শান্তির খোঁজে

              শান্তির খোঁজে

মোহাম্মদ আরাফাত রহমান রাজু

 

গ্রামের নাম বিলাসপুর, গ্রামের নাম বিলাসপুর হলেও সেখানে কোন শান্তি ছিল না।তাই গ্রামের একটি ছেলে নাম তার ব্যোমকেশ,তার পিতা একটু আদর করে তাকে ব্যোমকেশ চন্দ্র বলে ডাকতো। যাহোক.. ছেলেটি শান্তির খোঁজে মা–বাবাকে ও তার একমাত্র ছোট বোন মীনাকে ছেড়ে এক কথায় সর্ব উৎসর্গ করে চলেছে শান্তির খোঁজে।দূর দূরান্তের পথ পারি দিতে লাগলো, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেল। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সে যেন আর পারছে না। গভীর অরণ্যে এক গাছের নিচে বিশ্রামের জন্য বসল, ঐ পথ দিয়ে এক বুড়ো লোক যাচ্ছিল ,আর বুড়ো লোকটি ব্যোমকেশ কে দেখতে পেল । অতঃপর বুড়ো লোকটি বমকিশ কে ডাক দিলেন।

ব্যোমকেশ: আগ্গে… আমাকে বলছেন।

 

বুড়ো : তা বাপু , তোমাকে বলবো নাতো আর কাকে বলব? এখানে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ আছে?

 

ব্যোমকেশ: বলেন কি বলবেন?

 

বুড়ো: তা তোমাকে তো আমি কখনোই এই জঙ্গলে দেখেনি! কি করতে এসেছো?

 

ব্যোমকেশ: শান্তির খোঁজে আসছিলাম।

 

বুড়ো: শান্তি খুঁজছো….তাহলে তো তোমার জানা দরকার শান্তি কয় ধরনের।

 

ব্যোমকেশ:না..বাপু, আমরা দরকার নেই শান্তির ধরন।

 

বুড়ো: তা বললে তো আর হয়না , তুমি যে এখানে বসে রয়েছো,তা হলো এক প্রকার শান্তি।ঘুমাতেও শান্তি, দাঁড়াতেও শান্তি আরো অনেক ধরনের শান্তি।কি বুঝলে বাপু?

 

ব্যোমকেশ:আমাকে মাফ করে দেন।আর পারছি না, আমার ঘাট হয়েছে।

 

বুড়ো: শান্তির খোঁজে বেরিয়েছে আর জানেনা শান্তি কয় প্রকার।

 

[রাগান্বিত হয়ে বললেন]

 

 

[এই বলে বুড়ো লোকটি চলে যায়]

 

                      ২য় পর্ব

 

ব্যোমকেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলো, হাঁটতে হাঁটতে প্রবেশে এক গ্রামে। সেই গ্রামে দেখা হলো তিনটি লোকের সঙ্গে।

[অতঃপর তাদের সঙ্গে কথোপকথন]

 

ব্যোমকেশ: ও ভাই একটা কথা বলি!

 

প্রথম ব্যক্তি: তা একটি কেন? দশটি বলুন।

 

দ্বিতীয় ব্যক্তি: হ্যাঁ, বলুন তো শুনি!

 

ব্যোমকেশ: আচ্ছা এই গ্রামের নাম কি?

 

প্রথম ব্যক্তি: পাগল নাকি?

 

তৃতীয় ব্যক্তি: মাথা খারাপ।

 

ব্যোমকেশ: কেন ভাই পাগল হবো কেন?

 

দ্বিতীয় ব্যক্তি: এই গ্রামে এসে জিজ্ঞেস করছেন গ্রামের নাম কি?

 

ব্যোমকেশ: আসলে আপনাদের ভুল হচ্ছে, আমি সেই বিলাসপুর থেকে এসেছি।

 

প্রথম ব্যক্তি: কি মশাই, সেই অতদূর থেকে গ্রামের নাম জানতে এসেছেন।

 

ব্যোমকেশ: না ভাই আমি একটু শান্তির খোঁজে আসছি।

 

দ্বিতীয় ব্যক্তি: তাহলে শান্তি খুঁজেন, গ্রামের নাম জেনে কি হবে।

 

তৃতীয় ব্যক্তি: যতসব পাগল।

 

ব্যোমকেশ: কি বললাম আরকি শুনল।

 

[এই বলে ব্যোমকেশ আবার হাঁটা শুরু করল]

 

 

                      ৩য় পর্ব

 

কিছুক্ষণ হাঁটার পরে সেই গ্রামে শেষ প্রান্তে একটি কুটির দেখল, ব্যোমকেশ কিছুক্ষণ কুটিরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দেখল কুটির থেকে একটি ছেলে বেরিয়ে এলো, ছেলেটি খুব আনন্দের সহিত মাঠে দৌড়াতে লাগলো। ব্যোমকেশ ধীরে ধীরে কুটির দিকে যেতে লাগলো এবং কুটিরের কাছে গিয়ে বলল: কেউ আছেন ঘরে কেউ কি আছেন ?

কুটি থেকে একটি ভদ্রমহিলা বেরিয়ে আসলো।

 

[অতঃপর কথোপকথন]

 

মহিলা: আপনাকে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

 

ব্যোমকেশ: আমাকে দয়া করে এক গ্লাস পানি দিতে পারবেন?

 

মহিলা: কেননা অবশ্যই!

 

[এই বলে মহিলা পানি আনতে চলে গেল। পানি পান করার পরে]

 

ব্যোমকেশ: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

মহিলা: কোন ব্যাপার না।্

 

 

ব্যোমকেশ: একটা প্রশ্ন করতে পারি যদি দেন অনুমতি?

 

মহিলা: অবশ্যই বলুন।

 

ব্যোমকেশ: এই ঘরে আপনারা কে কে থাকেন?

 

মহিলা: আমি আমার ছেলে ও আমার স্বামী।

 

ব্যোমকেশ: আপনার স্বামী কি করে?

 

মহিলা: আমার স্বামী একজন কাঠুরি সে জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাটে।

 

ব্যোমকেশ: তাহলে আপনাদের দিন খুব কষ্টে কাটে।

 

মহিলা: না না তা কেনো, আমরা সবচেয়ে সুখে আছি শান্তিতে আছি আমাদের মত শান্তি হয়তো আর কোথাও নেই।

 

ব্যোমকেশ: আপনার স্বামী একজন কাঠুরে কাঠ কেটে আর কত টাকা আয় করবে।আমার প্রচুর টাকা তবুও কোন শান্তি নেই তাই শান্তির খোঁজে বেরিয়ে ছিলাম।

 

মহিলা: শুনুন, শান্তি টাকায় আসেনা শান্তি সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকায় আসে সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকলে শান্তি আসে।

 

[মহিলার কথা শুনে ব্যোমকেশ এই বুঝতে পারল যে, টাকা পয়সা দিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। শান্তি পেতে হলে অবশ্যই একসাথে মিলেমিশে থাকতে হবে।একসাথে মিলেমিশে থাকলে শান্তি আসবে, সবাইকে ভালোবাসতে হবে। সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে ছোটদের স্নেহ করতে হবে তাহলেই শান্তি আসবেই।]

 

 

 

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত