সংশয়

সংশয়
কি মনে করিস নিজেকে তুই? বিয়ে করতে যাবার আগে নিজেকে কি একবারও আয়নায় দেখিস নি? ভেবেছিস বিয়ে হয়ে গেছে বলেই আমার ওপর স্বামীর অধিকার খাটাবি? শুনে রাখ জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে আমায় জোর খাটাতে চেষ্টা করলে তোকে ফাঁসিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করব।
— এ কথা আমায় বিয়ের আগে বলো নি কেন? এখন বলে লাভ কি?
— বিয়ের আগে তুই কি দেখা করেছিস আমার সাথে?
আর তুমি করে বলছিস কোন সাহসে আমায়? লাভ ক্ষতির হিসাব আমি বুঝিনা আমি এই বিয়ে মানি না ব্যাস! কথাগুলো বলার মাঝখানেই মীরা টেবিলের উপর রাখা দুধের গ্লাসটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিল। সাথে বকবক করেই যাচ্ছে। আমি মেঝেতে ছুড়ে ফেলা গ্লাসটার দিকে নজর দিলাম কতগুলো টুকরোয় পরিণত হয়েছে সেটি। সমস্ত দুধটুকু ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে। গ্লাসের ভাঙ্গা টুকরো গুলোর গায়ে লেগে থাকা দুধের কণাগুলো অদ্ভুত দেখাচ্ছে। ওর বকবকানি শুনতে একটুও ভালো লাগছে না আমার। ছাদে যাওয়া যেত কিন্তু বাসার সকালে এখনো ঘুমোয় নি কেউ যদি দেখে ফেলে !
বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম এই মুহূর্তে একটা সিগারেট খুব দরকার আমার। আজ পুনরায় নিজেকে সত্যিই অভাগা মনে হচ্ছে। যে রকমটা হয়েছিল তারিনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর। স্কুল জীবনেই ওর প্রতি অধিক দুর্বলতা ছিল আমার কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি। সেদিন স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল সবাই সবার সাথে কথা বলছিল ।কোন কোন স্যার তার পছন্দের শিক্ষার্থী উপদেশ দিচ্ছেন কিভাবে লিখতে শুরু করবে, কিভাবে প্ররিক্ষকদের সাথে সাক্ষ্য গড়ে তুলবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার তখন কিছুই ভালো লাগছিলো না। কেবলই মনে হচ্ছিল তারিনকে এই হারিয়ে ফেললাম। কয়েকবার তারিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম কিন্তু কিছু বলার আগেই কেউ না কেউ ডাক দিচ্ছিল। একবার তো তারিনকে বলেই ফেলেছিলাম
–তারিন এরপর তো আমাদের আর হয়তো দেখা হবে না আমার কথা শেষ করার আগেই সে হাসতে হাসতে বলল
— কেন রে তুই বিদেশ যাবি নাকি পড়াশুনা করতে? বলেই আবার হাসতে লাগলো। কি বলার আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজেকে জোকার করতে কোন ছেলেরই ভালো লাগে না। ঠিক তখনই এক বন্ধু এসে খবর দিল ইংলিশ টিচার আমায় খুঁজছেন। ফলে ঐ লজ্জা জনক পরিস্থিতি থেকেও বেঁচে গেছিলাম।
পরিক্ষার তখন দুই দিন মাত্র বাকি। পড়াশুনার মধ্যেও তারিনকে ভুলতে পারা আমার কাছে অসম্ভব ছিল। পরিক্ষার হলে তারিনের সাথে বেশ কয়েকবার সামনাসামনি হলেও কথা হয়নি। পরিক্ষা শেষে এক বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাৎই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। হ্যালো বলার সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছিলাম এটা তারিন। তখন থেকেই শুরু হয় নতুন পথচলা। আস্তে আস্তে তাকে আমার অনুভূতি জানালাম। শুরু এক নতুন অধ্যায়ের। প্রায় তিন বছরের সম্পর্ক ছিল কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি যে ও তিনটা বছরই আমার সাথে টাইম পাস করেছে। খুব অবাক হয়েছিলাম যে একটা মানুষের সাথে এতদিন ব্যায় করেও কিভাবে একটু অনুভূতি না জন্মে পারে। শুধু যাবার সময় অকথ্য একটা গালি দিয়ে বলেছিল তোর মতো ছেলের সাথে যে টাইমপাস করেছি সেটাই অনেক।
কথাটা শুনে চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল সেদিন। যোগাযোগ করতে চেষ্টাও করিনি কখনো। মাঝেমাঝেই ওর নাম্বার থেকে কল আসত কিন্তু হ্যালো বলার সাথে সাথেই কেটে যেত। পরে সিমকার্ড চেঞ্জ করে ফেলি। আসলে মানুষ প্রথমবার রাগ কিংবা অভিমানে যে কথাগুলো বলুক না কেন সবটাই সে মন থেকেই বলে। এই কারনেই চাইনি নতুন কোন মিথ্যা গল্পের মায়ায় পরি। পরপর দুটি বছর কেটে গেছে। আব্বুর এক বন্ধুর অফিসে একটা ছোট খাটো পদে নিযুক্ত হয়েছি মাসখানেক আগে। কিন্তু আম্মুর জোরাজুরিতে বিয়েটা করতে হলো। মীরা আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে ছোট বেলায় একবার দেখেছিলাম। তাছাড়া খাবার টেবিলে রোজ আম্মুর মুখে এই মেয়ের প্রশংসা শুনতে হতো। এই কারনেই মেয়ে দেখতে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নি।
অনেক রাত হয়েছে রুমের ভিতর ঢুকে দেখি মীরা গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। ফ্লোরে টুকরো হওয়া গ্লাসটাও নেই। অথচ আমি কিংবা অন্য কোন ছেলে হলেও হয়তোবা গোছানো তো দূরে থাক উল্টো আরও দু একটা অন্য জিনিসপত্র ভেঙে রাখতাম! এটাই হয়তো ছেলে আর মেয়ের পার্থক্য।বন্ধুদের কারনে কাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি ফলে নিজের খুব ঘুম পাচ্ছে। মীরা যেভাবে শুয়ে আছে তাতে আমার শোবার জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।
কিন্তু একটু আগে যেভাবে কথা বলল তাতে আর খাটে শোবার সাহস করলাম না। বালিশ নিয়ে ফ্লোরেই শুয়ে পড়লাম। মায়ের ওপর ভরসা করে যে ঠকেছি তা নিশ্চিত বিয়ের আগে অন্তত একবার এই মেয়ের সাথে কথা বলা উচিত ছিল। জানিনা কাল সকালে কি অভিনয় শুরু করে। বাসা ভর্তি মেহমান তাছাড়া আমার মা আবার একটু অন্যরকম মহিলা।দেখা গেল মীরা কাল সকালে চিৎকার চেঁচামেচি করে মেহমানদের সামনে আমাদের ছোট করল। ব্যাস আম্মু ঘাড় ধরে বউ নিয়ে আমায় বাসা থেকে বের করে দিবে অথচ তিনি একবারও ভাববেন না যে বউ তিনিই পছন্দ করে এনেছেন এবং তাঁরই বান্ধবীর মেয়ে।
আর এরকম যদি কিছু নাও হয় তো প্রতিদিনই কি মীরার অকথ্য গালিগালাজ শুনতে হবে? তাহলে কি করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো? তারিন তো প্রেমিকা ছিল আর মীরা এখন আমার বউ। একধরনের অদ্ভুত সংশয়ে আটকে পরেছি আমি। কি হবে কাল সকালে কিংবা তার পরে?
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত