দ্বি-চক্রযান

দ্বি-চক্রযান

– মা, আমার শার্ট আয়রন হয়েছে?
.
মাকে উদ্যেশ্য করে জানতে চায়ল রাতুল। তার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে, নীরা মেয়েটা নিশ্চয় গলির মোড়ে দাড়িয়ে থাকবে। বেশিক্ষন অপেক্ষায় রাখলে রাতুলের আজ নিস্তার নেয়।
জাহানারা বেগম রান্না ঘর থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে ছেলের রুমের দিকে গেলেন। রাতে কাজ শেষ করে দেরি হয়ে গিয়েছিলো। শার্ট আয়রন করা হয়নি। রাতুল নাস্তা শেষ করার আগে হয়ে যাবে।
.
– কই মা হলো???
.
তাগাদা লাগায় রাতুল। রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে। মোবাইলে রিং হচ্ছে, নীরা নিশ্চয় এতক্ষণে বের হয়ে গেছে ।
.
– তুই নাস্তা খাওয়া শেষ কর তার মধ্যে হয়ে যাবে __ জাহানারা বেগম রাতুলের রুম থেকে উত্তর দেয়।
.
জাহানারা বেগম রাতুলের মা। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ভার্সিটিতে পড়ছে। মেয়ে এইবার মেডিকেল এডমিশন দিবে। এই দুইজন আর ঘর সামলালাতে তার সারাদিন লেগে যায়। নিজের জন্য এতটুকু সময় নেই তার।
.
– আমার খাবারটা দাও, আমি বের হবো। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো __ নিজ রুম থেকে স্ত্রীকে তাগাদা দেয় রহমান সাহেব। দেরি হয়ে যাচ্ছে তার। অফিসের নতুন বস এসেছে। সময় নিয়ে যথেষ্ট সচেতন তিনি।
.
– হয়ে গেছে বাবা। আর একটু
.
__ রান্না ঘর থেকে জবাব দেয় মিতু। মিতু জাহানারা বেগম আর রহমান সাহেবের ছোট মেয়ে। সামনে তার মেডিক্যাল এডমিশন। এই সময় তার পড়ার কথা। কিন্তু মা’র অবস্থা দেখে খারাপ লাগে তার। এই মহিলাটা রাতদিন যন্ত্রের মত খেটে যান। শুধুমাত্র সংসারটিকে গুছিয়ে রাখতে। মিতু মাঝে মাঝে অবাক হয়, কিভাবে পারে একটি মানুষ?? নিজের শরীরকে একটুও রেস্ট দেয় না। এইভাবে চলতে থাকলে কখন অসুস্থ হয়ে পরে কে জানে!!
.
রহমান সাহেব আর রাতুলকে বিদায় দিয়ে সস্থির নিশ্বাস নেন জাহানারা বেগম। শরীরটা তার ভালো যাচ্ছে না, বোধহয় জ্বর আসবে। সকালের এই সময়টাই তাদের বিদায় করতে হিমসিম খেতে হয় তাকে। মেয়েটি না থাকলে হতোই না।
.
মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে দ্বীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে মিতুর। মাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে তার শরীর ভালো নেই।
.
– মা
.
– হুম বল, কিছু লাগবে?
.
– আমার কিছু লাগবে না, তুমি আমার সামনে এসে বসো
.
– কেনো কি হয়েছে? শরীর খারাপ?
.
– আমি ভালো আছি, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার শরীর ভালো নেই
.
– আরে ধুর ! আমি ঠিক আছি।
.
– না তুমি ঠিক নেই, তুমি অসুস্থ্য তোমার জ্বর এসেছে
.
– ও কিছু না দুদিন পর সেরে যাবে
.
– মা, তোমার কষ্ট লাগে না? বিরক্ত হও না? কিভাবে পারো?
.
– না লাগে না, আমার ভালো লাগে। তুই যখন মা হবি তখন বুঝবি। এখন যা পড়তে বস।
.
মিতু কিছু না বলে উঠে যায়। যে করেই হোক তাকে মেডিকেলে এডমিশন পেতে হবে। তার বাবার সপ্ন এটা। মেয়ে হয়ে কি এতটুকু করবে না সে?
.
[]
.
দূর থেকে নীরাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বুক কেঁপে উঠে রাতুলের। হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুক কাঁপানোর মাত্রাটা বেরে যায়। বরাবর ২০ মিনিট লেট।
.
দূর থেকে রাতুলকে আস্তে দেখে মুচকি হাসে নীরা। তার ঘাব্ড়ে যাওয়া চেহারা দেখে ভালো লাগছে তার। লাস্ট কয়েক মাসে অগোছালো রাতুলকে অনেক গুছিয়ে এনেছে সে। এখনার রাতুল আগের রাতুল টি নেই। হাসি থামাই নীরা। তার হাসা যাবে না। ২০ মিনিট লেট করেছে। তাকে শাস্তি দিতে হবে। এই দিক থেকে ভার্সিটি হেটে যেতে ৪০ মিনিট লাগে। রিকশায় গেলে তাড়াতাড়ি হয়। নীরা ঠিক করেছে আজ রিকশায় একা যাবে।
.
– স্যরি স্যরি __ পরিস্থিতি সামাল দিতে নীরার দিকে তাকিয়ে বিনয় করে বলে রাতুল
.
– তোমার মানিব্যাগ এনেছো??
.
– হ্যাঁ
.
– টাকা আছে তাতে?
.
– আছে
.
– পুরো মানিব্যাগটা বের করো তো
.
রাতুল অবাক হয়ে প্যান্টের পিছ পকেটে রাখা মানিব্যাগ নীরার দিকে এগিয়ে দেয়। নীরা হাত বাড়িয়ে মানিব্যাগ নিয়ে বলে
.
– পকেটে কোনও খুচরা টাকা আছে?
.
– হ্যাঁ
.
– সব বের করে দাও
.
– কি করবে?
.
– প্রশ্ন শুনতে চাইছি না
.
রাতুল কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়। কিছু বললে নীরা রেগে যেতে পারে। পকেটে থাকা সব টাকা বের করে নীরার দিকে এগিয়ে দেয়। টাকা নিয়ে নীরা বলে
.
– এখন একটি রিক্সা ডাক
.
হাফ ছেড়ে বাঁচে রাতুল। খারাপ কিছু ঘটছে না। রিকশা ডেকে এনে নীরার দিকে তাকিয়ে বিনয় হাসি দিয়ে বলে
.
– উঠো
.
নীরা কিছু না বলে হেসে রিকশায় উঠে বসে। রাতুল উঠতে যাবে নীরা অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে
.
– কই উঠছ??
.
– কেনো রিক্সায়, ভার্সিটি যাব না?
.
– হ্যাঁ যাবে তবে রিকশায় না, হেটে হেটে। বেশিক্ষন লাগবে না। মাত্র ৪০ মিনিট। তোমার ভাগ্য ভালো তুমি মাত্র ২০ মিনিট লেট করেছ
.
– মানে কি? আমি সরি বললাম তো।
.
– আমিও সরি, আমি তোমাকে নিতে পারছি না। ঘড়ি দেখে বলতো কয়টা বাজছে?
.
– ১০টা
.
– ঠিক ১০ টা ৪০ মিনিটে যেন তোমাকে ভার্সিটির গেটের সামনে দেখি। আশা করি হেটে ভার্সিটি আসতে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না, বাই।
.
রাতুল কিছু না বলে অবাক হয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিকশার ড্রাইভার প্যাডেল ঘুরায়। নীরা মিট্মিট্ হাসে। রাতুলের চেহারা দেখে তার হাসি পাচ্ছে।
.
ভার্সিটি ক্যাম্পাসে কদম গাছটির নিচে নীরা আর রাতুল বসে আছে। রাতুলের ঘামে ভিজে থাকা শরীর দেখা মায়া হচ্ছে নীরার। এতটা শাস্তি দেওয়া উচিত হয়নি। কিছুটা কম দেওয়া যেত।
.
নীরার চুপচাপ বসে থাকা দেখে অসস্তি ভর করে রাতুলের। তার খারাপ লাগছে। আজকের ঘটনায় নীরার কষ্ট পেয়েছে বোধহয়।
.
– আর হবে না
.
– কি হবে না?
.
– দেরি করবো না আর
.
– এমন আগেও বলেছ
.
– এইবার সত্যি বলছি
.
– আগের বলা কথা গুলো মিথ্যে ছিলো??
.
রাতুল ভ্যাবাচেকা খেয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে রইলো। নীরার হাসি পাচ্ছে, কিন্তু সে হাসবে না। রাতুলের সাথে আজ তার সিরিয়াস কথা আছে। সিরিয়াস কথা বলার সময় পরিবেশ তৈরী করতে হয়। হাসলে পরিবেশ নষ্ট হবে।
.
– রাতুল
.
– বলো
.
– আমি এখন যা বলবো তা মনযোগ দিয়ে শুনবে
.
– হুম
.
– আবির যে তোমাকে সইতে পারে না সেটা তুমি বুঝো??
.
রাতুল চুপ করে থাকে। আবির তাদের ক্লাসমেট। ক্লাসের ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। তার তুলনায় রাতুল কিছু না। নীরাকে আবির ভালোবাসে। ক্লাসের সুন্দর মেয়েটি অগোছালো ছেলেটির সাথে এত ভাব আবিরের পছন্দ না, রাতুলকে সইতে না পারার একটি কারন। রাতুল নীরার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– হুম
.
– কেনো পারে না জানো?
.
– হুম
.
– রাতুল, তুমি চাইলে কিন্তু তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করে দেখাতে পারো
.
– হুম
.
– কেনো পারো না জানো?
.
– হুম
.
– তাহলে?
.
রাতুল অবাক হয়ে দেখে নীরার দিকে তাকিয়ে থাকে। নীরা কাঁদছে। রাতুলের বুকের ভিতরে মোচর দিয়ে উঠে। রাতুল জানে সে চাইলে সব পারবে। রাতুলের ইচ্ছে হয় নীরার চোখের পানি মুছে দেওয়ার, সে করে না। নীরার শুধু চোখের পানি মুছে দিলে হবে না। তাকে হাসাতে হবে। নীরাকে কিভাবে হাসাতে হবে রাতুল জানে, খুব ভালো ভাবেই জানে।
.
[]
.
রহমান সাহেব খুব মনযোগ দিয়ে চুলোয় বসানো ভাতের পাতিলের দিকে তাকিয়ে আছেন। চাউলের সাথে পানি দেওয়ার সঠিক পরিমান জানা নেই। তিনি ১০ মিনিট যাবত ভেবে এই সামান্য বিষয়ের কোনও সুরহা করতে পারলেন না। তার ধারনা ছিল ভাত রাধা পৃথিবীর খুব সহজ কাজ গুলোর একটি। চাউল আর পানি এক করে চুলোয় বসিয়ে দিলে হলো। সেভাবে বসিয়ে ছিলেন। কিন্তু যে ভাত হয়েছে তা পৃথিবীর অখাদ্য খাবারের মধ্যে পরে।
.
জাহানারা বেগম তার রুমে শুয়ে ছটফট করছেন। তার শরীর অসুস্থ। ডাক্তার বলেছে ৭ দিন বিশ্রামে থাকতে। সবার চাপে তিনি বাধ্য হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। তার সামি রহমান সাহেব ৭ দিনের ছুটি নিয়েছেন। তার ছোট মেয়ের সামনে এক্সাম। তার পড়ালিখার ক্ষতি করতে চান না তিনি। তাই তিনি জাহানারা বেগমকে বলেছিলেন
.
– জাহানারা
.
– বলো
.
– তুমি কাল থেকে বিশ্রামে যাচ্ছো
.
– মানে?
.
– মানে, কাল থেকে ৭ দিন যাবত বাসার সব কাজ থেকে তোমাকে বিরত রাখা হবে। সব দায়িত্ব আমার আর রাতুলের।
.
– তোমাদের দ্বারা এসব হবে না।
.
– এসব আমাদের জন্য কিছু না, যা তোমরা সারাদিন করো তা আমাদের কয়েক ঘন্টার কাজ।
.
– তোমরা পারবে না সত্যি বলছি।
.
– যা বলেছি তাই হবে, আমি সাত দিন ছুটি নিয়েছি। কাল থেকে তোমার বিশ্রাম।
.
জাহানারা বেগম আর কিছু বলেন নিই। ৭ দিনে মধ্যে দুই দিন পার হয়েছে, কারো কপালে ভালো খাবার জোটেনি। আজ কি হবে কে জানে !!
.
রাতুল তার বাবার সাথে কিছুক্ষণ পাতিলের দিকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল
.
– বাবা
.
– বুঝেছিস কিছু?
.
– হুম
.
– কতটুকু দিতে হবে? দেখ লাস্ট দুইদিনের খাবার কিন্তু জঘন্য ছিল। ভেবে চিন্তে বল
.
– আমার মনে হচ্ছে
.
– কি মনে হচ্ছে তোর?
.
– হুমম আমার মনে হচ্ছে …
.
– মনে হচ্ছের পরে বল
.
– আমার মনে হচ্ছে এই বিষয়ে আম্মার হেল্প নেওয়া বুদ্ধি মানের কাজ হবে।
.
বাবার দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে বলল রাতুল।
.
রহমান সাহেব নিরাশ হয়ে বললেন
.
– তোর মা’র কাছে গেলে প্রেস্টিজ থাকবে না
.
– মিতুর হেল্প নিতে পারো
.
– তোর মাকে বলে দিলে???
.
– তুমি বারন করবে আর কি
.
– হুম
.
রহমান সাহেব মেয়ের রুমের দিকে হাটা ধরলেন। তার মেয়ে যথেষ্ট চালাক। সাবধানে বুঝাতে হবে।
.
– মিতু
.
– হুম
.
– পড়া কেমন হচ্ছে তোর?
.
– ভালো
.
– চা এনে দিবো?
.
– তোমাদের বানানো চা খেয়ে পড়ার মুড নষ্ট করতে চাচ্ছি না বাবা।
.
রহমান সাহেব কিছুটা অপমান বোধ করলেন। তার মেয়ের মধ্যে সামান্য সৌজন্য বোধ নেই। তিনি মানেন চা খারাপ হচ্ছে তাই বলে এইভাবে বলবে!!
.
– বাবা কিছু বলবে??
.
– হুম
.
– বলো
.
– আগে কথা দে, তোর মাকে জানাবি না
.
– হুম বলো
.
– না, মানে ভাত আর পানির কম্বিনেশন মিলছে না তো। যদি একটু হেল্প করতি
.
– কি বল বাবা? তুমি না বলতে ভাত রাধা পৃথিবীর সহজ কাজ গুলোর একটি।
.
রহমান সাহেব দ্বিতীয়বার লজ্জিত হলেন। মিতু মিটমিট হাসছে।
.
– তুই না পারলে বলে দিতে পারিস
.
– ঠিক আছে , আমি আসছি।
.
রহমান সাহেব রান্না ঘরে দাড়িয়ে আছেন। তার চোখ ঝলমল করছে। তিনি তার মেয়ের ভাত রাধার প্রতিভায় মুগ্ধ। যে জিনিস তিনি ঘন্টা লাগিয়ে করতে পারেন নি তা তার মেয়ে ১৫ মিনিটে করে দেখিয়েছে।
.
রাতুল মুখ কাচুমুচু করে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে। সকালে বাবার হাতের চা গলা পর্যন্ত নামেনি। মাথাটা বেশ ধরেছে।
.
– ভাইয়া কিছু বলবি?
.
– না আমি কি বলবো
.
রহমান সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলেন। তার মাথাটাও ধরেছে খুব।
.
মিতু হাসি চেপে রেখে তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– তোমরা সামনে গিয়ে বসো আমি চা নিয়ে আসছি।
.
রহমান সাহেব আর রাতুল দুজনই খুশি মনে বের হয়ে এলেন। রাতুলের মাথায় অন্য কথা ঘুড়ছে। তার ধারনা মিতুকে আর একটু বুঝিয়ে বললে ডিম ভাঝিটাও করে দিবে। দুপুরের খাবারের জন্য এইটুকুই অনেক।
.
[]
.
মিতু বাসায় এসে কাঁদছে। তার চোখ থেকে বেয়ে পরা পানি দুঃখের না, সুখের। মিতুর বাবার সপ্ন ছিল তার মেয়ে ডাক্তারি পড়বে। মিতু বাবার সে সপ্ন পুরন করতে যাচ্ছে। মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে মিতু। সে কখন থেকে বাসায় বসে আছে বাবার জন্য। রহমান সাহেব এখন আসেন নি। তবে তাকে খবর পাঠানো হয়েছে। বাবা আসার পর তার উচ্ছ্বাসিত চেহারার কথা ভাবতেই মিতুর মন আনন্দে ভরে উঠছে।
.
রহমান সাহেব কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বেশিক্ষন পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। অফিসের কলিগ রা এসে যখন অভিনন্দন জানাচ্ছে তখন তার বুক গর্বে ভরে উঠে।
.
মিজানুর সাহেব অফিসের বস। অফিসের বসরা গম্ভীর ভাব ধরে থাকে। মিজানুর সাহেব তেমন। রহমান সাহেব মনে মনে কিছুটা ভয় পাচ্ছেন। হঠাৎ করে বস তাকে ডাকার কারন তিনি জানেন না।
.
– স্যার আমাকে ডেকেছেন __ মিজানুর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বিনয়ের সাথে বললেন রহমান সাহেব
.
– জ্বি, বসুন
.
– ধন্যবাদ
.
– খালি হেতে এলেন যে?
.
– বুঝলাম না স্যার
.
– শুনলাম আপনার মেয়ে মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে?
.
– জ্বি স্যার
.
– তাহলে মিষ্টি কই?
.
মিজানুর সাহেবের প্রশ্ন শুনে হেসে দিলেন রহমান সাহেব। এই খবর বসও জানেন!!
.
– স্যার, কেবল খবর পেলাম। বাসায় যাওয়া হয়নি এখনো
.
– হুম আপনি অনেক ভাগ্যবান, আফটার অল ডাক্তার মেয়ের বাবা__ কিছুটা হেসে বললেন মিজানুর সাহেব
.
– জ্বি স্যার। ধন্যবাদ
.
– আপনার আজ ছুটি, আপনার মেয়েকে অভিনন্দন জানাবেন।
.
– জ্বি স্যার,
.
– কাল মিষ্টি পাচ্ছি তো?
.
মিজানুর সাহেবের কথা শুনে হেসে দিলেন রহমান সাহেব। তার চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। মেয়ের সাথে দেখা হওয়ার আগে এই কান্না থামবে না।
.
*
.
ক্যাম্পাসের সেই কদম গাছটির নিচে বসে আছে রাতুল আর নীরা। রাতুল ভেবেছিল তার রেজাল্ট জেনে নীরা খুশি হবে, হয়েছে তার উল্টো নীরা কাঁদছে।
.
– তুমি কাঁদছ কেনো?
.
– আমার ইচ্ছে, তোমাকে বলতে হবে?
.
– রেজাল্ট কি বেশি খারাপ হয়েছে __ এক গাল হেসে জানতে চাইলও রাতুল
.
রাতুলের কথা শুনে হেসে দেয় নীরা। প্রথম হওয়া খারাপ রেজাল্ট না ভালো রেজাল্ট। নীরা কষ্ট পাইনি। তার আনন্দও হচ্ছে। অনেক সময় অতিমাত্রা খুশি অশ্রু আকারে ঝরে পরে। পার্থক্য হলো এই চোখের পানি দুঃখের না সুখের।
.
নীরার হাসি মাখা চেহারার দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে রাতুল। রাতুলের রেজাল্টে রাতুল খুশি। তার এই খুশি রাতুলের একার না। এই খুশির সাথে নীরার ভাগও জড়িয়ে আছে। আজকের রাতুল আর পূর্বের রাতুল এক না। আজকের রাতুল সে অগোছালো রাতুল না। যার জীবনে আগে কোন লক্ষ ছিল না। রাতুলের অপূর্ণ জীবনকে পূর্ণতা দিয়েছে নীরা। নীরার ভালোবাসা, শাসন রাতুলকে অনেক ভাবে বদলে দিয়েছে। কথা গুলো ভাবতেই রাতুলের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
.
গোধূলির সময় হয়েছে। চারদিকে অন্ধকার নামবে। রাতুলের হাত ধরে পাশে নীরা হাটছে। নীরার হাত শক্ত করে ধরে রাতুল। রাতুলের সুন্দর জীবনে আলো হয়ে এসেছে নীরার ভালোবাসা। এই ভালোবাসাকে হারাতে দিবে না রাতুল
.
[]
.
বারান্দার গ্রিলের ফাক বেয়ে রুপোলি চাঁদের আলো এসে পরছে। জোছনার সেই আলো উপভোগ করছেন রহমান সাহেব আর জাহানারা বেগম। ছেলে আর মেয়ের দুজনের রেজাল্ট শুনে তারা দারুণ খুশী। সংসার জীবনের ৩০টি বছর পার করেছেন তার এক সাথে। এই দ্বীর্ঘ সময়ে অনেক ঝড় ঝাপ্টা গেছে তাদের মধ্যে। কখনো একে অন্যের হাত ছাড়েন নি। এই দীর্ঘ বছর একে অন্যের ঢাল হয়ে পাশে ছিলেন তারা।
.
– কি ভাবছো? __ রহমান সাহেবকে আনমনে থাকতে দেখে জানতে চাইল জাহানারা বেগম
.
– হুম্ ভাবছি
.
– কি?
.
– সময় গুলো কিভাবে চলে যাচ্ছে
.
– হুম
– ছেলে মেয়ে গুলো বড় হয়ে যাচ্ছে
.
– আমাদের ব্যাস্ততার দিন শেষ হবে
.
– তারপর?
.
– তারপর আর কি?
.
– ভ্রমনে বের হব, বিদেশ না, দেশ ভ্রমনে
.
– একা একা?
.
– তুমি আছনা?
.
– হা হা হা
.
জাহানারা বেগম হাসছেন। রহমান সাহেব চুপ হয়ে সে হাসি দিকে তাকিয়ে রইলেন। বিষয়টি লক্ষ করেই জাহানারা বেগম বললেন
.
– আবার কি ভাবছ?
.
– ভাবছি, ভাত রাধা পৃথিবীর কঠিন কাজ গুলোর মধ্যে একটি।
.
রহমান সাহেবের কথায় তার দুজন হেসে দিলেন। তাদের হাসির শব্দ আর জোছনার আলো মিশে চারদিকে ভালোবাসার ছড়াচ্ছে। উপর থেকে তাদের এই হাসি আরেকজন দেখছেন। হয়তো তিনি হাসছেন। তার থিউরি ভুল হয়নি। নিচে বসে থাকা দুজন, এক জন অন্যজনকে ছাড়া অপূর্ণ। তারা দুজনই একে অন্যের। তাই তো আদম হাওয়ার পৃথিবীতে আসা। ভালোবাসার একটি ভুবন গড়তে।

……………………………………….(সমপ্ত)…………………………………..

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত