দুটি ঘটনা ঘটবে একসঙ্গে। এক আন্তরিকতম শপথের বৃহত্তম প্রদর্শনী হবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে। একই সঙ্গে ১৯ জুন বিকেল সাড়ে চারটায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচারিত হবে আমাদের বদলে যাওয়ার আর বদলে দেওয়ার শপথ। সরাসরি সম্প্রচারিত হবে কক্সবাজার থেকে। তার সঙ্গে কন্ঠ মেলাব আমরা সবাই, দেশের যে যে প্রান্তেই থাকি না কেন, যারা কক্সবাজারে যেতে পারব না সশরীরে। সেই শপথবাক্যগুলো আগেই প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে। আমরা সবাই একযোগে ওই সময়ে শপথটা আবারও উচ্চারণ করব।
১৯ জুন শুক্রবার দুপুর থেকেই প্রথম আলো বন্ধুসভার হাজার হাজার বন্ধু শপথের ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেবেন সমুদ্রসৈকতে। এই সেই শপথের ব্যানার, সারা দেশের লক্ষাধিক মানুষ যেখানে লিখেছেন তাঁদের বদলে যাওয়ার আর বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার। প্রথম আলোর শপথযান সারা দেশ ঘুরে সে সব শপথ লেখা ব্যানার নিয়ে এসেছে ঢাকায়। তারপর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে, প্রতিষ্ঠানে চলেছে শপথ সংগ্রহ কর্মসুচি। কী যে স্বতঃস্কুর্তভাবে মানুষ এগিয়ে এসেছিল এই কর্মসুচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশে! অনেকেই এগিয়ে এসেছেন নিজের উদ্যোগে, নিজ পাড়ায় বা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গেছেন শপথের ব্যানার। নিজের ছোটখাটো বদভ্যাসগুলো বদলানোর কথা লিখেছেন অনেকেই। যেমন−ধুমপান না করা বা গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখা। অনেকেই করেছেন বড় ধরনের শপথ, স্কুল করবেন বা গরিব শিশুদের জন্য একটা কিছু করবেন; কারও কারও শপথ যৌতুক না নেওয়ার, কারও শপথ দেশের জন্য যেকোনো ত্যাগস্বীকারে প্রস্তুত থাকার। সেই সব শপথের ব্যানার নিয়ে আমরা দাঁড়াব কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে।
ঢাকা থেকে অনেকেই যাবেন। যাবেন আমাদের অগ্রগণ্য লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী আর তারকারা। সংগীতশিল্পীরা অন্য কোনো গান গাইবেন না, গাইবেন কেবল বদলে যাওয়ার গান। বুদ্ধিজীবীরা সেখানে ভাষণ দেবেন না, দাঁড়াবেন শপথের ব্যানার নিয়ে।
কী হবে এই প্রদর্শনী করে? শপথ তো আসলে নিজের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে করতে হয়; সেটা মানা না-মানার বাধ্যবাধকতাও নিজের কাছেই। তাহলে?
আসলে আমরা একটা জাগরণ সৃষ্টি করতে চাই। চাই একটা বিশ্বাস পুনর্জাগ্রত করতে। বলতে চাই, পরিবর্তন দরকার আর পরিবর্তন সম্ভব। ১৯৫২ সালে ভাষাসৈনিকেরা বিশ্বাস করেছিলেন পরিবর্তনে, পরিবর্তন এসেছে; একাত্তরে মুক্তিকামী মানুষ বিশ্বাস করেছিল বিজয় অর্জন সম্ভব, স্বাধীনতা এসেছিল; নব্বইয়েও আমরা বিশ্বাস রেখেছি পরিবর্তনের শক্তিতে, গণতন্ত্র এসেছিল। এবার আমরা বিশ্বাস করি, দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। দেশকে উন্নত দেশে বদলে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব। সম্ভব, যদি আমরা বিশ্বাস রাখি যে আমরা পারব। যদি আমরা মানি যে পরিবর্তনটা জরুরি। যদি আমরা পরিবর্তনের জন্য অন্যের ওপর নির্ভর না করে তাকাই নিজের দিকে, বদলাই নিজেকে আর প্রত্যেকে হয়ে উঠি পরিবর্তনের পথের একেকজন নিষ্ঠাবান কর্মী।
আমাদের নিস্তরঙ্গ জীবনে এবার একটু তরঙ্গ জাগুক। আমাদের স্বপ্নহীন জীবনে জেগে উঠুক নতুন স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন একটা বদলে যাওয়া আলোকিত উন্নত দেশের, উন্নত সমাজের।
দেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথের সুতোয় আমরা সবাই বাঁধা। তাহলে বন্ধু, দেখা হচ্ছে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে। এবার কয়েকটি জরুরি কথা। ভাটার সময় কেউ সমুদ্রে নামব না। কক্সবাজারের সৈকতে চোরাবালি বা চোরাখাদও আছে, কাজেই সবাই সাবধান থাকব। কেউ সৈকতে কোনো ধরনের ময়লা ফেলব না। নিজের যাতায়াত, খাওয়া ইত্যাদির দায়দায়িত্ব হাসিমুখে তুলে নেব নিজের ওপর। অন্যকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে যাব সহাস্যমুখেই। আর প্রত্যেকেই ব্যানার নিয়ে যেতে চাইব দুরতম প্রান্তে, যাতে এক জায়গায় ভিড় না হয়ে এই প্রদর্শনীটি সত্যি সত্যি হয়ে ওঠে পৃথিবীর বৃহত্তম শপথ প্রদর্শনী। স্থাপিত হয় একটা বিশ্বরেকর্ড।
আর এর মাধ্যমে আরেকটি লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে চাই। ব্যানার হাতে সাত কিলোমিটার লম্বা মানবসারি যখন সমুদ্রসৈকতে দাঁড়াবে, তখন তা হয়ে উঠবে ১২০ কিলোমিটার অখন্ড প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকতের একটি উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন। প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে এটা হতে পারে আমাদের প্রচারণার বড় হাতিয়ার এবং প্রেরণা। সারা দেশ ঘুরে আমরা যাচ্ছি কক্সবাজারে, কক্সবাজার থেকে শপথের আলো ছড়িয়ে দেব সারা দেশে, আর বাংলাদেশের অপূর্ব সম্পদ ও সম্ভাবনার বার্তা ছড়িয়ে দেব সারা পৃথিবীতে।