জীবনের বাস্তবতা

জীবনের বাস্তবতা

সেই ছোট বেলাথেকেই শুরো করি, প্রথম দিন যখন প্রথম শ্রেনীতে ভর্তী হই, নতুন খাতা বই স্কুল ড্রেস ও কিছু নতুন মুখ সব মিলিয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছিলাম,

এভাবে চলে কয়েক দিন কয়েক মাস ও বছর। ভালোই চলছিল,

কিন্ত ধিরে ধীরে সেই ভালো লাগা মুখ গুলো কেমন জানি দিনে দিনে অতিষ্ট হতে লাগে, সাথে স্কুল ড্রেস বই খাতা স্যারদেরও।

এই ভাবে চলতে থাকায় একসময় স্কুল ছেড়ে দেই।

কিন্তু সেই স্কুল, স্কুল ড্রেস, হুমায়ুন স্যার, সেই চেনা মুখ গুলো আজও আমার চোখে ভেসে উঠে,

যদিও সময়ের পরিবর্তনে আজ কে কোথায় আছে তা অজানাই রয়ে রয়ে গিয়েছে,

তাও মনের সৃতিচরে বিন্দু বিন্দু বালুকণার মতো তাদের ঠুকরো সৃতি গুলো বিন্দু বিন্দু হয়ে এক বিশাল সৃতিচর হয়ে রয়ে আছে।

কালের বিবর্তনে হয়তো তারা সেই পনেরো বছর আগের পুরাতন দিনগুলার কথা একবারের জন্যও মনে করে না ,

তার সাথে ভুলে গেছে পনেরো বছর আগের সেই আমায়। এটাই হয়তো নিয়ম!

জীবনে অনেক মানুষ পেয়েছিলাম যাদের ভালোবাসায় ক্ষণিকের সাড়া দিয়েছিলাম, প্রয়জনে ও অপ্রয়জনে তাদের দ্বারে বার বার ফিরেছি,

কিন্তু আজ একই আকাশের নিচে থেকে ও আমি দূর বহুদূরে, হয়তো সেই মানুষগুলোর মধ্যে কেউই আমায় মনে রাখেনি, সবাই যার যার মতো জীবন গোছাচ্ছে।

শুধো সময় নামক অদৃশ্য গাড়িটাই ছূটে চলছে আমাদের মতো গন্তব্যহীন যাত্রিদের নিয়ে। হয়তো তারা এক একজন দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ষ্টেশনে নেমে পড়বে,

পথের শেষে শুধো গাড়িটাই জন শূন্য হয়ে পড়বে, হয়তো এটাই সময়ের বিধান।

সেটাকে কৈশর বলতে পাড়ি যখন, সি ও সি খেলতাম, আমরা কয়েকটা বন্ধু মিলে একটা ক্লেন তৈরী করি,

সেখানে আমি ছিলাম লিডার,প্রতিদিন রাত এগারোটা পড়ে সবাই সেখানে একটিব থাকতেই হবে,

সেখানে চ্যাটিং এ সবাই সবার খুজ খবর নিতো, খেলা সম্পর্কে ও আলোচনা হতো, বিদেশি ও বিভিন্ন বিভাগের মেম্বার ছিলো আমাদের এখানে,

যাদের সাথে দেখা না হওয়া সত্ত্বেও তাদের সাথে অনেক ভালো বন্ধুত্ব ঘড়ে উঠেছিলো ,

দুই বছর পড় যখন আমি প্রবাসে চলে যাই সময়ের অভাবে খেলায় আসতে পাড়িনা, ধিরে ধিরে সবাই ক্লেন থেকে চলে যায়, এবং ক্লেন তার প্রাণ হাঁড়াতে থাকে,

একসময় সেই বন্ধু গুলা ও খেলা ছেড়ে দেয়, বাহিরের বিভাগের মেম্বাররাও অন্য ক্লেনে চলে যায়, একসময় শুধো আমি একাই পড়ে থাকি,,

আজও সেই অ্যাপটি সৃতি হিসেবেই আছে মোবাইলের অন্য অ্যাপ এর সাথে, হয়তো সেই মেম্বার গুলা নতুন লিডার পেয়ে ভুলে গিয়েছে আমায়,

ভুলে গেছে সেই ফ্রেন্ডস ফর ইবার ক্লেনের কথা, হয়তো তারা আর কোনো দিনও সেই ক্লেনে ফিরবেনা, এটাই হয়তো নিয়ম

নতুন পথে উদ্দশ্যহীন পায়চারী করে চলছি আমিও, কাজের ফাঁকেফাঁকে আসতে শুরো করি এই ভার্চুয়াল জীবনে। অনেক বন্ধুই পেয়ে যাই।

ফেইসবুকে নিউজ ফিডে কারো পোষ্ট পাওয়া মাত্রই লাইক + কমেন্ট করতাম, সময় পেলেই রেডিও মুন্না পেইজে গল্প পড়ি,

সেই গল্পে লিখকদের ফূঁটে উঠা জ্ঞ্যান গুলো চুরি করার চেষ্টা করতাম,গল্প পড়ে অনেকবারই মনের আকাশে বৃষ্টি হতো আবার বৃষ্টি শেষে রৌদ্রও উকি দিতো,

আর গ্রুপে যখন আড্ডা পোষ্ট চলতো তখন সেই আড্ডা পোষ্ট গুলোতে কমেন্টের ঝুড়ি আমি একাই ভড়িয়ে দিতে চাইতাম,তাতে কেউ রিপ্লে দিক বা না দিক।

হয়তো এভাবেই চলবে কয়েক মাস কয়েক বছর।নতূন পথে নতুন কোনো জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়বে আমার জীবনের সাথে।

হয়তো সে থেকে আরেকটি নতুন কোন মুখ দেখতে পাবে ধরণী। ক্রমশই দূরত্ব বেড়ে যাবে আমার আর ফেইসবুকের মধ্যে।

হয়তো আর নিউজ ফিডে আমার কোন পোষ্ট যাবেনা। ফ্রেন্ড লিস্টের অনেকেই হয়তো অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভুলে যাবে আমায়।

ইনবক্সটাও বিষণ শূন্যতা অনুভব করবে!

গ্রুপের সেই বন্ধুরাও আড্ডা পোষ্টে নতুন কাউকে পেয়ে আড্ডায় মেতে উঠবে, ফেইসবুক ও গ্রুপে নতুনরা ভিড় জমাবে,

তাদের মধ্যে সবাই হয়তো জানবেইনা সাব্বির নামের নৈষ্য প্রহরী কেউ ছিলো বলে এই পথে,

ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেই থাকবে আবার অনেকেই সময়ের ব্যবধানে সরে দাঁড়াবে এ পথ থেকে। শুধো সাব্বির নামের আইডিটাই পড়ে থাকবে পুরাতনদের লিস্টে।

আর প্রোফাইলে দেয়া সেই পথ শিশুর ছবিটাই আমার অস্তিত্বের জানান দিবে ।

হয়তো আর এই আনাড়ি হাতের লিখাগুলাও পেইজে কেউ পাবেনা। হয়তো আর কাউকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো হবেনা ,

কারো রিকুয়েস্ট ও কনফার্ম করা হবেনা, ততো দিনে হয়তো সবাই বুঝে যাবে,

এই আইডির মালিকটা হয়তো আর পৃথিবীতে নেই………….,

এভাবেইতো সবাই জীবন থেকে হাঁড়িয়ে যায়।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত