সংসার

সংসার

মুয়াজ্জিনের আযান শুনে মা এশারের নামাজ আদায় করে।আমার মায়ের একটাই অভ্যাস তা হচ্ছে-এশারের নামাজ না পড়া

থাক কাউকে ভাত দেয় না নিজেও খায় না।রাতে সবাই মিলে ভাত খাচ্ছি।ভাত খাওয়ার সময় হাসতে হাসতে আমার মা বাবাকে

বলে-অনেক যায়গা ঘুরাঘুরি করছো।এখন পর্যন্ত তোমার ছেলের বউ ঠিক করতে পারো নাই।এখন শুনো-আমার

বড়বোনের মেয়েটাকে আমাদের ঘরের ছেলের বউ করে নিয়ে আসো।আমার বাবা এ কথা শুনে সবার সামনে আমার মায়ের মুখে

প্লেট ছুঁড়ে মারে।মা একটুও রাগ করে নাই।তারপরেও মায়ের মুখে মুচকি মুচকি হাসির অাভাস।বাবা না খেয়ে উঠে চলে যাচ্ছে

অভিমান করে।মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও বাবাকে হাসতে হাসতে বলে-আমার বোনের মেয়ে সাইমা কিন্তু অনেক

সুন্দর।এই ঘরে আসলে দেখবা সাইমা সুন্দর করে সংসার গুছিয়ে রাখতে পারবে।আমার বাবা এ কথা শুনার পরে আমার মায়ের

মুখে জোরে একটা থাপ্পড় দেয়।

এতজোরে থাপ্পড় দেয় আমার মা সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।মায়ের নাই কোনো শব্দ।
আমি হতভম্ব হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছি।
কিছুই বলতে পারি নাই তখন।কি করে বলবো? আমার বাবা চোখে অশ্রু টলমল করছে।
হয়তো মাকে খুব ভালোবাসে সেজন্য নিজে মেরে নিজে কাঁদছে!
.
আমার মা বেহুশ হয়ে গেছে ঠিকে তারপরেও মায়ের মুখে বিচিত্র হাসির আভাস।এ হাসি শুধু আমার জন্য যাতে করে আমি

কোনো দুঃখ না পাই।মায়ের মাথা বসে বসে পানি দিচ্ছি।গভীর রাতে মা চোখ খুললো।বাহিরে খুব ঝড়হাওয়া মনে হয় বৃষ্টি আসবে।

বৃষ্টি আসলে বা কি? আমার মায়ের চোখের পানি বৃষ্টির মতো টিপ টিপ করে অঝরে ঝরছে ।মায়ের মুখটা লাল হয়ে আছে।আমার

মা খুব সুন্দর।সুন্দর মুখে পাঁচটা আঙ্গুল এর দাগ বসে আছে।আমার মা শুধু আমার জন্য আজকে বাবার হাতে মার খেয়েছে।সন্ধ্যা

মায়ের কাছে খুব বায়না ধরেছি যাতে করে সাইমার কথা বাবাকে বলে।আজ সে কথা বলতে গিয়ে আমার মায়ের মুখে উপহার

হিসেবে পাঁচটা আঙ্গুল বসে আছে।অামার মা ফিসফিস করে আমাকে বলে-
.
_বাজান আমিতো বলেছি।তোর আব্বা রাজি না হলে কি করতাম।তোর আব্বা এ বিয়েতে রাজি হবে না।
_এই কথা বাদ দাও।তোমার কি কষ্ট হচ্ছে নাকি মা?
_না
.
আমার মা কখনো বলে না তার কোনো কষ্টের কথা।কি অদ্ভুত! এত কষ্ট কিভাবে সহ্য করে মায়েরা।আজ ২ বছর আমার মা তার

বাবার বাড়িতে বোনের বাড়িতে পর্যন্তও বেড়াতে যেতে পারে নাই।শুধু মাত্র আমার বাবার জন্য।

আমার বাবা মাকে যেতে দেয় না শুধু একটা কারণে।সেটা হচ্ছে- নানার বাড়ির সম্পত্তি জন্য।এ সম্পদ এর জন্য সবাই সবার

সাথে ঝগড়া।কেউ কারো সাথে যোগাযোগ নাই।

পুরুষরা সবাই ঝগড়া করলেও আমার মা,খালা মামীরা কেউ কারো সাথে কিন্তু ঝগড়া করে নাই।সাইমার সাথে আমার সম্পর্ক

অনেক

বছর ধরে।খুব ভালোবাসতো আমায়।খুব ভালোবাসতো আমার মাকে।সে ছোট কাল থেকে তাকে খুব পছন্দ করতাম।আমার

ভালো লাগার একটাই মানুষ সে হচ্ছে- সাইমা।পাগলী খুব ভালো একটা মেয়ে।সংসারটা খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে পারে।

আমি কখন অগোছালো ছিলাম না।গুছিয়ে দেওয়ার জন্য আমার মা ছিলেন।মা যখন অসুস্থ থাকতেন তখন আমার পাগলী সাইমা

ছিলেন।

আমার মায়ের একটু অসুখ শুনলে আমার খালা সাইমাকে সাথে করে নিয়ে আসতেন।

আমার খালার তিনজন মেয়ে, নাই কোনো ছেলে।সাইমা সবার ছোট,তার বড়বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে প্রায় দুইবছর আগে।খালা

সংসারের ঝামেলার কারণে সন্ধ্যা হলে চলে গেলেও রেখে যেতেন সাইমাকে।সারাদিন সাইমা কাজ করতো একটু ক্লান্ত হতো না।

বলতো না কখনো আমি আর পারবো না।সাইমাকে রান্না করার সময় খুব বিরক্ত করতাম আমি।খুব জ্বলাতাম।তারপরেও একটুও

রাগ করতো না।কারণ সে আমাকে খু্ব ভালোবাসে।সাইমা পারেও বটে কাজ করতে।

পড়ালেখার পাশাপাশি সংসারের সব কাজ শিখে নিয়েছে।আমার খালার খুব ইচ্ছা আমাদের সাথে সম্পর্কটা আরেকটু শক্ত

করার।আমার মা,খালা রাজি ছিলো।যদিও আমার বাবাও একটু একটু রাজি ছিলো।কিন্তু ঝগড়া হওয়ার পরে সবার সাথে সম্পর্ক

একদম ছিন্ন করে নেয়।
.
সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরেও আমার আর সাইমার সম্পর্ক ঠিক আগের মতো আছে।কথা হতো তার সাথে। মাঝে মাঝে দেখাও

হতো।

একদিন দেখা করতে গিয়ে সাইমার আরজু অাঙ্কেল আমাদের দেখে ফেলে।আরজু আঙ্কেল আমাকে কিছু না বলে সাইমাকে

ঠাস! করে একটা থাপ্পড় দেয়।সাইমা খুব কাঁদছে আর কাঁদাছে আমাকেও।সাইমার চোখের অশ্রু দেখলে কেমন জানি কষ্ট লাগে।

সেদিন এর পর থেকে সাইমার কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে তার অাঙ্কেল।কিছুদিন পরে শুনা যাচ্ছে তাকে নাকি বিয়ে দিয়ে

দিবে।এ কথা শুনে বুকের ভিতরে ধুক করে উঠলো।আমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে আমার মা।আমার মায়ের স্বপ্ন আর পূরণ

হলো না।স্বপ্ন কি করে পূরণ হবে? স্বপ্নের মানুষটাকে যে অন্য জনে নিয়ে যাচ্ছে।

আমার বাবাকে বললেও কোনো লাভ হবে না মনে হয়।আমার মা মনে খুব টেনশন করছে।

এতটাই টেনশন করছে হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে যায়।আমার মা অসুস্থ হওয়ার পরেরদিন আমার খালা আমাদের বাড়িতে আমার

মাকে দেখার জন্য চলে আসে।শত ঝগড়া হোক রক্তের সম্পর্কের মানুষরা কখনো যদি অসুস্থ হয় তাকে দেখার জন্য চলে আসে।

ভুলে যায় সব অভিমানের কথা!
.
আমার বাবা আমার খালাকে দেখে একটু থমকে যায়।চুপচাপ হয়ে বসে আছে।মেবি উনি খুব লজ্জা পেয়েছে।কারণ এত কিছু

হওয়ার পরেও নিজের বোনকে দেখার জন্য চলে আসছে।তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে এটাই হচ্ছে রক্তের টান।রক্তের

সম্পর্ক গুলো বড় অদ্ভুত হয়।এ সম্পর্ক রাগ অভিমান থাকবে তবে কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকবে না।আমার বাবা

আমাকে দোকানের চাবি দিয়ে সকালে কোথায় জানি গেলেন।কিন্তু আমাকে বলে যায় নাই।এক ঘন্টা পরে সাইমার ফোন।সাইমা

কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে-
.
_মা কোথায়?
_আছে বাসায়।
_আসবে না আজকে?
_হ্যাঁ সন্ধ্যা হওয়ার আগে চলে যাবে।
_জানো আমাদের ঘরে এখন কে বসে আছে?
_কে?
_আমার শশুর আব্বা।
_মানে! কোন শশুর আব্বা।
.
সাইমা চুপ থেকে কিছুক্ষণ পরে বলে-
_আপনার আব্বু আমাদের বাড়িতে আসছে।
এ বলে ফোনটা রেখে দেয়।

.
সাইমা শশুর আব্বা যখন বলছে তারমানে কোনো রহস্য আছে।অপেক্ষা আছি শুধু বাবার জন্য।বাবা যখন বাড়িতে আসে তখন

জানতে পারি-আমার সাথে সাইমার বিয়ের কথা বলতে সাইমার বাড়িতে গেছে।সেদিন আমার বাবাকে সাইমার আঙ্কেল খুব

অপমান করে।তারপরেও আমার বাবা কিছু বলে নাই।এতটা রাগী আমার বাবা ঠিক তেমন সরল মনের মানুষ ও বটে।আজ সে

রাগী বাবা সব রাগ অভিমান নিয়ে তাদের বাড়িতে গেছে ছেলের সম্পর্ক এর কথা বলতে।আমার বাবা নানার সম্পত্তির জন্য এতটা

লোভ ছিলো না।নানার কথা অনুযায়ী তার সব ছেলে মেয়েকে সম্পত্তি ভাগ করে দিবে।কিন্তু ভাগ করার আগে নানা মারা যায়।সব

মামারা এই সম্পত্তি ভাগ করতে রাজি হলেও কিন্তু ছোট মামার জন্য আজ এ ঝগড়া।তার জন্য একজন আরেকজনের সাথে

ঝগড়া লেগে আছে এখন পর্যন্ত ।সব আত্মীয়র ভিতরে এমন নর্দমা থাকে।যাদের জন্য সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।সাইমার আঙ্কেল

আমার বাবাকে খুব বাজে কথা বলে।কিন্তু সাইমার বাবা কিছুই বলে নাই।কারণ সাইমার বাবা জানে সাইমাকে অন্য যায়গা বিয়ে

দিলেও সাইমা নিজে নিজেকে শেষ করে দিবে।

সাইমার বাবা প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে কিন্তু ঠিকে রাজি হয়।কারণ আমার খালা এ বিয়েতে রাজি।তাছাড়া আমার বাবাও সব

অভিমান ভুলে তাদের বাড়িতে যায়।অনেক প্যারার পরে আমাদের বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়!
.
এই বিয়েতে সবচেয়ে বেশি খুশি আমার মা আর খালা।আমার মায়ের পছন্দের বউ হচ্ছে সাইমা।দিনতারিখ ঠিক করার পরে

আমাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।আমাদের বিয়েতে সব আত্মীয়র মিলন হলেও একজনের সাথে মিলন হয় নাই সে হচ্ছে- ছোট মামা।

একজনের জন্য কখনো বিয়ে থেমে থাকে না। ঠিক থেমে থাকে নাই সাইমার আর আমার বিয়ে।বাসররাতে সাইমা আমাকে

জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে।

পাগলী কখনো কল্পনা করে নাই আমার তার মিলন হবে।আমাদের মিলন হওয়াতে খুশিতে আজ তার চোখে অশ্রু।বিয়ের তিনদিন

পর থেকে আমাদের সংসারটা সে বুঝি নিয়েছে।

আজ অব্দি তার মুখে না শব্দটা শুনি না।

কখনো শুনি নাই আমি এ কাজ করতে পারবো না।আল্লাহ এমন মানুষের সাথে আমার মিলন দিয়েছে সে কখনো আমাকে ছেড়ে

যাবে না।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবে সংসার দেখাশুনা করবে।পাগলী এত কাজ করে একটু নিজেকে ক্লান্তভাবে না।দোকান থেকে দুপুরে

বাড়িতে গিয়ে দেখি সাইমার কপালে ঘাম।পাগলী হয়তো এ মাত্র রান্না শেষ করছে!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত