আমি ছোট বেলা থেকেই গ্রামে বড় হই। তাই গ্রামের জিনিষ এর প্রতি আমার খুব টান।গ্রামের প্রতিটি জিনিষ আমার মন কাড়ে।
আমার দাদুবভাই ছিলেন গ্রামের মোড়ল।তাই উনাকে প্রতিদিন একটা নিদ্রিষ্ট জায়গায় বসে যাবতীয় কাজ সমাধা করা লাগতো।দাদাভাই একটা চায়ার এ বসতেন।
যাকে আমরা কুরসি ও বলি।
আমার দাদাভাই অনেক লম্বা এবং সাস্থবান একজন মানুষ।দাদাভাইয়ের চেয়ার টা কাঠের চেয়ার ছিলো।লম্বা দুইটা পায়া এবং ছোট দুইটা পায়া ছিলো। লম্বা পায়া দুটোর মাঝখানে একটা গেপে কাঠের কারুকাজ ছিলো।দাদা ভাইয়ের চেয়ার খানা অনেক শক্ত ছিল।দাদাভাই বলেছিলেন তিনি নাকি ফরাসি এক লোককে দিয়ে চেয়ার খানা বানিয়েছিলেন।চায়ার খানা দেখতে বড্ড সুন্দর লাগতো।বসতেও অনেক আরামের ছিলো।পুরো গ্রামে একমাত্র আমাদের বাড়িতেই ছিলো এরকম একটা চেয়ার।চেয়ার খানা হলুদ রঙ করা ছিলো।সেই চেয়ার সে সময় মনে হয় আর কারো কাছে এদেশে ছিলো না। এটা যুদ্ধের আগের ঘটানা।আমার বয়স তখন ছিলো ৭বৎসর।
আমি দেখতাম দাদা ভাই চেয়ার খানাকে খুব যত্ন করতেন। চেয়ার খানাকে প্রতিদিন সকালে একবার আর বিকালে একবার সিল্কের কাপড় দিতে মুছতেন। এভাবেই আমাদের দিন যেতে লাগলো।আমার দাদাভাই অ দিন দিন বুড়ো হতে শুরু করলেন।একসময় দাদাভাই রীতিমত অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লেন।তিনি বিছানা থেকে উঠতেই পারতেন না। হঠ্যাৎ কে যেন চেয়ার খানা নিয়ে বারান্দায় রেখে দিলো।চেয়ারটি রোদের উত্তাপে পুড়তে লাগলো।
এমনি করে কিছু দিন যাওয়ার পর আমার দাদুভাই মারা গেলেন।মারা যাওয়ার আগে তিনি বলে গেলেন যে উনার চেয়ার খানা যত্ন করে রাখি।এই কয়েকদিন ঘর থেকে বাহির না হওয়ায় চেয়ার এর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
আমি দৌড় দিয়ে বারান্দার দিকে ছুটালাম।দেখি চেয়ার তো আছে কিন্তু তার অবস্থা খারাপ।চেয়ার টির রঙ নষ্ট হয়ে গেছে।হলুন রঙ রোদে থেকে থেকে হলুদ থেকে লাল হয়ে গেছে।চেয়ার টা যখন তুললাম তখন ক্যাচ ক্যাচ একটা শব্দ হলো দেখি সামনের দুটো পায়া ভেঙে গেছে।আমি হতাশ হয়ে গেলাম।দাদুভাই এর শেষ নিশানা ধরে রাখতে পারলাম না।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক আমাকে আমার দাদার শেষ নিশানা রক্ষা করতে হবে জমি এক খণ্ড বিক্রি করলাম এবং সেই টাকা অ আরো কিছু টাকা নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম। আমি চেয়ার ঠিক করার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ থেকে দেশে যেতে লাগলাম।কিন্তু সবাই সাফ না করে দিলো।তারা এরকম কিছু আগে কখনো দেখেই নি। এর পর অনেক দেশ ঘুরতে ঘুরতে আমি চীনে গেলাম।
চীনে যাওয়ার পর সেখানে আমাকে একদল ডাকাত আক্রমণ করলো।আমর কাছে তখন শুধু সেই চেয়ার খানাই
ছিলো। আমি রাজ দরবারে উপস্থিত হলাম বিচার নিয়ে।সেখানে রাজা আমার পুরো কথা শুনলেন।
রাজা আমাকে আমার দাদার প্রতি শ্রদ্ধারর কথা শুনে তার মেয়ে কে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যা বাধ্য হয়ে আমি মেনে নিলাম।
তার পর আমি বিয়ে করেও শান্তি তে থাকতে পারলাম না। আমি সেখান থেকে বের হয়ে চেয়ার মেরামতের লোক খুঁজতে লাগলাম। পথিমধ্যে এক বুড়ো মহিলার সাথে আমি ধাক্কা খাই।
উনার সব কিছু আমি উনার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতে যাবো তখন দেখি উনার ঘরের বারান্দায় অ এরকম একটা চেয়ার।
আমি উনাকে একটা ডাক দিলাম
দাদিমা বলে,
-দাদিমা!!(আমি)
-কি হলো বাবা(বুড়ো মহিলা)
-দাদিমা এই চেয়ার কে বানিয়েছে
-এটা তোমার দাদু বানিয়েছে।
-তাহলে দাদিমা দাদু কোথায়
-দাদু মারা গেছে।(কাদতে শুরু করলেন)
-সরি দাদিমা কষ্ট দিলাম
-তা তুমি কেন এটা জিজ্ঞেস করছো।
-আমার কাছে ও এরকম একটা চেয়ার আছে তবে তার ছোট দুটো পায়া ভেঙে গেছে।
-দেখ বাবা আমি তো এসব বানাই না। তুমার দাদু ই এসব বানাতেন। তিনি ই এরকম আরেকটা চেয়ার আরেকজন কে বানিয়েদিয়েছিলেন।
-অহ আচ্ছা।উনি এসব কিভাবে বানাতেন জানেন কি”!
-নাহ বাবা তবে…
-তবে কি
-তবে উনি একটি পাতার উপর থেকে দেখে দেখে এসব বানাতেন।
-আমি একটু পাতা টা দেখতে পারি দাদিমা??
-দাড়াও বাবা,আমি নিয়ে আসছি।
দাদিমা একটি পাতা নিয়ে আসলেন তার উপর খোদাই করে চেয়ার এর ছবি আকা।আমি একটি পেজে পায়া বদলানোর নিয়ম দেখতে পেলাম।এবং সে অনুযায়ী কাজ করে যেতে লাগলাম একসময় আমি চেয়ার টা মেরামতে সফলতা লাভ করলাম। এবং আমার স্ত্রী কে নিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেলাম।
এবং সেখানে গিয়ে আমি এসব চেয়ার বানাতে লাগলাম। দাদার নিশানা রক্ষা করতে গিয়ে আমি জীবনে অনেক কিছুই পেলাম।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প