রাজকন্যা কঙ্কাবতী আর রাজপুত্র ডালিমকুমার

রাজকন্যা কঙ্কাবতী আর রাজপুত্র ডালিমকুমার

একদেশে ছিল এক রাজপুত্র। তার নাম ডালিমকুমার। সে হাসতো, খেলতো, ঘুরে বেড়াতো। তার মনে ছিল আনন্দ আর আনন্দ।

একদিন তার শখ হল দেশ ভ্রমণে যাবার। যেই না ভাবনা, ডালিমকুমার তার পঙ্খীরাজ হোন্ডা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল অজানার

উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে যেতে একদিন পৌঁছাল এক বিশাল প্রাসাদের সামনে। প্রাসাদের চূড়া যেন আকাশ ছুঁয়েছে, সামনে এক

বিশাল ফুলের বাগান, এক পাশে চায়ের টেবিল-চেয়ার, একপাশে ছোট্ট একটা ঝর্ণা। আর সামনে বিশাল একটা গেট। গেটের ওপর

লতা-পাতায় ছাওয়া। প্রাসাদটা এত সুন্দর, কিন্তু কেমন নিষ্প্রাণ। আধো আধো অন্ধকার, যেন সূর্যের আলো পৌঁছায় না ভিতরে,

ফুলের বাগানটা হয়ে আছে জংলা, একটা-দুটো জংলী ফুল টিকে আছে কোনরকমে। কোন পাখি নাই, প্রজাপতি নাই।

ডালিমকুমার অবাক হয়ে ভয়ে জবুথবু, ঘুম ঘুম, নিষ্প্রাণ প্রাসাদটা দেখতে লাগল। এমন সময়…….

এমন সময় দোতলার দক্ষিণ দিকের একটা বারান্দার দরজা খুলে গেল। বেরিয়ে এল এক ঝলক নরম আলো। চোখ কচলে ভাল

করে তাকাতেই ডালিমকুমার দেখল আলো নয়, এক রাজকুমারী দাঁড়িয়ে আছে। যেমন চাঁপার মত গায়ের রঙ, তেমনি মেঘের

মত লম্বা চুল, তেমনি চোখ, তেমনি নাক, তেমনি মুখ……….এত সুন্দর! এত সুন্দর!! এত সুন্দর রাজপুত্র কোনদিন দেখেনি। কিন্তু

রাজকুমারীর মুখে কি যে বিষাদ। এত সুন্দর একটা মানুষের এত কেন মন খারাপ? ডালিমকুমার অবাক হয়ে তাকিয়েই রইল,

তাকেয়েই রইল, তাকিয়েই রইল। রাজকুমারী এসে দাঁড়াতেই চারদিকে যেন প্রাণের সাড়া জেগে উঠল। নেতিয়ে পড়া ফুলগুলো

উঠল হেসে, কোত্থেকে উড়ে এল সাদা, নীল, হলুদ সব প্রজাপতি, বারান্দায় বসে গাইতে লাগল একটা হলদে লেজ ঝোলা পাখি।

কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ। তারপরেই হঠাৎ রাজকুমারী চমকে উঠে ভিতরে চলে গেল আর মন খারাপ করে চলে গেল পাখি, প্রজাপতি

সব।

রাজপুত্র ফিরে এল। কিন্তু ঘুমাতে পারল না সারারাত। সারাক্ষণ তার চোখে ভাসল সুন্দর মুখটা। সে আবার পরদিন এল, তার

পরদিন, তার পরদিন, তার পরদিন, রোজ………।

রাজপুত্রের অবস্থা দেখে মায়া হল প্রাসাদের সামনে বসা এক পান দোকানদারের। সে রাজপুত্রকে ডেকে বলল রাজকুমারীর গল্প।

রাজকুমারীর নাম কঙ্কাবতী। এই প্রাসাদটা কঙ্কাবতীর বাবার। কঙ্কাবতীর বাবা মারা যেতেই তার এক দু:সম্পর্কের চাচা

দেখাশোনার নাম করে দখল করে নিয়েছে এই প্রাসাদ। আর বন্দী করেছে কঙ্কাবতীকে। শুধু তাই না, এখন এক বুড়ো হাবড়া

দৈত্যের মতন ব্যবসায়ীর কাছে জোর করে বিয়েও দিতে চাইছে। কিন্তু কঙ্কাবতী মোটে রাজি না বিয়েতে। তাই শয়তান চাচা কতই

না অত্যাচার করে নিরীহ রাজকুমারীর ওপরে। আর কঙ্কাবতী কেবল কাঁদে আর কাঁদে।

এই কাহিনী শুনে ডালিমকুমার কঙ্কাবতীকে বাঁচানোর জন্য অস্থির হয়ে উঠল। কিন্তু কি করে?

সমাধান সেই দয়ালু পানওয়ালাই দিল। কঙ্কাবতীর ছিল একটা ব্যঙ্গমী। আর ডালিমকুমারের ব্যঙ্গমা। ডালিমকুমার ব্যঙ্গমা দিয়ে

কঙ্কাবতীকে বার্তা পাঠাল। জানাল নিজের পরিচয়, জানাল ভালবাসার কথা, জানাল সে কঙ্কাবতীকে উদ্ধার করতে চায় এই

বন্দীশালা থেকে। এদিকে হয়েছে কি, প্রাসাদের বারান্দা থেকে রোজ রোজ দেখতে দেখেতে কঙ্কাবতীও কখন নিজের অজান্তে

ভালবেসে ফেলেছে ডালিমকুমারকে। তাই বার্তা পেতেই আর দেরি না করে ফিরতি বার্তায় নিজের ভালবাসার কথা জানাল

কঙ্কাবতী। আর বলল সে এক্ষুণি রাজপুত্রের হাত ধরে চলে আসতে রাজি। কিন্তু কঙ্কাবতীর চাচারতো অনেক ক্ষমতা। সে

কিছুতেই আসতে দিবে না।

ডালিমকুমার তখন নিজের বন্ধুদের ডেকে আনল। গোপনে খবর নিল শয়তান চাচার কাজ-কর্মের। জানতে পারল লোকটা মহা

মহা পাজি। যত অন্যায় আর অবৈধ কাজ, চোরাকারবার…সবকিছু করে। কিন্তু ডালিমকুমার যে কঙ্কাবতীকে উদ্ধারের চেষ্টা

করছে সেটা চাচা টের পেয়ে গেল। সে তার গুন্ডা-পান্ডা দিয়ে ডালিমকুমারকে ধরে আনার পরিকল্পনা করল। কিন্তু কঙ্কাবতী চুপ

চুপ করে সেটা শুনে ফেলল। আর তক্ষুণি ব্যঙ্গমী দিয়ে একটা বার্তা পাঠিয়ে দিল ডালিমকুমারকে। বার্তা পেতেই ডালিমকুমার

শয়তান চাচার যত জারি-জুরি ওই দেশের মহারাজার কাছে ফাঁস করে দিল।

মহারাজা তখন তার সৈন্য বাহিনী পাঠাল। তারা সব কাল কাল পোশাক পরা, কী ভীষণ তাদের মূর্তি। সৈন্যরা এসে চাচা আর তার

সাঙ্গ-পাঙ্গকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। মুক্তি পেল কঙ্কাবতী।

মুক্ত হল তার রাজপ্রাসাদ।

তারপর মহা ধুমধাম করে রাজপুত্র ডালিমকুমারের সাথে রাজকুমারী কঙ্কাবতীর বিয়ে হয়ে গেল। আর তারা সুখে-শান্তিতে বাস

করতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত