তানিমের পরী দেখার সাধ অনেক দিনের। সে শুনেছে পরীরা নাকি রাতের বেলায় ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় দূর আকাশে।
তাই সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পড়তে বসে সামনের জানালাটা খোলা রাখে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে আকাশের দিকে তাকায়। খুঁজে বেড়ায় পরীদের। কিন্তু আজ অবধি দেখা পেল না পরীদের। আজ সে ঠিক করেছে পরী দেখবেই। একটুও পড়বে না আজ। তার ধারণা, যখন সে অঙ্কে মনোযোগ দেয়, হয়তো তখনই পরীরা জানালার পাশ অতিক্রম করে চলে যায়। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। পরীর দেখা মিলছে না। বিরক্ত হয়ে জানালা বন্ধ করতে যাবে, হঠাৎ দেখে অপরূপ সাজে সজ্জিত তার বয়সী এক মেয়ে ওড়ে ওড়ে তার দিকে আসছে। পরনে নীল পোশাক। দুটি ডানাও আছে। তন্ময় হয়ে সে তাকিয়ে থাকে। সে জানত পরীরা অনেক সুন্দরী হয়। কিন্তু এতটা সুন্দরী সে কল্পনাও করেনি। ‘এই তানিম, আমার সঙ্গে খেলতে যাবে?’ বলল নীলপরী।
তানিম অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, তুমি আমার নাম জানলে কী করে! মুচকি হেসে পরী বলল, অনেক আগ থেকেই জানি। তুমি যে প্রতিদিন আমাদের দেখার আশায় বসে থাক তাও জানি। এখান দিয়ে যাওয়া-আসার সময় তোমার অবস্থা লক্ষ্য করি। আমরা সাধারণত অদৃশ্য হয়ে চলাফেরা করি। বিশেষ কারণ ছাড়া ধরা দেই না। কিন্তু আজ তোমার জেদ দেখে ধরা না দিয়ে পারলাম না। এ বলে পরী হাত বাড়িয়ে দেয়। তানিম তার হাতে হাত রাখতেই তাকে নিয়ে উড়তে শুরু করে। বলে, চল আজ তোমাকে আমাদের রাজ্য ঘুরিয়ে আনব। পরীর হাত ধরে উড়তে তানিমের কেন যেন ভালো লাগছিল না। সে বলল, তুমি বরং আমাকে পাখির আকৃতি করে দাও, আমিও তোমার সঙ্গে উড়ি। পরী তাই করল। তানিমের যেন খুশির শেষ নেই। মনের আনন্দে উড়তে লাগল। মাঠ-ঘাট, বন-বনানী, সাগর-নদী পেরিয়ে এক সময় পৌঁছে গেল পরীর রাজ্যে। আহা! কী চমৎকার সাজে সজ্জিত সে দেশ! ফুলে ফলে সাজানো। সোনা-রুপার কারুকাজখচিত সব বাড়িঘর। যেন শিল্পীর আঁকা ছবি। সবার সঙ্গে পরিচিত হলো। পরীদের ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা করছে। সে আর নীলপরীও তাদের সঙ্গে খেলায় যোগ দিল। হা-ডু-ডু, গোল্লাছুট, কানামাছি ভোঁ ভোঁসহ আরও কত খেলা!
অনেক আড্ডা হলো, আনন্দ হলো। এবার বিদায়ের পালা। বেশি দেরি করলে ওদিকে আবার আম্মু খোঁজাখুঁজি শুরু করবে। যেতে মন চাইছিল না। তারপরও সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করল নীলপরীর হাত ধরে। পথে আবার সেই বায়না। পরীকে বলল তাকে পাখির মতো করে দিতে। পরী তাই করল। উড়তে উড়তে দুজনেই বেশ ক্লান্ত। একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক। নদীর পাশে বিশাল আখ ক্ষেতে নামল তারা। একটু পর পরী বলল, তুমি বিশ্রাম নাও। ওই যে জঙ্গলটা দেখা যাচ্ছে, সেখানে আমার এক বান্ধবী থাকে। আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসি। এই বলে পরী চলে গেল। তানিম চারপাশটা ঘুরে দেখছে পাখির বেশে। পাশেই এক শিকারি ফাঁদ পেতে রেখেছিল। হাঁটতে হাঁটতে বেখেয়ালে সে ফাঁদে পা রাখতেই আটকে গেল তানিম। নিজেকে ছাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে আর বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন জাপটে ধরল। আচানক সে ভয় পেয়ে যায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মা! বলল কী হয়েছে… কী হয়েছে বাবা, এভাবে চিৎকার করছ কেন? তানিম মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কিছু না মা। আর মনে মনে ভাবতে থাকে এ কী স্বপ্ন দেখলাম আমি!