সৎ মা

সৎ মা

-“দেখো তোমার মা যদি আর এমন করে তাহলে আমি আর এখানে থাকবো না”।(তিথি)
-“কেনো?কি হয়েছে”?(তুষার)
-“মানুষের ভুল হতেই পারে তাই বলে,তাই বলে সব সময় তার ভুল ধরতে হবে এমন তো না।তুমি তোমার মাকে বলে দিও কেমন আর যেন আমার ভুল না ধরে।সারা দিন আমাকে অনেক জ্বালায়। এখন এটা লাগবে,কিছুক্ষন পর অন্য একটা তাকে এনে দেও।বেশি করলে তাকে অন্য কোথায় পাঠিয়ে দিবো,এখানে রাখবো না”।(তিথি)
-“আরেক বার যদি আমার মাকে নিয়ে এই সব বলো তাহলে তোমাকে একটা থাপ্পর দিবো।তোমার যদি এখানে থাকতে ভালো না লাগে তাহলে চলে যেতে পারো।কিন্তু আমার মাকে নিয়ে কিছু বলবা না”।(তুষার)
-“তুমিও আমাকে বুঝলে না।আমি তো তার সব কাজ করে দেই,তাকে কোন কাজ করতে দেই না। তাও সে বার বার আমার ভুল ধরে”।(তিথি)
-“আচ্ছা ভুল করলে কি ভুল ধরা যাবে না এমন কোন কথা আছে।মা তোমার ভুল ধরেছে তোমার ভালোর জন্য।যেই ভুল তুমি এখন করছো সেই ভুল সামনে যেন না করো তাই”।(তুষার)
-“তুমি তার হয়ে এতো কথা কেন বলছো সে তো তোমার সৎ মা।তোমার তো আর আপন মা না”।(তিথি)
-“দেখো তোমাকে কিন্তু আগেই না করে দিয়েছি আমাকে মাকে নিয়ে কিছু বলবে না।তুমি শুনবা আমার মায়ের কথা,যাকে তুমি বার বার সৎ মা বলছো,শুনো তাহলে আমার মায়ের কথা”।( তুষার)
“আমার বয়স যখন ২ মাস তখন হঠাৎ করে আমার মা মার যায়।সবাই অনেক বলার পর বাবা বিয়ে করতে রাজি হয়,আমার কথা ভেবে। কারন বাবা ব্যবসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়।আর আমার দেখা শুনার জন্য কেউ কে তো লাগবে”।
“বাবা নাকি বিয়ের পর মাকে সবার সামনে একটা কথাই বলেছিলো আমাকে যেন মায়ের নিজের ছেলে মনে করে।এই কথা আমি আমার চাচার কাছ থেকে জানতে পারি।আর মা সে  তার কথা রেখেছে।কখনো আমাকে বুঝতেই দেয়নি আমি যে তার ছেলে না।এমন কি জানো মা অপারেশন করিয়েছে আর যেন মা না হতে পারে।বাবা সহ সবাই মাকে তখন না করেছিলো। কিন্তু মা কারো কথা শুনে নাই।সবাই মায়ের কাছে পরাজিত হয়ে রাজি হয়েছিলো অপারেশন করাতে। মা আমাকে সব সময় তার কাছেই রাখতো।কারন মা চায় না কোন কারনে আমি যেন তার থেকে দূরে থাকি।তখন যদি আমার কোন ভাই-বোন থাকতো তখন তো মাকে আমার ছোট্ট ভাই-বোন কে সময় দিতে হতো।আর মা তা চায়নি কখনো।আমি ছিলাম মায়ের সব কিছু,এখনো মা আমাকে তার থেকে দূরে যেতে দেয় না”।
“আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন আমার বাবা মারা যায়।তখন মা আমাকে জড়িয়ে কি কান্না না করেছিলো।আমি শুধু তাকিয়ে দেখেছিলাম কিছুই বলতে পারিনি।বাবা মারা যাবার পর থেকে মা আমাকে কখনো একা কোথায়ও যেতে দেয়নি, সব সময় আমার সাথে থাকতো।কারন কি জানো? কারন হচ্ছে মায়ের বেঁচে থাকার এক মাত্র সম্বল আমি।আমার কিছু হলে মা তখন কি নিয়ে বেঁচে থাকবে”।
“আরেক দিনের কথা বলি তখন আমার বয়স মনে হয় ৬ বছর হবে এমন কিছু।আমাকে কে যেন বলেছিলো মা নাকি আমার আপন মা না, আমার সৎ মা।আমার মা নাকি মারা গেছে। আমি তখন তো কিছু বুঝতাম না।বাসায় এসে মাকে বললাম মা তুমি না কি আমার সৎ মা, আমার আপন মা নাকি মারা গেছে।আচ্ছা মা সৎ মা মানে কি?মা তখন কি বলেছিলো জানো?বলেছিলো সেই আমার মা।আর সৎ মানে হচ্ছে ভালো,যেমন আমি মায়ের সব কথা শুনি তার জন্য আমি ভালো।ঠিক তেমনি সৎ মা হচ্ছে ভালো মা।সেই দিন মা আমাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরছিলো”।
“মা কখনো আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি।কারন সে একজন মা,আমার মা।আর তুমি সেই মাকে আমার থেকে আলাদা করতে চাচ্ছো।তুমি জানো মার অনেক পছন্দ হয়েছিলো তোমাকে। আমাকে বাসায় এসে বলে বিয়ে করলে তোমাকে বিয়ে করতে হবে।আমি মায়ের কথা মতো রাজি হয়ে যাই।আর তুমি তো জানো বিয়ের আগে আমি তোমাকে দেখিনি।দুই এক বার ফোনে কথা হয়েছে শুধু।মায়ের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে তাই তোমাকে না দেখেই আমি রাজি হয়েছিলাম।তুমি জানো মা তোমার কথা আমাকে সব সময় বলতো,তুমি অনেক ভালো আরও অনেক কিছু।আর সেই মাকে তুমি দেখতে পারছো না।আমার মা কি তোমাকে কোন অত্যাচার করেছে,করেনি আর কখনো করবে না।আমার মা সেই রকম মা না”।
“তুমি এখানে না থাকতে চাইলে তোমার বাবার বাসায় চলে যেতে পারো।তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই।যে আমার মাকে সহ্য করতে পারে না তাকে আমার লাগবে না তুমি সব কাপড় গুছিয়ে রেখো কাল আমি তোমাকে দিয়ে আসবো”।
“আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। কারন আর কিছু বলার নেই আমার।আমার কাছে সব কিছুর আগে আমার মা।আমি জানি আমার মা আমার জন্য কি করেছে।শুধু আমার মা না সবার মা তার সন্তান কে অনেক কষ্ট করেই বড় করে।আর সেই মাকে নিয়ে যখন কেউ কথা বলে তখন আমার কোন কিছুতেই তাকে আমি প্রয়োজন মনে করি না”।
“মায়ের রুমে দিকে গেলাম,একি মা কাঁদছে কেনো। তার মানে কি মা সব কথা শুনেছে”।
-“মা তুমি কাঁদছো কেনো,কি হয়েছে”?(তুষার)
-“না কিছু না এমনিতে।কিছু খেয়েছিস,একটু আগেই তো অফিস থেকে আসলি।আচ্ছা চল আমি খাবার দিচ্ছি”।(মা)
-“না মা,আগে বলো কি হয়েছে।আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারবো না,বলো আমাকে”।(তুষার)
-“বাবা আমি এখান থেকে চলে যাই,তোরা সুখে থাকলে আমিও সুখে থাকবো।আমি চাই না আমার জন্য তোদের কোন সমস্যা হোক”।(মা)
-“তুমি এই সব কি বলছো মা।আমার কিছু লাগবে না শুধু তোমাকে লাগবে আমার।তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না।তোমার  হাতের রান্না ছাড়া আমি খেতে পারি না।আর তুমিও তো আমাকে ছাড়া থাকতে পারো না। তাহলে কি ভাবে বলো তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।আর আমি থাকতে তুমি যাবে কি ভাবে।আর কখনো এই কথা বলবে না”।(তুষার)
-“আমি এখানে থাকলে তোরা ভালো থাকবি না। আমি তোর মামার বাসায় থাকবো সমস্যা নেই”।(মা)
-“আমি তোমাকে যেতে দিবো না।আর একটা বার যদি বলছোএই কথা তাহলে আমি আমার জীবন দিয়ে দিবো।যদি যেতে হয় তিথি যাবে তুমি না। তোমার পছন্দের মূল্য তিথি এই ভাবে দিলো। আমি কাল দিয়ে আসবো”।(তুষার)
-“দেখ বাবা এমন করিস না অনেক ভালো একটা মেয়ে।এই শুন তুষার এই তুষার আমার কথা শুনে যা”।(মা)
“মাকে আর কিছু বলতে না চলে আসলাম। নিজের উপর অনেক ঘৃনা হচ্ছে।আমার কারনে আজ মা কাঁদছে।না এখনি তিথি কে দিয়ে আসবো আর এখনে থাকতে দেওয়া যাবে না”।
“রুমে যেতেই দেখি তিথি কাদছে।তিথি কাঁদবে কেনো।তিথির তো খুশি হবার কথা।মা আমাদের কথা ভেবে চলে যেতে চাচ্ছে”।
-“আমি তোমার আর মায়ের সব কথা শুনেছি”।(তিথি)
-“তোমার লজ্জা করে না ঐই মুখে আবার মা বলতে।তোমারা আসলে সব পারো।আজকে তোমার হলে তো কিছুতেই সহ্য করতে পারতে না এসব।আর আমার মায়ের সময় সব উল্টা”।(তুষার)
-“আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মাফ করে দেও। আম আর কখনো এমন করবো।আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি”।(তিথি)
-“মায়ের পছদের মূল্য তো খুব ভালো করে দিয়েছো। আমার কাছে মাফ চাবার কিছুই নেই।আমি ক্ষমা করার কেউ না।মায়ের কাছে ক্ষ্মা চাও।মা যদি ক্ষমা করে তাহলে আমিও ক্ষমা করে দিবো”।(তুষার)
“তারপর তিথি মায়ের কাছে চলে যায় ক্ষমা চাবার জন্য।আমি জানি মা তিথি কে ক্ষমা করে দিবে। আমার মায়ের মন অনেক ভালো।আমার মনে পরে না যে কখনো কেউ মায়ের কাছে সাহায্যের জন্য এসেছে আর মা তাকে সাহায্য করেনি”।
-“মা আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি অনেক বড় ভুল করেছি।আমি তখন বুঝতে পারিনি,আপনি আমার ভালোর জন্য বলেছেন।আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি না বুঝে,আমাকে ক্ষমা করে দেন”।(তিথি)
-“আরে কি করছো?আমি কোন কষ্ট পাইনি।ভুল মানুষের হয়।তুমি ভুল করেছো আর সেই ভুল যে ধরতে পেরেছো সেটাই অনেক কিছু”।(মা)
-“আগে বলেন আমাকে ক্ষমা করেছেন”।(তিথি)
-“তুমি তো আমার মেয়ে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। আমি আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাকে। আজকে যেই ভুল তুমি করেছো সেই ভুল হয়
তো আমিও করতে পারতাম।এখন আর কেঁদো  না”।(মা)
“তারপর দুজন দুজন কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।এই কান্না সুখের কান্না কষ্টের না”।
“অনেক কে মনে করে সৎ মা মানেই খারাপ।কিন্তু
সব সৎ মা খারাপ না।আর মা কি কখনো খারাপ হয়,কখনো খারাপ হতে পারে।কারন যেই মা এতো কষ্ট করে তার সন্তান কে জন্ম দেয় সে কি ভাবে খারাপ হতে পারে।আসল সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের।আমরা খারাপ ভাবি তাই মনে হয় যে খারাপ।এই কথাটা মাথা থেকে সরাতে পারলে আমাদের ভালো”।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত