গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটা ‘কারেন্ট আ্যাফেয়ার্স’ বই কিনে বইয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটতেছি। হঠাৎ লক্ষ করলাম আমার ডান পাশের এক বেঞ্চিতে আমার মামা বসে আছে। আমি বই পড়ার অজুহাতে উনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু লাভ হলো না পিছন থেকে ডাক দিলো!
–
– এই যে তাহসিন…
– জ্বি মামা?
– তুমি কি ইদানিং আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছো?
– নাতো মামা।
– চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। কারণ ভাগ্নে মামাকে ছাড়তে পারলেও মামা কিন্তু ভাগ্নেকে ছাড়তে পারে না।
– এটা কি প্রকৃতির নিয়ম?
– জানিনা। তুমি এখন কথা পেচানোর চেষ্টা করছো কিন্তু সেটা আমি করবো না।
–
মামা খুবই শিক্ষিত, মার্জিত এবং ভদ্র স্বভাবের একজন মানুষ। উনি আনন্দমোহন কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা পড়ান কিন্তু আমাকে কখনো জ্ঞান দেবার চেষ্টা করেননি। বরং নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হলো, মামা একটু গোয়েন্দা টাইপের! আর এই টাইপ মানুষগুলোকে সবসময় বয়কট করা উচিত। অথচ বেশ কয়েকদিন যাবত উনি আমার পিছনে লেগেছেন।
–
আম্মু ঘন্টাখানেক আগে ফোন করে বলেছিলো “তোর ছোটমামা তোকে খোঁজতেছিলো! খোঁজে না পেয়ে তোর রুমেও গেলো, ডায়রিটায়রিও খুলে দেখলো! কি জানি কি বাবা।”
মামা আর আমি একসাথে বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ মামা বলে উঠলো,
–
– তাহসিন।
– জ্বি মামা।
– শুনলাম, তুমি নাকি ইদানিং প্রেম করছো?
– কার কাছ থেকে শুনলেন?
– আপু বললো, তুমি নাকি এখন অনেকসময় নিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলো!
– প্রেম করা ছাড়া কি অনেক সময় নিয়ে কারো সাথে কথা বলা যায় না? দেখেন মামা, আমার ফ্রেন্ড হাশেম, ওরে চিনেন তো, নাকি? (মামা হ্যা বোধক মাথা নাড়লো),
–
ওর সাথে বিকালে আড্ডায় বসলে রাত ১০টা/১১টা বেজে যায় তবুও আড্ডা শেষ হয় না। এমন সময় মামার কাঙ্ক্ষিত ট্রেন চলে আসলো। মামা বেঞ্চি থেকে উঠতে উঠতে বললেন, “দেখো তাহসিন তোমার সাথে কথা বলায় আমি পারবো না। কিন্তু অপেক্ষা করো, খুব শীঘ্রই তোমার জন্য কিছু একটা করবো।”
–
মামাকে বিদায় জানিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম। বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। ভাবছি, মামা যদি কোনোভাবে জানতে পারে আমি রিলেশনে আছি। তাহলে ওই মেয়েকে খোঁজে এনে ১সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে বিয়ে করিয়ে ছাড়বে। আর এই দায়িত্বটা ঝেচে দিয়েছে আমার মা। মায়ের ধারণা আমি কখনোই বিয়ে করবো না।
–
৩বছর আগে আমি যখন লেখাপড়া কম্পলিট করি তখন মা বললো, “বাবা এবার ঘরের খালি জায়গাটা পূরণ কর।” আমি বললাম, “মা আগে চাকরিটা হোক তারপর দেখি…”
–
একে একে চাকরির ২বছর কেটে গেলো। কিন্তু এখনো বিয়ে নিয়ে আমার কোনো টেনশন নেই।
ভালোইতো আছি।
–
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। এমন সময় আমার রুমে আম্মু আসলো!
– তাহসিন তাড়াতাড়ি রেডি হ, তোকে নিয়ে একটা জায়গায় যাব।
– কোথায় আম্মু?
– গেলেই দেখতে পাবি, এখন বেশী কথা না বলে তাড়াতাড়ি রেডি হ।
–
আম্মুর কথামতো আমি রেডি হয়ে লক্ষী ছেলের মত আম্মুর সাথে যাচ্ছি। কিন্তু গন্তব্য দেখে থমকে দাঁড়ালাম।
– আম্মু এই বাসায় কেন?
– আগে আয়, তারপর বলছি।
কিছুই করার নাই। আম্মুর সাথে যেতেই হচ্ছে।
রুমে ডুকতেই দেখি মামা! সাথে আমার গার্লফ্রেন্ডের আম্মু। আমার বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। এসব কি হতে যাচ্ছে!!!