আমার সংসার

আমার সংসার

মাত্র ২য় বর্ষের রেজাল্ট দিয়েছে।এর মধ্যে বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ভাল সংসার, ভাল বর ভাল চাকুরী দেখে আমার বাবা,মা এ পাত্র হাতছাড়া করতে পারলেন না। আমার ইচ্ছে ছিল অন্তত অনার্স কমপ্লিট করবো। কিন্তু তার আগেই বিয়ে হয়ে গেল আমার।
তবে আমার বাবা পাত্র পক্ষকে বলে দিয়েছিলেন আমাকে যেন পড়াশোনা টা ছালিয়ে যেতে দেয়।
বিয়ের দিন আমার বাবা,মা বলে দিয়েছেন দেখ মা লিসা আজ থেকে তোর শশুড় বাড়িই তোর আপন ঘর।সবার সাথে একটু মানিয়ে চলতে চেষ্টা করিস।

সেই থেকে আজ অব্ধি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। আমার স্বামী রাহাত। দেখতে যেমন মানুষটা সুন্দর তেমনি ভাল।তবে বাবা,মার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে না। বিয়ের দিন যখন আমি রাহাতকে বলি আমি পড়াশোনা করতে চাই। সে বললো আচ্ছা দেখা যাক মা কি বলে?
বিয়ের পরের দিন থেকে রান্না ঘরে ঢুকেছি সেই যে আজ অব্ধি রান্নাঘরে আমার শেষ ঠাই হয়েছে।
সকালবেলা উঠে বাসার সবার জন্য,রুটি তৈরি করা, চা,একেক জনের জন্য একেক নাস্তা। নিজের বাড়িতে শখ করে রান্না করতাম মাঝেমধ্যে। আর এখানে এসে পুরো রান্নাঘর সামলাতে হচ্ছে আমাকে।

বাসার সব কাজ সেরে আমাকে একা,একা খেতে হতো, কখনো সকালের নাস্তা দুপুরে আর দুপুরের খাবার রাতে। প্রথম, প্রথম রাহাত জিজ্ঞেস করতো তুমি কি খেয়েছো? কিন্তু এখন আর তার খোঁজ নেবার টাইম নেই,ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। মা যখন জিজ্ঞেস করতো কিরে খাইছত?
এক চিলতে হাঁসি দিয়ে বলতাম খেয়েছি। অথচ আমি এখনো খাইনি?
সারাদিনের কাজকর্ম করে নিজের ক্ষুধা টা মিটে যেতো।
তারমধ্য কোথাও চুন থেকে পান ঘসলে শাশুড়ি,ননদের কটু কথা শুনতে হতো। বাবা,মা কোন কাজকর্ম শিখায়নি, এতো প্যাড়া মেয়ে,তাড়াতাড়ি হাত চালাতে পারো না?

আমি যখন রাহাতকে জিজ্ঞেস করি,.? তাহলে কি আমার পড়াশোনা হবে না?
রাহাত বলে মা বলে দিয়েছে বিয়ে হয়ে গেছে আর পড়াশোনা করে কি হবে?
তারপর থেকে আর ওকে বলিনি। আমিও বুঝে
গেছে আমার আর পড়াশোনা হবে না। সারাক্ষণ
সবার কাজকর্ম করতে হতো। ভাবি আমার ড্রেসটা
একটু ধোয়ে দিও,ইস্ত্রি করে দিও ইত্যাদি। অথচ এই
ছোট্ট ছোট্ট কাজগুলো নিজেরা চেষ্টা
করলে পারতো। কিন্তু আমি তাদের আবদার গুলো
মিটানোর চেষ্টা করতাম।
আমার বিয়ের ৪ মাস পর আমি প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ি।
তারপর থেকে আমার শশুড়বাড়ির সবাই বলে,আর
পড়াশোনা করে কি করবা?. দুদিন পরে বাচ্চা কাচ্চার মা
হবা। এবার বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করো?
এর কিছুদিন পর যখন আমি আমার বাবার বাড়িতে যাবো
তখন আমার শাশুড়ি বলেন।কয়েকদিন পর যেও আমার
মেয়ের পরীক্ষা সামনে তুমি চলে গেলে
কাজকর্ম কে করবে?
আমি খুবই আশ্চর্য হলাম আমার শাশুড়ির কথা শুনে,এ
অবস্থায় আমার পড়াশোনা করা যাবে না।সেটা তারা খুব
ইজি বললো।অথচ আমার এ অবস্থায় ভারি কাজকর্ম
করা যাবে না।সেটা তারা বুঝে না?
আমার প্রেগনেন্সির পর থেকে রাহাত একটু
কেয়ারফুলি হয়েছে আমার প্রতি।
সেদিন যখন হাঁড়ি ভর্তি ফুটন্ত পানি নামাচ্ছিলাম। তখন
রাহাত আমাকে বললো এ অবস্থায় ভারি কাজকর্ম না
করলে হয় না?
আমি ওকে বললাম আমি এগুলো না করলে কে
করবে?
তারপর থেকে রাহাত একটা কাজের লোক রেখে
দিয়েছে অন্তত থালাবাসন আর জামাকাপড় আর ঘর
ঝাড়ুর হাত থেকে বেঁচে গেছি। তারপরও আমার
শাশুড়ি সারাক্ষণ চিল্লা, চিল্লি করতেন। আমরা কি
ছেলে,মেয়ে জন্ম দেয়নি?.আজকালের
মেয়েরা সামান্য কিছু হলে,এটা করা যাবে না ওঠা করা
যাবে না।
তারপরও আমি কিছু বলিনি। উনারও তো দুটো মেয়ে
আছে, আমার মতো যদি ওরা এমন শাশুড়ি সংসার পায়
তবেই উনি বুঝবেন?
আমি রাহাতকে বলেছিলাম তুমি আমার একটা কথা
রাখবে?
বলো, কি কথা?
আমি চাই আমার প্রথম সন্তান আমার বাবার বাড়ি থেকে
হবে?
আচ্ছা দেখি কি করা যায়?
তারপর অনেক ভেবে চিন্তে আমার বাবা,মার
পিড়াপিড়িতে আর শশুড় মসাইয়ের সাহায্যে আমি বাবার
বাড়ি চলে আসি। কিন্তু আমার শাশুড়ি এ নিয়ে খুব ঝগড়া
করলেন আমার বাবা, মার সাথে।
বাড়ি আসার পর আমার বাবা, মা আমাকে বলছে কিরে
তুই কি খাওয়া, ধাওয়া করিস না।এতো কালো,আর
শুখিয়ে গেলি কি করে?
শুকাই নি তবে ওজন আরো বাড়ছে। হ্যা শুকিয়ে
গেছি কিছুটা তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে। মনে,মনে
চিন্তা করলাম নিজের বাবা,মা আর পরের বাবা মায়ের
মধ্যে কতো ব্যবধান।
# নোট একটা মেয়ে তার বু্ক বাঁধা স্বপ্ন নিয়ে অন্য
একটা জায়গায় যায়।শাশুড়, শাশুড়িরা যদি নিজের মেয়ের
মতো ছেলের বউকে দেখতো তাহলে
সংসারে এতো অশান্তি হতো না। অথচ সংসারে একটু
অশান্তি হলে আমরা আঙুল তুলি ঘরের বউয়ের উপর।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত