আমি নদীয়া।একজন গৃহবধু।বিয়ের আগে যার সাথে আমার প্রেম ছিলো আমি ভাবতাম সে বুঝি আমার জন্য জীবনটাই দিতে পারে।আমাদের প্রেম হয় কলেজে থাকাকালীন।
আমার স্পষ্ট মনে আছে সেদিন ছিলো বৃষ্টিমুখর দিন। ও আর আমি রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ বৃষ্টির আধিক্য টের পাওয়ায় দুজনে একটা পোড়োবাড়িতে উঠে পাড়ি।জীবনটা তখন অনেক স্বপ্নময় লাগছিলো।ঠিক যেন সিনেমার মত।কিন্তু হায় সিনেমা আর বাস্তব কখনই এক হয়না।আমি আমার প্রেমিকের দিকে পেছন ফিরে ওরনাটা নিংড়ে আমার চুল ও শরীরটা মুছে নেই।আমার প্রেমিক হয়ত তখন লোভাতুর দৃষ্টি দিয়েই আমায় দেখছিলো।হঠাতই আমি ওর স্পর্শ অনুভব করি। ঘটে যায় আমাদের মধ্যে অস্বাভাবিক সম্পর্ক।
এরপর থেকেই দিনের পর দিন ও আমায় ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করতযে ও নাকি আমাদের প্রথম দিনের ঘটনাটা ভিডিও করে রেখেছে ফোনে।আমি রাজি না হলে ও ঐ ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখাতো।না এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না।আমি খুব আপসেট হয়ে পড়ি।ওর হাতে পায়ে ধরেও রেহাই পাইনি।প্রতিদিন আমায় ওর বাজে প্রস্তাব মানতেই হত।
একদিন আমার শরীরের ভিতর একটা নতুন প্রাণের অস্তিত্ব আবিষ্কার করি।ওকে জানাতেই আমায় চড় থাপ্পড় ও কিল ঘুষি মেরে চলে যায়।চলে যায় বল্লে ভুল হবে। পালিয়ে যায়। কোথায় তা জানিনা।এদিকে আমার মাত্রারিক্ত বমি দেখে আমার মায়ের সন্দেহ হয়।তিনি আমায় নানাভাবে জেরা করতে থাকেন।অবশেষে আমি সব স্বীকার করি।আমার মা আমার চুলের মুঠি ধরে অনেক মারেন।বাবা এসে আমায় চলাকাঠ দিয়ে অনেক বেশী মারতে থাকেন ও সন্তানের পিতা কে তা জানতে চান।আমি অরিন্দমের নাম বলতেই বাবা বসে পড়েন।কারন বাবা ভালো করেই জানতেন অরিন্দম হাড়ে বজ্জাত ও নেশাখোর।বাবা আমায় বুকে জড়িয়ে অনেক কাঁদলেন।বড়ভাইটা শুধু আমায় মারেননি। তিনি বলেনযে “আমার ব্যর্থতা তোকে বিশ্বাস করে তোর গতিবিধির দিকে আমি নজর রাখতে পারিনি।”বলেই তিনি অনেক কেঁদেছিলেন। আমি আর কোন কথা বলতে পারিনি।চুপচাপ বসেছিলাম।না,আমার একটুও কান্না পাচ্ছিলোনা।বেশ সাবলীল ছিলাম আমি।সেদিনটা শেষ হয়ে যথারীতি রাত নেমে এলো।আমি ছাগলের দড়ি নিয়ে শিরিষ গাছে উঠে গেলাম।দিলাম ফাঁস।কপাল খারাপ হলে যা হয়।মরলামনা কারন ডালটা নরম থাকায় সেটি ভেঙে আমি নীচে পড়ে যাই।বাড়ি কেউ ছিলোনা কারন পাড়ার মানুষ নিয়ে আমার বাবা ও দাদাভাই অরিন্দম দের বাড়ি গেছে ঐ দুর গায়ে।শব্দ শুনে আমার মা এগিয়ে এসে দ্যাখেন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছি।পাশের বাড়ির জেঠিমা, কাকিমা, বৌদি সবাই এসে আমায় ও অবস্থায় দ্যাখেন।জ্ঞান ফিরে দেখি ব্লিডিং হচ্ছে খুব। আঘাত পেয়ে আমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।হাসপাতালে থাকি ১৫ দিন।অন্যদিকে বাবা দাদা, ও পাড়ার কাকা জ্যাঠা ও দাদারা ফিরে আসেন। অনেক অপমানিত হন তারা। তাছাড়া অরিন্দমের কোন খোঁজইতো মিলছেনা।
হাসপাতাল থেকে ফিরে পাড়ায় মুখ দেখানো দায় হলো।অবশেষে পশ্চিম পাড়ার নলিনী বুড়োর সাথে আমার বিয়ে হলো।
বুড়োর তিন কুলে কেউ ছিলোনা।বুড়ো আমায় পেয়ে খুব খুশি।যতই খুশি হোকনা কেন? দিনশেষে একবার আমায় খোটা দিতে ছাড়তেননা।
আজ দুবছর হলো বুড়োর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার এক বছরের একটা ছেলেও আছে।
এতদিন বাদে আজ আবার অরিন্দমের আগমন ঘটে।
সে আবারো আমার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়তে চাইছে। আমি রাজি হইনি।তাই সে আমার আর তার ভিডিও পাবলিক করে দেয় । সবার মুঠোফোনে আমার নগ্ন শরীর ঘুরে ফিরছে।বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এবার আর মরতে পারলামনা। আমার স্বামীকে সব খুলে বল্লাম।ও আমায় চিন্তা করতে মানা করে সোজা থানায় গেল।দিলো ঠুকে অরিন্দমের নামে মামলা।
প্রতারনা ও ব্লাকমেইল এর দায় নিয়ে আবারও দেশ ছাড়লো অরিন্দম।
এভাবে কেটে গেল পাঁচটি বছর।হঠাত স্ট্রোকে আমার স্বামী মারা যান।আমি আর আমার সন্তান একা হয়ে পড়ি।সুযোগমত আমার পাড়ার যুবকরা আমায় ভোগের প্রস্তাব দিয়েই চলেছে।আমি রাজি হইনি কেন হবো বলতে পারেন?
আমার সকল অপরাধ ক্ষমা করে যে লোকটা বিয়ে করেছিলো তাকে আমি অপমান করতে পারবনা।আমার আজীবন সম্মানের দায়িত্ব যে মানুষটা নিয়েছিলো তাকে আমি কেমন করে ঠকাবো??
হোক সে বুড়ো,তো কি হয়েছে??
যেদিন আমি বিপদে ছিলাম সেদিনতো কোন যু্বক এগিয়ে আসেনি!সবাই শুধু কটাক্ষ আর কটুক্তি করেছে।
আজ ওদের লজ্জাও লাগেনা আমার দিকে তাকাতে।ছি!
যে ক’টাদিন বাঁচবো আমি আমার স্বামীর দেয়া উপহার, আমার সন্তান নিয়ে বাঁচবো।
ওকে শিখাবো কি করে নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে হয়।সকল কিশোরী মেয়েদের সচেতন করে যাব যাতে আমার মত ফাঁদে কেউ না পড়ে।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প