দুকড়ি মাঝি, অথবা তেমাথা মাঝি। আমার তোমার একটা করে মাথা, দুকড়ির তিনটে। যেখান থেকে জঙ্গলের শুরু, তার ঠিক আগেই দুকড়ির বাড়ি। বাড়ির সামনে দুকড়ি প্রায়ই উবু হয়ে বসে থাকে। হাঁ, তিন মাথাই তার-এক, দুই, তিন করে গুনে দেখ, ঠিক-ঠিক তিনটে।
কেমন করে হয়, বলো দিকি। মাথা আসলে একটাই। বড্ড বেশি বুড়ো হয়ে গিয়ে সর্বক্ষণ কাঁপে-মাথা দু-হাঁটুর মধ্যে গুঁজে বসে থাকে সে। দূর থেকে দু’পাশের হাঁটু দুটোও মাথার মতো দেখায়। মনে হয়, তিন মাথা পাশাপাশি।
সুন্দরবনের একাল-সেকাল দুকড়ি মাঝির নখদর্পণে। বলতে-বলতে ফোঁস করে সে নিশ্বাস ফেলে, কীই বা আছে এখন? মানুষ এসে কিলবিল করছে। গাছগাছালি কেটে তারা ঘরবসত বানায়। বাঘ-সাপ কুমির-কামট সবই প্রায় লোপাট। দানো-পোড়ো ভূত-বেহ্মদত্যি পেত্নী-শাকচুন্নির এত যে দাপট ছিল, সারা জঙ্গল ঘুরেও কোন-একটার হদিস মেলে না। সুন্দরবনের বন চলে গিয়ে সুন্দরই হচ্ছে দিনকে-দিন, সেকালের নাম কয়েকটা আছে শুধু। দানোর খাল, কালোদানোর গড়, কোদালঝাড়া—
দানোর খাল দিয়ে যেতে যেতে চমক লাগবে। সমতল দেশভুঁইয়ের মধ্যে পাহাড় এল কোত্থেকে? কোদালঝাড়ার পাহাড়। এ-পাহাড়ে এক কুচি পাথর নেই, প্রকাণ্ড মাটির ঢিবি অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে। সাগরের কাছাকাছি ঘনঘোর জঙ্গলে দানোরা থাকত। সর্দার কালোদানো ভারী দুর্দান্ত। ডাঙা জল তোলপাড় করে বেড়াত। মাটির নীচে গড় বানিয়েছিল সে। গড়ের পরিখা বড় গাঙের সঙ্গে মিশিয়ে দিল-তারই নাম দানোর খাল। এক রাত্রির মধ্যেই নাকি খাল কাটা শেষ। সকাল হবার আগেই কাজ সাঙ্গ করে সবগুলো কোদালের মাটি একটা জায়গায় ঝেড়ে দিয়েছিল– তাই হল কোদালঝাড়া। কতগুলো দানো কত কোদালে কাজ করেছিল, বোঝ। এত যে ছিল, এখন নেই–একেবারেই নেই। দুকড়ি মাঝি– নিতান্ত বালক সে তখন–সর্বশেষ একটাকে দেখেছিল। ভারী একজোড়া গোঁফ ছিল বলে তাকে গুঁফোদানো বলত।
ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘণ্টেশ্বর থাকে। ছেলে হাউই, মেয়ে তুবড়ি। তুবড়ি ছোট। মা নেই, বাপ-ভাইয়ের বড় আদরের। ছোট্ট ডিঙি আছে, ডিঙি ভাসিয়ে বাপে-ছেলেয় বনে ঢুকে যায়। কাঠ কাটে, চাকের মধু ভাঙে, হরিণ মারে, মাছ ধরে, খেপলাজাল ফেলে। সেদিনও বেরিয়েছে। কাছাকাছি শুকনো কাঠ মেলে না– কেটে কেটে লোক শেষ করে ফেলেছে। যেতে যেতে যেতে-বিস্তর দূর চলে গেল। ভবঝা আষ্টেক কাঠ হয়েছে, এবারে মাছ মারা। মাছ পড়ে না তেমন-খালি জাল উঠে আসে। ‘‘এগিয়ে চল্ হাউই, জোরে জোরে বোঠে মার, আরো-আরো–’’
হু-হু করে ডিঙি ছুটেছে। হঠাৎ নাকে সুবাস এল। কোন ফুল ফুটছে না-জানি, গন্ধটা অতি উপাদেয়। মাছের ধান্দায় জলের পানে নজর–পাড়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে দেখেনি। আরে, এ কোথায় এসে গেছে! কোদালঝাড়া নিশ্চয়-এরকম মাটির পাহাড় কোদালঝাড়া না হয়ে যায় না। ‘‘ডিঙিটা পাড়ে ধর হাউই, কোন ফুল দেখে আসি। তুই বরঞ্চ উনুন ধরিয়ে ততক্ষণে ভাত চড়িয়ে দে।’’
কোদালঝাড়ার উপরে উঠে গেল। দিব্যি চৌরস জায়গা। ঝুপসি-ঝুপসি কয়েকটা চারাগাছ, তারই একটায় ফুল ধরেছে। সোনার বর্ণ, হুবহু পদ্মফুলের চেহারা। এক ফুলেই চারিদিক আলো। ফুলটা তুলে নিই-ঘণ্টেশ্বর ভাবল, তুবড়ি বড্ড খুশি হবে ফুল পেয়ে।
টান দিয়েছে-বোঁটা না ছিঁড়ে গাছসুদ্ধ উপড়ে এল। খ্যা খ্যা করে অমনি খেঁকশিয়ালের উৎকট আওয়াজ। মাটি ফুঁড়ে সরু-লিকলিকে হাত বেরিয়ে লম্বা লম্বা আঙুলে ফুল ও ফুলগাছ সমেত ঘণ্টার কোমর আঁকড়ে ধরল। আকাশে তুলে ধরেছে। পাঁচ আঙুলে আবদ্ধ ঘণ্টা আরশুলার মতো কিলবিল করছে
আর চেঁচাচ্ছে, ‘‘ওরে হাউই, ছুটে আয়। ধরেছে আমায়-নিয়ে চলল।’’
পাড়ে লাফ দিয়ে হাউই ছুটল। লম্বাধিড়িঙ্গে হাড্ডিসার হাত দ্রুত মাটির তলে নেমে যাচ্ছে। চকিতে হাত অদৃশ্য, ফুল ও ফুলগাছ নেই, ঘণ্টাও নেই। কোনখানটায় সেই ফুলগাছ ছিল, চিহ্নটুকুও খুঁজে মেলে না। এদিকে-সেদিক অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করল, তারপর নিরুপায় হাউই শুকনো মুখে ডিঙি ঘুরিয়ে বাড়িমুখো চলল।
বাড়ি চারদিনের পথ। তুবড়ি পথ চেয়ে আছে। ভাইয়ের কাছে শুনল, বাবা দানোর কবলে। গর্জাচ্ছে তুবড়ি, ‘‘চলো দাদা দানোর খালে– সেই কোদালঝাড়ায়। আনবই বাবাকে উদ্ধার করে। দানোর উচিত-শাস্তি দেব।’’
‘‘আজই চলো, এক্ষুনি চলো—তুবড়ি দিশা করতে দেয় না। বলে, ‘‘যত দেরি করবে নিশানা পাওয়া কঠিন হবে ততই। চলো–’’
আবার রওনা। দু-জনে দুই বোঠে ধরেছে। চারদিনের পথ আড়াই দিনে সন্ধ্যার পর পৌঁছে গেল। গোলঝাড়ে ডিঙি ঢুকিয়ে দিল-কেউ না দেখতে পায়। নতুন ফুল ফুটেছে আবার, গন্ধে টের পাওয়া যাচ্ছে। ভাই-বোনে পা টিপে টিপে সারা রাত্রি টহল দিয়ে বেড়াল-কোদালঝাড়ার উপরেও গেল কতবার। দানোর ঘাঁতঘোঁত যদি মেলে, যদি সে চরতে ফিরতে বেরোয়। কিছুই না-ঘনান্ধকার জঙ্গল, ঝিঁঝিঁ ডাকছে, জোনাকি উড়ছে। কী করা যায়? গোলঝাড়ের ভিতর ডিঙিতে ফিরে গিয়ে ভাই-বোনে অনেক শলাপরামর্শ হল। ফুল না তোলা অবধি দানোমশায়ের টনক নড়বে না, মনে হচ্ছে।
সকালের আলো ফুটল। গোলঝাড় থেকে বের করে কোদালঝাড়ার ঠিক নীচেই ডিঙি নিয়ে এসেছে। হাউই বিষম ছুটতে পারে (নাম সেইজন্য হাউই) এক ছুটে সে কোদালঝাড়ার উপরে উঠে গেল। ঝুপসি-ঝুপসি চারা-তারই একটায় সোনার পদ্ম। হাউই তিলার্ধ দেরি করে না-ফুলসুদ্ধ চারা পড়্-পড়্ শব্দে উপড়ে নিয়েই দৌড়। দৌড়ে কে তার সঙ্গে পারবে-লহমার মধ্যে নীচে। পাতাল থেকে লিকলিকে হাত বেরিয়ে এসেছে, নাগাল পাচ্ছে না, মুঠো করে ধরতে গেল এক লম্ফে হাউই ডিঙির উপর। বোন তুবড়িও বোঠে নিয়ে তৈরি-ঝপাৎ ঝপ ঝপ-ঝপ করে টানের পর টান। ফুলগাছ হাঁটুর নীচে চেপে ছাড়ে না-ডিঙি যত দূরে যাচ্ছে হাত লম্বা হয় ততই। এক মাইল দু-মাইল লম্বা হয়ে গেল দেখতে দেখতে। তারপর ক্যাঁক করে হাউইকে মুঠির মধ্যে এঁটে ধরল। টানছে-কাছি বেঁধে নৌকায় গুণ টানার কায়দায়। যে টানে ডিঙি তরতর করে উজানে ছোটে। তুবড়ি ক্রমাগত বোঠের ঘা মারে, হাতের মুঠি খোলে না। চোর-ডাকাতের ভয়ে ডিঙিতে ধারালো রামদা থাকে–রামদা দিয়ে কোপের পর কোপ মারছে, কাটে না। ঠং-ঠং করে বাজে–হাত যেন ইস্পাতের।
ডিঙি কোদালঝাড়ায় এসে পড়ল। হাত গুটিয়ে নিচ্ছে এবার-সাপের ফিতে গোটানোর মতো। হাউইকে শূন্যে তুলছে তুবড়িও ছাড়নপাত্র নয়–দাদাকে দানোর হাতে ছেড়ে ঘরে ফিরবে বলে আসেনি। সর্বশক্তিতে গলা এঁটে ধরে হাউই-এর সঙ্গে সেও ঝুলতে-ঝুলতে চলল। ফুলগাছ যেখান থেকে উপড়েছে, সেই জায়গায় সুড়ঙ্গ এখন। সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে হাত সড়াক করে নীচে নিয়ে ফেলল। কোদালঝাড় আসলে কতকগুলো মাটির ঘর-মাটির দেয়াল, মাটির মেঝে, মাটির ছাত, ছাতের উপরটা মাটির ঢিবি। ঘর বলে বোঝার উপায় নেই কিন্তু উপর থেকে।
এক-দু মাইল লম্বা হাত গুটিয়ে গুটিয়ে এখন সাধারণ মাপে এসে গেছে। হাতের যে মালিক, তাকেও দেখা যাচ্ছে। ভারী এক জোড়া গোঁফওয়ালা বেঁটেখাটো জওয়ান। পাতালঘরে দুম করে সে ছুঁড়ে দিল ভাই-বোনকে। তুবড়ির উপর খিঁচিয়ে ওঠে, ‘‘কে রে তুই ছোঁড়ার ঘাড়ে চেপে এলি? সুড়ঙ্গ খোলা আছে–বেরিয়ে যা। বিনি দোষে আমরা আটকাইনে।’’
চট করে তুবড়ি মতলব ঠিক করে নিয়েছে। খুব মিষ্টি করে বলে, ‘‘জানেন না দাদু, বাইরে আপনার ভারি সুযশ। সেকালে কালোদানো মশায় ছিলেন, আর একালে আপনি-’’
ঘাড় নেড়ে গুঁফোদানো বলে, ‘‘যাঃ বাজে কথা।’’
‘‘বাজে হলে নিজের ইচ্ছেয় এই মাটির তলে আসতে যাব কেন?’’ কাতর কণ্ঠে তুবড়ি বলে, ‘‘কষ্ট করে এসে পড়েছি-ধুলোপায়ে তাড়াবেন না দাদু। ক’টা দিন থেকে আপনার কিছু সেবা যত্ন করে যাব।’’
গুঁফোদানো হা-হা করে হেসে উঠল। বলে, ‘‘এখানে থাকার বিষম ঝামেলা–সে ঝামেলা বিনি দোষে কেন নিতে যাবি? আচ্ছা বোস একটুখানি—ছোঁড়াটার ব্যবস্থা করে আসি। থাকা হবে না-ঘটিখানেক মিষ্টি দুধ খেয়ে জিরিয়ে নিয়ে হাসতে-হাসতে নাচতে-নাচতে ফিরে যাবি।’’
দেয়ালে খাঁড়া ঝোলানো–বলির পাঁঠা কাটে, সেইরকম জিনিস। হাতে সেই খাঁড়া-মুষ্টিবদ্ধ হাউইকে টানতে টানতে সামনের ঘরটায় নিয়ে গুঁফোদানো ঘড়াং করে দুয়োর বন্ধ করল। আরে সর্বনাশ, খাঁড়া নিল কেন হাতে? দুয়োরে একটুকু ছেঁদা–তুবড়ি চোখ রাখল। হাউইকে সোজা দাঁড় করিয়ে খাঁড়ার এক কোপ গলায়। ধড় আলাদা হয়ে মেঝেয় লুটিয়ে পড়ল। মুণ্ডুও পড়ছিল–গুঁফোদানো ক্রিকেট খেলোয়াড়ের মতো লুফে নিল সেটা। তুবড়ি দেখছে-সর্বাঙ্গ কাঁপছে তার। ধড়টা কাঁধে ফেলে গুঁফোদানো মুণ্ড এক হাতে আর খাঁড়া অন্য হাতে নিয়ে হেলতে দুলতে অতি অবহেলায় ওদিককার দরজা দিয়ে কোন দিকে বেরিয়ে গেল।
দাদার পরিণাম তুবড়ি চোখের উপর দেখল। হাউ হাউ করে কাঁদছে সে, দেয়ালে মাথা খুঁড়ছে। গুঁফোদানো এসে পড়ল। হাতে দুধের ঘটি এবং সেই খাঁড়া। খাঁড়া যথাস্থানে টাঙিয়ে রেখে বলল, ‘‘শখ করে এসে কাঁদিস কেন এখন? দুধটুকুতে চুমুক দিয়ে সুড়ঙ্গের খাঁজে খাঁজে পা রেখে উঠে যা। বলেই তো দিয়েছি, বিনি দোষে আমরা আটকাইনে। সর্দারের মানা।’’
তুবড়ি গোঁ ধরে বলে, ‘‘যাব না আমি। বাপ-ভাই সব গেল-কার কাছে থাকব?’’
‘‘দোষ করেছে, শাস্তি হবে না?’’
তুবড়ি ঝঙ্কার তোলে, ‘‘গাছের একটা ফুল তুলেছে, তাই আবার দোষ!’’
গুঁফো বলে, ‘‘আমাদের শখের ফুল নয়। ফুল ঝরে গিয়ে গুটি, গুটি থেকে ফল-মস্ত বড় বেলের মতন। পদ্মবিল্ব যার নাম। ঐ ফলে আমাদের জীবন-বিস্তর কষ্টে অর্জাতে হয়।’’
‘‘তা সে যাই হোক,’’ তুবড়ি খুব কাতর হয়ে বলল, ‘‘না বুঝে একটা ফুল তুলে ফেলেছে, সেই দোষে মেরে ফেলবেন দাদু?’’
গুঁফোদাদু হেসে বলে, ‘‘মেরেছি-কে বলল রে পাগলি?’’
তুবড়ি বলে, ‘‘নিজের চোখে দেখে ফেলেছি আমি। খাঁড়া তুলে ড্যাডাং করে কোপ ঝাড়লেন, ধড় মুণ্ডু আলাদা হয়ে পড়ল।’’
‘‘মুণ্ডু আলাদা, ধড় আলাদা—তা বলে মরেনি। খাঁড়ায় ঐ দেখ এক ফোঁটা রক্ত নেই। লোহা-ইস্পাতের নয়, তালপত্তোর খাঁড়া-কোপ দিলে কাটে না–জোড় খুলে আলাদা হয়ে যায়।’’
তুবড়ি শুধোয়, ‘‘ধড় মুণ্ডু জোড়া দেওয়াও যায় তা হলে-কী বলেন দাদু?’’
গুঁফোদাদু বলে, ‘‘দেব তাই। দুধ-টুধ খেয়ে তুই ড্যাংড্যাং করে ঘরে ফিরে যা, কয়েকটা মরশুম কাটিয়ে ওরাও দেখিস দুম করে একদিন গিয়ে পড়বে।’’
এ-সব আশ্বাস নিয়ে খুশি হবার মেয়ে তুবড়ি নয়। প্রবল মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে বলে, ‘‘কাটা মুণ্ডু কখনো বেঁচে থাকে? আমায় ভাঁওতায় ভুলোচ্ছেন দাদু। খাব না আমি, কোথাও যাচ্ছিনে। এইখানেই আপনার কাছে পড়ে মরে থাকব।’’
গুঁফোদানো মুশকিলে পড়েছে মনে হয়। নির্দোষ মানুষ ঝপাত করে আস্তানায় এসে পড়েছে—অতশত ঠাহর করে দেখেনি। এখন এই আবার গোঁ ধরে বসল। সর্দার-দানো ফেরার আগে যে-ভাবে হোক সরিয়ে দিতে হবে।
‘‘বড্ড রেগেছিস তুই,’’ গুঁফো খল খল করে হাসে। বলল, ‘‘ঢুকে যা ওখানে ঐ ঘরে। তারপর বাঁয়ের দরজা দিয়ে আরও ভিতরে যাবি। লাইনবন্দি সব রয়েছে। কষ্ট নেই-আরামসে শুয়ে আছে সব। সত্যি-মিথ্যে চোখে দেখে আয়। ইচ্ছে হলে এক-আধটা কথাও বলতে পারিস। তাড়াতাড়ি ফিরবি, তোকে উপরে পাঠিয়ে সুড়ঙ্গ বন্ধ করব।’’
তাই বটে। মেঝে-জোড়া ফরাস—পাঁচ জন পাশাপাশি পড়ে রয়েছে। হাউই সদ্য এসেছে—দরজার কাছাকাছি সে। পাশে বাপ ঘণ্টা। ওদিকটায় পর পর আরও তিনটি। চাদরে ঢাকা-মুখগুলো কেবল বাইরে। নিঃশব্দে শুয়ে পড়ে চোখ পিট পিট করছে, তুবড়ির দিকে একসঙ্গে পাঁচ-দুনো দশ চোখে সকলে তাকিয়ে পড়ল।
তুবড়ি ডুকরে কেঁদে ওঠে, ‘‘অমন করে চেয়ে কেন বাবা-চিনতে পারছ না?’’
ঘণ্টা জড়িতকণ্ঠে বলে, ‘‘কেমন করে এলি তুই মা?’’
‘‘আমি তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাব।’’ ঝাঁপিয়ে পড়ল সে বাপের উপর। আরে সর্বনাশ, বাবা পুরোপুরি তো নয়-চাদর উলটে ফেলল—গলা অবধি মুণ্ডুখানা মাত্র, নীচের দিকে কিছুই নেই। দেখতে উৎকট, সেই জন্য চাদর ঢাকা দিয়ে রেখেছে। হাউয়ের চাদরও উঁচু করে তুলল—ঠিক এক অবস্থা।
তুবড়ি কেঁদে বলে, ‘‘তোমাদের ধড় কোথায় গেল বাবা?’’
ঘণ্টা বলে, ‘‘কী জানি কোথায়। কেটে ফেলল, সেই থেকে আর দেখিনি।’’
ওদিক থেকে এক মুণ্ডু বলে উঠল, ‘‘সবুর করো না, কতবার দেখতে হবে। আষাঢ় মাস আসুক বর্ষা নামুক—গরজে পড়ে ওরাই ধড় টেনে-টেনে আমবে, মুণ্ডুর সঙ্গে নম্বর মিলিয়ে জুড়ে দেবে। সারাটা দিন তারপর কোদালঝাড়ার ঢিবির উপরে কোদাল মারো আর নিজের হাত-পা বুক-পেট যত খুশি চেয়ে চেয়ে দেখ। সন্ধে হলেই আবার আলাদা—মুণ্ডু এনে বালিশে শোয়াবে, ধড়গুলো কোথায় গুদামজাত করবে—ধড়ের যদি মুখ থাকত জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতাম।’’
তুবড়িকে কাছে ডাকল সে, ‘‘শোন মেয়ে, আমি হলাম পয়লা নম্বুরি—এখানকার সবচেয়ে পুরানো। চার মরশুম কেটে গিয়ে এইবার পাঁচে পা দিচ্ছি। আমার চেয়ে বেশি কেউ বলতে পারবে না। আমারও ছেলেমেয়ে আছে—চার চারটে বছর তাদের দেখিনি। শুধু নিজের বাপ-ভাইকে উদ্ধার করলে হবে না মা, আমাদেরও নিয়ে যেও। না বুঝে আমিও ফুল তুলতে গিয়েছিলাম।’’
অপর দুই মুণ্ডু সমস্বরে বলে উঠল, ‘‘আমিও-আমিও।’’
বন কেটে বসত হয়ে যাচ্ছে—যত দানো সুন্দরবন ছেড়ে উত্তরে আস্তানা নিয়েছে। আছে সামান্য কয়েকটি। স্বর্ণবিল্ব বিহনে ওদের প্রাণ বাঁচে না। বাঘকে এক-আধটা ছুঁড়ে দেয়, কেনা গোলাম হয়ে থাকে তারা, দায়ে-বেদায়ে হাঁক পাড়লে হামলা দিয়ে এসে পড়ে। লোভে লোভে হরিণ এসে দাঁড়ায়—মুখের কাছে এক আধ টুকরো ফল ফেলে দুধ দুয়ে নেয়। সেই মিঠা দুধই তুবড়িকে খেতে দিয়ে আতিথ্য করছে। পাকা স্বর্ণবিল্বে বেলেরই মতন আঠা বেরোয়। সাংঘাতিক আঠা- মুণ্ডু অবধি আঁটা যায়। সর্বকর্মে স্বর্ণবিল্ব চাই—ঝারকিতে অশেষ খাটনি। তার উপর লোকাভাব হয়ে পড়েছে। ফুল তুলেছে এই ছুতোয় তাই লোক আটকে রাখে।
ফুল হয়ে পড়েছে এখন মানুষ ধরার ফাঁদ।
গুঁফোর কাছে ফিরে তুবড়ি শতকণ্ঠে সুখ্যাতি করে, ‘‘আপনি দাদু বিষম সাচ্চা, যা বলেছেন বর্ণে-বর্ণে সত্যি। মুণ্ডুমশায়দের সঙ্গে কথা বলে এলাম, বালিশ মাথায় দিব্যি সব আরাম করে আছেন।’’
খুশিমুখে তুবড়ি দুধের ঘটি তুলে চুমুক দিল। বলে ‘‘ধড়দের তো দেখলাম না দাদু। তাঁদের জন্যেও নিশ্চয় গদি-তোযকের ব্যবস্থা?’’
গুঁফোদানো বলে, ‘‘কী বোকা তুই। বোধ-জ্ঞান কিছুই তো নেই, গদি-তোষক কী করবে তারা? এক-একখানা শুকনো কাঠ যা, তারাও তাই। ঘরের মেজেয় গাদা-দেওয়া পড়ে আছে, দরকারে এনে মুণ্ডুর সঙ্গে জুড়ে দেব। সঙ্গে সঙ্গে অমনি পুরোদস্তুর মানুষ।’’
তুবড়ি বলে, ‘‘এমনি এমনি আটকে রাখলেই তো হয় দাদু। মুণ্ডু কেটে আলাদা করেন কেন? এ বড় বিশ্রী।’’
‘‘হেঁ-হেঁ-কেন বল্ দিকি?’’
একটুখানি ভেবে নিয়ে তুবড়ি বলে, ‘‘পালাতে না পারে? মুণ্ডুর তো হাঁটবার পা নেই—যেখানে রাখবেন পড়ে থাকতে হবে।’’
‘‘পা থাকলেও পালানোর জো নেই এখান থেকে। টুক করে শিকলি টেনে দেব, সঙ্গে সঙ্গে সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ। মাছিটার পিঁপড়েটারও আর তখন বেরুনোর উপায় থাকে না।
তুবড়ি অবোধ চোখে তাকিয়ে আছে। দানো বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘‘মুণ্ডু কেটে খাবার বাঁচাই। খাওয়া হয় বটে মুণ্ডুর মুখ দিয়ে, কিন্তু ধড়ই সব টেনে নেয়। ধড় আলাদা হলে তখন আর খাওয়ার কী গরজ? মরশুম এসে গেলে খাটনির জন্য হাত-পায়ের দরকার পড়ে যায়। ধড়ে-মুণ্ডুতে জুড়ে ফেলি, খেতেও দিই দিনের বেলা। সন্ধ্যার পর কাজ থাকে না-জোড় কেটে দিই, খাওয়ারও ঝামেলা থাকে না আর তখন।’’
‘‘বাঃ বাঃ!’’ তুবড়ি শতকণ্ঠে তারিফ করছে, ‘‘কী বুদ্ধি আপনার দাদু! আমাদের মানুষের সমাজে মুণ্ডু আলাদা করা যদি চালু হয়-অর্ধেক রেশনেই চলে যাবে, কেউ আর না-খেয়ে মরব না।’’
গুঁফোর সঙ্গে গল্প জমিয়েছে নজর কিন্তু দেয়ালের খাঁড়ার দিকে। আচমকা খাঁড়া টেনে নিয়ে কচাৎ করে গলায় কোপ। মুণ্ডু ছিটকে পড়ল, ধড়ও ভুঁয়ে গড়াচ্ছে।
চোখ পাকিয়ে কাটামুণ্ডু বলে, ‘‘এ কী-অ্যাঁ, পেটে-পেটে এত শয়তানি তোর? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা—’’
চোখ-পাকানো ও তর্জনগর্জনে তুবড়ি এখন ভয় করতে যাবে কেন? হাত-পা ছাড়া শুধু মুণ্ডুর কী ক্ষমতা? হেসে শতকুটি হচ্ছে তুবড়ি। বলে, ‘‘ভালই তো হল, তোমারও খাওয়াদাওয়ার ঝামেলা রইল না। থাকো তবে, আমি চললাম। হাত-পা নেই যে শিকল টেনে সুড়ঙ্গ ন্ধ করে দেবে। ধড়টা নিয়ে যাচ্ছি দাদু, দানোর খালে ভাসিয়ে দিয়ে যাব—তোমার আপনজনেরা এসে আবার না জুড়ে দেয়।’’
ঠ্যাং ধরে সত্যি সত্যি টানছে। দানোর তখন থরোথরো এই কাঁপুনি। কাতরাচ্ছে ‘‘নিয়ে যাস নে-জুড়ে দিয়ে যা, লক্ষ্মী সোনামণি নাতনিটি আমার—’’
‘‘কাটা মানুষগুলোর ধড় কোথায় রেখেছ বলো।’’
‘‘মুণ্ডু ধড় আমার জুড়ে দিবি তা হলে?’’
তুবড়ি ঘাড় নাড়ল, ‘‘হ্যাঁ।’’
‘‘সত্যি বলছিস? তিন সত্যি কর—’’
‘‘জুড়ব, জুড়ব, জুড়ব।’’
গুঁফো তখন বলে দিল, ‘‘যে ঘরে মুণ্ডুদের বিছানা তারই দক্ষিণের বারান্দায় ধড়েরা গাদা হয়ে আছে। একটিও ফেলিনি।’’
এক ছুটে তুবড়ি বারান্দায় গেল। ঘণ্টা হাউই আপনজন। তাদের ধড় নিমেষে চিনে নিয়ে মুণ্ডুর পাশে পাশে পরম যত্নে এনে রাখল। অন্য তিনটেও এনেছে। পয়লানম্বুরি মুণ্ডুকে বলে, ‘‘বুড়োমানুষ আপনি—বুকের পাকা লোম দেখে বুঝেছি এই ধড়খানা আপনারই। কী বলেন?’’
‘‘হুঁ’’ বলে বুড়ো পয়লা-নম্বর সায় দিল।
আর এক মুণ্ডু বলে ওঠে, ‘‘ডানহাতে আমার ছয় আঙুল। গুনে দেখ, যে ধড়ে আছে সেইটা আমার।’’
এবং চারজনের যখন মিলে গেল বাকি ধড় বাকি মুণ্ডু একই মানুষের।
তুবড়ি গিয়ে বলে, ‘‘ধড় পেয়ে গেছি। দাদু, তুমি পরম সত্যবাদী।’’
গুঁফো-মুণ্ডু বলে, তোর সত্যিও রাখ। ধড়ের সঙ্গে আমায় এঁটে দে এইবারে।’’
‘‘আঁটব কেমন করে বুঝিয়ে দাও।’’
‘‘শক্ত কিছুই নয় রে। লাল আঠা কিছু বেশি ঘন–গলার নলির মুখে ওটা লাগাবি। সাদা আঠা পাতলা–ওটা বাইরের দিকে মাখাতে হয়। মাখানো হয়ে গেলে আলগোছে আমায় নিয়ে ধড়ের উপর বসিয়ে দেওয়া। দেখবি এমন আঁটা এঁটে গেছে- কখনো যে কাটা পড়েছিল শতেকবার ঠাহর করেও কেউ ধরতে পারবে না।
খিঁচিয়ে উঠল কাটামুণ্ডু, ‘‘হাত কোলে করে বসে রইলি যে বড়?’’
তুবড়িও সমান সুরে জবাব দেয়, ‘‘আঠা তো চাই। কোথায় সরিয়ে রেখেছ? বলি, আঠা বিনে আমি কি থুতু দিয়ে আঁটব?’’
‘‘তা বটে, তা বটে!’’ কাটামুণ্ডু বেকুব হয়েছে। বলে, ‘‘হাত নেই যে আঙুল তুলে দেখাব। দেয়ালের বড় কুলুঙ্গি ওরই মধ্যে সরায় আছে লাল আটা। সামাল হয়ে পাড়িস রে, হাত ফসকে পড়ে না যায়।’’
আঠা পেড়ে আনল। মুণ্ডু বলে, ‘‘এক কাজ কর, দেয়ালের গায়ে আমায় খাড়া করে দে। নতুন হাত তোর–দেখে দেখে আমি বলে দিচ্ছি। গলার ঐখানটায় সরার আঠা লাগা। বেশি করে লাগা। –আরো-আর সামান্য একটু।’’
ব্যাপার নিজের বলেই গুঁফোদানোর আগাগোড়া নিঁখুত নির্দেশ। ‘‘ব্যস, আর কিছু নয়-আমায় এবারে ঐ গলার উপর বসিয়ে দে। আরে আরে যাচ্ছিস কোথা আমায় এইরকম খণ্ড করে রেখে?’’
এক হাতে সরা এক হাতে মালশা, তুবড়ি পলকে হাওয়া। ঘরে ঢুকে গেছে সে, মুণ্ডুর পাশাপাশি ধড় সাজানো যেখানে। আঠা মাখিয়ে টপাটপ ধড়ে মুণ্ডুতে জুড়ছে। গুঁফোদানোর শিক্ষায় এ-কর্মে তুবড়ি এখন রীতিমতো ওস্তাদ। ধড়মুণ্ডু পুরোপুরি মানুষ হয়ে লম্ফ দিয়ে দিয়ে উঠে পড়ল।
তুবড়ি তাড়াচ্ছে, ‘‘এক মিনিটও দাঁড়িও না, সুড়ঙ্গর খাঁজে খাঁজে পা দিয়ে উপরে উঠে যাও। গুঁফো অচল হয়ে পড়ে আছে, কিন্তু দলবল এক্ষুনি এসে পড়তে পারে। বাইরেও দেরি কোরো না। কোদালঝাড়ার জঙ্গলে ডিঙি পেয়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পোড়ো।’’
ঘণ্টেশ্বর মেয়েকে বলে, ‘‘তুই’’।
‘‘গুঁফোর ধড়মুণ্ডু জুড়ে দেব তিন সত্যি করিয়ে নিয়েছে—তবেই তো তোমাদের ধড়ের হদিস দিল। সত্যি পালন করে যেতে সামান্য একটু সময় লাগবে। ভাবনা কোরো না বাবা, ডিঙি গোলবন থেকে বেরুতে বেরুতেই গিয়ে পড়ব।’’
কাটা-মুণ্ডুর সামনে দিয়ে আস্ত অখণ্ড মানুষ রূপে পর পর সকলে সুড়ঙ্গ বেয়ে উঠে গেল। গর্জাচ্ছে অসহায় গুঁফো মুণ্ডু। ঘণ্টার নজরে পড়ল যে খাঁড়ায় গুঁফোকে কেটেছে, মুণ্ডুর পাশেই সেটা পড়ে। হাবা কীরকম দেখ, মুণ্ডু ধড়ে জুড়ে তুবড়ে যেইমাত্র সত্যরক্ষা করবে, দানো তক্ষুনি তো তাকে দুই খণ্ড করবে–খাঁড়া একেবারে হাতের কাছে মজুত। তুলে নিল সে খাঁড়াটা—কাটামুণ্ডু কটমট করে তাকায়।
তুবড়ি সর্বশেষে। মুণ্ডু যাচ্ছেতাই গাল পাড়ে। ‘‘বেইমান শয়তান উল্লুক। আঠা মাখিয়ে ফেলে রেখে আমারই সেই আঠায় ওদের সব জুড়ছিলি?’’
তুবড়ি রাগ করে বলে, ‘‘গাল দেবে তো চলে যাচ্ছি। কিছুই করব না আমি।’’
কাতর হয়ে দানো তাড়াতাড়ি বলে, ‘‘কখন থেকে হা –পিত্যেশ পড়ে রয়েছি বল তো?’’
তুবড়ি বলে, ‘‘বোঝ না কেন দাদু। ওরা হল কাঠ-কাটা মাছ-মারা সব মানুষ ধড়ের উপর মুণ্ডুখানা যেমন-তেমন ভাবে আঁটলেই কাজ চলে যায়। আর তুমি হলে দানোদের সেরা গুঁফোদানো-হাত লম্বা করে করে করে আকাশের চাঁদটাও বোধহয় পেড়ে আনতে পার। তোমার মুণ্ডু আঁটা চাট্টিখানা কথা নয়–কাঁচা হাত নিয়ে আমি সাহস পাচ্ছিলাম না। ওদের সব করে করে হাত পাকিয়ে এনেছি। কেমন আহা মরি এঁটে দিই দেখ।’’
বলতে বলতে মুণ্ডু বসিয়ে দিল দানোর ধড়ের উপর।
‘‘কী করলি তুই?’’ মুণ্ডুর মুখ যে পিছন দিকে পড়ে গেল—কী সর্বনাশ!’’
তুবড়িও জিভ কাটল, ‘‘তাই তো ভুল হয়ে গেছে। তুমি যা বকাবকি লাগালে দাদু, বুদ্ধিশুদ্ধি সব ঘুলিয়ে গিয়েছিল। এখন উপায়?’’
তিক্তমুখে গুঁফো বলে, ‘‘উপায় আমার মাথা আর মুণ্ডু। আবার তো কেঁচে-গণ্ডুষ করা। এই মুণ্ডু কেটে আলাদা কর ধড় থেকে। নতুন করে আঠা মাখা-’’
বলতে বলতে হুঁশ হল, ‘‘কাটবি তার খাঁড়াই তো নেই। তুলে নিয়ে পালিয়েছে।’’
তুবড়ি বলে, ‘‘পালাবে কেন? মনের ভুলে তুলে নিয়েছে হয়তো। বেশি দূর যায়নি—রোসো, নিয়ে আসছি আমি।’’
তুবড়িও দ্রুত পায়ে উপরে উঠে গেল।
দুকড়ি মাঝি ছেলেমানুষ তখন, বাপের সঙ্গে দানোর খাল দিয়ে যেতে যেতে এক পলক ঐ উল্টোমুখ দানো দেখতে পেয়েছিল। বিশাল একজোড়া গোঁফ মুখের উপর, মুখের ঠিক নীচেই পিঠ। হাত-পা বুক-পেট সব উল্টোদিকে। থপ থপ করে পিছন পানে যাচ্ছিল—চোখ সেদিকে নয় বলে দেখতে পাচ্ছে না, জোরে যাবে কেমন করে? গুঁফোকে দেখেই দুকড়ির বাপ তাড়াতাড়ি ডিঙির মুখ ঘুরিয়ে নিল। দেখতে পেলেই নাকি বাঘের মতো গর্জাত আর লম্ফঝম্ফ করত। মানুষের উপর বড্ড রাগ।
ছবি-বিমল দাশ