..নুসরাত কাপড়ের ব্যাগটা হাতে নিয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আবারো বললো , আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছি। আর ফিরবোনা কখনো। .. আমি পেপারটা মুখের সামনে ধরে রেখেই বললাম ..
— আমি: হুম। গেলে একবারে যাওয়াই ভালো। বারবার ঝামেলা করার কি দরকার?
— নুসরাত: কি… আমি ঝামেলা করি? ঝামেলাতো তুমি করো। তোমার মত দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষকে বিয়ে করে জীবনটা শেষ করে দিলাম। আর থাকছিনা এখানে।
— আমি: আচ্ছা যাবেতো চলে যাও। এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তর… ওহ স্যরি মানে কথা বলার কি দরকার। .. (যদি তর্ক করছে বলি তবে আরো আধা ঘন্টা ঝারবে আমাকে। তাই আর বললাম না) ..
— নুসরাত: ঐ তুমি কি বললে? আমি তর্ক করছি?
— আমি: না না আমি সেটা কখন বললাম? আমি বলছিলাম যে তাড়াতাড়ি যাও। নইলে গাড়ি মিস করবে।
— নুসরাত: এই আমি কি যা তা ফ্যামিলির মেয়ে যে দাক্কাধাক্কি করে যাবো? আমি CNG করে যাবো।
—আমি: হিম
—নুসরাত: ছিঃ কি বললা তুমি এটা? আমি তোমার WIFE, আর তুমি আমার সাথে কথা বলার সময় বাবা শব্দ উচ্চারণ করলা। এই তোমার কি কমন সেন্স বলতে কিছু নেই?
— আমি: আরে ওটাতো কথার কথা বলেছি।
— নুসরাত কথার কথাই বলবা কেন তুমি? কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানোনা তুমি?
— আমি: ওকে এরপর আর কখনো তোমার সাথে কথা বলার সময় ঐ শব্দটা উচ্চারণ করবোনা।
— নুসরাত: আরে তুমি আমাকে পাবা কই যে কথা বলবা? আমিতো এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।
— আমি: ও হ্যাঁ। তুমিতো চলে যাচ্ছো। ভালোভাবে যেও।
— নুসরাত: আমি ভালোভাবে যাই আর মন্দভাবে যাই সেটা আমার ব্যাপার। তুমি বলার কে?
— আমি: ওহ তাইতো! আমি বলার কে? ওকে স্যরি।
— নুসরাত: স্যরি বললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? বিয়ের পর থেকে কত কত ভুল করেছো তুমি আমার সাথে? কতবার স্যরি বলবে আর। লজ্জা করেনা তোমার এতবার ভুল করতে আর স্যরি বলতে?
— আমি: আমার লজ্জা শরম একটু কমই। আর সেটাতো তুমি জানোই।
— নুসরাত: কেন লজ্জা কম থাকবে তোমার? তুমি একটা পুরুষ মানুষ না? পার্সোনালিটি বলতে কিছু নেই কেন তোমার?
— আমি: লজ্জাতো নারীর ভূষণ। ওটা পুরুষদের একটু কমই থাকে।
— নুসরাত: কম কি বলছো? ওটাতো তুমার একবারেই নেই।
.. এইবার আমি আর কিছু বললাম না। কেবল চুপ করে রইলাম। পেপারটা এখনো মুখের উপরেই ধরা আছে। ওর দিকে তাকাচ্ছিনা আমি। তাকালে আরো জোড়ালোভাবে ঝগড়া করবে। আসলে মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে। ছয় বছর প্রেম করে বিয়ে করেছি আমরা। ও অনেক বড়লোক বাপের মেয়ে। ওর বোনদের সব বড় বড় ঘরে বিয়ে হয়েছে। ওর পরিবার বারবার না করা সত্বেও ও আমাকেই বিয়ে করছে।
পাঁচ বছর হয় বিয়ে করেছি আমরা। আমি ওকে তেমন কিছুই দিতে পারিনি। আর ও কিছু চায়ওনা আমার থেকে শুধু ভালোবাসা ছাড়া। কিন্তূ এই ভালোবাসাটাতে ঘাটতি পরলেই যত সমস্যা । তখন ও বউ থেকে কাঁচা ধানী লংকা হয়ে যায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যাবার হুমকি দেয়। যদিও আমি জানি যে ও কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেনা। কারণ ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আর ওর রাগটা কমে গেলে পড়ে গভীর রাতে যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন আমার পা ধরে এত কান্নাকাটি করে যে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তূ আজকে আমি নিজেই অনেক ভয় পাচ্ছি। কারণ গতকাল আমাদের ম্যারিজ ডে ছিলো।
কিন্তু আমি অফিসের কাজের জন্য বাসায় আসতে পারিনি রাতে। ও আমার জন্য কেক নিয়ে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছিলো। তাই আজ একটু বেশী রেগে আছে। মনে মনে ভাবছি যদি সত্যি সত্যিই চলে যায়, তাহলেতো আমি শেষ। আমি একদিনও চলতে পারবোনা ওকে ছাড়া। মনে মনে আইডিয়া করে রেখেছি যদি সত্যি সত্যি গেটের বাহিরে চলে যায় তবে কোলে করে নিয়ে আসবো।
কিন্তু তার আগে ওর ভাবটা দেখি। আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে গেলেতো হেরে যাবো। নুসরাত: এখনও ব্যাগ হাতে দরজার সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি একটা ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে সামনে থেকে পত্রিকাটা সরিয়ে ওকে আবারো জিজ্ঞাসা করলাম কি ব্যাপার যাওনি এখনো?
—নুসরাত: আমি কি তোমার পকেট থেকে টাকা চুরি করি যে, টাকা থাকবে আমার কাছে? ভাড়া না দিলে যাবো কিভাবে? এইবার আর হাঁসি চেপে রাখতে পারলাম না। শব্দ করে হেঁসে দিলাম। আর সাথে সাথেই ও ছিঁচকাঁদুনে মেয়েদের মত কাঁদতে লাগলো। আমি তখন উঠে গিয়ে ওর চোখ দুটো মুছে দিতে দিতে একটু ভঙ্গিমা করে বললাম ,,,
— থাক সোনা। তাহলে আর যেতে হবেনা। .. ও কিছু না বলে কেবল আমার কাঁধে মাথা রাখলো। আমিও ভীষণ ভালোবাসি আমার লক্ষিটাকে। .. কার কার এমন রাগি বউ আর রাগি গার্লফ্রেন্ড আছে, যে কিনা রাগ করলে আপনিও ইচ্ছে করে মজা করে ওর রাগ বাড়িয়ে দেন আর ও কাঁদলে আপনিও কেঁদে দেন??