আজ অনেকদিন পর অনামিকা কে কল করলাম। হিসেব করলে ২ বছর ৯ মাস ২ দিন ২২ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট পর।
প্রথম ২ বার রিং হয়ে কেটে গেল।
ভাবলাম, হয়তো ব্যাস্ত আছে। আজকাল তো অনামিকা অনেক ব্যাস্ত থাকে। তাই কিছুক্ষণ বিরতি দিলাম।
তারপর আবার কল দিলাম। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গে নারী কন্ঠে ভেসে আসলো…….. “আপনি যে নাম্বারে কল দিয়েছেন,তা এই মুহূর্তে ওয়েটিং এ আছে।কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন।
the number you called is waiting now, please try later.”
পরেরবার আর নারী কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে হলো নাহ, তাই কেটে দিলাম।
আমার অবস্থায় থাকলে কেউ হয়তো রাগ করতো। হয়তোবা অবাক ও হতো। তবে আমি এতটুকুও রাগ করি নি, এতটুকুও অবাক হয় নি। মানুষ প্রথমবার কিছু দেখলে অবাক হয়, আর বার বার বিরক্তিকর কিছু দেখলে রাগ করে। আমি হয়তো মাঝামাঝি অবস্থান এ আছি।
কয়েকবার কল করলাম। প্রতিবারেই ওয়েটিং…………….
তাই ফোন টা পাশে রেখে অন্যদিকে মনোনিবেশ করলাম।
…………..
ফোন রেখে দেওয়ার ১ঘণ্টা ১৩ মিনিট পর আমার মোবাইলের ভয়েস কল রিং বেজে উঠলো। স্ক্রীনে ভেসে উঠছে সেই পরিচিত নাম্বার…..০১৫৩০৪৫৬০**……
নাম্বারটা মনে রাখা অনেক সহজ। ০ এর পরে ১৫ এর গুণিতক লিখলেই হয়ে যায়। অনামিকা’র নাম্বার মুখস্থ থাকতো নাহ। তাই গুনে গুনে ২৬ টা দোকান খুঁজে এই নাম্বার এর ব্যাবস্থা করেছি। তারপর একদিন চুপি চুপি ওর হাতে সিমটা গুঁজে দৌড়ে পালিয়েছিলাম। ইশ, কত লাজুক ছিলাম তখন আমি।
.
অনামিকার কলটা কেটে দিলাম। আসলে ওকে কনগ্রেচুলেশন জানাতেই কল দিয়েছিলাম আমি। অযথা ওর ফোনের ব্যালেন্স নষ্ট করা ঠিক মনে হচ্ছে নাহ। কল ব্যাক করলাম। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর অপাশ থেকে হাজার বছর থেকে চেনা সেই কন্ঠ বিদ্যুৎবেগে আমার দেহ ও মন কে শিহরিত করলো।
: আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করেছিলাম আমি । আমার নাম্বারটা তো সেদিন থেকেই অনামিকার কালো তালিকায় নিবন্ধিত হয়েছিলো।
– অনা, আমি রুদ্ধ।
: আরে দোস্ত তুই!
সরি রে দোস্ত, একটু ব্যাস্ত ছিলাম। একটা বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম। তা বল কেমন আছিস তুই?
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললো অনামিকা। কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি নাহ। প্রথমে তুই, তারপর তুই থেকে তুমি আবার তুমি থেকে তুই। মানবজীবন আসলেই জটিল ভ্রমের পাকে বাঁধা।
– কনগ্রেচুলেশন দোস্ত। আমাদের ক্লাসমেট দের মধ্যে তুই ই একমাত্র ভার্সিটি তে চান্স পাইছিস। কনগ্রেচুলেশন এগেইন।
: ওহ আচ্ছা, তাই বলি ক্লাসের ফার্স্ট বয় রুদ্ধ হঠাৎ গনিতে C গ্রেড পাওয়া অনামিকা কে কেন কল করলো!
-হা…হা…হা…হা………. তুই এখনো সেই আগের মতই আছিস। একটুও পাল্টাস নি। তবে তোর খোলস টা পালটে গেছে।
: তুই তো পালটে গেছিস। তুই তো আগে এতটা নিরীহ ভাবে কথা বলতি নাহ।
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।
– আচ্ছা বাদ দে না এসব। PAST IS PAST
: ওকে।
…….
………..
…………….
কিছু নিরব মুহূর্ত
…………….
………..
…….
অনামিকাই স্তব্ধতা ভাঙলো
: আর কিছু কি বলবি?
– না, মানে একটা কথা, নাহ কিছু বলবো নাহ।
: ইতস্তত করিস নাহ। যা বলার বলে ফেল।
পরে নাও সুযোগ পেতে পারিস।
– তুই কি এখনো আমাকে ভালবাসিস? ( মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল কথাটা)
: হি…হি…হি…. আমি তোকে কবে ভালবাসতাম রুদ্ধ?
পাহাড়ের ওপর এমন বজ্রপাত পড়লে, পাহাড় ও সহ্য করতে পারতে না।তবে আমি সামলে নিলাম। অনামিকা পালটে গেছে। অনামিকা আমাকে ভালবাসে কি না সেসেটাও ভুলে গেছে। আমার সাথে কথা না বললে যার রাতে ঘুম আসতো না,সেই অনামিকা আমার ভালবাসা ভুলে গেছে।
– অনা, তুই আমার সাথে ইয়ার্কি করছিস, তাই না??
: ইয়ার্কি করবো কেন রুদ্ধ?
ইয়ার্কি করার বয়স অনেক আগেই পার করেছি।
– তাহলে আগে আমার সাথে ফোনে কথা বলা সেই সময়গুলো, তোর ডায়েরী তে আমার কবিতাগুলো, বিদায় অনুষ্ঠানের দিনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নিরব প্রেমালাপ সব কি ইয়ার্কি ছিল, অনা?
: হুম, তা তো ঠিক ই আছে। আরে তখন তো আমি ছোট ছিলাম।
– বাহ অনা বাহ, তখন তুই ছোট ছিলি তাই না!
তোর কথা শুনে আমি আসলেই অভিভূত।
২-৩ বছর আগের সব কিছু যদি ছোটবেলার ঘটনা হয়, তাহলে তো আজ থেকে আরো কয়েকবছর পর বলবি যে, না থাক বাদ দে।
একটা প্রশ্ন করি?
: হুম, বল।
– তুই কেমন ছেলে কে বিয়ে করবি?
: বাবার পছন্দের ছেলে কে, সে যেমন ই হোক।
– তুই কি শিওর?
: হুম।
– তখন তো আবার বলবি না যে, আরে তখন তো আমি ছোট ছিলাম। কি বলতে কি বলে ফেলেছি!
: আমি আমার বাবা কে প্রচণ্ড ভালবাসি।
– তোর বাবার কেমন ছেলে পছন্দ?
: জানি নাহ।
– তোর বাবা তো ডাক্তার, অবশ্যই ভালো ডাক্তার ছেলেকেই পছন্দ করবে।
: হয়তো বা।
– আচ্ছা।
তুই তো ভার্সিটিয়ান, অবশ্যই আমার মত ন্যাশনাল এ পড়া কাউকে ভাল লাগবে না নিশ্চয়ই। ওকে, আমিও তোকে দেখে নিবো।
আর তোর বাবাকেও।
: কি করবি তুই?
তোর কি করার ক্ষমতা আছে রে?
– জানিস তো রিহার্সাল করা আমার ক্যারেক্টার নাহ। স্টেজ এ দেখাবো।
শেষ একটা অনুরোধ করবো রাখবি।
: বল।
– তোর বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিস।
: বন্ধু হিসেবে অবশ্যই পাবি। তবে এর বেশি কিছু আশা করিস নাহ।
– হুম।
: অনেক কথাই হলো। আচ্ছা, ভালো থাকিস।
– সব সম্পর্ক এই একটা কথা দিয়েই শেষ হয়, “”ভালো থাকিস “”
চাইলেই কি ভালো থাকা যায়?
.
কথা শেষ হওয়ার আগে কলটা কেটে গেছে। “ভালো থাকিস” বলেই কলটা কেটে দিছে অনা। আমার উত্তরের অপেক্ষায় ই করে নি। স্মৃতির পাতায় অনামিকার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লো যেই দিন গুলোতে অনামিকা আমার ছিলো।সেই দিন গুলোরই কোনো এক দিনে অনেকক্ষণ অনার সাথে কথা বলার পর
: আচ্ছা, পরে কথা হবে। রাখি এখন?
– ওকে, মিস ইউ।
: হুম, আমিও।
– আচ্ছা কল্টা কেটে দাও।
: নাহ, তুমিই কেটে দাও।
– কল দিয়েছে কে?
: আমি।
– তাহলে কলটা কেটে দিবে কে?
: তুমি ( বাঁধভাঙ্গা হাসি দিয়ে)
– এটা তো মহা অন্যায়।
:তুমি যেদিন কল দাও, সেদিন ও তো আমিই কল কেটে দেই। আজ তুমি।
– তুমি তো জানোই অনা। আমি কল কাটি নাহ।
: সব কিছুই তুমি আমাকে দিয়ে আগে করিয়ে নাও।
কোনোদিন যদি আমাদের সম্পর্ক নষ্ট ও হয়, সেদিন কিন্তু আমাকে দায়ী করতে পারবা নাহ।
.
সেদিন এই কথা গুলোর মর্ম কথা বুঝতে পারি নিনি, আজ বুঝতে পারছি।
না অনামিকা, না। আমি তোমাকে দোষারোপ করছি না।
দোষটা তো ছিল আমার। তোমাকে সময়মত আমার মায়াজালে বাধতে পারি নি।
কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দিয়েছি তোমাকে,হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে আমি, অনামিকা। হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে হাজার লোকের ভিড়ে।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প