এক ছিলো বোকার রাজ্য। রাজা-প্রজা, পাইক পেয়াদা, সৈন্য-সামন্ত, হাতি-ঘোড়া, কুকুর-বিড়াল, তেলাপোকা, গিরগিটি, ইঁদুর, ফড়িং- সবাই বোকা।
তারা কেমন বোকা ছিলো একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবে।
এক ছিলো বোকার রাজ্য। রাজা-প্রজা, পাইক পেয়াদা, সৈন্য-সামন্ত, হাতি-ঘোড়া, কুকুর-বিড়াল, তেলাপোকা, গিরগিটি, ইঁদুর, ফড়িং- সবাই বোকা।
তারা কেমন বোকা ছিলো একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবে।
প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে রাজা বললেন, বল ছোট হওয়ার কারণে সেটি ফুড়–ৎ করে মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে খেলোয়াড়রা হাঁপিয়ে উঠছে। তাই তিনি বড় বল তৈরির নির্দেশ দিলেন।
সেই থেকে রাজ্যে চার বা ছক্কা বন্ধ হলো।
যাইহোক। এবার মূল গল্পটা শোনো।
রাজা মহাক্ষিপ্ত হয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন, অ্যাই কে আছিস?’
প্রধান সেনাপতি রাজাকে কুর্নিশ করে বললো, ‘জো হুকুম জাঁহাপনা!’
রাজা বললেন, ‘জলদি বলো, আমার রাজ্যে পোকা প্রবেশ করলো কীভাবে?’
‘পোকা!’- বোকা সেনাপতি বিস্মিত হয়ে বললো, গুস্তাফি মাফ করবেন জাঁহাপনা। আমি তো পোকা বিষয়ে কিছুই জানি না।’
রাজা বললেন, ‘তাহলে মন দিয়ে শোনো। রাজপুত্রের দাঁতে পোকা লেগেছে। তোমার প্রথম কাজ হলো, কীভাবে আমার রাজ্যে পোকা ঢুকলো তা বের করা। আর দ্বিতীয় কাজ হলো…’
রাজার কথা শেষ না হতেই পোকার ভয়ে সেনাপতি মূর্চ্ছা গেলেন। চারজন নওজোয়ান প্রধান সেনাপতিকে পাজাকোলা করে নিয়ে গেলেন রাজকোবরেজের কাছে।
রাজকোবরেজ তার চোখে একটা কাঁচামরিচ ঘষে দেওয়ামাত্র সে উঠে দাঁড়ালো এবং পুনরায় দৌড়ে রাজার কাছে গেলো।
প্রধান সেনাপতির চোখ বেয়ে অঝর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে দেখে রাজা বললেন, ‘আরে তুমি কাঁদছো কেন?’
‘আজ্ঞে কাঁদছি না জাঁহাপনা। কোবরেজজি আমার চোখে কাঁচামরিচ ঘষে দিয়েছেন।’
রাজা বললেন, ‘আচ্ছা বেশ। এবার বলো।’
‘আজ্ঞে জাঁহাপনা। এখন মহামান্য রাজপুত্রের তবিয়ত কেমন?’
‘পোকার অত্যাচারে মাঝে মাঝে সে চিৎকার করে উঠছে।’
‘তাহলে তো আর বরদাশত করা যায় না। পোকার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিতেই হয়।’
‘কী ব্যবস্থা নিতে চাও?’
‘যুদ্ধ ছাড়া তো আর কোনো ব্যবস্থা নেই জাঁহাপনা। আপনি হুকুম করুন। আমি এন্তেজাম করি।’
রাজা চিন্তা করে বললেন, ‘তার আগে একবার কোবরেজজির সঙ্গে আলাপ করে দেখো।’
‘তবে তাই হোক।’
২
রাজকোবরেজ আয়েস করে হুকোয় টান দিতে যাবেন এমন সময় সেনাপতি এলেন। হুকো-মুকো রেখে কাঁচামরিচ নিয়ে সেনাপতির দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলেন কোবরেজ।
সেনাপতি বললো, ‘আমি না, আমি না।’
‘তাহলে কে? ঘরে তো আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।’ বলে সেনাপতির চোখে মরিচটা ঘষে দিলেন।
সেনাপতি বললো, ‘আমার কথা না শুনেই মরিচটা ঘষে দিলেন?’
‘বটে। আমি যা করেছি বুঝে-শুনেই করেছি। রোগীর ইচ্ছেমাফিক চিকিৎসা করলে সেই রোগী কস্মিনকালেও আরোগ্য লাভ করে না জনাব।
‘তা না হয় বুঝলাম কিন্তু রাজপুত্রের কি করবেন?’
কোবরেজ হুকো ফেলে বললেন, ‘কি হয়েছে প্রিয় রাজপুত্রের?’
‘তার দাঁতে পোকা লেগেছে।’
‘সেকি! এতোবড় রোগ! এই রোগের চিকিৎসা তো আমার জানা নেই।’
সেনাপতি বললো, ‘আচ্ছা কাঁচামরিচ ঘষে দেখলে হয় না একবার?’
কোবরেজ ফোঁকলা দাঁতে হো হো হেসে উঠলেন।
৩
রাজা বললেন, ‘পুরো রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে রাজপুত্রের দাঁতে পোকা লাগার খবরটি জানিয়ে দাও। যদি কেউ নিরাময় করতে পারে, সে পাবে ১ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা।’
সেনাপতি বললো, ‘জো হুকুম জাঁহাপনা।’
৪
ঘোষকদল ঘোড়ায় চেপে বেরিয়ে পড়লো ঘোষণা দিতে।
পুরো রাজ্যে সাড়া পড়ে গেলো। বেশ কয়েকজন বৈদ্য পাওয়া গেলো যারা রাজপুত্রকে নিরাময় করতে আগ্রহী।
কিন্তু সমস্যা হলো রাজদরবার কোথায় বা সেখানে কীভাবে যেতে হয় তা তারা জানে না।
ফলে অনেকগুলো ঘোড়া পাঠানো হলো। ঘোড়ায় চড়ে তারা রাজদরবারে পৌঁছালো। তারা যা যা খেতে পছন্দ করে তাদের তাই তাই খাওয়ানো হলো।
তারপর নিয়ে যাওয়া হলো অন্দরমহলে।
কেউ রাজপুত্রের জিহ্বা দেখলো, কেউ নাড়ি দেখলো, কেউ চোখের পাতা উল্টে দেখলো কেউবা টোকা দিয়ে শরীরের কাঠিন্য পরীক্ষা করলো। তারপর একযোগে সবাই শুরু করলো নানারকম গণনা-বাছনা। রাজা অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলেন।
অবশেষে জানা গেলো, দাঁত ফেলে দিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তিলাভ করবে রাজপুত্র।
‘না না!’- আঁতকে উঠলেন রাজা, ‘আমার পুত্র সইতে পারবে না। তোমরা অন্য ব্যবস্থা করো।’
তারা অন্য ব্যবস্থার জন্য চিন্তা শুরু করলো।
ঠিক তখন এক বালক তড়িঘড়ি করে ভেতরে এলো এবং রাজাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘মহাশয় আমার কথা শুনলে পোকা পালাবে।’
রাজা অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালেন। ৬ কি ৭ বছর বয়স। রোদে পোড়া চেহারা। মাথার চুল বাদামি। চোখের মণি নীল। অপরূপ সুন্দর। নাম জাফরান।
রাজা বললেন, ‘বলো, শুনি তোমার কথা!
জাফরান বললো, ‘রাজপুত্রকে প্রতিদিন খাওয়ার পরে দাঁত মাজার করার অভ্যাস করান। পোকারা পালাতে পালাতে বলবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।’
জাফরানের পরামর্শে সত্যিই পোকারা পালালো।
আনন্দিত রাজা ভাবলেন এ-রকম একজন বুদ্ধিমান বালক তার বড়ই প্রয়োজন। তাই তাকে রাজকীয় সম্মানে রাজপুত্রের বন্ধু হিসেবে রাজদরবারেই রেখে দিলেন।