গুপ্ত বিষ

গুপ্ত বিষ

একটি ভ্রমর ছিল নিধু। ভ্রমরদের রাজা ভ্রমরগুপ্ত নিধুর জন্য দুটি ফুল বাগান ঠিক করে দিয়েছেন। নিধু সেই ফুল বাগানের ফুলে ফুলেই আপন মনে উড়ে বেড়াত। ফুলদের সাথে গান করে, হেসে খেলে তার দিন কাটত।

একদিন ভোরে নিধু যখন তার ফুল বাগানে এলো তখন সে অবাক হয়ে দেখল দুটি ফুল বাগানেই অনেক ফুল মরে পরে আছে। যেন একটা বিষের হাওয়া বয়ে গেছে ফুল বাগানে। নিধু খুব দুঃখ পেল। সে সারা দিন ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াল কিন্তু বুঝতে পারল না কেন এমন করে এত ফুল এক সাথে মরে পরে আছে। পর দিন সকালে যখন আবার নিধু তার ফুল বাগানে এলো, তখনও সে একই ঘটনা দেখল, অনেক ফুল মরে পরে আছে। যেন কোন বিষধর সাপের ছোবলে ছোবলে ফুল গুলির প্রাণ গেল। নিধু সময় নষ্ট না করে উড়ে গেল ভ্রমররাজা ভ্রমরগুপ্তের কাছে। সব কথা খুলে বলল ভ্রমরগুপ্তকে।

ভ্রমরগুপ্ত তার মন্ত্রী-সন্ত্রী নিয়ে উড়ে এলেন সেই ফুলবাগানে। সবাই দেখল চারিধারে তাজা ফুল সব মরে পরে আছে। ভ্রমরগুপ্ত রাজবৈদ্যকে আদেশ দিলেন কারণ অনুসন্ধান করতে। রাজবৈদ্য সব মৃত ফুলে উড়ে উড়ে তাদের গন্ধ শুকলেন, তাদের রেণু পরীক্ষা করলেন, আরো কত কি পরীক্ষা করলেন। শেষে তিনি রাজার কাছে উড়ে এসে রাজাকে বললেন “ হে মহারাজ, আমি নিশ্চিত যে এই বাগানে কোন গুপ্ত বিষ ফুল আছে। আর তার রেণু নিধু ভ্রমরার পায়ে পায়ে লেগে যেই যেই ফুল ছড়িয়ে পড়েছে সেই সেই ফুল মরণের কুলে ঢলে পড়েছে। এখুনি এই বিষ ফুলটিকে চিহ্নিত করতে হবে তা না হলে তার প্রভাব অন্য ফুলবাগানেও দেখা দিতে শুরু করবে।” রাজা তক্ষুনি, সেই ফুল বাগানের এক কোনে এক কাঁঠাল গাছে জরুরী সভা ডাকলেন। সবাই সেখানে বিচার-পরামর্শ করলেন। তারপর সবাই মিলে একটি পরিকল্পনা করল।

নিধু ভ্রমরা পরিকল্পনা অনুসারেই কাজ করল। সে আজ ফুল বাগানের কোন ফুলের গায়ে বসল না। সে উড়ে উড়ে প্রতিটি ফুলের কানে কানে বলতে লাগল “বন্ধু! তুমি কি জান এই ফুল বাগানে একটি বিষ ফুল আছে?” তার কথা শুনে প্রায় সব ফুল চমকে উঠল। কয়েকটি ফুল নিধুর বেশ উপহাস করল। তারা বলল “ও সব বাজে কথা। নিধুর মাথা খারাপ হয়েছে।” আবার কয়েকটি ফুল নিধুকে বেশ ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে বলল “সে যেন এ কথা আর কক্ষনো মুখে না আনে। এতে ফুলবাগানে এক অশান্তির সৃষ্টি হবে।”

নিধু সব কথা গিয়ে রাজাকে জানাল। রাজা বললেন “যারা অন্যের উপহাস করে তারা কোন দিন কোন কাজের থাকে না। তাই তাদের কথা ভেবে সময় নষ্ট না করাই উচিত। আর যারা নিধুকে ধমক দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, সাধু সেজে শান্তির বানী বলল তাদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। তারা সৎ এবং দুষ্ট দুইই হতে পারে। কারণ সৎ সব সময়ই কঠোর থাকে আর দুষ্টের ছলনার অভাব হয় না।” তাই রাজার আদেশে এই কয়েকটি ফুল ছাড়া নিধু বাকি ফুলগুলিতে সারাদিন ঘুরে বেড়াল। সবাই অবাক হল এই দেখে যে, একটি ফুলের ও আর কোন ক্ষতি হল না।

এবার আসল দুষ্টকে খোঁজার পালা। রাজার আদেশে নিধু উড়ে উড়ে সেই কয়েকটি ফুলের কানে কানে বলতে লাগল “হে সখা, তোমার মাঝে যে মধু আছে তার স্বাদ কেমন? রাজার আদেশে আমাকে সবচেয়ে উত্তম এবং মিষ্ট মধু নিয়ে রাজার কাছে যেতে হবে।” একটি ফুল ছাড়া সব ফুলই বলল “এই পাগল, তুই আবার জ্বালাতন করতে এসেছিস? দূর হ!” শুধু একটি ফুল বলল “আমার মধু তো অমৃত, এত মিষ্ট মধু তুমি আর কোথাও পাবে না বন্ধু।” নিধু সাথে সাথেই উড়ে গিয়ে রাজাকে এই কথাটা জানাল। রাজা হেসে বললেন, “চোখ কি জানে চোখের শোভা? ফুল কি জানে স্ব-মধুর স্বাদ? মেঘ চিনে না নিজের রূপ, সুন্দর সদাই মরণ ফাঁদ!”

রাজার আদেশে তক্ষুনি রাজবৈদ্য তার শিষ্যদের সাথে নিয়ে উড়ে গিয়ে সেই ফুল গাছের গোড়াতে কাল বিষ ঢেলে দিল। ফুল গাছটি চোখের পলকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। কালো রাত পেড়িয়ে আবার সোনার ফুলবাগানে, সোনার ফুল ফুটতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত