দিয়া ও ইতিকথা

দিয়া ও ইতিকথা

তখন উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করেছি মাত্র; নিজেকে খুব বেশি গুটিয়ে নিচ্ছিলাম। খুব কাছের বন্ধুদের সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কথা হতো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি; কোচিং করতাম; ওখানেও তেমন কোন নতুন বন্ধু ছিল না। ক্লাস আর বাসা; একরকম ছক বাধা রুটিন হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই কোচিং এ কোন ভাবে পরিচয় হয় একটা মেয়ের সাথে; হ্যা ঐ ছিল দিয়া। পড়াশোনার বিষয়ে কম বেশি কথা হতো। এর পর আমি চান্স পেয়ে ঐ শহর ছাড়লাম; কোন ভাবে দিয়া ফেসবুকেও সংযুক্ত ছিলো।
.
শহর ছেড়ে আসার পর অনেকের পাশাপাশি ওর সাথেও কথা হতো। একটা সময়ে এসে বন্ধুত্বটা অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। কিন্তু একটা কথা আছে না: একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বেশি দিন ভাল বন্ধু থাকতে পারে না; যদিও কথাটা বিশ্বাস করতাম না কিন্তু কথাটা আমার ক্ষেত্রেও ফললো। দ্বীতিয় বর্ষের প্রথম দিক থেকে তার প্রতি দূর্বলতা বেড়েই চলেছিল; ভয় ছিল একটায় যে সমবয়সী সম্পর্ক কখনো সম্ভব নয়; আর দিয়া ও কখনো রাজি হবে না।
.
প্রায় ছয় মাস পরে একদিন অনেকটা সাহস নিয়ে তাকে বলে দিলাম। সে শুধু বলেছিলো এটা সম্ভব নয়; আমার স্পষ্ট মনে আছে তার কাছে বন্ধুত্বটা রাখার দাবী করেছলাম। বন্ধুত্বটা ছিল; মাঝেমাঝে আমি যেন বন্ধুত্বের গন্ডি পার হতে চাইতাম; ও মুখে কিছু বলতো না কিন্তু কোন না কোন ভাবে বুঝিয়ে দিতো অনেক হয়েছে, নিজের লিমিট ধরে রাখ।
.
একটা সময়ে এসে বুঝলাম আমি হয়তো তার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। নিজেকে ওর কাছ থেকে গুটিয়ে নিতে থাকলাম।
মাঝেমাঝে বিভিন্ন অজুহাতে কথা বলতাম। একটা সময়ে এসে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।
.
আজ কতটা বছর হয়ে গেছে; আমার চুলে পাক ধরেছে; দিয়াকে আজ ভুলেই গেছি। কিন্ত তার পরে কোন বিকেলের অবসরে তোমাকে মনে পড়ে।
.
দেশে ফিরে তোমার সাথে এভাবে দেখা হবে কখনো ভাবতেই পারিনি; তোমারও চুলে পাক ধরেছে কিন্তু তুমি তো বুড়ি হও নাই। ঠিক আগের সেই চেহারা; মোটেও পরিবর্তন হয়নি।
.
বাবুর বিয়েটা যে তোমার মেয়ের সাথে হচ্ছে এটা এখনো কল্পনা করতে পারছি না; আপা যদি বিয়েতে আসতে এত জোর না করতো তবে হয়তো তোমার সাথে দেখাই হতো না; তোমার মেয়ে বলে অনেকে ভুল করতে পারে।
.
এতটুকু পড়েই রিয়াদের ডাকাডাকিতে ডাইরিটা রেখে চলে গেল সানি। মামা হয়তো ভুল করে ডাইরিটা খাটে রেখেই বের হয়ে গেছে; আর এ ঘরে কেউ ঢুকেও না তাই হয়তো এতটা গুরুত্বও দেননি।
.
মামাকে খেতে ডাকতে না আসলে হয়তো ডাইরিটা চোখে পড়তো না আর চোখে পড়তো না তার মায়ের নামটাও। থেকে যেত সব কিছু স্মৃতির অন্তরালে।
.
আবার ও রিয়াদ ডাকছে; আর পড়া হলো না। সানি চলে যায়; আর ভাবে: থাক না কিছু কথা অন্তরালে। কিছু কথা অন্তরালে থাকাই হয়তো ভালো।।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত