রাখে আল্লাহ, মারে কে!

রাখে আল্লাহ, মারে কে!

বেশ কিছুদিন আগের কথা।
আমার চাচাত ভাই মতিন,তার স্ত্রী রেহানা ও আদরের একমাত্র মেয়ে খাদিজা তিনজন মিলে একবার খাদিজার মামাতো ভায়ের জন্মদিন উপলক্ষে কানপাড়ায় যায়।
রেহানারা ছিলেন চার বোন, তিন ভাই।
ভাই বোনদের মধ্যে সে ছিল চার নম্বর।
আর তার বড় এক বোন ছিল,সে হলো বোনদের মধ্যে দিত্বীয়।
যাহোক, ভাই বোনের সংখ্যা বেশি হলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট মিল- মহব্বত ছিল।
ভাইদের বাঁসায় কোন প্রোগ্রাম হলে তাদেরকে বাদ দিতনা।
সেবার ভাইপোর জন্মদিনে খুব সকাল সকাল রেহানারা কানপাড়া পৌছাল।
সারাদিন তারা সেখানে খুব আনন্দ করে কাটালো।
খাদিজা তার মামাতো ও খালাতো ভাই – বোনদের সাথে খুব হৈচৈ করে কাটালো।
দেখতে দেখতে রাত ৯ টা বেজে গেল।
মতিন স্ত্রী রেহানা ও মেয়ে খাদিজাকে নিয়ে ৯ টার সময় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।
আসলে বাড়ি তো খুব দুরে নয়, একটা গ্রাম পার হলে মাঠ,ফসলের মাঠ পেরোলেই তাদের বাড়ি।
মতিনের সম্বন্ধী ভাই বল্ল, ” মতিন! আজকে আউসের রাত, আজকে না গিয়ে আগামী কাল যেয়ো!”
” না ভাই,বাড়ি একা– যেতেই হবে, তাছাড়া মোটর সাইকেলে যেতে বেশি দেরী হবেনা “- বল্ল মতিন।
সবার কাছে বিদায় নিয়ে রেহানারা মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ির দিকে রওয়ানা হল।
শ্রিপুর গ্রাম পেরিয়ে একটা বড় ফসলের মাঠ,মাঠ পার হলেই দাদপুর গ্রামে খাদিজাদের বাড়ি।
গ্রামের শেষ মাথায় রয়েছে একটা বাঁশঝাড়,ঐটা আসলে একটা পারিবারিক গোরস্থান।
কয়েক কছর আগে ঐ গোরস্থানে পরপর দুইটা মহিলা দাফন করা হয়েছিল,যাদের মৃত্যু হয়েছিল বিষপান ও গলায় দড়ি দিয়ে।
খাদিজারা যে রাতে মামার বাড়ি হতে ফিরছিল, তা ছিল অমাবস্যার ঘুুটঘুটে অন্ধকার ( আউসের) রাত।
গ্রাম পার হয়ে যখন তারা গোরস্থান -এর কাছে পৌছালো, তখন তারা একটা বিপদের সম্মুখীন হলো।
মোটর সাইকেলেরর সামনে দিয়ে হঠাৎ একটা বিড়াল চলে গেল।
সংগে সংগে দুর্ঘটনা ঘটলো।
মতিন পড়লো গাড়ীর নিচে,আর রেহানা ও খাদিজা ছিটকে গিয়ে পড়লো রাস্তার পাশে একটা গর্তে।
মোটর সাইকেলের হেডলাইট ইতোমধ্যেই নিভে গেছে।
গর্তটা আসলে একটা কবর।
খাদিজা একটু পাতলা টাইপের হওয়ায় সহজেই উঠতে পেরেছে গর্ত থেকে।
কিন্তু রেহানা বারবার চেষ্টা করেও গর্ত থেকে উপরে উঠতে পারছেনা।
সে যে গাছ,লতাই ধরছে — তাই ছিড়ে যাচ্ছে।
অবশেষে খাদিজা এসে তার মাকে টেনে তোলে গর্ত থেকে।
তারা মা – মেয়ে মিলে মতিনকে গাড়ীর নিচ হতে বের করে,তবে কারও তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
গাড়ীর সামনে দিয়ে বিড়ালের ধাক্কা দেয়া, দুরে কবিরাজের হায়দরি হাক, ‘ ইয়া আলী…’ এসব কিছুই মতিন উপলব্ধি করলেও — সে রেহানাদের কিছুই বুঝতে দেয়নি সে রাতে।
পরে তারা বাড়ি ফিরে আসে ঠিকই।
তবে রেহানা পরবর্তীতে প্রচন্ড জ্বরে সয্যাশায়ী হয়ে পড়ে; কোন ওষুধ, ডাক্তার তাকে সুস্থ্য করতে পারেনি।
কিন্তু ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে!’
একজন বিখ্যাত জিনের কবিরাজ এসে তার চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ্য করেন।
রেহানা এখন যদিও সুস্থ্য, কিন্তু গর্তে পড়ে তার কোমরে যে আঘাত লাগে তার ব্যাথা আজোও সারেনি।
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত