অনেক দিন আগেকার কথা। এক দেশে এক রাজা তার এক রানি কে নিয়ে থাকতেন। সেই রাজার ভারী দুঃখ। একে তো দেশে কোন সুখ-শান্তি নেই, তার ওপরে রাজার কোন ছেলেমেয়ে নেই। একদিন রাজার দরবারে এক সন্ন্যাসী এলেন। তিনি বললেন, “মহারাজ,আমি আপনার দুঃখ জানি”। বলে তিনি একটি গোলাপ ফুল দিলেন, তারপর আবার বললেন, “এই ফুল যদি আপনি পাঁচদিন জলে রেখে, পিষে আপনার রানিকে মধু দিয়ে খাওয়ান তাহলে আপনার সব দুঃখ ঘুচে যাবে”। এই বলে তিনি সেই ফুল রাজার হাতে দিয়ে দরবার থেকে চলে গেলেন। রাজা ঠিক সন্ন্যাসীর কথা মত ফুলটাকে পাঁচদিন জলে রেখে পিষে মধু দিয়ে রানিকে খাওয়ালেন। তারপরে রানির দুই জমজ ছেলে হল। তাদের নাম দেওয়া হল খেলান আর দোলান। তাদের এইরকম নামের কারন আছে। খেলান সবসময় খেলতে থাকে আর দোলান সবসময় দুলে দুলে ঘুমোয়। তাদের কাজকম্মো ছাড়া আর সব এক। তাদের চোখদুটো এক-ই রকম, গায়ের রঙ এক, মাথায় এক-ই রকম লম্বা।
এদিকে হয়েছে কি, সেই রাজ্যের দিকে এক রাক্ষসের নজর ছিল। রাজ্যের সব ঘোড়া আর হাতিকে রাক্ষস খেয়ে ফেলল, তারপর যত সেপাই সান্ত্রীকে। তারপর রাজা আর রানিকেও গপ্ করে গিলে ফেলল। তখন খেলান আর দোলান বেশ বড় ছেলে। ওরা সেদিন খাটের নিচে ঢুকে লুকোচুরি খেলছিল তাই রাক্ষস ওদের খুঁজে পায়নি। খাটের তলা থেকে বেরিয়ে ওরা বলল “একি! আমাদের রাজ্যের সবাই রাক্ষসের পেটে চলে গেছে! ওকে শায়েস্তা করতে হবে”।
তখন খেলান আর দোলান ইচ্ছে করে হাতে দড়ি পাকিয়ে নিয়ে রাক্ষসের অপেক্ষায় খাটে উঠে শুয়ে রইল। রাক্ষস এল হাঁউ-মাঁউ-কাঁউ বলে মানুষের গন্ধ পেয়ে। এক গরাসে গপ্ করে যেই খেলান কে খেতে গেছে অমনি দোলান ওর হাতের দড়ি দুলিয়ে দিল, আর সেই দড়ি রাক্ষসের চারিদিকে পাক খেয়ে জড়িয়ে গেল। রাক্ষস বন্দী হয়ে গেল। খেলান তো খুব ভাল খেলতে পারে, সে তখন রাক্ষস কে লাট্টুর মতন ঘোরাতে লাগল, দড়িটাকে লেত্তি করে। রাক্ষস বাঁই বাঁই ঘুরতে লাগল সেই সঙ্গে ওর মাথা ঘুরতে লাগল। তখন দোলান তাকে তুলে নিয়ে দোলাতে শুরু করল। অমনি হড়হড় করে রাক্ষস বমি করে ফেলল,আর ওর পেট থেকে রাজা, রানি, মন্ত্রী, সেপাই, সান্ত্রী, হাতি, ঘোড়া সব বেরিয়ে এসে আবার দিব্যি আগের মতন হাঁটা চলা করতে লাগল।