সময়

সময়
অচেনা এক আইডি থেকে মধ্যবয়সী এক মহিলা রোজ আমায় মেসেজ দেয় কিছুদিন ধরে। প্রথম প্রথম না ভালোলাগলেও এখন ভালোই লাগে। আমিও মেসেহের রিপ্লাই দেই। মায়ের বয়সী মহিলাটিকে সম্মানও দেই অনেক৷ আন্টি বলে ডাকি তাকে। কখনো দেখিনি ওনাকে তাও ভেতর থেকে কেমন জানি মনে হয় খুবই আপন উনি। আমাদের মাঝে অনেক রকমের কথা হয়, জীবন সম্পর্কে,পরিবার সম্পর্কে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। উনারও এক ছেলে এক মেয়ে।যেমনটি আমরা একভাই এক বোন।উনার ছেলে বাইরে থাকে। আর মেয়ে পড়াশুনো করে। খুবই ভালোলাগছে ক’দিন ওনার সাথে কথা বলে। বয়সে বড় মানুষদের সাথে কথা বলতে ভালোই লাগে। অনেক কিছু শিখতে পারা যায়। ওনার থেকেও অনেককিছু শিখেছি। ওনি খুব ভালো রান্না জানেন। মাঝে মাঝে আমার কাছে ছবি দেন ওনার হাতে রান্না করা খাবারের। ওনাকে দেখিনি বলে আজ নিজে থেকেই বললাম,
–আন্টি আপনাকে দেখলে কি কোন অসুবিধা আছে? উনি বললেন,
-না বাবা,কি সমস্যা থাকবে। তুমি কখনো বলোনি জন্ন্যে আমিও তোমায় কিছু বলিনি।
–ঠিক আছে আন্টি তাহলে চলুন আজকে দেখা করি? উনি বললেন,
–অবশ্যই কেন নয়।তবে..
–তবে কি?
–আমায় দেখার পর আমার সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে দেবে না তো বাবা?
–না আন্টি একদমই না।
–ঠিক আছে। তাহলে বল কোথায় আসবো?
–আন্টি তাহলে, টি বাঁধ এ আসবেন বিকেলে কেমন?
–আচ্ছা।
আমি আদ্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। নিজ বাসা রাজশাহীতেই তবে আমি হোস্টেল এ থাকি৷ বাড়ির মানুষের সাথে যোগাযোগ করিনা বললেই চলে। এমনিতে কোন ঝামেলাও হয়নি, তবে আমার ভালোলাগেনা।মা রোজই ফোন দেয়। তবে আমি মাঝে মাঝে ধরি বা ধরিনা। ফোনকল করা বা কথা বলা আমার ভালোলাগেনা। দিনভর চ্যাটিং,ফেসবুক,পড়াশুনা ইত্যাদি নিয়েই বিজি থাকি, বাসায় পোন দিয়ে কথা বলার সময় কোথায়?।।।
তবে আজ হয়ত করতে হবে। আজ আন্টির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। ভাবছি কি নিয়ে যাবো। মাকে একবার ফোন দিলাম। কারন মায়ের বয়সী মানুষ তিনি। মা নিশ্চয়ই জানবেন কি দেওয়া যায়। দু তিনবার কল দেয়ার পর মা ফোন ধরলেন,
–হ্যা রে আজ মাকে কিভাবে মনে করলি?
–এমনি, মা একটা দরকার ছিল।
–কি দরকার বল?
–তোমাকে যদি কেউ কিছু গিফট করতে চায় তাহলে তুমি কি পছন্দ করবে?
–হঠাৎ?
–জলদি বল মা প্লিজ,?
–এই ধর একগুচ্ছ কদম ফুল আর কিছুটা সময় (ধীরে ধীরে)
–বুঝলাম না কি বললে মা তুমি?
–ও কিছুনা,
–আচ্ছা রাখি এখন, আল্লাহ হাফেজ।
ওপাশ থেকে আদ্রের মা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লেন। বিকেলবেলা রেডী হয়ে, হাতে একগুচ্ছ কদমফুল ও একটা সুন্দর ঘড়ি সুন্দর করে কাগজে মুড়িয়ে চলে গেল টি বাঁধ এ। সেখানে গিয়ে আদ্র দেখলো চেয়ারে বসা এক মধ্যবয়সী মহিলা। আদ্র একবার মেসেজ দিয়ে চেক করে নিল তিনিই কি না। যখন সে দেখল এই সেই মহিলা তখন আদ্র ওনার কাছে গিয়ে দাড়ালো। আদ্র দেখতে পেল মহিলাটি আর কেউ নয় ওরই মা। মাকে দেখে যতটা অবাক হলো ততটাই রাগও হলো।। ধমকের সুরে বললো আদ্র,
“এসব কি পাগলামী মা?তুমি এতদিন আমার সাথে মজা করেছ!?”
“পাগলামী নয় বাবা,আমি তো শুধু..
” চুপ কর মা, আমি কিছু শুনতে চাইনা, এমন কাজ না করলেও পারতে ছিঃ!
আদ্র মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। ওর পীঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে মা বলল, “আমি ভেবেছিলাম আমিও যদি তোদের মত ওইসব চ্যাটিংয়ের কি সব ফেসবুক ব্যাবহার করি তাহলে তুইও আমার সাথে সবসময় কথা বলবি ” মায়ের এমন কথা শুনে আদ্র মায়ের দিকে তাকালো। ওর মা আবারো বলো উঠলো, “তুই তো আমার সাথে কথা বলিস না তাই ভেবেছিলাম যদি এভাবে হলে কথা বলিস ” সত্যি তো সবার সাথেই কথা বলি কিন্তু মায়ের সাথে তো কথা বলা হয় না। মায়ের বলা কথাগুলো ওর হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করলো। ছলছল চোখে মায়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জড়িয়ে ধরলো মাকে। ছেলের নিয়ে আসা ঘড়ি দেখে মা বলে উঠলো, মানুষের তৈরী সময় নয়, আমি তোর কাছ থেকে কিছুটা সময় চাই যা শুধু একটা ছেলেই তার মাকে দিতে পারে। তোর কাছে কিছুটা মূহুর্ত চাই বাবা। দিবি আমায় সেই সময়? আদ্র মাকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে। সেদিনের বিকেলবেলাটা আদ্র মায়ের কোলে শুয়েই কাটিয়ে দেয় ।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত