সে দোকানদারের কাছে চা চাইল। বলল, অই ধোঁয়া ওঠা চা তার প্রাপ্য। বিকেল হয়ে আসছিল তখন। বিকেলের নাশতা হিসেবে টংঘরের অই করুণ দোকানদার তাকে এককাপ ধোঁয়া ওঠা চা বিনামূল্যে দিয়ে দিল। সে একটু দূরে সরে গিয়ে ব’সে সেই চা পান করতে লাগল। তার সঙ্গের যাত্রী আরো বিরক্ত হলো।
দেখছিল তার মেরুদণ্ডহীন সঙ্গীর চা পানের দৃশ্য। মন বলছিল, অই কাপে নোংরা লেগে আছে। মনে পড়ল-দামি ব্র্যাণ্ডের কাপ ছাড়া কোনো কিছুতে তারা কখনো চা পান করে নি। এই জ্বালাময়ী টংঘর তার অন্তর-বাহির পোড়াচ্ছিল-পুড়ছিল সে। আর বাকি দুই যাত্রী তখন চুপচাপ বসে ছিল। ভাবছিল তারা, কখন প্রকৃতি ঠাণ্ডা হবে। তাদের লক্ষ্য অই চূড়া, আর কিছু না। যদিও ওরাও নড়ছিল। বিরক্ত হচ্ছিল। তবে কমই, সামান্য।
বিচ্ছিন্ন প্রজাতির মতো তারা এই দলের সাথে ঐক্য রেখে চলছিল। এ বেশ দ্বিধা আর দ্বন্দের। এরপর এই সবকিছু শেষ হলো। কে খেলো, কে খেলো না, কে পেল, কে পেল না বা কতটুকু পেল-তার হিসাব অন্যদিন দেখে নেয়া যাবে। এখন যখন প্রকৃতি শান্ত আর চূড়া ছাড়া তাদের আর কোনো নিয়তি নেই, থাকলেও তারা মানে না; কখনো কখনো তারা নিজেরাই নিয়তির স্রষ্টা-তারা যাত্রার জন্য আবার প্রস্তুত হলো।
এই পাঁচ যাত্রীর টংঘরে যাত্রা বিরতি করানো যাত্রী আর পাঁচ যাত্রীর পেছনে চলতে শুরু করল। সে আর পথ দেখাচ্ছিল না। বিরক্ত হওয়া যাত্রী বলল, সে শুধু এইরকম টং ঘরই দেখাতে পারে আর কিছু না। ঘুড়ির স্বপ্ন চোখের যাত্রী মনে হচ্ছিল তখন ঘুমাচ্ছে, ঘুমাতে ঘুমাতে পথ চলছে; মায়ের বুকে লেপটে থাকা শিশুর মতো যেন সে!
পেছনে চলতে চলতে টংঘরের পথ দেখান যাত্রী বারবার টংঘরটার দিকে তাকাচ্ছিল। সে কি কিছু ফেলে যাচ্ছিল? কী, অই টংঘর? দোকানদার? তার খালি বাক্স? দোকানটার সামনের বাঁশের মাচান? এই লতা, এই পাতা? এই প্রাচীন পথ-তার শাখা-প্রশাখা? কী, কোন্টা? কোন্ কিছু? চলে গেল যাত্রীরা।