদের সময় শুরু হবে ঠিক তুমি আসার পর থেকে। সান্ধ্য আইন আর থাকছে না।
—খালি ধান্দা!
—উরে, বাবারে, তোমার নখ এত বড় কেন, ইস্!
৩.
—দোস্ত, এইটা কী ধইরা দিলি, কথা নাই বার্তা নাই, অল অফ এ সাডন স্ক্রিন থেইকা ডিলিট হয়া গেল!
—নিশ্চয়ই মিস-হ্যান্ডল করছিস, আমি বার বার মানা করছি…
—আরে না, সবকিছু ঠিকই ছিল, পটায়াপুটায়া ডেটিঙে বাইর করলাম, আশুলিয়া যাওয়ার পথে ওর খালার ফোন এল খিলগাঁ থেকে, কী নাকি কাজ আছে। তক্ষুনি দেখা করতে হবে। ভালো কথা, ১০ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসবে, এই রকম একটা আইডিয়া দিয়া সে নাইমা গেল। বাসাটা অবশ্য আমি চিনি না, একটু দূরে থামছি আমরা। তো, ১০ মিনিটের একটু আগেই আমি ফোন দিলাম, যাতে তাড়াতাড়ি আসে, সে ফোন ধইরা বলে তার নাকি আজকে ওইখানে থাকতে হবে, আমারে চইলা যাইতে কয়া সে লাইন কাইটা দিল। হ্যালো, শুনতেছোস?
—হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলতে থাক।
—তো আমি ভাবলাম ওর যদি রাতে ওখানে থাকতেই হয় তো থাকুক না, আমরা একটু ঘুরেটুরে এসে তারপর আবার ওকে নামিয়ে দেব, ওইটা বলার জন্য যতই ফোন করি, ও আর ধরে না। দুই-তিন বার করার পর এখন মোবাইল টোটালি বন্ধ কইরা রাখসে। বল, এর কোনো মানে হয়?
—কী আর করবি, তরে কইসিলাম না, এই মেয়ের লগে বাঝিস না, প্রায় টিনএজ একটা মেয়ে, এরা বহুত বিট্লা হয়। তর তো আবার আমাদের মতন ম্যাচিওর মেয়ে ভালো লাগে না, এখন বোঝ! বিয়া করা অত সোজা না।
—দোস্, ওই সব পরে কইস। লেকচার বন্ধ কইরা এখন একটা ব্যবস্থা কর, প্লিজ!
—আরে আমি কী ব্যবস্থা করুম? ওর বোন আমার সঙ্গে পড়ত, এখন আমি কি ওকে এসব ব্যাখ্যা করতে পারি?
—ওই সব বুঝি না, একটা কিছু কর। তুই পারবি, তোকে পারতেই হবে রে!
—কী যন্ত্রণা! ঠিক আছে দেখতাছি।
৪.
—শোন্, দোস্ত, কেইস খারাপ।
—ক্যান, কী হইছে?
—ওর বাসায় ফোন কইরা ওর খালার বাসার ল্যান্ডফোনের নম্বর নিছি। তারপর ওর খালার বাসায় ফোন কইরা…
—আরে কাহিনি বাদ দিয়া ঘটনা ক।
—ঘটনা হইল, ওর বিয়া।
—কী?
—ইয়েস। শি ইজ গোয়িং টু গেট ম্যারেড। ওর খালা ঠিক করছে, ওদের কেমন পরিচিত, তো ছেলেপক্ষ দেখতে আইসা পছন্দ হয়া গেছে, আজকেই আক্দ কইরা ফালাইতাসে। এবং ছেলে আইজ রাইত এখানেই থাকবে।
—মানে, কী কস্ এই সব।
—যা সত্য তাই কইলাম।
—মানে কী, ওরে কইল আর ও, ও রাজি হয়া গেল! জোর কইরা বিয়া দিব, ওই দিন এখন আছে নাকি!
—আরে ওর কথা আর কইস না। ও পাগল হয়া গেসে। বলে, এই বিয়েতে সে রাজি হইসে, কারণ ও একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চায়। সম্পূর্ণ অচেনা এক লোকের সঙ্গে সেক্সের মাধ্যমেই পরিচয় হবে আগেকার দিনের নানি-দাদিদের মতো, আর এভাবেই নাকি সুখী হওয়া যায়।
—আরে ধুর, ওইটা তো আমি…, তখনকার দিনের লোকের মতো কমিটমেন্ট এখন মানুষের আছে নাকি?
—বাদ দে, মন খারাপ করিস না। জানস না—ফেইলিওর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস? ধইরা নে এইটাও একটা পিলার।
—কোনটা?