আমার একলা মনের সকল জানালাগুলো তো এতোদিন বন্ধ ছিল। সদা সতর্ক হয়ে নিজেই নিজের মন জানালার প্রহরী হয়ে পাহারা দিয়েছি যাতে কখনোই সেখানে কেউ অনধিকার প্রবেশ না করতে পারে। কারণ, আমি ছোটবেলা থেকেই বাড়াবাড়ি রকমের অনুভূতিহীন মানুষ। তাই আর সবার মতো ন্যাকান্যাকা, বোকাবোকা প্রেম-ভালোবাসার বিষয়গুলো আমার মনের ঘরে ঘাটি গড়তে পারেনি। আমি চাই সারাটা জীবন নিজেই নিজের মনের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে থাকতে। হঠাৎ করেই কেউ এসে আমার জীবনের দখল নেবে এটা আমি কিছুতেই মেনে নেবোনা।
আমার সব ভাবনাকে ওলটপালট করে দিয়ে কিছুটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হুট করেই আপনার সাথে আমার জীবনের গাঁটছড়া বাধার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। তখন থেকেই আমার মন খারাপের পালা শুরু। কারণ, কিভাবে কাউকে ভালোবেসে আপন করে নিতে হয় কিংবা গুছিয়ে সংসার করতে হয় এসবের কিছুই আমার জানা নেই। আমি আমার একলা জীবন নিয়েই ভীষন খুশি। তাই আমার জীবনে আপনার ছায়া পড়ার মুহূর্ত থেকেই আমার – “মনের আকাশে মেঘ জমেছে মেঘটার নাম কষ্ট বৃষ্টি হয়ে না ঝড়লে মনটা হয়ে নষ্ট।”
আপনাকে তো এই আমার মতো একটা ছন্নছাড়া, অনুভূতিহীন মানবী ভালোবাসার মায়াজালে কিংবা রুপের মহিমায় বাধতে পারবেনা। তাই আপনাকেই কিছু একটা করতে হবে এই পাথরমানবীর মনে ভালোবাসার ফুল ফোটাতে। কিছু প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে। ইচ্ছে করলে উত্তর দেবেন নয়তো পাগলের প্রলাপ মনে করে হেসে উড়িয়েও দিতে পারেন।
যদিও আমাদের বিয়েটা প্রেমের বিয়ে হবেনা বরং সম্বন্ধ করে বিয়ে তবুও কি আপনি প্রত্যেক ভালোবাসা দিবসে অন্তত একটি করে গোলাপ আমার হাতে দিয়ে, আলতো করে হাতটা ছুঁয়ে বলবেন, “তুমিই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা, জীবনের শেষ মুহূর্তটুকু পর্যন্ত আমি তোমার সাথেই কাটাতে চাই??” নাকি নিজের মনেই ভাববেন, “বিয়েটা তো ভালোবেসে হয়নি তাহলে এতো ঘটা করে ভালোবাসি বলার কি দরকার!”
ধরুন কোনো এক মেঘলা দিনে আপনি কেবলমাত্র অফিস থেকে ফিরলেন, ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। তখন যদি আমি আপনার হাতে হাত রেখে বৃষ্টিতে ভেজার বায়না করি, তখন কি আপনি ঠোটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে আমার সাথে বৃষ্টিবিলাস করবেন? নাকি চোখের দৃষ্টিতে বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে বলবেন, “আহ! বিরক্ত করোনা, দেখছো তো সবেমাত্র অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছি। আর এই বয়সে এরকম ছেলেমানুষি করার মানেটা কি??”
জানেন তো আমি ভীষন অভিমানী। হয়তো কোনো একদিন আপনার ওপর অভিমান করে কিংবা মন খারাপ করে বসে রইলাম তখন কি আপনি আমায় নিয়ে কবিতা বানিয়ে বলবেন,- “মেঘবালিকার মনের ঘর কালো মেঘে ভরা একটু পরেই নামবে ধেয়ে অঝোর জলের ধারা?” কিংবা আমার মুখে হাসি ফোটাতে এমন কিছু অদ্ভুত হাস্যকর কান্ড-কারখানা করবেন যাতে আমি চোখভরা কান্না নিয়েও হাসতে বাধ্য হই?? পরক্ষনে যদিও আমার নিজেই ওপরেই খুব রাগ হবে, ঠিকভাবে অভিমানটাও না করতে পারায়।
যদি কখনো ভীষন অসুস্থ হয়ে যাই তখন কি আপনি খুবই অস্থির হয়ে যাবেন আমার অসুস্থ, অসহায় মুখটা দেখে? বসে থাকবেন জেগে আমার পাশে সারারাত ধরে? কিংবা আমায় সুযোগ দেবেন, আপনি অসুস্থ হলে সারারাত ধরে আপনার হাত ধরে বসে থাকার? নাকি অবচেতনভাবে ভাববেন, “এসব আদিখ্যেতা করার কি দরকার!! ঔষধ খেলেই তো সুস্থ হওয়া যায়।”
যদি কোনোদিন আনমনা হয়ে গান গাইতে শুরু করি তখন কি আপনি নিঃশব্দে আমার পাশে বসে মুগ্ধ হয়ে আমার গান শুনবেন? (যদিও আমার কন্ঠস্বর ভালো নয়) নাকি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলবেন, “আহ!! এই সাতসকালে কাকের মতো চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছো কেন?”
আপনি হয়তো এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাইবেন – *** যিনি প্রতিটা মুহূর্তে আপনার কথামতো চলবে। আপনি উঠতে বললে উঠবে, বসতে বললে বসবে। সর্বোপরি আপনার সিদ্ধান্তই হবে তার জীবনের শেষ কথা। তার নিজের মতামত বলে কিছুই থাকবেনা। *** ছুটির দিনগুলোতে যাকে নিয়ে আপনি বেড়াতে যাবেন কোনো পার্ক বা রেস্টুরেন্টে কিংবা লংড্রাইভে। কিন্তু আমি তো ভীষন ঘরকুনো ধরণের মেয়ে। বাইরে বেড়াতে আমার তেমন একটা ভালো লাগেনা। বরং ব্যালকনিতে বসেই মেঘ দেখতে কিংবা রাতেরবেলা জ্যোৎস্নাবিলাস করতেই আমি খুবই পছন্দ করি। *** আপনার স্বপ্নকন্যা হবে হয়তো আধুনিকমনা, স্মার্ট কেউ। যাকে নিয়ে আপনি বন্ধুমহলের প্রশংসা কুড়োবেন। সবাই প্রশংসা করবে তার সৌন্দর্য আর স্মার্টনেস দেখে। কিন্তু আপনি তো জানেন আমি কিছুটা আদিম যুগের মানুষের মতো, উগ্র আধুনিকতা আমার অপছন্দ।
আপনার আর আমার পছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে যোজন যোজন ব্যবধান। অবশ্য কারোর সাথেই আমার কোনো মিল নেই। তাই অদূর ভবিষ্যতে আপনি যখন আপনার স্বপ্নকন্যার হাতে হাত রেখে স্বপ্নলোকে ভেসে বেড়াবেন, আমি তখন মেঘলা আকাশ দেখতে দেখতে মনের খেয়ালে গুনগুন করে গান গাইবো। আর অদ্ভুত হলেও সত্য যে, দুজনেই দুজনের জীবনে আলাদাভাবে সুখে থাকবো।