বালিশে মাথা গুজে কাঁদছিলো তানিয়া।হঠাৎ পাশে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে।তাকিয়ে দেখে ভাইয়া মানে অনিক ফোন করছে।অনিচ্ছা সত্বেও ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে বসে থাকে।কিছুক্ষণ কর ওপাশ থেকে অনিক বলে-
তানিয়া?
হুম!
তানিয়া?
হুমমমম!
তানিয়া?
কি বলবেন বলুন?
সরি!
লাগবে না আমার সরি।আপনি থাকেন আপনার চাকরি নিয়ে।এই বলে ফোনটা কেঁটে দেয়।
রাগে কষ্টে তানিয়া আবার কেঁদে ফেলে।
কাল তানিয়ার বার্থডে।সেটা জানানোর জন্য আজ সকাল থেকে তানিয়া ওর ভাইয়াকে ফোন করছে।কিন্তু অনিক তানিয়ার ফোন রিসিভ করেনি।আর সারাদিন চলে যাবার পর এখন ফোন করে সরি বলছে।আর কয়েক ঘন্টা পর তানিয়ার বার্থডে।অথচ এ নিয়ে কিছু বলল না।হয়তো কাজের চাপে ভুলেই গেছে।
গত বছরের বার্থডের কথা মনে পরে যায় তানিয়ার।ভাইয়া আব্বু আম্মুকে নিয়ে অনেক মজা করেছিল।এখন আব্বু আম্মু আছে।অথচ ভাইয়া নেই।গতবছর তানিয়াকে অনিক বলেছিল সমনে বছর তোর বার্থডে অন্যরকম ভাবে করবো।এখন তানিয়া দেখছে ভাইয়া তার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।
মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায় তানিয়ার।চিৎকার করে কান্না করতে গিয়ে থেমে যায় ফোনের রিংটনে।
তাকিয়ে দেখে ভাইয়া আবার ফোন দিছে।
ফোনটা রিসিভ করে চুপ কররে কানের সাথে ধরে রাখে।অনিক ও চুপ।তানিয়াও নিশ্চুপ। তিন মিনিট চলে গেলো।কেউ কোনো কথা বলল না।অনিক টুস করে ফোনটা কেঁটে দিলো।
তানিয়া ভেবেছিলো এবার ভাইয়া বার্থডের কথা বলবে।কিন্তু তা বলল কই!কিছুই না বলে ফোন কেঁটে দিলো।আবার রাগে অভিমানে চোখের কোণা দিয়ে পানি পড়তে লাগল।তানিয়া ভাবল লাগবেনা তার বর্থডে সেলিব্রেট করা।তাই লাইট অফ করে শুয়ে পরলো।
তানিয়ার চোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো অঝোর ধারায় পানি পরছে।আকাশে চাঁদ উঠেছে।সাথে তাঁরাও উঠেছে। এই রাতটা তানিয়ার কাছে অনেক বাজে লাগছে।অথচ ভাইয়া থাকলে এই রাতটা কত সুন্দর হতো!এটা ভেবেই তানিয়া আবার ফুপিয়ে কান্না শুরু করল। রাত বারটা বাজার সাথে সাথেই ফোনটা আবার বেজে উঠল।তানিয়া অভিমানে ফোনটা ধরল না।
ফোনটা আবার বেজে উঠল।অনিচ্ছা সত্বেও ফোনটা রিসিভ করলো।
হ্যালো?
(তানিয়া নিশ্চুপ)
তানিয়া?
বলেন…
বাড়ির সমনে কেউ দাড়িয়ে থাকলে কি ভালো দেখা যায়?
আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না।আপনি পচা,খুব পচা।(কান্না ভেজা কন্ঠে বলল)
আরে পাগলি গেট খুলে দেখোই না!
তানিয়া ফোনটা কানের সাথে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিলো।দেখলো ভাইয়া অনেক ফুল আর একটা বড় কেক হাতে দাড়িয়ে আছে।তানিয়াকে দেখে অনিক চিৎকার করে বলল হ্যাপি বার্থডে তানিয়া!!হ্যাপি বার্থডে আমার কলিজার টুকরা বোনটা!!
তানিয়ার আনন্দে চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো।চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি পরলো।কান্না ভেজা কন্ঠে বলল তুমি পচা, খুউউউব পচা!!
আবারও কাঁদছে তানিয়া।তবে এটা কষ্ট বা অভিমানের কান্না নয়।এটা হচ্ছে আনন্দের কান্না।
এই পাগলি কাঁদছিস কেনো?
আপনি বুঝবেন না ভাইয়া।
আমি সব বুঝি।তুই ভাবলি কি করে আমি তোর বার্থডের কথা ভুলে যাবো!
ভাইয়া বলে তানিয়া অনিককে জড়িয়ে ধরলো।
পেছন থেকে ওদের আব্বু আম্মু ছেলেমেয়ের এই কান্ড দেখে হাঁসতে শুরু করলো।আর বলল পাগল দুটো।বড় হয়েছে এখনও ওদের পাগলামি শেষ হলো না।
আব্বু আম্মুর কথা ওদের দুজনের যেনো কানে যায়নি।দুজন তখন কেক কাঁটায় ব্যাস্ত।
বেঁচে থাকুক ওদের মতো কোটি কোটি ভাই বোনের অন্যরকম ভালোবাসা।
………………………………………..সমাপ্ত……………………………………..