–তা মা, তোমার বাবা কি করে? বড় ভাই আছে? ছেলের বাবা আমাকে প্রশ্নটা করতেই উত্তর দিলাম,
–বাবা চাকরি করেন।আর আমার বড় নয়, ছোট ভাই আছে।
–ওমা, বাপ চাকরি করে!কই চাকরি করে?সরকারি নাকি বেসরকারি?আর একটা বড় ভাই নাই? মেয়ের বড় ভাই না থাকলে চলে?বিষয়টা কেমন না?
ছেলের মা কিছুটা ব্যাঙ্গ করে প্রশ্নগুলো করলো।অথচ সেখানে আমার বাবা, তিন চাচা,দাদা এবং পর্দার আড়ালে মা দাঁড়িয়ে ছিলো।কেউ কোনো কথা বললো না।আমিও চুপ করে রইলাম। হয়তো আমি কিছু বললে আমার মা, বাবা, চাচা কিংবা উপস্থিত যারা তাদের সম্মানহানি হবে এটা ভেবে। মাথানিচু অবস্থায় ছেলের মায়ের করা প্রশ্নের উত্তরে বললাম,
–আমার বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে।
–ওমা, বেসরকারি চাকরি!
অবশ্য গরিব ঘরের মেয়েকে ছেলের বউ করতে যদিও আমার আপত্তি নেই,তাই বলে এতটা ছাড়বো কি করে মাহিমের বাপ? ছেলের মা বেশ উচ্চস্বরে উনার স্বামীকে বললো। এগুলো শুনে আমার পরিবারের সবাই এখনো চুপ করে বসে আছে।মেনে নিলাম বিষয়টা।কারণ আর্থিকভাবে আমরা অতটা সচ্ছল নয়। কিছুক্ষণ পর ছেলের বাবা চায়ে চুমুক দিয়ে বিশ্রীভাবে হাসতে হাসতে বললো,
–জায়গাজমি আছে তো?কতটুকু আছে?এমন চাকরি তে বেতন কত পান ভাই ?আপনার ব্যাংকে জমানো টাকা আছে?
ক্রমশ পাত্রপক্ষের এক একজন অনর্থক প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকে আমার দিকে।আর এখন আমার বাবাকে এই টাইপ প্রশ্ন করছে! মেয়ে দেখতে এসে প্রশ্ন করবে এটা আমাদের সমাজে বরাবরই স্বাভাবিক বিষয়।কিন্তু এই টাইপ প্রশ্নের মুখোমুখি আমি কিংবা বাবা এই পঁচিশ নম্বর আসা পাত্রপক্ষের কাছেই হয়েছি। নিচু মাথা খানিকটা উঁচু করে এবার আমি উনাদের জিজ্ঞেস করলাম,
–তা,আপনারা মেয়ে দেখতে এসেছেন নাকি মেয়ের বাবা কিংবা ভাইয়ের জমানো কি আছে সেটা দেখতে এসেছেন? বলি মেয়ের বাবার টাকা কি আপনার ছেলের সংসার করবে? আপনারা না বড়লোক? বড়লোক মানুষ হয়ে মেয়ের বাবার টাকা কিংবা সম্পত্তির উপর লোভ থাকবে কেন? কথায় বড়লোকি দেখালেও স্বভাবে বড়লোক হতে পারলেন না?
অনুগ্রহ করে মেয়ে দেখার নাম করে এসব জিজ্ঞেস করে মানুষকে বিব্রত করবেন না।আর শুনুন,সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে ভাইকে আগে পাঠাবে নাকি বোনকে সেটা কেবল তিনি জানেন। আর হ্যাঁ,আমার বাবার উপার্জনকে সামান্য বলবেন না,কারণ এই উপার্জন দিয়ে আমার বাবার চারটি স্বপ্ন লালনপালন হচ্ছে। কথাগুলো বলে আমার বাবার মুখের দিকে তাকালাম।বাবা বসা থেকে উঠে গেলেন।ততক্ষণে পাত্রপক্ষ ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে।
বাবা দুই হাত বাড়িয়ে আমায় উনার বুকে টেনে নিলেন।আমার চুল অতিক্রম করে টুপটুপ করে বাবার চোখের পানি পড়ছিলো আমার পিঠের উপর। চোখ বন্ধ করে আমিও বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। জানিনা এর শেষ কোথায়? মেয়ে দেখার নাম করে আর কতবার কত বাবাকে অপমান করা হয় বা হবে,সত্যি জানিনা আমি।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প