কাঁচ দৈত্য

কাঁচ দৈত্য
সে এক দেশ। আর সেই দেশের পশ্চিমে এক বিরাট পাহাড়। লোকে সেই পাহাড়কে বলে কাঁচ পাহাড়। আর সেই কাঁচ পাহাড়ে বাস করে এক কাঁচ দৈত্য। কাঁচের তার হাত-পা, কাঁচের তার চোখ-মুখ, এক কথায় সারা দেহটাই তার কাঁচের তৈরী। কিন্তু কাঁচ হলে কি হবে—দেহটা তার একেবারে পাথরের মতো শক্ত।
      এমনি সে কাঁচ দৈত্য, সে কিন্তু পশু খায় না, পক্ষী খায় না—খায় না মানুষও ! কিন্তু হলে কি হবে। সে দৈত্য তো বটে। হাতে না মারলেও—মারে সবাইকে ভাতে !
      যখনই তার ইচ্ছে হয়, কাঁচ পাহাড় থেকে নেমে আসে সেই দেশে। আর সেই দেশের সতেজ রসালো মাটিতে মুখ ডুবিয়ে শুষে খেয়ে যায় সব রসটুকু। তাই সেই দেশে হয় না চাষ, হয় না ফসল। বারো মাসই দেশে লেগে থাকে অাকাল।
তাই লোকে আর কি করে? উপায়ান্তর না দেখে শেষে একদিন রাজার পায়ে গিয়ে আছড়ে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—রাজা মশায় আমরা সবাই যে জানে-মালে মরতে বসেছি। ঘরে দুমুঠো চাল নেই যে খেয়ে বাঁচবো। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো, আমাদের চোখের সামনে শুকিয়ে মরছে না খেতে পেয়ে। কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা আমরা। তাই উপায়ান্তর না দেখে ছুটে এসেছি আপনার কাছে। একটা কিছু উপায় যে আপনাকে করতেই হবে।

      কিন্তু কে শুনবে তাদের আকুতি! রাজা ছিল যেমন আলসে আর তেমনি নিষ্কর্মা। সারা দিন বসে বসে খেলতো কেবল পাশা। সেদিনও রাজা তাই খেলছিল। সবে একটা এঁটে সেঁটে বেশ করে চাল দিতে যাচ্ছে, আর অমনি হুড়মুড় করে ঢুকলো সেই লোকরা। আর তাদের গণ্ডগোলে রাজা গেলো ভুলে তার চাল। আর তাই রেগে হলো সে টং। রেগে মেগে প্রায় তেড়ে এসে চিৎকার করে উঠলো, —জাহান্নামে যা, যতো সব নচ্ছাড়ের দল। অমন সুন্দর চালটা আমার দিলো একেবারে পণ্ড করে। দাঁড়া, সব ব্যাটাকে চড়াবো আজ শূলে। তোরা মরবি তো আমার কি? সাহস কতো যে আমার খেলা করিস পণ্ড।

  রাজার এমন কথায় লোকরা তো একেবারে হতবাক। আশ্চর্য হয়ে তারা বল্লে, —রাজা, আমাদের প্রাণের চাইতে তোমার খেলাটাই হলো বড়ো ! বেশ তবে তুমি খেলো। দেখি এবার থেকে তোমার খাবার জোগায় কারা। তোমার সারা বছরের চাল ডাল তো জোগাতে হয় আমাদেরই। আমরাও দিলাম আজ থেকে সব বন্ধ করে। ব’লে তারা সবাই ধীরে ধীরে গেলো চলে। আর রাজা আবার বসলো খেলতে। কোন চিন্তাই যেন নেই তার।
      এদিকে সেই লোকদের মধ্যে ছিল, বিধবার একছেলে। যেমন ছিল সে চঞ্চল, তেমনি ছিল সাহসী আর তেমনি ছিল চালাক। নাম ছিল তার নিপু।
      সেই নিপু, সব দেখে—সব শুনে ছুটে এলো মা’র কাছে। বললো, —মা, আমি যাব সেই দৈত্য মারতে।
      ওর এমন কথা শুনে মা তো অবাক। বলে, —পাগল, তুই এতটুকু ছোট্ট ছেলে। অতবড়ো দৈত্য তুই মারতে পারিস? কিন্তু নিপু নাছোড়বান্দা। সে যাবেই। তাই মা আর কি করে? চোখের পানি মুছে একদিন তাকে বিদায় দেয়। নিপুও তাড়াতাড়ি মা’র চোখের পানি মুছিযে দিয়ে বেরিয়ে পড়ে সেই কাঁচ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। আর কি জানি কি ভেবে সাথে নিলো পাকা বাঁশের একটা লাঠি আর এক ঘটি খাঁটি সরষের তেল।
      তারপর নিয়ে-থুয়ে বেরিয়ে পড়লো পশ্চিমের পথে। সে চলছে—চলছে আর চলছে। পথ যেন আর শেষ হয় না। সে যতোই এগোয় পাহাড়টা যেন ততোই পেছিয়ে যায়। এমনি হাঁটতে হাঁটতে—হাঁটতে, শেষে সে এসে পৌছলো এক গহীন বনে।
      চারিদিকে তখন নেমে এসেছে নিকষ আঁধার। এতো আঁধার যে নিজেকে পর্যন্ত দেখা যায় না। এমনি আঁধারে নিপু পথ ফেললো হারিয়ে। এদিক যায়—ওদিক যায় কিন্তু পথ সে আর পায় না। তাই কি আর করে উপায় কিছু না করতে পেরে শেষে ভাবলো, রাতটা না হয় বনেই কাটানো যাক। ভোর হলে আলোয় পথ চিনে আবার রওয়ানা দেয়া যাবে ‘খন।
       এই ভেবে সে এদিক ওদিক থেকে কিছু ফলমূল, জোগাড় করে পেট ভরে খেয়ে নেয়। তারপর একটা বড়ো শক্তপোক্ত গাছ দেখে—তাতে চড়ে বসে। বলা তো যায়না কখন কোন জন্তু জানোয়ার এসে হামলা করে।
      রাত গড়িয়ে চল্লো। আর রাত যতো বাড়তে লাগলো, চারিদিক ততোই হতে লাগলো নিঝুম। শুধু থেকে থেকে পাখীর পাখা ঝাপটার শব্দ ভেসে আসে।
      এমন সময় হঠাৎ একটা হিস-হিস্ শব্দে সে একেবারে চমকে উঠে। সে সোজা হয়ে বসে এদিক ওদিক চায়। কিন্তু চোখে পড়েনা কিছুই। ভাবে— বাতাসের শব্দ হবে হয়তো। কিন্তু না, শব্দটা যেন ওকে লক্ষ্য করেই এগিয়ে আসছে। সে ত্রস্তে গাছের ডালপাতাগুলো দেখে নিলো। কিন্তু কিছুইতো নড়েনা। এতো বাতাস নয়—নিশ্চয়ই অন্য কিছু ! কিন্তু কি?
এমন সময় তার চোখে পড়লো দুটো আগুনের পিণ্ড যেন এগিয়ে আসছে ও’র দিকে। ঠিক ও যে ডালে বসেছিল সেই ডালটা বেয়ে বেয়ে—আর তাই থেকে বেরুচ্ছে অদ্ভুত একটা হিস্-হিস্ শব্দ।

      সে স্থাণুর মতো বসে বসে কেবল দেখতেই লাগলো। নড়বার শক্তিও নেই তার এতোটুকু। কিসের মন্ত্রবলে যেন সে তার জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। যেন নেই তার হঠাৎ হিম-ঠাণ্ডা একটা

নিঃশ্বাসের স্পর্শে সে চমকে উঠলো। দেখলো—সেই আগুনের পিণ্ড দুটাে একেবারে ওর সামনে। তারপরই ও’র মনে হলো ঠাণ্ডা কি যেন একটা ওকে আস্তে আস্তে চেপে ধরছে। আর বুঝি ও’র রক্ষা নেই। এবার সে বুঝতে পারছে। বুঝতে পারছে—ময়াল অজগরের হাত থেকে কেউ যেমন রক্ষা পায়না সেও পাবেনা। আস্তে আস্তে আরো জোরে যেন চেপে ধরছে অজগরটা। এতো জোরে যে, ও’র হাড়গুলো পর্যন্ত গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় আর কি।
      এমন সময় হঠাৎ ওর মাথায় খেলে গেলো এক বুদ্ধি। অনেক কষ্টে কোন রকমে একটা হাত মুক্ত করে, হঠাৎ তেলের ঘটিটা থেকে এক খাবলা তেল নিয়ে অজগরের জ্বলন্ত চোখ দুটোয় দিলো ছিটিয়ে।
      আর অমনি অজগরের চোখ উঠলো জ্বলে। দৃষ্টি হলো অন্ধ। তারপর চেপে ধরা বাঁধনটা আস্তে আস্তে হয়ে গেলো টিলে। আর সেই ফাঁকে নিপু তাড়াতাড়ি বাগিয়ে ধরলো তার লাঠিটা, ঠিক অজগরের মাথাটা লক্ষ্য করে। অজগরতো এবার প্রাণের ভয়ে হাউ মাউ করে উঠে বল্লো, —আমাকে মেরো না ভাই আমাকে মেরো না! তোমাকে আমি দৈত্য মারার পথ ব’লে দিচ্ছি। দৈত্য মারার উপায়ও করে দিচ্ছি। আমায় তুমি ছেড়ে দাও। আমায় তুমি মেরো না। আমি আর তোমার কোন ক্ষতি করবো না।
      নিপুর কেমন যেন মায়া হলো একটু—আহা বেচারা এমন করে বলছে। কি হবে মেরে? ব’লছে যখন—কিছু আর ক্ষতি করবেনা, তখন ছেড়েই দেয়া যাক। ছাড়া পেয়ে অজগর তো মহা খুশী। খুশী হয়ে নিপুকে বল্লে, —তুমি যখন আমার প্রাণ ফিরিয়ে দিলে, তখন আমিও তোমায় একটা উপহার দিলাম—এই নাও। বলে নিপুকে আশ্চর্য সুন্দর একটা তলোয়ার এগিয়ে দিলো।
      নিপু তলোয়ারটা নিয়ে চোখের সামনে ধরতেই সেটা সেই আঁধারেও ঝকঝক করে উঠলো। সে দেখলে তলোয়ারটা খাটি হীরের তৈরী। সে অদ্ভুত এই তলোয়ারটার দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইল।
      ও’কে ওই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অজগর আবার বলে উঠলো, —এটা সাবধানে রেখো অনেক কাজে লাগবে। আর আরেকটা কথা, সকাল বেলায় এই গাছের তলায় দাঁড়িয়ে থাকবে এক পঙ্খীরাজ। কথা না বলে সটান চড়ে বসবে তাতে। সে তোমায় পশ্চিমের কাঁচ পাহাড়ে পৌছে দেবে। তারপর তোমার কাজ হয়ে গেলে, পঙ্খীরাজ আবার তোমায় তোমার দেশে রেখে আসবে। এই বলে অজগর আস্তে আস্তে আঁধারে গেলো মিলিয়ে। আর হতভম্ব নিপুহতবুদ্ধি হয়ে ঠায় রইল বসে।
      এদিকে সময় চল্লো বয়ে। রাত প্রথম প্রহর থেকে দ্বিতীয় প্রহরে পড়লো, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় প্রহরে তারপর তৃতীয় থেকে চতুর্থ প্রহরে যেই পড়েছে, অমনি হঠাৎ আকাশ ফাটানো একটা চি—হি—হি—হি শব্দে নিপু একেবারে চমকে উঠলো।

      সম্বিৎ পেয়ে ধড়মড় ক’রে উঠে বসতেই দেখে ঠিক তার নিচেই সুন্দর এক পঙ্খীরাজ দাঁড়িয়ে। ব্যাপার বুঝতে কিছুমাত্র তার দেরী হলো না। অজগরের কথা মতো তাই সে সটান চড়ে

বসলো পঙ্খীরাজের পিঠে। তলোয়ারটা বেশ করে গুজে নিল কোমরে আর তেলের ঘটি ও লাঠিটা হাতে নিল বুলিয়ে।
      আর যেই না বসা, অমনি পঙ্খীরাজ দিল ছুট। সে কি আর যে-সে ছোটা? ঝড়-বিদ্যুৎকেও হারমানায়। শ’মাইল পথ যায় এক পলকে।
      পঙ্খীরাজ তো ছুটছে-ছুটছে-ছুটছে। পথ যেন আর শেষ হয় না। অমনি ছুটতে ছুটতে কখোন যেন দিনের প্রথম প্রহর গড়িয়ে দ্বিতীয় প্রহর এলো, দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় প্রহর আর তৃতীয় থেকে চতুর্থ প্রহর যেই এলো, অমনি পঙ্খীরাজ পড়লো দাঁড়িয়ে। আর নিপু দেখলো সেই কাঁচ পাহাড়টা আকাশ পর্যন্ত উঁচু হয়ে পথ আগলে রয়েছে দাঁড়িয়ে।
      নিপু যখন এমনি চারদিকে দেখছে, পঙ্খীরাজটা তাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে—তাকে কোন মতে পিঠ থেকে নামিয়েই হওয়ায় গেলো মিশে।
      কি আর করা—ভেবে, নিপু চারিদিকে একবার ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বসে পড়লো সেখানেই।
      অমনিতেই সে ক্লান্ত শ্রান্ত তার ওপর কাঁচ পাহাড়ে পড়ন্ত সূর্যের রোদ পড়ে ঠিকরে বেরুচ্ছে আলোর ছটা। আর সে ছটা এতো প্রখর যে চোখ খুলে রাখাই দায়। তাই একসময় নিপুর চোখ জোড়া এল বুজে। আর অমনি পড়লো সে ঘুমিয়ে। সে ঘুম কি আর যে-সে ঘুম। সাত রাজ্যের রাজার মতো নাক ডেকে ঘুম। নাক ডাকছে সে ঘড়ঘড়, ঘড়ঘড়। আর সেই ঘড়ঘড় শব্দ কাঁচ পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে হয়ে উঠছে যেন সিংহের গর্জন।
      কতক্ষণ যে সে এমনি ঘুমিয়েছে কে জানে। হঠাৎ একটা বিকট হুংকারে বন্ধ হয়ে গেলো তার নাক ডাকা। ঘুম গেলো তার ভেঙ্গে। চেয়ে দেখে ভোর তখনও হয়নি। চারিদিকে আবছা আঁধার। কাঁচ পাহাড়ের ঠিকরে পড়া চোখ ঝলসানো ছটাও আর নেই। কিন্তু হঠাৎ আঁতকে উঠে তড়াক করে প্রায় লাফিয়ে উঠলো নিপু। ঠিক তার পেছনেই, প্রায় ঘাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেই কাঁচ দৈত্য ।
      কি সাংঘাতিক কিন্তু ত কিমাকার তার দেহ। কাঁচের চোখ দুটাে কেমন অদ্ভুত আর স্থির—একটু এদিক ওদিক নড়ে না, একটা পলক পর্যন্ত পড়ে না। কাঁচের জিহ্বাটা কি সাংঘাতিক লকলকে। কাঁচের হাত দুটো যেন আস্তো ইস্পাতের সাড়াশী।
      কিন্তু ওর আর ভাবা হলনা। সেই কাঁচ দৈত্য এবার হুংকার ছাড়লো মেঘের গর্জনে, —-কোন হতভাগারে তুই? অসময়ে নাক ডেকে, কাঁচা ঘুমটা আমার দিলি নষ্ট করে? বুকের পাটা তো তোর কম নয় দেখছি? মানুষ হয়ে আসিস দৈত্যের ঘুম ভাঙ্গাতে। সাত রাজ্য যার ভয়ে থরহরি কম্প, আর তুই ক্ষুদে পুঁচকে একটা মানুষ—তারই ঘুম দিলি পণ্ড করে? দাঁড়া দেখাচ্ছি এবার মজাটা। পাট খড়ির মতো মটমটু করে ভাঙ্গবো তোর হাড়গুলো। নেহাত আমি মানুষ-টানুষ খাইনা, নইলে ঘাড়টি মটকে খেতাম রক্তটুকু শুষে। বলে দৈত্য দুটো আঙ্গুল দিয়ে, নিপুকে ধরলো চেপে।

      ওই দুটো মাত্র আঙ্গুলের চাপেই নিপুর দু চোখে ফুটে উঠলো যেন সাত আকাশের তারা। দম এলো প্রায় বন্ধ হয়ে।কিন্তু এতোদূর এসে এতো সহজেই কি সে হার মানবে? না—অসম্ভব!

মরতে যদি হয় হাত-পা নেড়েই মরবে। এই-না ভেবে, হঠাৎ সে একটা ঝটকা মেরে ও’র হাত থেকে ছিটকে এলো বেরিয়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় খেলে গেলো এক বুদ্ধি। সে করলো কি—ঘটি ভর্তি সেই তেল আচ্ছা করে গায়ে নিলো মেখে। তাতে তার গা হলো পুরোনো ঘাটের শ্যাওলার মতো পিচ্ছিল। এবার দৈত্য ও’কে যতোই বাগিয়ে যায় ধরতে আর অমনি সুরুৎ করে পিছলে পড়ে সে বেরিয়ে।
      এমনি যতো বারই দৈত্য তাকে ধরে ততবারই সে পিছলে ও’র হাত থেকে বেরিয়ে পড়ে। এমনি করতে করতে সে একবার করলো কি? তার সেই পাকা বাঁশের লাঠিটা বেশ শক্ত করে ধরে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে মারলো এক ঘা। কিন্তু দৈত্যের অত শক্ত কাঁচের দেহটা। এত তাড়াতাড়ি ভাঙবে কেন? ঘা-এর চোটে লাঠিটাই গেলো ভেঙ্গে। আর সেটা ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে টুকরো টুকরো হয়ে। কাণ্ড দেখে দৈত্য লাগলো হো-হে ক’রে হাসতে। তার সেই হাসির দমকে মাটি শুদ্ধো উঠলো কেঁপে। তারপর দৈত্যটা আবার আসতে লাগলো এগিয়ে।
      এদিকে নিপুর গায়ের তেলও ততক্ষণে প্রায় শুকিয়ে এসেছে। গা আর তেমন পিছল হয়ে নেই। সে এবার পড়লো মহা ভাবনায়। এখন উপায় … এখন উপায় ?
      ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আনন্দে সে প্রায় লাফিয়ে উঠলো। হ্যাঁ উপায় একটা আছে। অজগরের দেয়া সেই তলোয়ার। কি আশ্চর্য! ওটার কথা সে একেবারে ভুলেই গিয়েছিল? অথচ ওটাই কাঁচ দৈত্যের জন্য মোক্ষম অস্ত্র। হীরে দিয়েই কাঁচ কাটে—তাহলে ওই কাঁচ দৈত্যের কাঁচ দেহটা হীরের তলোয়ারে নিশ্চয়ই কেটে দুফাঁক হয়ে যাবে!
      যা ভাবা, সেই কাজ। দৈত্যটা ছুটে আসতেই, তলোয়ারটা কোমর থেকে একটানে বের করে চোখ দুটো বন্ধ করে মারলে এক কোপ। আর সেই কোপ লাগলো ঠিক দৈত্যটার পেটে।
      সে যা ভেবেছিল ফলও হলো তাই। দৈত্যটার পেট কেটে হয়ে গেলো দুফাঁক। আর তার পর পরই পেট চেপে ধরে দৈত্য উল্টে পড়লো মাটিতে। আর মাটিতে পড়তেই বিকট ঝন-ঝন শব্দ তুলে একশো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো তার দেহটা৷ তারপরই আরেকটা বিকট শব্দে কাঁচ পাহাড়টাও ভেঙ্গে পড়লো গুড়ো গুড়ো হয়ে। তারপর একসময় সেগুলো গেলো মাটির সাথে মিশে।
      এতো তাড়াতাড়ি যে এতোগুলো কাণ্ড হয়ে যাবে তা নিপু ভাবতেই পারেনি। তাই সে সমস্ত কাণ্ড দেখে একেবারে ‘থ’ হয়ে গেল ।
      এমনি সে কতক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল খেয়াল নেই। হঠাৎ একটা পরিচিত চি—হি-হি-হি শব্দে চমকে চোখ তুলে চাইতেই দেখে সেই পঙ্খীরাজটা দাঁড়িয়ে ঠিক তার সামনেই। তার মনে পড়ে গেল অজগরের কথা। আর মনে হতেই তাড়াতাড়ি সে চেপে বসলো পঙ্খীরাজের পিঠে। আর দেখতে না দেখতে পঙ্খীরাজ দিল ছুট।
      দেশে ফিরে তো নিপু অবাক! যেখানে সে দেখে গিয়েছিল ধুধু মাঠ, সেখানে আজ সবুজের বন্যা। যেখানে সে দেখে গিয়েছিল কান্নার রোল, আজ সেখানে বসেছে হাসির হাট।
      নিপু যখন এমন ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছিলো, তখন সারা দেশের লোক এসে ধরলো তাকে ঘিরে। সে সবাইকে জিজ্ঞেস করলো,
  —রাজা কই ?
      সবাই বল্লো,
      ——না খেতে পেয়ে মরেছে।
      সে বল্লো,
      —রাজপ্রাসাদ কই ?
      সবাই বল্লো,
      ধুলোয় গেছে মিশে
      সে বল্লো,
      —আর তোমাদের কোন অভাব আছে?
      সবাই বল্লো,
       —না না না
       সে বল্লো,
      —আর তোমাদের কোন দুঃখ আছে?
      —না না না
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত