আকরাম খাটে শুয়ে আছে। মাথা চিনচিন ব্যাথা করছে। সালমা চেয়ারে বসে আছে। সে আকরামের প্রতি একটু রাগ। কারণ আকরাম তাকে ব্যবসায়ের কথা কিছুই বলেনা। আকরাম বলল ‘ সালমা সিগারেটের প্যাকেটটা দাও ‘ সালমা সিগারেটের প্যাকেটটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। বলল ‘ সিগারেট খেয়ে খেয়ে মরে যাচ্ছ তাও আরো সিগারেট চাও? ডাক্তারের কথা মনে নেই? ‘ আকরাম উঠে সালমার কপালে চুমু দিয়ে বলল ‘ তুই আমার লক্ষ্মী একটা বউ। এরকম করিস না। সিগারেট খেলে মাথা ব্যাথাটা একটু কমবে। ‘ সালমা সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে দিল অনিচ্ছা থাকলেও। হাতে হাতপাখা নিয়ে আকরামকে বাতাস করছে সালমা। আকরাম বলল ‘ ফ্যানটা ছাড়লেই তো পার ‘ সালমা আকরামের কথা শুনল না।
–
‘ এইযে মিষ্টার গুলি কোথায় যাচ্ছেন? ‘ তপু হেঁটে যাচ্ছিল। পিছন থেকে দোলনা বলল কথাটা। তপুর মেজাজ চারশো বিশ হয়ে যায় দোলনাকে দেখলে। চব্বিশঘণ্টা তাকে জ্বালিয়ে মারে। বলল ‘শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি, যাবি আমার সাথে? গেলে আয়। ‘ দোলনা দূরে দাঁড়িয়ে বলল ‘ আপনার মত একটা ফালতু ছেলের কাছে কেউ মেয়ে দিবে না হেহে ‘ তপুর ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে ধরে একটা থাপ্পড় দিতে কিন্তু তার সময় কম। তাই আবার হাঁটা শুরু করল। দোলনা জানে তপু টিয়ার কাছে যাচ্ছে। টিয়ার পিছন পিছন তিন বছর ধরে ঘুরছে তপু। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা। তপুকে জ্বালাতে ভাল লাগে দোলনার। তপুকে সে ভালবাসে। কিন্তু তাদের দুজনের মেজাজটা ঠিক একসাথে যায় না।
–
‘ টিয়া এই টিয়া ‘ তপু ডাকতেই টিয়া দাঁড়াল। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। বলল ‘ কী? ‘ তপু প্রতিদিনের মত আজকেও বলল ‘ কেমন আছ টিয়া? ‘ টিয়া দাঁতে দাঁত কামড় দিয়ে বলল ‘ ঠিক আপনার সাথে দেখা হবার আগ মুহূর্তে ভাল ছিলাম। আপনার কী শরম লজ্জা বলতে কিচ্ছু নাই? ‘ তপু গোলাপ ফুল এনেছিল টিয়ার জন্য। টিয়ার সামনে দিয়ে বলল ‘ আমার সত্যিই শরম লজ্জা নাই। তোমায় ভালবাসি তো তাই। প্লীজ ফুলটা নাও। ‘ টিয়া ফুলটায় থুথু দিয়ে বলল ‘ আমার আপনাকে ভাল লাগেনা। কোনো কারণ ছাড়াই ভাল লাগেনা। নির্লজ্জের মত আর পিছু নিবেন না। ‘ টিয়ার এই ব্যাবহারে তপুর একটুও কষ্ট লাগেনি। কারণ প্রতিদিনই টিয়া এরকম ব্যাবহার করে। তপু স্বাভাবিক ভাবে আবার হাঁটা শুরু করল।
–
আকরাম অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। সালমা আকরামের হাতের ঘড়ি, টাই ইত্যাদি যা যা দরকার সব টেবিলে রেখে রান্নাঘরে ব্যস্ত। ‘ সালমা এদিকে একটু আয় তো ‘ সালমাকে ডাকতেই সালমা রান্নাঘর থেকে আসল। আকরাম বলল ‘ আমার ফোনটা কোথায়? খুঁজে পাচ্ছিনা তো। ‘ সালমা আকরামের টাই ধরে টান দিয়ে কাছে টেনে নিল। আকরামের বুঝতে অসুবিধে হয়নি আজকেও ফোন সালমার দেবরের হাতে! সালমা বলল ‘ তুমি আরেকটা ফোন কিনতে পারোনা? তপু আজকে তোমার ফোনটা নিয়ে গেছে। এত বড় একটা ছেলে আর ফোন নেই! এরকম বয়সে ফোনের দরকার হয় বুঝ না? ‘ আকরাম হেসে বলল ‘ টাই ছাড় এবার। দেবরের ওকালতি ছাড়া তো কখনো এভাবে কাছে আসিস না। ‘ সালমা মুচকি হেসে আবারো রান্নাঘরে ফিরে যায়।
–
পুরো বোতলের অর্ধেক সুগন্ধিই গায়ে লাগিয়েছে তপু আজকে। আজকে সে টিয়াকে রাজি করাবেই। ফুরফুরে মেজাজে ফোনের স্কিনে নিজের চেহারা দেখছে তপু। তখন ফোনের উপর কেউ হাতে একটা চীরকুট নিয়ে ধরল। তপু দোলনাকে দেখে কিছু বলবে তখনই দোলনা বলল ‘ আজকে আপনাকে জ্বালাতে আসিনি। টিয়ার পিছন পিছন ঘুরে তো আপনি জীবনেও রাজি করাতে পারবেন না। তাই আপনার হয়ে আমিই টিয়ার জন্য চিঠি লিখে নিয়ে আসলাম। চিঠিটা যদি একবার টিয়ার হাতে দিতে পারেন তাহলে নিশ্চিত রাজি হয়ে যাবে। ‘ তপু কিছুক্ষণ ভেবে চিঠিটা হাতে নিল। এই দোলনাকে তপু বিশ্বাস করতে পারছেনা। চিঠিটা খুলে দেখল ঠিকই চিঠি। তারপর দোলনাকে ধন্যবাদ দিয়ে তপু আপন মনে টিয়ার কলেজের উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করল।
–
তপু টিয়াকে বলেছে আজকেই শেষ তার টিয়ার কাছে আসা। টিয়া তাই দাঁড়িয়ে চিঠিটা নিল। সেখানেই দাঁড়িয়ে চিঠিটা পড়ল। অবাক করা ব্যাপার হল রাজিও হয়ে গেল। তপুর বিশ্বাস হচ্ছেনা! স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। টিয়াকে এখন তার তার পুরো পৃথিবী লিখে দিতে ইচ্ছে করছে। কারণ তপুর পৃথিবী টিয়াকে সে পেয়ে গিয়েছে। তপু টিয়াকে নিয়ে নাচবে না কী করবে বুঝতে পারছেনা। খুশিতে তার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছেনা। টিয়া কী যেন ভাবছে। হঠাৎ বলল ‘ একটা শর্তে আমি রাজি। ‘ তপু অবাক হয়ে বলল ‘ কী শর্ত? ‘ টিয়া বলল ‘ আমাকে বিয়ে করতে হলে আপনার ভাইকে দুনিয়া থেকে বিদায় করতে হবে। যেন সব সম্পত্তি আপনার হয়। যদি করতে পারেন তাহলে আমি রাজি। ‘ তপু সঙ্গে সঙ্গে টিয়ার গালে বেশ জোরে একটা থাপ্পড় মারে। টিয়া অজ্ঞান হয়ে যায়। তপুর ইচ্ছে হচ্ছে এখন টিয়াকে গলা টিপে মেরে ফেলতে।
–
দোলনা প্রায় সময়েই সালমার সাথে থাকে। মাঝে মাঝে সালমার জন্য রান্না করে নিয়েও আসে। তারা দুজনে একসাথে টিভি দেখে আর খায়। আকরাম অফিসে যাওয়ার পর। তপু দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই দেখল সালমার কোলে মাথা রেখে দোলনা টিভি দেখছে। নূডুলসের বাটি সামনে রাখা। তপুকে দেখে দোলনা বসে পরল। তপুকে দেখলেই তার ভয় হয়। সালমা বলল ‘ তপু নূডুলস খাবি? ‘ তপু কিছু না বলে দোলনার হাত ধরল। সালমার সামনে। বলল ‘ তোকে নিয়ে আজকে সারা শহর ঘুরবো। যাবিনা আমার সাথে? ‘ দোলনা চোখ বড় বড় করে সালমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘ ভাবী আমাকে বাঁচাও। আমাকে বাইরে নিয়ে নিশ্চিত পিঠাবে। ‘ সালমা হাসছে। শব্দ করেই হাসছে।
–
বিয়ের দিন মেয়েদের কান্নাকাটি বাসর ঘরে ঢুকার আগেই শেষ হয়ে যায়। বাসর ঘরে কোনো মেয়ে কাঁদেনা। কিন্তু দোলনা কাঁদছে। কান্নার শব্দে তপু কাছেই যেতে পারছেনা। দুঃখে তপু চেয়ারে বসেই ঘুমানোর চেষ্টা করল। কান্না তো আর থামেনা। তপু রেগে জিজ্ঞেস করল ‘ কমপক্ষে আজকে রাতটা না কাঁদলে হয় না তোর? ‘ দোলনা বিছানার ছাদর তুলে টিয়ার নাম দেখিয়ে বলল ‘ বিয়ে করেছেন আমাকে আর বিছানায় নাম টিয়ার ওয়াঁয়াঁয়াঁ। ‘ বিছানায় নামটা অনেক আগে তপু লিখেছিল। তপু দোলনাকে বিছানা থেকে নামিয়ে বিছানা তুলে খাটের নিচে রেখে দিল। সকালে ফেলে দিবে। বাসর ঘরের খাটে বিছানা নাই! তবুও দোলনা খুশি। তপু গায়ের পাঞ্জাবি খুলল। দোলনা ভয় পাচ্ছে। পাঞ্জাবির ভিতরে গেঞ্জি ছিল সেটাও খুলল! দোলনা সরে যেতে যতে দেয়ালের সাথে লেগে গেল। তপু দোলনার হাত ধরে তার বুকের বাম পাশে রাখল। দোলনা খেয়াল করল তপুর বুকের মাঝে দোলনা লিখা খোদাই করে! তপু এটাই দেখানোর চেষ্টা করছিল।
গল্পের বিষয়:
গল্প