‘মা, বাবাকে তুমি প্রথম কিস্ করেছ কখন?’ পরশ জিজ্ঞেস করে। হাইস্কুলে যাচ্ছে পরশ (১৭), এখনো যে মাকে এই সব প্রশ্ন করছে, তার মানে ছেলেটা এখনো সরল আছে—সুমি আড়চোখে দেখে নেয় ছেলেটাকে। কত বড় হাত-পা হয়ে গেছে ছেলের, খালেদের চেয়েও মনে হয় লম্বা হয়েছে সে। মনে মনে মাশাল্লাহ বলে দুবার, মায়ের নজর না আবার লাগে ছেলের গায়ে।
সুমির মনের মধ্যে গুঞ্জরিত হতে থাকে রবীন্দ্রসংগীত, এত দিন যে বসে ছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে, দেখা পেলেম ফাল্গুনে। বাংলাদেশের বসন্ত! ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, গাছে গাছে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। আমগাছে কালচে পাতা, তার ওপরে লালচে মুকুল, মাছি ভনভন করছে আর কেমন একটা মাদকতাভরা গন্ধ!
‘এই মা, কী ভাবছ?’ পরশের প্রশ্নে বর্তমানে ফিরে আসে সুমি। কত দূরে বাংলাদেশ, জামালপুরে বাড়ির চাতালে হেলে পড়া সিঁদুরে আমের গাছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সারি সারি আমগাছ! কত দূরে তার ছাত্রবেলা! এখানে, এই নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের লাল ইটের ফ্ল্যাটে পাঁচতলায় লিভিং রুমে বসে তারা মায়ে-পুতে গল্প করছে। কোয়ালিটি টাইম কাটাচ্ছে। কাঠের মেঝে, কার্পেটে মোড়ানো, বড় বড় সোফা, একপাশে একটা ৭২ ইঞ্চি টেলিভিশন, তাতে এটিএন বাংলা চলছে, বিজ্ঞাপনই দেখানো হচ্ছে বিরতিহীন। বাংলাদেশে এখন চৈত্র মাস, নিউইয়র্কে এখনো ঘোরতর শীত, ঘরের ভেতরে হিটার অন বলে অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছে না।
খালেদ ওয়াশরুমে ছিল, এসে বসে পড়ে মা আর ছেলের ঠিক মাঝখানে। সোফাটা দেবে যায় খানিকটা। হাতে টিভির রিমোটটা নিয়ে খালেদ চ্যানেল পাল্টায়। চ্যানেল আইতে কী একটা টকশো হচ্ছে।
সুমি বলে, ‘দেখলি, তোর বাবা কী রকম জেলাস? এসে ঠিক মাঝখানে বসল।’
খালেদ বলে, ‘আচ্ছা আচ্ছা, আয় পরশ, তুই মাঝখানে বস, কেয়ারটেকার সরকার। কী নিয়ে কথা হচ্ছে?’
পরশ—তার গলা পুরুষালি হয়েছে, নাকের নিচে গোঁফের অর্ধস্ফুট রেখা—বাবা-মায়ের মধ্যখানে বসে বলে, ‘মাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার সাথে মায়ের প্রথম দেখা হয়েছিল কীভাবে?’
খালেদ গলা খাদে নামিয়ে বলে, ‘কঠিন প্রশ্ন।’
পরশ কাঁধ নাড়ে, ‘এইটা কী করে হার্ড কোশ্চেন হয়? এটা তো তোমাদের দুজনারই জানা।’
সুমি তখন খিকখিক করে হেসে ওঠে। ওর শরীর কাঁপছে। পুরো সোফাটাই দুলছে নৌকার মতো।
পরশ বিস্মিত, ‘কী হলো, হাসো কেন?’
সুমি বলে, ‘খালেদ, বলব?’
খালেদ বলে, ‘ওমা! বলো। দাঁড়াও। দুই কাপ চা বানায়া আনি। নাকি তিন কাপ? পরশ, তুইও খাবি?’
‘খাব।’
খালেদ ওঠে। ওদের কিচেন এই রুমের সঙ্গেই লাগোয়া। সে তিন কাপের মতো পানি চুলায় বসায়। পানি টগবগিয়ে ওঠে অচিরেই। শব্দ হয়। নিউইয়র্কে থাকলেও ওরা চা খায় বাংলাদেশের ইস্পাহানি। একেবারে দুধ-চিনি দিয়ে ঘন কড়া চা বানিয়ে খায়।
‘শোন, তোর বাবার সাথে আমার দেখা হলো প্রথম ঢাকায়। জুনিয়র রেডক্রসের ক্যাম্পিং হয়েছিল আজিমপুর গার্লস স্কুলে। সেখানে। আমি গেছি জামালপুর থেকে। আর ও গেছে ময়মনসিংহ থেকে। আমি তখন পড়ি সিক্স গ্রেডে। আর তোর বাবা পড়ে টেন গ্রেডে।’
‘সেই প্রথম দেখা?’ পরশের কণ্ঠে কৌতূহল।
‘হ্যাঁ।’ সুমি বলে, ‘শোনো, আমাকে চিনি একটু কম দিয়ো, খালেদ। তোর বাবা আমাকে এসে বলল, মামু, মামু, আমারে চিনছ?’
‘মানে কী?’ পরশ ভুরু কোঁচকায়।
‘মানে হলো, তোর বাবার এক ক্লাসমেট আমার মামা। তোর জয়নাল নানাকে মনে আছে?’
‘নাই। বাদ দাও।’ পরশ গল্প এগিয়ে নিতে চায়।
‘এর আগে নাকি জয়নাল মামা আর তোর বাবা জামালপুরে আমাদের বাসায় এসেছিল। আমাকে আগেই দেখেছে। আমার মনেটনে নাই। তার মনে আছে। এসে বলছে, আমারে চিনছ? আমি তোমার খালেদ মামু।’
‘হি হি হি,’ পরশ হাসে। হাসলে ছেলেটাকে যা সুন্দর দেখায়! সুমি আবার বিড়বিড় করে ‘মাশাল্লাহ’ বলে। ‘তারপর কী হলো?’ খালেদের চোখেমুখে সত্যিকারের জিজ্ঞাসা।
‘আমি বলি, চিনি নাই। তোর বাবা বলে, আমি খালেদ মামু। জয়নালের ক্লাসমেট। তোমাদের বাড়িতে গেছি না? শোনো মামু, এই খামটা একটু ওই যে লম্বা করে মেয়েটা আছে না, রানী, ওকে একটু দিতে পারবা?’ সুমি হেসে সোফার মধ্যে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
ওপাশ থেকে তিন কাপ চা ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে এই দিকে আসতে আসতে খালেদ চেঁচায়, ‘এই, এই, বানিয়ে কথা বোলো না।’
‘বানাচ্ছি না। বানাচ্ছি না।’ সুমি বলে, ‘মানে বুঝলি? রানী নামের একটা মেয়েকে তোর বাবার পছন্দ হয়েছে। তাকে সে চিঠি লিখেছে। আমাকে বলে সেই চিঠি রানীকে পৌঁছে দিতে।’
‘হা হা হা,’ পরশ এবার গলা ফাটিয়ে হাসে। ‘তারপর? তুমি পৌঁছায় দিলা চিঠিটা?’
‘দেব না! আমার খালেদ মামু আমারে দিতে বলছে! হি হি হি।’
‘তারপর? রানীকে লাইক করে বাবা, তাকে তুমি কেন বিয়ে করলা?’ পরশ চা হাতে নিয়ে গলায় গাম্ভীর্য ফুটিয়ে বলে।
‘আরে আগে শোন। খালি তোর বাবা রানীকে পছন্দ করে তাই না, আমার জন্যও একটা ছেলে জোগাড় করে আনে।’
‘এই, এই সব কী বলো? বানায়া বইলো না, সুমি।’ খালেদ চায়ের কাপে ফুঁ দিয়ে হাসিমুখে বলে।
‘শোন, শোন, বাবা। পুরাটা শোন। তার নাম ছিল ডায়মন্ড। সেই জন্যে আমার মনে আছে,’ সুমির কণ্ঠে হাসি।
‘ডায়মন্ড তো মেয়েরা ভুলতে পারে না,’ পরশ হাসে।
‘এই, পুরুষবাদী কথা বলবি না।’ সুমি গলায় কৃত্রিম রাগ ফোটায়।
‘না না। তোর মা আসলেই ডায়মন্ড ভাইকে ভুলতে পারে নাই। এর সঙ্গে হিরার কোনো সম্পর্ক নাই।’ এক হাতে চায়ের কাপ, আরেক হাতে টেলিভিশনের রিমোট, খালেদের চোখ টিভিতে।
সুমি বলে, ‘ডায়মন্ড ভাই ছিলেন ময়মনসিংহের রেডক্রসের বড় ভাই। বড় লিডার। তিনি তখন ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছেন। মানে হাইস্কুল শেষ। তাঁর নাকি আমাকে পছন্দ হয়েছে।’
পরশ বলে, ‘তুমি না বললা, তুমি সিক্স গ্রেডে? আর ডায়মন্ড হাইস্কুল কমপ্লিট করেছে। তাইলে তো অনেক সিনিয়র। এজ গ্যাপ তো বেশি হয়ে গেল।’
‘তোর বাপকে বল। তারই বুদ্ধি। সে ডায়মন্ডকে নিয়ে এল আমার কাছে। রেডক্রসের ক্যাম্পিং মানে মাঠের মধ্যে টেন্ট। সাদা সাদা সব তাঁবু। তারই একটা ধরে আছি আমি। ক্লাস সিক্সে পড়ি। দুই বেণী মাথায়। সেই বুড়া হাবড়াকে ধরে এনে তোর বাবা বলে, মামু মামু, এনার নাম ডায়মন্ড। এনার সাথে গল্প করো। বলে তোর বাবা উধাও। আমি বলি, জি, মামা, বলেন। উনি বলেন, আমাকে মামা বইলো না। আমি বলি, কী বলব? উনি আর কথা বলতে পারেন না। হি হি হি।’
সুমির হাতের কাপ থেকে চা ছলকে পড়ে। পরশ টিসু পেপার এগিয়ে দেয়। ‘উফ! মাকে বোধ হয় আজকে হাসিরোগে পেয়েছে।’
‘বাবা, তুমি ডায়মন্ডকে রেখে কই গেছিলা?’ পরশ প্রশ্ন করলে সুমির হাসি পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে দেয়।
খালেদ বলে, ‘আরে, তোর মা বানিয়ে বলছে।’
‘তারপর কী হলো?’ পরশ জানতে চায়।
‘তারপর তো আমি জামালপুরে ফিরে গেলাম। ওই লোক রেগুলার আমাকে চিঠি লেখে। আমি জবাব দেই না। একদিন তোর বাবা সেই ডায়মন্ডকে নিয়ে আমাদের জামালপুরের বাড়িতে হাজির।’
‘আরে না। কাজে গেছলাম জামালপুরে। তাই তোমাদের বাসায় গেছলাম। ডায়মন্ড ভাইকে নিয়ে যাইনি।’ খালেদ প্রতিবাদ করে।
সুমি বলে, ‘আব্বা টের পেয়ে যান। তখন জয়নাল মামাকে ডেকে ঝাড়ি দেন। এই, তোর বন্ধুবান্ধবগুলান এই রকম কেন? তোর বন্ধু খালেদ তার ডায়মন্ড ভাইকে নিয়ে এসে আমার মেয়েকে জ্বালাতন করে কেন?’
‘তারপর?’ পরশ শুধায়।
‘তারপর তোর বাবা আর ডায়মন্ডকে নিয়ে জ্বালাতন করতে আসেনি। আমি জামালপুর কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। তোর বাবা তখন ইউনিভার্সিটির টিচার হয়ে গেছে। আমি হলে সিট পাই নাই। রেবেকা খালার বাসায় থেকে বহুত কষ্ট করে ক্লাস করি। কী আর করা। গেলাম আমার খালেদ মামুর কাছে। মামু, আমাকে হলের সিট জোগাড় করে দেন। মামু বলে, হলে থাকবে? তোমার তো কষ্ট হবে। আচ্ছা, সোমবার এসো। দেখি কী করতে পারি। যাই সোমবারে। উনি আমাকে বলেন, চা খাবে? আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ান। এইভাবে সোমবারে যাই, বুধবারে যাই। শনিবারে যাই।’
খালেদ বলে, ‘তারপর রবিবারে যাই, সোমবারে যাই, মঙ্গলবারে যাই, বুধবারে যাই।’
পরশ লজ্জা পায়, ‘বুঝসি বুঝসি, রোজ যাও। তারপর?’
‘তারপর আর কী? মামু বলে, শোনো, তোমার এত কষ্ট করে হলে ওঠার দরকার কী? আমার তো বাসা আছে। তুমি তো আমার বাসাতেই উঠতে পার। তখন আমি বলি, প্রোপোজাল ছেলের বাসা থেকে পাঠাতে হয়। তুমি প্রোপোজাল পাঠাও।’
‘এর আগে না আপনি করে বলতে? এরপর তুমি করে বলা শুরু করলা?’ পরশের প্রশ্ন।
খালেদ বলে, ‘মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন করেছিস, বাবা। বাংলা ভাষায় সিনেমায়, নাটকে এই আপনি থেকে তুমিতে আসতে যে কত পৃষ্ঠা আর কত রিল খরচ করতে হয়!’
পরশ বলে, ‘তারপর কী হলো?’
সুমি বলে, ‘আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। ইউনিভার্সিটির ক্লাবে রিসেপশন পার্টি হলো।’
‘আর ডায়মন্ড মামু?’ পরশ হাসে।
‘তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর। আমি কি তার খবর জানি নাকি?’
পরশ বলে, ‘আর রানী। বাবা, তোমার রানী কই?’
‘জানি না।’
সুমি চেঁচায়, ‘জানে জানে। তোর বাবা বলবে না। তোর বাবার কবিতার খাতায় দেখবি, তাকে নিয়ে কত কবিতা লেখা।’
‘আমি তো বাংলা পড়তে পারি না, মা।’
‘আচ্ছা, তোকে আমি ইংলিশে ট্রান্সলেট করে দেব।’ খালেদ বলে, ‘পড়ে দেখিস। তোর মা কী রকম লায়ার। আর তোর মা যে খালি ডায়মন্ড কেনে, মার্কেটে গেলেই একটা করে ডায়মন্ড কিনে আনে, কেন আনে এখন বোঝ।’
‘চিন্তা কর! কী বলে তোর বাবা। এই, তুমি তো একটা কমপ্লেক্স ক্যারাক্টার। এইভাবে কেউ ভাবে?’
পরশ মধ্যস্থতা করে। সে তখন কিচেনের সিংকে, কাপ-পিরিচগুলো ধুচ্ছে। গলা উঁচিয়ে বলে, ‘কিন্তু মা, তুমি কিন্তু আমার আসল প্রশ্নটাই এড়িয়ে যাচ্ছ। তোমরা প্রথম কিস করলে কখন? বিয়ের কত দিন আগে? কোথায়?’
খালেদ আর সুমি পরস্পরের মুখের দিকে লাজুক ভঙ্গিতে তাকায়।
‘মনে নাই রে।’ খালেদ বলে।
পরশ বলে, ‘মনে নাই? এটা হতে পারে? ফার্স্ট কিস কেউ ভোলে?’
‘মনে থাকলেও এটা তোকে বলতে পারব না, বাবা।’ সুমি বলে, ‘আমাদের কালচারে এই সব কথা কেউ ছেলেমেয়ের সঙ্গে শেয়ার করে না।’
‘বিয়ের কত দিন আগে, সেটা বললে কী হয়?’
‘ধর, দুই মাস।’ সুমি বলে।
‘কোথায়? মানে ডেটিং প্লেস কোনটা ছিল?’ পরশ জানতে চায়।
সুমি বলে, ‘বাবা, আমরা তো ঠিক ডেটিং করি নাই। ওই শব্দটাই তো আমাদের কালচারে নাই। তবে প্লেসটা আমি তোকে বলি। রিকশায়। বসন্তকালে। আমাদের ইউনিভার্সিটির রাস্তা ভরা আমগাছ। আমের মুকুলের গন্ধ আসছিল। আর একটা কোকিল ডেকে উঠেছিল। এই সময় তোর বাবাকে বললাম, আমাকে একটা চুমু খাও। ও বলল, বলো কী, চারদিকে আমার ছাত্রছাত্রী। আমি বললাম, না, চুমু তোমাকে খেতেই হবে। সে আমার হাতটা ধরে একটা চুমু দিল।’
‘ধ্যাৎ! হাতে কিস খেলে সেটাকে কিস বলে নাকি?’ পরশ হতাশ।
‘আমাদের সময়ে সেটাই অনেক বড় ব্যাপার ছিল, বাবা। পরশ, যাও, শাওয়ার সেরে নাও। আমি খাবার গরম করি। লাঞ্চ করব।’
পরশ ওঠে। বাথরুমে যায়। সুমি খালেদের হাত ধরে বলে, ‘খালেদ, এবার দেশে গেলে আমরা একটা রিকশায় করে ঘুরব দুজনে, আচ্ছা? ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে যাব। ওই আমগাছগুলোর নিচ দিয়ে রিকশা চলবে। এবার তুমি আমাকে একটা চুমু খেয়ো। এখন তো আর চারপাশে তোমার ছাত্রছাত্রীরা থাকবে না। নিয়ে যাবে, বলো, খালেদ?’
‘অবশ্যই নিয়ে যাব। অবশ্যই।’ সুমিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে খালেদ বলে। সুমির চোখ ছলছল করে। সুমির গ্রিনকার্ডে ঝামেলা হচ্ছে। একবার বাইরে গেলে আর ফিরতে পারবে না আমেরিকায়। ১৫টা বছর সুমি দেশের বাইরে। এর মধ্যে আব্বা মারা গেছেন। আম্মা জামালপুর ছেড়ে ঢাকায় এসে ছোট ভাই সুজনের বাসায় থাকেন। তাঁদের জামালপুরের বাড়ির সামনের খুলিতে সেই হেলে পড়া সিঁদুরে আমের গাছটা কি এখনো আছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আমগাছগুলো?
‘আমের মুকুলের গন্ধওয়ালা পারফিউম কিনতে পাওয়া যায় না, খালেদ? ফাল্গুনের শেষে হঠাৎ বৃষ্টি। ঢাকায়। ময়মনসিংহে। জামালপুরে। আমাদের উঠোনে। টিনের চালে। তারপর বৃষ্টি উধাও। রংধনু উঠল আকাশে। মাটিতে সোঁদা গন্ধ। আর আমগাছতলায় বিন্দু বিন্দু মুকুলের আল্পনা। আমি খুব মিস করি, খালেদ। আমি খুব মিস করি। আর কী মিস করি জানো? রিকশা। ওয়ার্ল্ড কাপের ওপেনিংয়ে রিকশায় ক্যাপ্টেনদের চড়িয়ে খুব ভালো করেছে বাংলাদেশ।’
‘আর আমি মিস করি রিকশায় খাওয়া আমাদের অসমাপ্ত প্রথম চুম্বন।’ সুমির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দ্রুত একটা চুমু খেয়ে নিয়ে খালেদ বলে। ক্যাচ করে শব্দ ওঠে। পরশ বাথরুম থেকে বেরোল। ওরা নিজেদের পরস্পরের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়।
টেবিলে প্লেট সাজায় পরশ। ন্যাপকিন দেয় খালেদ। সুমি গরম করা খাবারগুলো টেবিলে রাখে। খালেদ বলে, ‘থ্যাংক ইউ, পরশ, তোর মাকে ওই কোশ্চেনটা করার জন্যে।’
‘কোন কোশ্চেনটা, বাবা?’
‘এই পরশ, তুই ভাত খাবি না একটু? কয়বেলা বার্গার খেয়ে থাকবি?’ ছেলের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে সুমি তাড়াতাড়ি বলে। সুমির মাথার মধ্যে রিকশার ঘণ্টাধ্বনি বাজছে। আশ্চর্য, সেই বেলের আওয়াজে সুরও ফুটছে—মধুর বসন্ত এসেছে, আমাদের মধুর মিলন ঘটাতে…তার এই দুপুরটায় কী যে ভালো লাগছে!