বীরবলের স্বর্গে যাত্রা

বীরবলের স্বর্গে যাত্রা

রাজা আকবর মোঘল সাম্রায্যের সব চেয়ে বড় রাজা ছিল। তিনি সবারই সুখ শান্তির কথা মাথায় রেখে তাদের ভালো রাখার চেষ্টা করতেন। তাঁর একজন মন্ত্রী ছিল, নাম বীরবল, সেছিল খুবই বুদ্ধিমান ও আকবরের খুবই বিশ্বস্থ পাত্র।

বীরবলের বুদ্ধির কথা সকলেই জানতো তাই আকবরও তাঁকে একটু বেশিই ভালো বাসতেন। আর সেই কারনেই অনেক মন্ত্রী পাত্র মিত্র তাঁকে হিংসা করতো আর তাকে রাজার থেকে আলাদা করে দেবার চেষ্টা করতো।

একবার এক মন্ত্রী বীরবলকে সরিয়ে দেবার জন্য আকবরের নাপিতের সাথে ফন্দি আটলো। রাজার একজন নাপিতের কাছেই সব খৌরকর্ম করতো। সেই নাপিত বীরবলকে একেবারে সহ্য করতে পারতো না তাই মন্ত্রী সাথে মিলে ফন্দি এটেছিল। একদিন সম্রাটের দাড়ি কাটতে কাটতে তাঁকে বলল – কালকে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি মহারাজ, আপনি হুকুম করলে বলি।

– কি স্বপ্ন – কালকে দেখলাম আপনার পূর্ব পুরুষেরা আমাকে বলল, তাদের সেখানে খুবই অসুবিধা হচ্ছে, সেখানে যেন সম্রাটের একজন বিশ্বস্থ ও দক্ষ মন্ত্রিকে সেখানে পাঠানো হয়, একমাস সেখানে থেকে তাদের সমস্যা সমাধান করে আবার ফিরে আসতে পারে।

– তাদের কি অসুবিধা সেখানে – না, সেটা আমাকে জানায় নি, কেবল বলেছেন যেন সম্রাটের সবচেয়ে বিশ্বস্থ ও পারদর্শী মন্ত্রীকেই সেখানে পাঠানো হয় আর আমি যেন সেটা সম্রাটকে সেটা যানিয়ে দিই।

– সেতো বুঝলাম, কিন্তু সেখানে যেতে হলে তো তাকে মরতে হবে, আমার কোন মন্ত্রী মরতে চাইবে, তাদের মরতে বলতে আমিও পারি না, আমি দেশের রাজা সকলকে রক্ষা করা আমার কর্তব্য।

– আপনি আপনার সকল মন্ত্রিদের বলে দেখতে পারে, আর আমি একজন সন্ন্যাসিকে যানি যিনি মানুষকে জীবন্ত জন্নতে পাঠাতে পারেন আর আবার তাকে ফেরত আনতে পারেন।

– তাহলে খুবই ভালো, কালকেই তাকে দরবারে ডেকে আনো। পরেরদিন দরবারে সেই সন্ন্যাসিকে আনা হল।

সে বলল সে মানুষকে জন্নতে পাঠাতে পারে আবার তাকে ফেরতো আনতে পারে, তবে সেই মানুষ যদি ফেরৎ আসতে চায় তবেই তাকে ফেরৎ আনা সম্ভব। কারন অনেকেই জন্নতের সুখ সাচ্ছন্দ ছেড়ে ফেরৎ আসতে চায় না। রাজা আবার মুসকিলে পড়লেন, যাকে পাঠাবেন সে ফেরৎ না এলে রাজা বুঝতে পারবেন না তাদের পুর্বপুরুষের কষ্ট দূর হল কি না। সেই দুষ্টু মন্ত্রী রাজার কাছে নিবেদন করলো, বীরবলকে পাঠানোর জন্য- বীরবল খুবই বুদ্ধিমান, সে যেকোন সমস্যা সমাধান করতে পারবে, আর সে আপনার খুবই বিশ্বস্থ তাই ফেরৎও আসবে। তখন সকলে তার সেই প্রস্তাবে মত দিয়ে দিল।

রাজা বীরবলকে বলল- তুমিই আমার শেষ ভরসা, তুমি ছাড়া আমার উপায় নাই, তবে তুমি না চাইলে তোমাকে জোর করবো না।

– আমি আপনার নুন খেয়েছি, আপনার জন্য আমি জীবন দিতেও পারি। আমি আপনার পূর্বপুরুষের সমস্থ সমস্যা দূর করে ফেরত আসবো। তবে সন্ন্যাসি বাবার আপত্তি না থাকলে, আমি জানতে চাই আমাকে কিভাবে জন্নতে পাঠাবেন আর কোথায় এই বিধি করবে।

– সন্ন্যাসি আনন্দিত হয়ে বললেন এই কার্জ যেখনে খুশি সম্পন্ন করা যেতে পারে, তবে আমরা যমুনা নদীর তীরে এই ক্রীয়া সম্পন্ন করবো। সেখানে তোমাকে কবর দিতে তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে পুরোপুরি ভাবে, তার উপরে আমি যঞ্জ করবো তাতেই তুমি স্বশরীরে সর্গে পৌছে যাবে।

– ঠিক আছে মহারাজ, আমি যাত্রা করবো তার আগে আমাকে দিন ছয়েক সময় দিন, কতদিন পরে ফেরৎ আসবো জানা নেই, কয়েকটা জরুরি কাজ বাকি আছে সেগুলো মিটিয়ে যেতে চাই। সকলেই তাতে রাজি হয়ে গেল। দিন তিনেক পরে বীরবলকে কবর দেওয়া হয়ে গেল। সে দূর্ত মন্ত্রী, নাপিত আর সন্ন্যাসির খুবই আনন্দ বীরবলকে সরানো গেল। রাজার মনের দুঃখ দিন দিন বাড়তে লাগল, তার প্রিয় মন্ত্রী আর ফিরে আসে না। বীরবলকে পাঠিয়ে হয়তো ভুলই করেছেন মনেহয় সে আর ফিরে আসবে না। কিন্তু দুমাস পরে হঠৎ বীরবল ফিরে এলো, তার মুখে লম্বা লম্বা দাড়ি। তাকে দেখে রাজা আকবরের ভীষন আনন্দ কিন্তু তার মুখে এতো দাড়ি কেন?

সেই কথা তাকে জানতে চাইলে সে জানালো – সম্রাটের পূর্বপুরুষেরা ভালোই আছে, কেবল সেখানে কোন নাপিত নেই তাই সেখানে কেও দাড়ি কাটতে পারে না, আপনার দাদুর তো পা পর্যন্ত দাড়ি হয়ে গেছে, তার বাবার কথা তো বলারই নয়, খুবই করুন অবস্থা তাই মহারাজ যেন শিঘ্রই তার নাপিতকে সেখানে পাঠিয়ে দেন এইকথা জানানোর জন্য আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে।

মহারাজ সাথে সাথে নাপিতকে কবর দেবার কথা ঘোষনা করলেন। নাপিত মরার ভয়ে সম্রাটের পায়ে পড়ে সব কথা খুলে বলল কিভাবে সে, মন্ত্রীমশাই আর সেই সন্ন্যাসি মিলে বীরবলকে তাদের পথ থেকে সরানোর জন্য এই ফন্দি এঁটেছিল। আর সর্গে স্বপ্নের মিথ্যা কথা রাজাকে যানিয়ে ছিল। আকবর রেগে আগুন হয়ে গেলেন সাথে সাথে তিন জনকে কারাগারে বন্দি করার আদেশ দিলেন। তারপরে বীরবলকে জানতে চাইলেন কিভাবে সে কবর থেকে বেঁচে ফিরল, তার সামনেই তো তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল।

বীবরল বলল – সম্রাট আমি এদের ফন্দি আগেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, তাই কিভাবে সর্গে যাবার ক্রিয়া হবে যেনে নিলাম। যখন যানতে পারলাম আমাকে কবর দেওয়া হবে যমুনার তিরে তাই সেখান থেকে আমার বাড়ি পর্যন্ত একটা সুড়ঙ্গ তৈরি করে রেখেছিলাম আগের থেকেই। তাই সর্গে যাবার আগে দিন কয়েকের ছুটি চেয়ে নিয়েছিলাম। যখন আমাকে কবরে ঢোকানো হল তার পরে আমি সেই গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম আর এই কদিন সেখানেই ছিলাম। আর এই দাড়ি কেন? সে তো তাদের জ্বালে তাদেরকেই ফাসিয়ে সত্যি কথা কবুল করানোর জন্য এই ভেশ ধারন করা। আকবর বীরবলের কথা শুনে ভীষন খুসি হলেন আর তাকে এক হাজার সোনার মূদ্রা উপহার দিলেন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত