চালাক শিয়াল তার সহকারী শিয়ালকে বলল, অনেকদিন হলো একটা মোরগ কিংবা মুরগি খাইনি। চলো আজ আমরা একটা মোরগ কিংবা মুরগি শিকার করে নিয়ে আসি। এনে মনের মতো করে খাব। সহকারী শিয়াল ধূর্ত শিয়ালকে জিজ্ঞাসা করল, এই জঙ্গলে আপনি মোরগ কিংবা মুরগি কোথায় খুঁজে পেলেন? সে বলল, তুই তো এখনো আমাকে চিনিস না, আমি হলাম সবার চেয়ে বেশি চালাক। আমি এক জায়গায় অনেকগুলো বনমোরগ দেখেছি। ওখানে বোধ হয় তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকে। সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিল রেখে চালাকি করে খাওয়া যাবে। সহকারী বলল, ওরা যদি দলবল সহকারে আমাদের ওপর আক্রমণ করে তাহলে তো তারা আমাদের মেরে ফেলবে। ধূর্ত শিয়াল বলল, চুপ কর ছোট্ট পাজি। তুই শুধু আমার সঙ্গে চল বাকিটা এখন যেভাবে বলি সেখানে গিয়ে তেমন অভিনয় করবি। সহকারী বলল, আচ্ছা ওস্তাদ আপনি যেভাবে বলবেন আমি তেমনভাবে অভিনয় করতে পারব। এই বলে তারা চালাকি করতে লাগল। ধূর্ত শিয়াল সহকারীকে বলল, আমরা দুজনই নিজ গায়ে রং মেখে ছদ্মবেশে তাদের বাড়িতে সাহায্য চাইতে যাব। এবং রাতে সেখানে থাকার জন্য আকুতি-মিনতি করব। যদি ওরা আমাদের সেখানে থাকতে দেয় তাহলে তারা যখন রাতে ঘুমাবে আমরা তাদের মধ্য থেকে পাঁচ-ছয়টাকে মুখে চাপ দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসব। কিন্তু সব সময় খেয়াল রাখবি, বনমোরগেরা খুব চালাক হয়। তারা আমাদের যদি চিনতে পারে তাহলে আমাদের বলি দেবে। তারা বুদ্ধি করল আজ সন্ধ্যার আগেই সেখানে যাবে। মনে রাখবি কিন্তু, সুই হয়ে প্রবেশ করব আর সুতা হয়ে বের হব। তবে অভিনয় ভালোভাবেই করতে হবে। যদি ধরা খাই তাহলে সব চালাকি পণ্ড হবে। এমনকি আমাদের জীবনের ওপর আঘাত আসতে পারে। সকাল শেষ হয়ে বিকাল ঘনিয়ে আসল। দুজনই মুরগির আশায় না খেয়ে রওনা দিল। তারা বনমোরগের উদ্দেশ্যে রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে বনমোরগের বাড়ির সামনে গেল। বাড়িতে ঢোকার আগে নিজেরা ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে ঢুকে নিজেদের গায়ে রং মাখা শুরু করল। সহকারী বলল বস, আমাদের লেজ দেখে তো তারা চিনতে পারবে। চলুন আমরা আমাদের লেজ দুটো কেটে ফেলি। চালাক শিয়ালটি তার মতামতটা পছন্দ করল। তার কথামত তারা তাদের লেজ দুটো কেটে ফেলল। ছোট শিয়ালটি চালাক শিয়ালকে বলল, এখন আমাদের খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারব। কথা শেষ করে তারা বনমোরগের বাড়িতে ঢুকল। তারা ঢুকেই দেখে চার-পাঁচটা বনমোরগ উঠোনের মধ্য। আরও কয়েকটা বাচ্চা ঘরের ভিতর রয়েছে। তারা ঢোকা মাত্রই পরিকল্পিত অভিনয় করা শুরু করল। বড় বনমোরগটা তাদের দেখেই অবাক হয়ে গেল। কিন্তু ঠিকমতো চিনতে পারল না। শিয়ালের লেজ থাকার কথা কিন্তু এরা কোন প্রাণী যাদের দেখতে শিয়ালের মতো। এসব ভাবতে ভাবতে দুজনকে জিজ্ঞাসা করল, তোমরা কারা? এখানে কেন এসেছ? চালাক শিয়ালটি অভিনয় করে বলে আমাদের বাড়ি হলো অনেক দূরের গাঁয়ে। শহর থেকে আসার সময় সন্ধ্যা হয়ে গেল। তাই পথ হারিয়ে ফেলেছি। তাই আজ রাতটা যদি আমাদের থাকতে দিতেন তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো। বনমোরগের খুব মায়া হলো। সে বলল, আচ্ছা আজ রাত এখানে কাটিয়ে দিতে পারবে। আমাদের দুইটা রুম তো তাই তোমরা আমার ছোট ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে পার। তারা দুজন খুব খুশি হলো। রাতের কিছু খাওয়া-দাওয়া করে রুমে ঢুকল। মধ্যরাতে তাদের আসল চেহারা দেখিয়ে কয়েকটা বাচ্চাকে খেয়ে ফেলল। আর সকাল হওয়া মাত্র তারা বাকি তিন-চারটা বাচ্চাকে নিয়ে ঘর ত্যাগ করে দৌড়ে চলে আসল। বনমোরগ তো সকালে বাচ্চাদের রুমে ঢুকে দেখে শুধু পশম আছে একটা বাচ্চাও নেই। সে পরে বুঝল এরা আসলেই শিয়াল ছিল। কারণ মুরগির আসল শত্রুই হলো শিয়াল। এখন আর কী করা। বনমোরগটি সন্তানদের শোকে বিভোর হয়ে থাকে।
loading...
আরও গল্প
-
চলে গিয়েও রয়ে যাওয়ার গল্প
ডিসে. 2, 2019 -
এপ্রিল ফুল ব্রেকআপ
জানু. 2, 2021 -
চিরকালের গল্প
ফেব্রু. 3, 2019 -
নীল নীরবতা
মার্চ 11, 2019 -
মিষ্টি প্রেমের গল্প
মার্চ 15, 2018
সর্বাধিক পঠিত
-
বউ অফিসের বস
জানু. 23, 2018 -
একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে
আগস্ট 12, 2017 -
বাসর রাত
জুন 17, 2017 -
একটি ভাই ও একটি বোনের এক দিন
নভে. 19, 2017 -
সিনিয়র বৌ
আগস্ট 11, 2017