এই ঘুম থেকে ওঠো (লোলা উইনকি)
নাম শুনেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন নামটা বাঙ্গালী নয়।মেয়েটা খ্রিষ্টান। বেড়ে ওঠা লন্ডনে।অথচ এখন বাংলাদেশে থাকে তার স্বামীর সাথে। কি সুন্দর বাংলা বলতে পারে। মাঝে মাঝে আমি নিজেই ভুলে যাই লন্ডনের একটা মেয়ে নিজেকে কেমনে এতটা পরিবর্তন করতে পারে।হয়তো মেয়ে বলেই সম্ভব।আমিও ঘুম জড়ানো কন্ঠেই উত্তর দিলাম –
– আর একটু জান পাখি (আমি)
– না,আর একটুও না
– প্লিজ আর একটু।
– ওকে
ঠিক আধা ঘন্টা পর
– উঠবে তুমি?
– আর একটু,
– আবার আর একটু।
জগ ভর্তি জল নিয়ে মহারানী আমার উপর ক্ষুদ্র আক্রমণ করলো।বিছানা থেকে তার দিকে চাইতেই মনে হলো ইনি এই মাত্র বিশাল বড় এটার্ক দিয়ে জয়লাভ করলেন। দুষ্টুমি করে সক্রেটিস এর সেই বিখ্যাত বাণী বলেই ফেললাম, “মেঘ গর্জালে বৃষ্টি নামবেই।”
বলতে দেরি কিন্তু বৃষ্টি হতে দেরি নেই।মেঘলা আকাশ এখন আমার জমিনে ভর করেছে।আমার মুখটা সোজা করে আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমু দিল।
– এই তুমি কি ঠোঁটে মধু মাখিয়েছ?
– না,কেন ও?
– মধু মাখানো নেই অথচ তোমার চুমুর স্বাদ এতো মিষ্টি কেন ও?
– তাই বুঝি।
– হুম, আর একটা দিবে?
– না, দেব না।
– প্লিজ আর একটা…
মহারানীর বেশ কয়েকবার মধু বিহীন মিষ্টির স্বাদটা পেলাম।
– এবার বিছানাটা ছাড়ো প্লিজ।
– ওকে ওকে ছাড়ছি, আগে এক কাপ চা দাও।
– উঠে বসো আমি দিচ্ছি।তোমার তো আবার সকালে চা ছাড়া বাথরুম ক্লিয়ার হয়না।
মুচকি একটা হাঁসি দিলাম । পাগলিটা চা দিয়ে চলে গেল।চা পান করে ফ্রেশ হতে গেলাম।যত ভাল আর আজগুবি চিন্তা ভাবনা গুলোর জন্মস্থল মনে হয় বাথরুম।আজ তো ২৩ শে অক্টোবর , শুধু তাই নয় আজ আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ও বটে।পাগলীটা তো সকালেই আমাকে মিষ্টি মিষ্টি চুমু উপহার দিলো, আমি এখন পাগলীটাকে কি উপহার দেব?
চিন্তা করতে করতেই কাজ শেষ করে বাহিরে এলাম। পাগলীটা আমার পছন্দের পরোটা ভাজি ও মাংস ভুনা করেছে। টেবিলের উপর সাজানো খাবার এর উপর নজর পড়তেই জিহ্বায় পানি এসে গেলো।পুরুষ মানুষ তিনটা জিনিষ এর উপর ভীষণ লোভী । টাকা,নারী ও খাবার।যে পুরুষ টাকা ও নারীর লোভ সামলে নিজেকে সংযত রাখে বুঝে নেবেন তিনি মহাপুরুষদের একজন।
আপনি জানেন আপনার স্ত্রীর হাতের রান্না অনেক খারাপ, তারপর ও আপনি তার রান্নার ভুলটা না ধরে প্রশংসা করতে শিখুন। আপনার এই একটু একটু অনুপ্রেরণা হয়তো তাকে আরো অনেক সুন্দর রান্না করতে উৎসাহিত করবে।সৃষ্টি জীব প্রশংসা পেলে তাদের কাজ করার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়।এত সুন্দর করে রান্না করার জন্য পাগলীটাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলাম।কতদিন হয় নিজের হাতে পাগলিটাকে খাইয়ে দেই না ভুলেই গেছি। নিজেও নাস্তা করলাম নিজ হাতে পাগলীটাকেও খাইয়ে দিলাম।খাওয়া শেষ করে রেডি হতে বললাম।
-এই কোন শাড়িটা পড়বো?
-ঐ যে কলাপাতা কালারের যে শাড়িটা আছে না ঐ টা পড়ো।
শাড়ি পড়া শেষ করে আমার সামনে আসলো।সামনের চেয়ারে বসিয়ে দিলাম।এত সুন্দর করে নিজেকে সাজিয়েছে আমি নজর ফেরাতে পারছি না, ইচ্ছা করছে পরীটাকে আমার পুষ্প মঞ্জিলের শো রুম এ সাজিয়ে রাখি।লং ড্রাইভ তার ভীষণ প্রিয়।পরীটাকে সাথে নিয়ে লং ড্রাইভে বের হলাম।আমার খুব পছন্দের প্রিয় একটা জায়গা নাটোর রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গাড়ির ভেতর থেকে মুখটা হাল্কা বের করে দিয়ে দুরে তাকিয়ে আছে লোলা , আর আমি মাঝে মাঝে তার দিকে চাইছি আর ড্রাইভ করছি লাশ বাহি একটা গাড়ি ।লাশের এর ব্যাপারে মেয়েটা এখন ও কিছুই জানে না।
যাত্রা শুরু করেছিলাম রাজশাহী হতে।অথচ তাকে আমি নাটোর রাজবাড়ির বাহানা দিয়ে নিয়ে চলে আসলাম।দেখতে দেখতে চলনবিল ছেড়ে চলে যাচ্ছি। মেয়েটা রাস্তার সাইনবোর্ড দেখে এতক্ষণে হয়তো বুঝে গিয়েছে আমারা নাটোর ছেড়ে যাচ্ছি। অথচ মেয়েটা আমাকে কোন প্রশ্ন জিঙ্গাসা না করে উদাস ভাবে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
দেড় ঘন্টার মধ্যেই আমরা যমুনা সেতু পাড় হলাম।মেয়েটার হাতে প্লেনের টিকিট, পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র তুলে দিলাম।অন্য একটা মাইক্রোতে করে মেয়েটাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলাম।একটা ঘন্টা সময় কোন ভাবে কাটিয়ে দিয়ে যমুনা সেতুর উপর মাইক্রো নিয়ে উঠলাম।হিসাব মতে পুলিশের এতক্ষণ চলে কথা।পুলিশ আসতে আসতে নিজেই গাড়িটাকে এক্সিডেন্ট করালাম। মাথা সহ হাতে পায়ে বিভিন্ন জায়গায় চোটের চিহ্ন,গাড়ি থেকে বের হয়ে পেছনে রাখা মুখ থেতলে যাওয়া লাশটা ও গাড়িটা জ্বালিয়ে দিলাম।
কিছুক্ষণ পরই পুলিশ হাজির।
আমাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। বদ্ধ রুমে চেয়ারে বসিয়ে আমাকে জিঙ্গাসা বাদ করা হচ্ছে কে এই মেয়ে ? তার সাথে আপনার সম্পর্ক কি স্যার ??স্যার বলার ও কারণ আছে ..আমিও একজন এ.সি.পি। কি দরকার ওসি সাহেব ? যে চলে গেছে তাকে চলে যেতে দিন। রিপোর্ট দেবেন সড়ক দূর্ঘটনায় এক বিদেশী মেয়ে নিহত। যার নাম লোলা উইনকি।প্রায় এক বছর পূর্বে লোলা সহ একটা গ্যাং বাংলাদেশে আসে খনির সন্ধান ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণা করতে।অথচ তারা লুকিয়ে ইয়াবার ব্যবসাও করতো।তাদের ইয়াবা ব্যবসার কথাটা আমরা পুলিশরা জেনে যাই।এদিকে ওদের খনি সন্ধানের ব্যাপারটা ও অনেক দুর এগিয়ে যায়।পুলিশ ব্যাপারটা জেনে গেছে বুঝতে পেরে তাদের গ্যাং লিডার সবার চোখ কে ফাঁকি দিয়ে লোলা ছাড়া দলের বাঁকী সকল কে লন্ডন এ নিয়ে যেতে সামর্থ্য হয়।লোলা মেয়েটা আমার কাছে ধরা খায়।তার কাছে থেকে সম্পূর্ণ ব্যাপারটা জানার পর মেয়েটাকে আমি পুলিশি হেফাজতে না দিয়ে আমার হেফাজতেই রাখি।র্কিমিনাল জেনে ও মেয়েটার প্রেমে পড়ে যাই আমি।
কেসটা এতদিন চাপা পড়েই ছিলো, কিন্তু এগুলো আন্তর্জাতিক র্কিমিনালী ব্যাপার তাই হঠ্যাৎ করেই একদিন নির্দেশ আসলো এক বছর পূর্বের পুরনো কেসটা ইনভেস্টিগেশন করতে।উভয় সংকটে পড়ে গেলাম।মেয়েটাকে তো এখন বাঁচাতে হবে, নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। তাই এক্সিডেন্ট এর এই মিছেমিছি নাটক টা করতে হলো।লোলার বদলে লাশটাকে পুড়িয়ে লোলা উইনকি নামে এক বিদেশীর রোড এক্সিডেন্ট এ মৃত্যুর রিপোর্টটা রেডি করে থানা থেকে বের হলাম।
রাত্রি এখন প্রায় এগারোটা , মেয়েটার দুপুর ২ টার প্লেন এতক্ষণ হয়তো ভূমধ্যসাগরে।রাতের পূর্ণিমাটা অনেক সুন্দর লাগছে।বার বার তাকে মনে পড়ছে, মনে অনেক প্রশ্ন ও জেগে ওঠছে। হাতে আমার যন্ত্রনা ভুল বার বোতল আর মন এঁকে চলেছে তার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো। লোলা কে তার দেশে ফেরত পাঠানোটাই ধরে নিলাম আমার পক্ষ থেকে তার প্রাপ্ত শেষ উপহার।