বিষাক্ত জোত্স্না

বিষাক্ত জোত্স্না

এলোমেলো পায়ে নিজ রুম থেকে বেরুলো শৈলেন রায়। উদ্দেশ্য-হল ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ দুধ-চা খাওয়া। তাও আবার লেবু মেশানো। রাতের খাবার খেয়েছে সেই সন্ধ্যে সাতটায়। এখন প্রায় সাড়ে বারোটা। ক্ষুধাও প্রচন্ড লেগেছে। কিন্তু সে শুধুই চা খাবে। উদ্দেশ্য পেটে এসিডিটি ফর্ম করা। যখন খুব টেনশনে থাকে তখন প্রায়ই এই কাজ করে শৈলেন ।

আজ সে টেনশনে আছে। যাকে বলে অস্থির টেনশন। গত পরশু রুবিকে তার ভালবাসার কথা জানিয়েছে শৈলেন । আজ বিকেলে রুবি ফোন করে বলেছে রাতে গুরুত্বপূর্ণ এসএমএস করবে সে। রুবি বুঝতে পারছে সময় ঘনিয়ে আসছে । যে কোন মুহুর্তে তার ভালবাসার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবে। তবে এতটা টেনশন শৈলেন তার পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের সময়ও করে নি। কেমন একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ। লেবু মিশ্রিত দুধচা দিয়ে যায় ক্যান্টিনের মামা ।

এই বিচিত্র ভঙ্গির চা খাওয়াটা শৈলেন শিখেছে রুবির কাছ থেকে। যেদিন থেকে রুবিকে খেতে দেখেছে এই চা, সেদিন থেকে একা একা চা খেলে এভাবেই খায় শৈলেন । কেউ সাথে থাকলে অবশ্য লজ্জায় এভাবে চাইতে পারে না সে। চায়ে প্রথম চুমুক দিয়ে রুবির চিন্তায় ডুবে যায় শৈলেন ।
রুবি, তার খুবই ভাল একজন বন্ধু। কিভাবে যে বন্ধুর প্রেমে পড়ে গেল তা আজও বুঝে উঠতে পারে না শৈলেন ।
শুধু এটুকু জানে যে রুবির গভীর চোখে ডুবে গেছে সে।

ইসসস্…. মেয়েটার চোখজোড়া এত মায়াবী কেন? কত কি যে লুকিয়ে আছে চোখ জোড়ায় তা আবিষ্কারে নেশায় পেয়ে গেছে শৈলেনকে। তাই তো সব লজ্জা-সংকোচের মাথা খেয়ে প্রপোজ করে বসল শৈলেন ।
কি যে হবে কে জানে?

গত দুদিন অবশ্য বেশ ভালভাবে কথা বলেছে রুবি। শৈলেন ও নিজের সর্বোচ্চটুকু করেছে রুবিকে ইমপ্রেস করার জন্য ।
রুবির প্রিয় চিপস্ থেকে শুরু করে প্রিয় ফুল কচুরীপানা, লাল কৃষ্ণচূড়া, নীল জারুল সব তার সেই চেষ্টার অংশ। তাই তো সে এই যুদ্ধ জয়ের ব্যাপারে অনেক আশাবাদী। তারপরও অনেক ভয় হয় শৈলেনের ।
ভালবাসা বুঝতে শেখার পর থেকেই পলাশকে ভালবাসে রুবি। যদিও পলাশ রুবির ভালবাসাকে মোটেও গুরুত্ব দেয়নি, তারপরও ভয় হয় শৈলেনের।

সে পারবে তো পলাশের স্মৃতি রুবির মন থেকে মুছে দিতে?
অজানা ভয়ে শুকিয়ে যায় তার গলা।
টিং টিং…… টিং টিং…….
নিজের ফোনের মেসেজ টোনে বাস্তবে ফেরে শৈলেন । হাতের চা যে কখন শেষ করে ফেলেছে জানে না সে।
হ্যা, সেই কাঙ্খিত মেসেজ । হাত- পা কাঁপছে শৈলেনের ।
কোনরকমে চায়ের বিল চুকিয়ে ছাদে পথে পা বাড়ায় শৈলেন ।
আজ জোত্স্নাে রাত । পুরো ছাদ চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে । মেসেজ দেখার সাহস পায় না সে ।
শৈলেনের মা সবসময় বলে যে, ভাল কিছু পাওয়ার জন্য ভাল কিছু আশা করতে হয়। তাই শৈলেন সব কিছু ইতিবাচক ভাবে ।
হঠাৎ মনটা খুব ভাল হয়ে ওঠে শৈলেনের ।
আচ্ছা রুবি হ্যা বললে কি করবে শৈলেন?
খুশিতে পাগল হয়ে যাবে সে । নাহ্, সে পাগল হলে রুবি পাগলিটাকে সামলাবে কে?
আনমনে হাসতে থাকে শৈলেন । কাল সকালের কাজ ঠিক করে ফেলে শৈলেন ।
কাল সকালের প্রথম কাজ রুবির হাতে অনেকগুলো কচুরীপানার ফুল তুলে দেয়া । কচুরীপানার
ফুল অনেক প্রিয় রুবির ।

নাহ্, বাইক চালানোটা তাড়াতাড়ি শিখে নিতে হবে ।
রুবি বাইকে চড়তে এত পছন্দ করে, আর শৈলেন কিনা বাইক চালাতে পারে না । তা কি হয়???
প্রতিদিন রুবির হাত ধরে কলেজের আনাচে কানাচে ঘুরে বেরাবে সে,
ওর ঘন চুলে হাত বুলিয়ে দেবে, ওর সকল হাসির কারণ হবে, পলাশের দেয়া সকল কষ্ট মুছে দেবে, রুবিকে তার রাজকন্যা করে রাখবে, চোখে তো অশ্রু আসতেই দেবে না,
আরও কত কি। হঠাৎ একটা রাত জাগা পাখি ডেকে ওঠে। কল্পনার রাজ্য ছেড়ে বাস্তবতায় ফিরে আসে শৈলেন ।
একি, এখনো যে মেসেজ পড়া হয়নি। দুর্বল চিত্তে ওপেন বাটন চাপে সে । ওপেন হয় কাঙ্খিত সে মেসেজ . . .

” শৈলেন, আমি পারব না রে। পলাশকে ছেড়ে তোর সাথে জড়াতে পারব না । পলাশকে ফিল করেও শান্তি । আমার খুব ইচ্ছে করছে তোর সাথে বসে জোত্স্না দেখতে । কিন্তু পলাশের স্মৃতি আমাকে তা করতে দেয় না রে। আমি অনেক sorry । ভাল থাকিস।”
মেসেজটা এক নিশ্বাসে পড়ে চাঁদটার দিকে তাকায় শৈলেন । আজকের জোত্স্না টাকে খুবই বিষাক্ত মনে হয় তার । তার মনে হতে থাকে যে চাঁদের আলো তার শরীরটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে ।
গালে একটু ভেজা ভেজা অনুভূতি ছাড়া আর কোন কিছুই অনুভূত হয় না শৈলেনের ।
শুধু বিষাক্ত জোত্স্না র আলোয় পুড়তে থাকে তার দেহ . . . .

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত