অভ্রের সাথে আমার বিয়েটা পারিবারিকভাবেই
ঠিক হয়।স্বামীর ভালোবাসার আশায় কারও সাথে সম্পর্কে জড়াইনি।অভ্র দেখতে শুনতে খুবই ভালো ও সুদর্শন ছিলো,তাঁকে দেখলে পছন্দ করবেনা এরকম মেয়ে কমই আছে হয়তো।নামটা যেরকমই কাব্যিক ছেলেটাও তার বিপরীত নয়!এ্যাংগেজমেন্টের পর থেকে শুরু হয় আমার নতুন পথচলা।তাকে ভালোবাসতে শুরু করি,এবং নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলি।
সারাদিন রসিকতা নিয়ে মেতে থাকতো।
নিয়মিত কল করতো আমার অনেক কেয়ার করতো সারাদিনই আমাকে নিয়ে মেতে থাকতো।এতেই তার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়ি,এবং নিজের ভালোবাসা তার কাছে সমর্পন করি।
যখন শুনলাম আমার বর মানে অভ্র অন্য মেয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে,তখন আমার বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যেতে লাগলো।মনে হলো কেউ একজন আমার বুকে পাথর দিয়ে জোরে আঘাত করছে।চোখের জ্বলে সব কাজল লেপ্টে হ
গেলো।
পালিয়ে যখন যাবে তাহলে মিথ্যে স্বপ্ন কেনো দেখিয়ে গেলো!কেন এতো বড় ছলনা করলে আমার সাথে! জানি এসব কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমি পাবো না।
বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেলো, সকল গান বাজনা বন্ধ হয়ে গেলো।বাবার অসহায় মুখটা দেখে খুব খারাপ লাগতে লাগলো।বাবা অনেকটা ভেঙে পড়েন।
সময় আমাদের একদম বিপরীত দিকে প্রস্থান করলেন।
দেখলাম বাবাকে উনার এক বন্ধু ডেকে নিয়ে গেলেন,কিছুক্ষন পরেই আবারো গানবাজনা বাজতে লাগলো কিন্তু আমি কিছুই বুঝলাম না কি হতে চলেছে।
হ্যা আমার বিয়ে হয়েছে তবে অভ্রের সাথে না,বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে।নামটা আবির, ছোটকাল থেকেই চেনা,বাসায় অনেক যাতায়াত ছিলো, নম্রভদ্র চুপচাপ একজন মানুষ।
মানসম্মান বাজাতে বাবার হাতে মনে হয় এর থেকে ভালো উপায় ছিলো না।কিন্তু আমি তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারলাম না।আমার ভালোবাসাগুলো প্রতারক অভ্রের জন্য ছিলো,তাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন বুনেছি মনের মধ্যে।
বিয়ের ৩দিন পর স্বামীর সাথে ঢাকা চলে আসি।
.
মানুষটাকে দেখলে বড্ড সহজসরল মনে হয়, তবে পুরুষদের উপর থেকে কেন জানি বিশ্বাসটা উঠে গেছে।মানুষটা অনেক সাধারন,কথাবার্তাও সাধারনের মতোই।অনেক গম্ভীর একটা মানুষ,প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলেন না,গম্ভীর থাকাটা অস্বাভাবিকের কিছু না ভার্সিটির শিক্ষকরা একটু তো এরকম হবেন ই।সারাদিনই কাজ কর্ম নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন,প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলতেন না,বলতে গেলে আমিই তাকে কথা বলার সুযোগ দিতাম না।মনের মধ্যে একটা কথাই মনে পড়ছে উনি আমায় বিয়ে করে অনেক বড় উপকার করেছেন বাবা মায়ের সম্মান বাচিয়েছেন,এছাড়া তাকে নিয়ে আমার তেমন কথা মনেই হতো না।
এখন আমি একটা স্বাধীন জীবনের আশায় রয়েছে, সবার কাছ থেকে মুক্ত হয়ে একাই জীবন শুরু করবো।
.
শুরু হলো আমার অদ্ভুত জীবন।স্বামী প্রতিদিন সকালে নাস্তা করে বের হতেন বিকালে ফিরতেন,কিছুক্ষন বই পড়ে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়তেন।আমাকে প্রতিদিনই দুপুরের খাবারের সময় খেয়েছে কি’ না জানতে ফোন দিতেন, তবে আমার কাছ থেকে কটুক্তি ছাড়া তেমন কোনো কিছুই পাননি।তারপরও তিনি আমাকে কিছুই বলতেন না।
খাওয়া নিয়ে তেমন অভিযোগ ও করতেন না,একবার তরকারিতে ভূলে ঝাল বেশী দিয়ে ছিলাম কিন্তু সে নিশ্চুপভাবে খেয়ে চলে গেলো,আমি মুখে দিতেই চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায় তিনিই আমাকে পানি এগিয়ে দিলেন।চলছিলো দিন হঠাৎ একবার তার জ্বর হলো যখন বুঝতে পারলাম তখন জিঙাসা করলাম,আপনার জ্বর হয়েছে আমাকে বলেননি কেনো।তিনি স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,আমার জ্বর এটা খামখা তোমাকে বলার কি আছে।
স্বামীর প্রতি কখনোই ভালোবাসাটা অনুভব করিনি।
.
আমার স্বামীর লির্মিপ্ততা আমার একটুও ভালো লাগতো না,তা না।আসলে এতেই স্বস্তি পেতাম।আসলে ভালোবাসার অনুভূতি গুলো অভ্রের সাথেই হারিয়ে গেল।আমার মনের আশাগুলো তখনই মাটিচাপা পড়েছিলো। এতোকিছুর পরেও আমি তাকে ভূলতে পারতাম না।প্রতিটা দিন মনে হতো হয়তো একদিন অভ্র আসবে,এসে আমায় নিয়ে যাবে তার সঙ্গে।হয়তো সে এখনো ভালোবাসে আমাকে।মানব মন বড়ই বিচিত্র, হাজার প্রতারিত হয়েও ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকে।ভালোবাসার মানুষের হাজারো উপেক্ষা একটা ভালোবাসারর কথাতেই সব ভূলে যাওয়া যায়।আমিও হয়তো তার ব্যাতিক্রম না…
আমার স্বামীর প্রতি ভালোবাসার টান কখনো অনুভব করিনি।তিনিও ভীষণ অপ্রস্তুত হয়ে যেতেন আমার সাথে কথা বলতে।একদিন রাতে তাকে সরাসরিই বলেছিলাম, তুমি আমাকে বিয়ে করে আমার বাবার সম্মান বাচিয়েছো তাই তোমাকে ধন্যবাদ,তবে এখন আমি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চাই।সে শুধু মাথা নেড়ে হ্যা সূচক উত্তর প্রদান করলো।
সেদিন রাতে খুব বর্ষা ছিলো সারারাত আমার স্বামী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।প্রবল বর্ষণের কারনে তার চোখের জল পানিতে মিশে গিয়েছিল সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম।অবাক হয়ে গেছিলাম খুব।সেদিন ব্যাগ গুছাতে গিয়ে স্বামীর ড্রয়ার খুললাম।
দেখলাম আমার হারিয়ে যাওয়া কানের দূল,অনেকদিন ধরেই খুজে পাচ্ছিলাম না।আরো দেখতে পেলাম আমার ফেলে দেওয়া কাচের চুড়ি,একটা আমার পছন্দের ফেলে দেওয়া পারফিউমের কৌটা।এগুলা দেখে আমি একটু বেশিই অবাক হয়ে গেলাম।কিন্তু এসব আমার স্বামীর ড্রয়ারে কিভাবে এলো বুঝতে পারলাম না।পরের দিন তিনি আমাকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে চলে আসলেন।অবশ্য তিনি আমার সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন বরং আমি না করে দিয়েছি।
গাড়ি এগিয়ে চলছে নিজস্ব গন্তব্য পথে।
এ
আচমকা মনে পড়লো ওর তো কেউ সকালের নাস্তা বানানোর নাই।নাস্তা না খেয়ে হয়তো কলেজ যাবে।শার্টটা আয়রন করে দিবে কে?মানিব্যাগটা হয়তো খুজেই পাবে না।কেন জানি হঠাৎ স্বামীর জন্য বুকটা কেপে উঠলো।যাকে একমুহূর্তের জন্যও ভালোবাসিনি,তার চলে যাওয়াটা হঠাৎ করেই শূণ্য পৃথিবী আরো শূন্য করে দিয়ে গেলো।কিন্তু ভেঙ্গে ফেলা শিকলটা তখন কেনো জানি মুক্তির চেয়েও অনাকাঙ্ক্ষিত। অনেকদিন পর চোখের জল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।
হঠাৎ করেই বাস নষ্ট হয়ে গেলো অল্প একটু পথ এসে।কিছুক্ষণ পর দেখলাম হঠাৎ একটা বাইক এসে পাশে থামলো,স্বামীকে দেখলাম বাসের ভেতর উঠতেছে।অনেকটা গেমে গেছে।বাসায় যেতে মন চাইছিলো না
তাই তোমার সাথে সাথেই বাইক নিয়ে চলছিলাম। বাসটা নষ্ট হয়ে ভালোই হলো তোমাকে শেষববারের মতো দেখার সুযোগ…
কথা শেষ না করতেই দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।সে অনেকটা অবাক হয়েছিলো বটে তবে এতোটা আশা করেনি।চোখের পানিতে তার শার্টটা অনেকটা ভিজিয়েই ফেললাম।স্বামীটা বোকার মতো চারপাশ তাকাচ্ছে, দেখলাম সবাই আমাদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।তাই তারাতারি তাকে ছেড়ে দিলাম।সে আমার হাতটি শক্ত করে ধরে বললো চলো। আমিও তার কথায় সাঁয় দিয়ে পা বাড়ালাম আমার সুখের ঠিকানায়।