আজ থেকে ২০–২৫ বছর আগের কথা।
আমি তখন ছোট।
আমার আব্বা নানাবাড়ি বেড়াতে গেছেন।
নানাবাড়ি খুব বেশি দুরে নয়।
আমাদের গ্রাম হতে সোজা পশ্চিমে একটা গ্রাম তার পরেই নানাদের গ্রাম।
অবশ্য সেখানে যেতে হলে মাঝের যে গ্রামটা আছে, তার আগে ও পরে ২ টা বিল অতিক্রম করতে হয়।
যাহোক একটা বিশেষ দরকারে আমার আব্বা বিকেলে নানাবাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন।
সন্ধ্যার পুর্বে যথাসময়ে তিনি নানাবাড়ি পৌছলেন।
তিনি মাগরীব ও এশার নামায সেখানেই আদায় করলেন।
রাত্রে দরকারী আলাপ এবং খাওয়া – দাওয়া সেরে যখন বাড়ির দিকে রওয়ানা দিবেন, তখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা।
নানা বারবার এত রাতে বের হতে নিষেধ করলেন; কিন্তু আব্বা কোন মতেই নানাবাড়ি থাকতে রাজি নন।
কারন, আম্মা আমাদের দু’ ভাই – বোনকে নিয়ে একা রাত্রি যাপন করবে,কোন অসুবিধা হতে পারে।
তাছাড়া আব্বা কখনোই নানাবাড়ি রাত যাপন করতেননা।
আব্বা যখন বের হলেন,তখন অলরেডি রাত ১১ টা।
তিনি নানাবাড়ি হতে বের হয়ে বিল ও গ্রাম পার হয়ে দ্বিতীয় বিলে পৌছে গেলেন।
বিলের মাঝে রাস্তার পাশে একটা লম্বা জলাশয় রয়েছে।
লোকজন এটাকে ‘দিগল কুড়ি’ বলে একনামে চিনে।
এ স্থানটা একটু ভুতুড়ে টাইপের।
এখানে অনেকেই অনেক কিছু দেখেছেন।
কেউ কুকুর,ঘোড়া দেখেছেন।
কেউ আবার কুড়ির পাশে আম গাছ তলায় সাদা শাড়ি পরা বৌ দেখেছেন।
আবার কেউ কেউ সাপ, বড় চিল-পাখির খপ্পরে পড়েছে।
যাহোক, রাতে একাকী যদি কেউ এস্থান অতিক্রম করে,তো তার গায়ের পশম একটু হলেও কাঁটা দিয়ে উঠবেই।
আমার আব্বা যখন ‘দিগল কুড়ি’ পার হয়ে এসে রাস্তার বাম পাশে উঁচু ভিটাতে উঠেছে।
তখন তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন!
বিলের মধ্যে একটু দুরে একটা আলো, তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছে।
কাক- জোনাকি রাত — তিনি লক্ষ করলেন, মৃদু আলোর সাথে একটা ছায়ার মত বাহন এগিয়ে আসছে।
এটা দেখেই তিনি পাশে একটা ঝোপের আড়ালে আত্মগোপন করলেন,যাতে আরো স্পষ্ট দেখতে পান।
এরপর তিনি দেখলেন! মাঠ ভর্তি ধানক্ষেত– সেই ধানে ক্ষেতের উপর দেড় হাত উঁচু দিয়ে একটি ঘোড়ার গাড়ী টাইপের বাহন উড়ে যাচ্ছে।
বাহনটি দু’টি ঘোড়ায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
আর গাড়ীর উপর দুইজন আরোহী বসে আছে।
বাহনটি যখন নিকটে এসে গেল, আমার আব্বা তখন তাদের পারষ্পরিক আলাপ শুনতে পেলেন।
তবে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না।
ভাষাগুলো অনেকটা চাইনিজ ভাষার মত।
এক পর্যায়ে যখন বাহনটি আরো কাছে আসলো–তখন আব্বার অনুসন্ধান বুঝতে পেরে, আরোহীগন বাহনসহ অদৃশ্য হয়ে গেল।
আব্বা সেখানে কিছুক্ষণ লুকিয়ে থেকে, যখন আর কোন কিছুই বুঝতে পারলেননা।
তখন তিনি বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন।
আরোহী জিনগুলো ভালো জিন ছিল, তাই তারা আব্বার অনুসন্ধান পেয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু কোন ক্ষতিই করেনি।
আমার যখন ৯–১০ বছর বয়স,তখন আব্বা আমাকে গল্পটি শুনিয়েছেন।
বন্ধুরা! গল্পোটি কেমন লাগলো? ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন।
গল্পের বিষয়:
গল্প