দায়ূদ সারাদিন সেই পাহাড়ের উপর তার বাবার ভেড়ার পাল দেখাশুনা করতেন। মাঝে মধ্যে তাদের কোন কোনটা পিছনে পড়ে থাকলে দায়ূদ সেটাকে খুঁজে নিয়ে আসতেন। কখনও কখনও ক্ষুধার্ত শিয়াল, ভল্লুক বা সিংহ পাল থেকে ভেড়া থাবা দিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করত। তখন দায়ূদ সেই বন্য জানোয়ারদের সঙ্গে যুদ্ধ করতেন, যেন সেগুলোর হাত থেকে তার বাবার ভেড়ার পাল রক্ষা পায়।
আবার অনেক সময় যখন বেশী কাজ থাকত না তখন শুধু ভেড়ার পালকে এক জায়গা থেকে অন্য ভাল জায়গায়, অর্থাৎ যেখানে সবুজ ও কচি ঘাস পাওয়া যায় সেখানে নিয়ে যেতেন।
কিন্তু এতে দায়ূদ নিজেকে একাকী মনে করতেন না। সময় পেলেই তিনি বীণা বাজাতেন। তিনি যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তুক্ষণ ফিংগা ছোড়া শিখতেন। তিনি বীণা বাজাতেন আর প্রায়ই তার নিজের রচনা করা গান গাইতেন। তিনি একজন শিল্পী হিসেবে এরইমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন! লোকেরা ঐ পথ দিয়ে যাবার সময় থেমে তার বাজনা শুনত। তারা বলত, সত্যিই ছেলেটি খুব চমৎকার বাজায়!
ইতিমধ্যে রাজপ্রাসাদে কিছু সমস্যা দেখা দিল। রাজা শৌল খুবই অস্থির হয়ে উঠলেন। শমূয়েল আর তার কাছে আসেন না। ঈশ্বরও তার কাছ থেকে অনেক দূরে। সবকিছুই যেন ভুলভাবে চলছিল। শৌল প্রায় পাগলের মত করেন। সবাই ভাবছে তার জন্য কিছু একটা করা দরকার।
একদিন তার একজন কর্মচারী বলল, ‘রাজার মন শান্ত করতে ভাল একজন শিল্পী দরকার, যাতে গান বাজনা শুনে তিনি সমস্যা ভুলে থাকতে পারেন।’
আরেকজন বলল, ‘আমি খুব ভাল একজন শিল্পীকে চিনি।’
আর এভাবেই দায়ূদ প্রথমবারের মত রাজপ্রাসাদে আসবার সুযোগ পান। তার বাজনার সুর অন্য যে কোন ওষুধের চেয়ে ভাল কাজ করতে লাগল। এতে শৌলের অস্থির মন যেন একটু বিশ্রাম পেল। খুব তাড়াতাড়িই তিনি ভাল হয়ে গেলেন। আর দায়ূদকে আবার তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হল।
খবর এল যে, ইস্রায়েলীয়দের পুরানো শত্রু পলেষ্টীয়রা উত্তর দিকে এগিয়ে আসছে। এলা উপত্যকায় তারা তাঁবু ফেলেছে। সেই উপত্যকার একদিকে পলেষ্টীয় সৈন্য আর অন্যদিকে ইস্রায়েলীয় সৈন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের মধ্য দিয়ে একটি ছোট্ট খাল বয়ে গেছে।
পলেষ্টীয়দের একটি গোপন অস্ত্র ছিল। তার নাম গলিয়াৎ- একটি দৈত্যের মত মানুষ, দশ ফুট লম্বা। তার হাতে যে বর্শা ছিল তা মানুষের বাহুর মতই মোটা। দিনের পর দিন গলিয়াৎ অহংকারের সাথে সেখান দিয়ে আসে-যায় আর টিট্কারী দিয়ে বলে, ‘ইস্রায়েলের মধ্যে বীর কে? যদি তার সাহস থাকে তো বের হয়ে এসে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করুক!’
কিন্তু তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে কারো সাহস নেই। তাকে সবাই ভীষন ভয় পায়। এরইমধ্যে দায়ূদের তিন ভাই শৌলের সৈন্যদলে যোগ দিয়েছে। দায়ূদের বাবা তাকে কিছু খাবার দিয়ে পাঠিয়েছেন তার ছেলেরা কেমন আছে
তা জেনে আসতে। দায়ূদ যখন সেখানে এলেন ঠিক সেই সময়ে গলিয়াৎ হুংকার ছেড়ে তাদের ভয় দেখাতে এল। দায়ূদ সেই কথা শুনতে পেলেন।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে এই লোক যে, জীবন্ত সদাপ্রভুর সৈন্যদের টিট্কারী দেয়? আমাকে তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে দিন।’
সেখানকার সৈন্যরা তার কথা শুনে হাসতে লাগল। কিন্তু শৌলের কানে যখন এ কথা গেল তখন তিনি দায়ূদকে ডেকে পাঠালেন।
রাজা বললেন, ‘তুমি তো ছেলে মানুষ মাত্র! তুমি কিভাবে এই বিশাল মানুষটির সঙ্গে যুদ্ধ করবে?’
দায়ূদ রাজা শৌলকে বললেন, ‘সিংহ ও ভল্লুক যখন আমার ভেড়ার পাল আক্রমণ করেছে তখন এই দু’টি জন্তুই আমি নিজের হাতে মেরেছি। তখন ঈশ্বর আমার সঙ্গে ছিলেন। এখনও তিনি আমার সঙ্গে আছেন।’
রাজা বললেন, ‘খুব ভাল। তবে যাও, ঈশ্বর তোমার সঙ্গে থাকুন।’
তিনি তার তলোয়ার ও তার যুদ্ধের পোশাক দায়ূদকে দিলেন। কিন্তু দায়ূদ তা গায়ে দিয়ে হাঁটতেই পারছিলেন না।
দায়ূদ বললেন, ‘আমি এসব পরে যুদ্ধ করতে পারব না।’ তিনি তা খুলে ফেললেন। তিনি রাখালের লাঠি ও তার ফিংগাটা হাতে নিলেন। তিনি সেই পাহাড়ী খাল থেকে পাঁচটি মসৃণ পাথর তুলে নিয়ে থলিতে রাখলেন। তারপর তিনি গলিয়াতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলেন।
দায়ূদকে আসতে দেখে গলিয়াতের হাসি পেল। সে দায়ূদকে খুবই তুচ্ছ করল।
‘এই কি তোদের বীর?’ এই বলে সে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের টিট্কারী দিতে লাগল। কিন্তু দায়ূদ বললেন, ‘আজই ঈশ্বর তোকে আমার হাতে তুলে দেবেন। তখন সবাই জানতে পারবে যে, ইস্রায়েলে ঈশ্বর আছেন।’
দায়ূদ তার থলি থেকে একটি পাথর নিয়ে তার ফিংগায় ঢুকিয়ে গলিয়াতের দিকে ছুড়ে মারলেন। পাথরটি চোখের পলকে ছুটে গিয়ে গলিয়াতের কপালে এত জোরে আঘাত করল যে, তার কপালে সেটা একেবারে ঢুকে গেল। তখনই সে মাটিতে পড়ে গেল।