শিঙা

শিঙা

টেকো লোকটাকে রোজ দেখি আমাদের পাড়ায়।গ্রীষ্মের দুপুর। মা-বাবা অফিসে।আমার স্কুল ছুটি। দুপুরবেলাগুলো তাই কাটতেই চায় না। আর পাড়াটাও ভারী নির্জন। কানাগলি কিনা বড়োরাস্তা থেকে আমাদের গলিটা ঢুকে কিছুদূর গিয়ে একটা কারখানার পিছনদিকের পাঁচিলে গোঁত্তা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

লোকটা প্রতিদিন একই সময় ঢোকে আমাদের গলিতে।আমি ঘড়ি দেখেছি। মোটামুটি বারোটা থেকে বারোটা দশের মধ্যে ওর হাঁক শোনা যাবেই, “পুরানা টিভি, রেডিও, কম্পিউটার, জলের পাম্প বিক্রি করব্যা…ন।”

লোকটার সঙ্গে থাকে একটা কাপড়ের সাইডব্যাগ।কাউকে কোনোদিন যদিও আমি ওইসব জিনিস ঐ লোকটার কাছে বিক্রি করতে দেখিনি।যদি সত্যি সত্যি কেউ এই জিনিসগুলো ওকে বিক্রি করেও, তাহলে ও কীভাবে ঐ ছোটো ঝোলায় করে নেবে সে সব-সেটা আমার কাছে একটা বিশাল রহস্য।

আমার সামনের ফ্ল্যাটে থাকে মোহর। আমার খুব বন্ধু। ও অন্য স্কুলে পড়ে। ওর স্কুলেও গরমের ছুটি চলছে। ওর বাবা থাকে চেন্নাইতে,মা-ও কী একটা চাকরি করে। কাজেই ওর সঙ্গে আমার একটা চমৎকার আড্ডা চলে প্রায় রোজই।

সেদিন ওর সঙ্গে আমার জোর তর্ক চলছে ভূত আছে কি নেই তা নিয়ে। তর্কটা বেশ জমে উঠেছে। আমাদের এই তিনতলার বারান্দা আর ওদের তিনতলার বারান্দার মাঝে যদি একটা ব্রিজ থাকত তবে নির্ঘাৎ ওর সঙ্গে আমার হাতাহাতি বেধে যেত। এমন সময় নীচে হাঁক শুনলাম,”পুরানা টিভি,রেডিও,কম্পিউটার, জলের পাম্প বিক্রি করব্যা…ন।”

আমি মোহরকে বললাম, “দেখেছিস? লোকটা রোজ রোজ ঠিক এইসময়ই আসে।”

মোহর খুব আবাক হল, “কোন লোকটা রে?”

“এক্ষুণি যে লোকটা রাস্তা দিয়ে হাঁক পাড়তে পাড়তে গেল, ‘পুরানা টিভি ,রেডিও…ওর কথা বলছি।”

“সে তো কদিন আসছেই না। এখন এই ফাঁকা রাস্তায় তুই ঐ লোকটার হাঁক শুনলি কোথা থেকে? জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিস নাকি?”

“শোন, তুই যখন কথা বলিস, তখন আশেপাশের কিচ্ছু খেয়াল করিস না। তুই তখন কানা, কালা সবকিছু।”

“তুই বাজে কথা বলছিস। আজ সাড়ে দশটার সময় ব্লিশ-ত্লো-র পরে আর কোনো ফেরিওয়ালা যায়ই নি। মিথ্যুক, মিথ্যুক।”

আমার খুব রাগ হয়ে গেল। আমি মোহরের সাথে জন্মের মতো আড়ি করে দিয়েছি। সকালে ব্লিশ-ত্লোর হাঁক আমিও শুনেছি। ব্লিশ-ত্লো সাইকেলের পিছনে তুলোর গাঁঠরি আর বালিশ-তোশকের কাপড় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তোশক-বালিশ এইসব বানায় আর যেতে যেতে হাঁক পাড়ে “ব্লিশ-শ—- ত্লো—–”

পরের দিন লোকটার হাঁক শুনে আমি জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, “তুমি তো সকালের দিকে আসো,তা এখন এত বেলায় আসছ যে?”

লোকটা আমার কথা শুনে যেন অবাক হয়ে গেল। হাঁ করে খানিক তাকিয়ে থেকে আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেল। আমার বেজায় রাগ হয়ে গেল। লোকটা যেন কেমন! কথা জিজ্ঞেস করলে জবাব দেয় না।

মোহরের সাথে ঝগড়া হওয়ার পর আমার ভারী মুশকিল হয়েছে। কী আর করি, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সামনের ফ্ল্যাটের কুঠুরিতে থাকা পায়রাগুলোর কাজকর্ম দেখছিলাম। এমন সময় শোনা গেল সেই হাঁক। দৌড়ে ঘরে গিয়ে ঘড়িতে দেখি পাক্কা বারোটা দশ । কে যেন নীচের গেটটা খুলে ঢুকল। বারান্দায় গিয়ে দেখি লোকটাও ভ্যানিশ।

যা বাবা! এত অল্প সময় কোথায় গেল লোকটা! সত্যিই কী আজ কেউ ওর কাছে পুরানা কম্পিউটার বিক্রি করছে নাকি?

সাত-পাঁচ এইসব ভাবছি এমন সময় আমাদের কলিং-বেলের পাখিটা ডাকাডাকি শুরু করল। নিশ্চয়ই মাসী । মাসী এইসময় একবার আসে,ঘর ঝাড়পোঁছ করে আর আমার সাথে বকবক করে। দরজা খোলার আগে আই-হোলে চোখ লাগিয়ে আমার শিরদাঁড়ার মধ্যে দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।

ওই লোকটাই বেল বাজাচ্ছে। লোকটা নির্ঘাৎ ডাকাত-টাকাত হবে। আমি বাড়িতে একা আছি সেটা নিশ্চয়ই খবর পেয়েছে। আমি কোনোরকম আওয়াজ না করে একছুটে ঘরে চলে এলাম। কী করি এবার? মাকে ফোন করব,নাকি নীচের তলার আন্টিকে? বেলটা ক্রমাগত বেজেই চলেছে।

এমন সময় পরিচিত গলার আওয়াজ পেলাম, “এ বেটি, ঘুমোলি নাকি? দরজা খোল।”

ও:! মাসীর গলা। ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে এল। আই-হোলে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই মাসী দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। দরজা খুলে মাসীকে জিজ্ঞেস করলাম, “ওই লোকটা চলে গেছে?”

মাসী যেন আকাশ থেকে পড়ল, “কোন লোকটা?”

“আরে ওই যে পুরোনো কম্পিউটার কেনে সেই লোকটা। বেল বাজাচ্ছিল।”

“সে খামখা তোমাদের বেল বাজাবে কেন? আমি অনেক্ষণ ধরে এই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে মীনার মা’র সঙ্গে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে কেউ গেট খুলে ঢোকেইনি। তুমি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলে।”

স্বপ্ন? হতেই পারে না। এইতো একটু আগে দেখলাম পায়রাদের কোটরের একটা মা পায়রা ছানাগুলোকে খাওয়াচ্ছে; এখনও ওই যে সেটাই করছে। কালো বেড়ালটা মোহরদের ফ্ল্যাটের পাঁচিলে ঘুমোচ্ছে,যেমন দেখেছিলাম একটু আগেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে।

কিন্তু মাসীকে সে-কথা বোঝাতে যাওয়া বৃথা। কারণ ওর যদি মনে হয় সূর্য পশ্চিমে উঠেছে তো কারো ক্ষমতা নেই ওর কথাকে ভুল বলে। কাজেই চুপ করে গেলাম।

সেদিন রোববার। মা-বাবা সবাই বাড়িতে। বাবা বাজার করে বাড়ি ফিরল একটু আগে। বাইরের দরজাটা খোলাই ছিল। লোকটা দেখি সটান ঢুকে এল বাড়ির মধ্যে। বাবা-মা কেউ যেন দেখতেই পেল না। অথবা লোকটার যেন ঘরে ঢোকার ই কথা ছিল, যেন এটাই স্বাভাবিক।

লোকটা সটান আমার দিকে চলে এল। তীব্র দৃষ্টিতে আমার আপাদ-মস্তক দেখে বলল, “’আমাকে তুমি ছাড়া এখানে কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আমার গলাও শুনতে পাচ্ছেনা।”

সে আবার কী? ভূত নাকি?

লোকটা যেন আমার মনের কথাটা বুঝতে পারল, “কী ভাবছ? আমি ভূত কিনা? হা…..হা…..হা…..”

খুব রাগ হল। লোকটা কেন আমার কথা বুঝে নিয়ে ঐভাবে হাসবে?

এমন সময় রান্নাঘর থেকে মায়ের হুঙ্কার ভেসে এল, “এই মূলী,ওরকম হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

এই মা’র একটা রোগ। আমার শিমূল নামটাকে যে কতরকম বিকৃতভাবে ডাকা যায়, সেটা মা’র কাছে শিখতে হয়।

মা’র হুঙ্কারে ভয় পেয়েই বোধহয় লোকটা তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

পরেরদিন পৌনে বারোটা বাজতে না বাজতেই আমি স্নান-টান সেরে ঘর বন্ধ করে এসি চালিয়ে দিয়েছি। বাইরের আওয়াজ আর কোনোমতেই কানে না আসে তাই দুই কানে ইয়ারফোন গুঁজে রেখেছি। কিন্তু বারোটা বাজতেই ব্যালকনিটা আমায় টানতে লাগল।

আজকে লোকটা এল একটু আগেই। আমায় ব্যালকনিতে দেখে ও থমকে দাঁড়াল। তারপর কাঁচুমাচু মুখে জানাল, “আমি একটা ভয়ানক বিপদে পড়ে গেছি। তুমি আমাকে সাহায্য করবে?”

“আমি? আমি কী করে সাহায্য করব?”

“আ–আমি না অদৃশ্য হয়ে গেছি।”

“সে কী? এই তো, আমি তোমাকে দিব্যি দেখতে পাচ্ছি।” আমি বললাম।

“’হ্যাঁ, একমাত্র তুমিই দেখছি আমাকে দেখতে পাও। ওদিকে আমার বাড়িতে তো হুলুস্থূলু কান্ড। থানা, পুলিশ, ওঝা, হসপিটাল কিছুই আর বাকি নেই। আমি সব দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কিচ্ছুটি করতে পারছিনা।”

লোকটার চেহারাটা দেখে সত্যিই মায়া হয়।কিন্তু এরকম একটা অজানা,অচেনা লোককে ঘরে ডেকে আনা তো ঠিক নয়,তাই তিনতলার ব্যালকনি থেকেই কথা চালাই।

“কবে থেকে এরকম হল তোমার? আর হলই বা কেন?”

“কেন হল সে কি আমিই জানি? তা ব্যাপারটা ঘটেছে দিনসাতেক আগে। আমি সেদিন বাজারপাড়ার ওদিকে গিয়েছিলাম। সেদিন আমার বেচাকেনাও একেবারেই হয়নি। তারপর বাড়িতে ফিরে আবিষ্কার করলাম এই ব্যাপার।”

“আচ্ছা,একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“কী কথা?”

“তোমার ওই ছোট্টো ঝোলায় কম্পিউটার,টিভি এসব কিনে নিয়ে যাও কীভাবে?”

সত্যিকথা বলতে কী এটা জানার কৌতূহল আমার বহুদিনের। আমার প্রশ্ন শুনে লোকটা দুঃখী দুঃখী মুখ করে হাসল, “এতে করে নেব কেন? দর-দস্তুর করে যাই, পরে এসে নিয়ে যাই ট্রলি করে।”

“ও! তাই বল!”

কিন্তু লোকটার ব্যাপারটা বেশ ঘোরালো। খামোখা একটা লোক হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায় নাকি? কিন্তু এটাও তো ঠিক যে  সেদিন লোকটা যখন ঘরে ঢুকেছিল বাবা-মা সবাই থাকা সত্ত্বেও কেউ দেখতে পায়নি।

যাই হোক আগে তো শুনি পুরো ব্যাপারটা! তাই লোকটাকে বলি, “ভেবেচিনতে  বলো তো সেদিন তেমন বিশেষ কিছু ঘটেছিল কিনা?”

“সে-রকম বিশেষ কিনা বলতে পারব না। তবে সেদিন আমি বাজারপাড়ার মেলা থেকে একটা জিনিস কিনেছিলাম।”

বাজারপাড়ায় প্রতি বছর চৈত্র-সংক্রান্তিতে মেলা বসে। চলে প্রায় মাসদেড়েক। অনেক আজব জিনিস পাওয়া যায় ওখানে। এই তো বাবা ক’দিন আগে অফিস থেকে ফিরছিল, মেলার পাশ দিয়ে আসার সময় একটা তিব্বতী লোকের কাছে দেখে অনেক রকম অ্যান্টিক জিনিস। বাবা একটা শিঙা নিয়ে এসেছে। জিনিসটা কোনো ধাতুর। কালচে হয়ে গেছে। মুখটা ড্রাগনের, চোখে লাল পাথর ।তিব্বতী লোকটা নাকি শিঙাটা বাজিয়েও দেখিয়েছে। বাবা সেদিন থেকে ওটা বাজানোর বিস্তর চেষ্টা করেছে, এমনকি এখনো করে চলেছে। কিন্তু প্রতিবারই ভস্ করে খানিকটা হাওয়া বেরোনো ছাড়া আর কিছু হয়নি। বাবার ধারণা ওটা একদিন বাজবেই।

লোকটা কী জিনিস কিনেছিল কে জানে? লোকটা তার ডানহাতটা তুলে ধরল, “সেদিন আমি এই আংটিটা কিনেছিলাম আর ঘটনাচক্রে তারপর থেকেই যত গোলমালের শুরু।”

আংটি? আমার খুব কৌতূহল হল। কী আছে ঐ আংটিতে? লোকটাকে একবার ওপরে ডাকব নাকি? কিন্তু মা বারবার অচেনা লোকজন সম্বন্ধে সাবধানে থাকতে বলেছে। তবে, শেষপর্যন্ত অবশ্য কৌতূহলই জয়ী হল। আর তাছাড়া লোকটা এখন মোটেই আমার তত অপরিচিত নয়।

লোকটা ওপরে এলে আংটিটা ভালো করে দেখলাম। প্রথমে সাপ মনে হয়েছিল । কিন্তু ভালো করে দেখে বুঝলাম শিঙা ।অদ্ভূত! একটা ছোট শিঙাকেই যেন ঘুরিয়ে আংটি বানানো হয়েছে। আর জিনিসটা আর পাঁচটা আংটির মতো নয়। আঙুলের ওপর এমনভাবে পেঁচিয়ে আছে যেন ওটা শরীরেরই একটা অঙ্গ। আঁচিল বা তিল যেমন হয় ।

“এটা আঙুলে পরার পর থেকেই আমি অদৃশ্য। সেদিন বাড়িতে ফিরে হাত-পা ধুয়ে আমার বৌকে বললাম খেতে দিতে। ও মা, সে যেন শুনতেই পেল না! দেখি চিন্তিত মুখে ঘর-বার করছে। কী আর করি? ঘরে গিয়ে শুলাম।

“খানিক বাদে ঘরে ঢুকে গায়ে হাত লাগতেই বউ ভয়ে চেঁচামেচি জুড়ে দিল। তারপর এই ক’দিনে বাড়িতে ওঝা,শান্তি-স্বস্ত্যেন আর কিচ্ছুটি বাকি নেই, মানে ভূত তাড়াতে যা যা করা দরকার সব চলছে।”

“আহা রে!তারপর?”

“মনের দুঃখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। খবর পেলাম আমার খোঁজে থানা,পুলিশ,হসপিটাল তোলপাড় করছে বৌ-ছেলে। এখন রাস্তায়ও চলি সাবধানে। আমায় তো কেউ দেখতে পায় না! কখন কীসে ধাক্কা খেয়ে মরি সেই ভয়।”

“তোমাকে যখন কেউ দেখতেই পাচ্ছে না, তোমার হাঁকও শুনতে পাচ্ছে না, তখন খামোখা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছই বা কেন?”

“কী জান,বহুদিনকার অভ্যেস তো! প্রতিদিন ডাল-ভাত খাওয়ার মতোই এই হাঁকটা দিয়ে রাস্তায় না ঘুরলে শরীরটা আনচান করে। এই জ্যান্ত ভূত হয়ে থাকা যে কী শাস্তি!” লোকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, “তবে হাঁক মেরে ঘুরতাম বলেই না তুমি আমায় দেখতে পেলে ,আমার কথা বিশ্বাস করলে!”

ফেরিওয়ালার কথাগুলো যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল। আর একটা অস্বস্তি হচ্ছিল শরীর জুড়ে । অস্বস্তিটা ওই আংটির কারণে। এতো মিল কী করে হয়? লোকটাকে বলিনি, কিন্তু আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি আংটির শিঙা আর ঘরের তাকে সাজিয়ে রাখা বাবার কিনে আনা তিব্বতি শিঙাটার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। আমি যেন একটা সূক্ষ্ম আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। মনে হল সেটা শিঙাটারই আওয়াজ। নিজেনিজেই বাজছে । বাবা এতবারের চেষ্টায় যার মধ্যে থেকে সুর বের করতে পারেনি,সে এখন নিজেই বাজছে!

আমার কী মনে হল, ঘর থেকে বাবার আনা শিঙাটা নিয়ে এলাম। অবিকল এক ধরণের দেখতে,এমনকি ড্রাগনের চোখের লাল পাথরটা অবধি!আমার মতো লোকটাও বেশ উত্তেজিত সেটা বুঝলাম ওর কথায়, “দেখেছ?”

ঘাড় নেড়ে বললাম, “আংটিটা খোলো না!”

লোকটা মাথা নাড়ল, “হবে না। দেখ।”

লোকটা অনেক টানা-হ্যাঁচড়া করল,আমি ঘর থেকে ক্রিম নিয়ে এলাম। মাকে অনেক সময় ক্রিম হাতে লাগিয়ে টাইট হয়ে যাওয়া চুড়ি খুলতে দেখেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। আংটিটা যেন আঙুলে কামড়ে ধরেছে।

খানিক বাদে লোকটা ম্লান হাসল, “আগেও বহুবার চেষ্টা করেছি–”

হঠাৎ কী মনে হতে শিঙাটা নিয়ে আমি ফুঁ দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। একটা অচেনা সুর ছড়িয়ে পড়ল সারা ঘরে। কী সুর,কেমন করে বাজাচ্ছি আমি নিজেই জানি না।

শিঙায় এমন সুর খেলে? নিজের বাজানো সুরে আমি নিজেই বিভোর! এমন সময় লোকটার গলার আওয়াজে আমার তন্ময়তা কাটল, ‘একী! তোমার সুর শুনে আমার আংটিটা কেমন কাঁপছে!আংটিটা সোজা হয়ে খুলে যাচ্ছে! দেখ–দেখ!”

আমি বাজিয়েই চললাম। বলা ভালো, আমাকে বাজাতেই হল। এক সময় আমার সুর থামল যখন, তখন লোকটার হাতের আংটিটা সোজা হয়ে ছোট একটা শিঙার আকার নিয়েছে। লোকটা আমার হাতে শিঙাটা দিয়েই যেন দৌড়ে পালিয়ে বাঁচল।

সামনের রাস্তায় “পুরানা টিভি,রেডিও,কম্পিউটার, জলের পাম্প বিক্রি করব্যা…ন” হাঁক শুনে আমি ব্যালকনিতে যেতেই শুনি সামনের ফ্ল্যাটের মোহর বলছে, “ক’দিন তো তুমি আসনি। কোথাও গিয়েছিলে বুঝি?”

লোকটা মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পরিচিত হাঁকটা দিতে দিতে এগিয়ে গেল, “পুরানা টিভি, রেডিও, কম্পিউটার, জলের পাম্প বিক্রি করব্যা…ন।”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত