গত সপ্তাহে অত্যন্ত আলোচিত একটি ঘটনা ঘটেছে এই মহল্লায়। মহল্লার একজন বিশিষ্ট অধিবাসী আসলাম সাহেব। পেশায় তিনি একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা।
যতদূর জানা যায়, বিয়ের আগে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর তার নিতিচ্যুতি ঘটে।
তার স্ত্রী আসমা বেগম উচ্চাভিলাসী মানুষ। তার ছিল একটাই বক্তব্য “চাই চাই আরো চাই” স্ত্রীর এই চাহিদা মিটাতে গিয়েই অসৎ পথ ধরেছিলেন আসলাম সাহেব।
আসমা বেগমকে কেউ কখনো এক পোশাকে দু’বার দেখেনি। তাকে কখনো রাস্তাঘাটে দু’পা হাটতে দেখেনি। শরীরে যতদূর গহনা পরা যায় তার একবিন্দু কম কখনো মহিলা পরেনি।
এমনিভাবে কত বিলাসিতা যে মহিলা করেছে তা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে।
গত সপ্তাহে এই বিলাসী মহিলা হঠাৎ মারা গেলেন। তার মৃত্যু কোন হত্যাকান্ড নয়, কোন আত্মহত্যাও নয়। স্বাভাবিক অথচ আকস্মিক মৃত্যু।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর আসলাম সাহেব লাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “এ মহিলা! তুই আমাকে ছেড়ে কোথায় যাবি? এই বাড়ি-গাড়ি, অর্থ-সম্পদ সব তো তোর জন্য!
আর তুই এখন এই সব ফেলে চলে যাচ্ছিস!” এরপর তিনি ঝট করে উঠে ঘরে গেলেন। ঘর থেকে স্ত্রীর সমস্ত গহনা এনে গায়ে পরাতে লাগলেন।
আর বলতে লাগলেন “এত কিছু করলাম তোর জন্য, ফেলে যাবি কেন? আর কিছু নিতে না পারিস, গয়নাগুলো অন্ততঃ কবরে নিয়ে যা!” কোনভাবেই তাকে ঠেকানো গেল না।
তিনি স্ত্রীকে গহনা পরিয়েই কবর দিবেন। অগত্যা ঐ গহনা সহ লাশ দাফন করা হলো।
গহনা নিয়ে আসলাম সাহেবের কোন চিন্তা নেই। তিনি গহনার দাবি ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরও আসলাম সাহেবের ছোটভাই কবরস্থানের খাদেম সাহেবকে বললেন…
“হুজুর, পাহারার ব্যাবস্থা করেন। কার কি ক-ুমতলব আছে কে জানে! টাকা পয়সা নিয়ে ভাববেন না!”
গত ১ সপ্তাহ পাহারা ছিল। আজ উঠে গেছে। এতদিন কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। আজ কি হয় কে জানে?
লাশের গায়ে কত টাকার গহনা ছিল, তা কেউ বলতে পারে না! তবে অনেক গহনা যে ছিল, এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত।
খাদেম সাহেব আল্লাহওয়ালা মানুষ। কবরস্থান ও সংলগ্ন মসজিদের খেদমত করেন তিনি! মসজিদের দোতলায় মেঝেতে একটা কাঁথা পেতে রাত্রিযাপন করেন।
গভীর রাতে তাহাজ্জুদ পড়েন। তারপর নীচে নেমে কবর জিয়ারত করেন। এটা তার অনেক দিনের অভ্যাস।
আজও তিনি কবর জিয়ারত করতে বেরিয়েছেন। প্রথমে জিয়ারত করলেন সাবেক কাউন্সিলর মহসিন সাহেবের কবর।
এরপর আনোয়ার মাষ্টারের কবর। এভাবে এক এক করে জিয়ারত করতে লাগলেন। এখন তিনি জিয়ারত করছেন সাবেক ইমাম সাহেবের কবর।
আর দুটো কবর পার হলেই আসমা বেগমের কবর। চোখ বন্ধ করে ইমাম সাহেবের জন্য দুয়া করছিলেন তিনি। হঠাৎ মাথার পিছনে প্রচন্ড আঘাত অনুভব করলেন।
তারপর সব অন্ধকার। কোন কিছু বোঝার আগেই জ্ঞান হারলেন খাদেম সাহেব।
খাদেম সাহেবের যখন জ্ঞান ফিরল, তখন সকাল। আশপাশে প্রচুর মানুষ জটলা করে আছে। সবার চোখমুখে হতবুদ্ধির ছাপ।
কি হয়েছে? এক পুলিশ অফিসারকে দেখলেন আসলাম সাহেবের সাথে কথা বলতে।
– আপনি কোন চিন্তা করবেন না! চোর আমরা ধরে ফেলবই।
– কিভাবে?
– আমার ধারণা, চোরের সাথে এই মুরুব্বীর যোগাযোগ আছে। তার সহযোগীতা ছাড়া এ কাজ সম্ভব না। একে চাপ দিলেই সব বেরুবে।
– কিন্তু খাদেম সাহেব তো অজ্ঞান ছিলেন!
– এ তো সহজ হিসাব! ভাগাভাগি নিয়ে গন্ডগোল! চোরেরা তাকে মালের ভাগ দেবে না বলেই তাকে মেরে পালিয়েছে….
এতক্ষণে খাদেম সাহেব বুঝলেন, আসমার কবর থেকে সব গহনা চুরি হয়েছে। আর এজন্য তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। কিন্তু কেন? তিনি তো কিছুই জানেন না!
খাদেম সাহেবকে চোর সন্দেহ করে থানায় নিয়ে আসা হলো। ২ দিন ধরে বিভিন্নভাবে তার কাছ থেকে কথা আদায়ের চেষ্টা করা হলো। কিন্তু তিনি তো জানেনই না কিছু! বলবেন কি?
২ দিন পর আসলাম সাহেব এলেন। খাদেম সাহেবকে বললেন “আমাকে মাফ করুন খাদেম সাহেব! আমি ভুল করেছি! আমি তো গহনার দাবী ছেড়েই তা কবর দিয়েছিলাম!
তাহলে মামলা করলাম কেন? আমায় ক্ষমা করুন। চলুন, আপনাকে নিয়ে যাই!” খাদেম সাহেব বাইরে আসলেন। ২ দিন পর তিনি সূর্যের আলো দেখলেন।
আসলাম সাহেবের সাথে তার গাড়িতে উঠলেন। গাড়ীতে উঠে তিনি ভাবতে লাগলেন “আর কখনো কি কবর জিয়ারত করতে বের হবেন?
নাহ! কি দরকার এত কষ্ট করার? কিছু জানলেন না, করলেন না, অথচ চোর-পুলিশ দুজনের হাতেই মার খেলেন!”